আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারীরা আবার কোন কাজ কাম করে নাকি??

গালাগালি পাঠাতে srsnipun@gmail.com ফেসবুকে আমি http://www.facebook.com/mrlazy4200 আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকায় এমন লক্ষ লক্ষ নারী আছে, যাদের দিন শুরু হয় ভোর সাড়ে চার বা পাঁচটায়। এর পরবর্তী ষোল ঘন্টা তারা ব্যয় করে পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটানোর পিছনে, যার মধ্যে আছে খাবার তৈরী, পানি আনা নেওয়া, জ্বালানী সংগ্রহ, কাপড়চোপড় ধোঁয়া-গোছানো থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু। এই হিসেবে সপ্তাহে তাদের কাজের পরিমাণ একশ ঘন্টারও ওপরে! এইসময়গুলো মূলতঃ ব্যয় হয় দুই ধরণের কাজে, গৃহস্থালী কাজ আর কৃষিকাজ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা(FAO) এর হিসাবমতে, মোট খাদ্য উৎপাদনে নারীদের অবদান কমপক্ষে পঞ্চাশ ভাগ। উদাহরণস্বরূপ আফ্রিকার অর্থনৈতিক কমিশনের একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে বলা যায়, সেখানে(আফ্রিকায়) নারীর অবদান কৃষিকাজে শতকরা ষাট থেকে আশিভাগ, এর সাথে আছে পশুপালনতো আছেই, যার পঞ্চাশভাগ করতে হয় নারীকে।

আর খাবার তৈরীর কাজ তো পুরোটাই নারীর। তানজানিয়ার বাকুবায় চালানো এক জরীপে দেখা গেছে, পুরুষরা সেখানে কৃষিকাজে বাৎসরিক শ্রম দেয় প্রায় ১৮০০ ঘন্টা এবং এটাকেই তারা যথেষ্ট মনে করে। অপরদিকে নারীরা, শুধুমাত্র তাদের কৃষিকাজেই বাৎসরিক শ্রমের পরিমাণ গড়ে ২৬০০ ঘন্টা। এর উপর রয়েছে ঘর-গৃহস্থালী, রান্না-বান্না প্রভৃতি কাজ। বিষয়টিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার জন্যই হয়তো স্থানীয় 'হায়া' ভাষায় 'বিয়ে' শব্দের অর্থ হলো 'যে পুরুষ একটি কাস্তে পেলো'।

একই চিত্র দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশে, যেখানে কৃষিকাজের সিংহভাগ করতে হয় নারীকে। 'সাধারণভাবে এ ধারণা প্রচলিত যে, কৃষিকাজ পুরুষের, নারী তার সহকারী। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ঘটে ঠিক তার উল্টোটা, শ্রমদানে নারীরা অগ্রগণ্য, পুরুষেরা সেখানে সহকারী মাত্র', ভারতের গম-প্রধান রাজ্য হরিয়ানায় একটি কৃষি সমীক্ষা চালাতে গিয়ে এ মন্তব্য করেছেন শান্তি চক্রবর্তী। হরিয়ানা সমীক্ষা অনুসারে, গৃহস্থালী আর কৃষিকাজ মিলে একজন নারীর দৈনিক শ্রমের পরিমাণ ১৫ থেকে ১৬ ঘন্টা! যেখানে একজন সাধারন মানুষের স্বাভাবিক কাজের সময় সাত থেকে আট ঘন্টা। এগুলোর পাশাপাশি যাদের বয়স অপেক্ষাকৃত কম, তাদের সামলাতে হয় অধিক গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদান, স্তন্যদান করা প্রভৃতি অনেক অতিরিক্ত কাজ যা দেহের উপর অনেকটুকু বাড়তি চাপ।

দুর্বলতাটা প্রকটভাবে ধরা পড়ে তখন, বিশেষ করে যখন তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা কৃষিক্ষেত্রে কাজ করতে হয় অপর্যাপ্ত খাবার খেয়ে। আশির দশক থেকেই, লক্ষ লক্ষ নারীর অপুষ্টির এ বিষয়টি গুরুত্বের দাবী করে আসছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে এটিই রয়ে গিয়েছে সবচেয়ে অবহেলিত বিষয় হিসেবে। আরও দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বিগত পাঁচ বছরে এ পরিস্থিতি উন্নয়নে যত প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, কোনোটিই সফলতার মুখ দেখেনি। কৃষিতে একটি বদ্ধমূল ধারণা আছে, 'কৃষিকাজ পুরুষদের। সে ধারণারই প্রতিফলন দেখা যায় কৃষি প্রযুক্তি আর প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে।

ট্রাক্টরের কথাই ধরা যাক, এই ট্রাক্টর 'পুরুষদের কাজ' লাঙল চালানোর পরিশ্রমকে কমিয়ে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাড়িয়ে দিয়েছে 'নারীদের কাজ' আগাছা পরিষ্কারের পরিশ্রমকে। সাম্প্রতিক এক আফ্রিকান সমীক্ষার কথাই ধরা যাক। সেখানে ইশার বসক্রাপ দেখিয়েছেন, গ্রামাঞ্চলে, যেখানে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে, সেখানে কৃষিকাজে নারীরা পরিশ্রম করে শতকরা ৫৫ থেকে ৬৮ ভাগ। খাদ্য উৎপাদনের পেছনে নারীদের এই পরিশ্রমের হার এক কথায় অযৌক্তিক। এর প্রভাব পড়ে তাদের স্বাস্থ্যের ওপর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, উন্নত খাবার, পানি ও স্যানিটেশন সেবা, রোগ প্রতিরোধের জ্ঞান ও স্বাস্থ্য শিক্ষার মাধ্যমে উন্নয়নশীল বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ রোগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এবং এগুলোর প্রত্যেকটির সাথেই নারী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দুঃখজনক হলেও সত্য, নারী সংসার এবং অন্ন সংস্থান থেকে শুরু করে জীবনের সাথে জড়িতে প্রতিটি ক্ষেত্রে এত অধিক পরিমান অমানবিক পরিশ্রম করে গেলেও, তার স্বীকৃতি নেইই বলতে গেলে। উলটো নারীদেরকেই গন্য করা হয় সংসারের বোঝা হিসেবে। মেয়ে শিশুর জন্মদানে কালো হয়ে যায় পিতামাতার চেহারা।

শিক্ষিত সমাজের প্রত্যেক সদস্য এক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা পালনে এগিয়ে না এলে নারীদের এই বঞ্চনা এবং অবমাননা চলতেই থাকবে। তথ্যসূত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) এর রিপোর্ট অবলম্বনে। গুগলিং করেন এইরাম বহুত রিপোর্ট পাবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।