আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একালের আড্ডা

কালো আর ধলো বাহিরে কেবল, ভেতরে সবারই সমান রাঙা “অবশেষে অমুক সাহেব তমুক বিবির সাথে বেশ কিছুদিন ধরে চলে আসা প্রেম প্রেম ভাব এ ইস্তফা দিয়ে, ঘর না ছেড়েই সন্ন্যাসব্রত নিয়েছে!” আড্ডার একাংশ (২ সদস্য বিশিষ্ট মমতাময়ী কমিটি) সমস্বরে আহা আহা করে উঠলো। তর্কবিদ সদস্যরাও কিন্তু হার মানবার নয়। অমুক সাহেবের যে তমুক বিবির কাছ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকা উচিত ছিলো সে সম্পর্কে একজন সুচিন্তিত মতামত প্রদান করলো। আরেকজন তীক্ষ্ণস্বরে এর প্রতিবাদ করলো কেননা স্পষ্টতই এর থেকে পুরুষদের উগ্র জাত্যাভিমান এর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বরঞ্চ তমুক বিবিকে অমুক সাহেবের কাছ থেকে এক হাজার হাত দূরে থাকতে বলা হোক।

আড্ডার অকালজ্ঞানী ব্যর্থ সাহিত্যিক কিঞ্চিৎ গলা খাঁকারি দিয়ে সবাইকে থামালো। পিনপতন নিস্তব্ধতা নিশ্চিত হওয়ার পরই মুখ খুললো সে। আমার মনে হয়, অমুক সাহেব আর তমুক বিবি একজন আরেকজনের কাছ থেকে যতই দূরে থাকুক না কেন তাতে কোন লাভ হবেনা। সবসময়ই কথা শিকারীর দল নানা অফারের ফাঁদ পেতে তাকে নেটওয়ার্ক নাম দিয়ে বসে আছে। ওদেরকে নেটওয়ার্ক এর বাইরে যেতে আদেশ দেয়া হোক।

আপাতদৃষ্টিতে নিতান্ত গোবেচারা সদস্য অবিশ্বাসী গলায় সেই আদি ও অকৃত্রিম প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলো। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? তা ঠিক, তা ঠিক। আমি বাবা এর মধ্যে নেই- বলল মমতাময়ীদের একজন। তর্কবিদ একজন সাহিত্যিক এর সাথে তর্ক বাধাবার আশায় বলল, তা কেন! সরকার কথার উপর ট্যাক্স বসিয়েছে না! এবার আড্ডা একেবারে মোকামে পৌঁছেছে। ব্যাপারটাকে একমাত্র ভরা আড্ডায় এক বাটি চানাচুরমাখার আগমণের সাথেই তুলনা করা যেতে পারে (যাহ বাবা খিদে পেয়ে গেল)! কথার উপর ট্যাক্স বসানো উচিত কিনা, বসালেই কি আর না বসালেই কি ইত্যাদি আলোচনা সমালোচনার মধ্যে ঘুমকাতুরে একজন ঘোষণা করলো, আমি ফোন রাখছি।

আমার ঘুম পাচ্ছে। সবাই (এমনকি মমতাময়ীরাও) হা রে রে রে রব করে প্রায় তেড়ে আসলো। একজন হুমকি দিল, খবরদার ফোন রাখবিনা। নাহলে কিন্তু খুনোখুনি হয়ে যাবে। তাদের অক্ষমতার প্রতি বিশ্রী একটা ভিলেনমার্কা হাসি দিয়ে খুট করে ফোন রেখে দিল ঘুমকাতুরে।

সবাই কিছুক্ষণ হা হুতাশ করলো। তারপর ফোন রেখে আড্ডার কথা মনে করে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি নিয়ে যার যার কাজে ব্যস্ত হল। বিকেলে তর্কবিদ কোন তর্ক না পেয়ে অলস চোখে ইমেইল পড়ছিল। সভাকবি পাঠিয়েছে চার লাইনের কবিতা। “দৃশ্যপটের বদল ঘটুক খোলা মাঠটা নাইবা রাখুক মনে, যন্ত্র দিয়েই আড্ডা হবে দুই প্রান্তের দুটি ঘরের কোণে।

” এই পড়েই তর্কবিদ তর্ক জুড়ে দিলো। দুটি ঘর মানে!! বাকি ছয়জন কোথায় যাবে! কবি উত্তর দিল- ‘আট প্রান্তের আটটি ঘরের কোণে’ এই লাইন কি এই কবিতায় জুড়ে দেয়া সম্ভব! সেটা তখন একটা গবিতা হয়ে যাবে না! আমি কি গবি! তারপর আর কী! সবাইকে এই তর্কমূলক ইমেইল ফরওয়ার্ড করা হলো। নানারকম মন্তব্য দিগ্বিদিক ছুটে যেতে থাকলো। সবকিছু দেখেশুনে সাহিত্যিক তার খেরোখাতায় লিখলো, “আড্ডা- প্রযুক্তির মাধ্যমে তর্ক বিতর্ক এবং বিভিন্ন অবাস্তব বস্তুকে বাস্তব প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা। ” আহা! নিজের লেখা দেখে সাহিত্যিক নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেল।

পরের আড্ডায় কথাটা অবশ্যই তুলতে হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।