কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! ১
সি আই এ হেডকোয়ার্টার
গুলিস্তান
বাংলাদেশ
সকাল ১১.৪৭
চিন্তিত মুখে নিজের চেয়ারে বসে আছেন সি আই এ চিফ রাহাত খান। তার মেজাজ মোটেও ভালো নেই। একটু পর পরই তিনি দাঁত কিড়মিড় করে কাকে যেন বাপ মা তুলে গাল দিচ্ছেন। আর একটু পর পর নিজের চুল ধরে টানাটানি করছেন। এতে করে তার মাথায় মসৃণ টাকের চারপাশে যে সামান্য কটি চুল অবশিষ্ট আছে সেগুলিও বিলুপ্তির হুমকিতে পতিত হচ্ছে।
রাহাত খানের সামনে যে মানুষটা দুই হাত গুপ্তাঙ্গের সামনে দিয়ে লজ্জায় কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার নাম জেমস বন্ড। হ্যাঁ, সেই দুর্ধর্ষ ব্রিটিশ এজেন্ট জেমস বন্ড এখন বাংলাদেশ সি আই এর অফিসার।
রাহাত খান বললেন, “জেমস!”
বন্ড বলল, “যাহ! দুষ্টু!”
“কে দুষ্টু?” চেঁচিয়ে উঠলেন রাহাত খান।
“অ্যা-ই তুমি আমার সাথে এত দুষ্টুমি করে কথা বল কেন? আমার কিন্তু লজ্জা লাগে!” লজ্জায় কুকড়ে গেল বন্ড।
রাগে অন্ধ হয়ে চেয়ার থেকে প্রায় লাফ দিয়ে উঠলেন রাহাত খান।
খপ করে ধরতে গেলেন জেমস বন্ডের হাত।
বন্ড লাফ দিয়ে সরে গিয়ে বলল, “না না বিয়ের আগে না, বিয়ের আগে না!”
হতাশ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলেন রাহাত খান। কি হয়েছে বন্ডের? সে এরকম ব্যবহার করছে কেন? কি করেছে তাকে খবিশ চৌধুরী?
খবিশ চৌধুরী! নামটা মনে আসতেই আবার মা বাপ তুলে কিড়মিড় করে গালাগালি শুরু করলেন রাহাত খান।
২
দশ দিন আগের ঘটনা।
কুখ্যাত বিজ্ঞানী খবিশ চৌধুরীকে ধরার জন্য সি আই এ থেকে জেমস বন্ডকে একটা গোপন অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়।
দায়িত্ব নিয়ে বন্ড যাত্রা শুরু করে খবিশ চৌধুরীর ডেরার উদ্দেশ্যে। প্লেন থেকে প্যারাট্রুপিং করে নেমে A K - 47 দিয়ে পাঁচশ, ছুরি দিয়ে দুইশ, ঘুষি আর লাথি মেরে দেড়শ, বুলেটের খোসা দিয়ে একশ আর ফুঁ দিয়ে গোটা পনের শত্রুকে খতম করে খবিশ চৌধুরীর বেডরুমে ঢুকে পড়ে বন্ড। গিয়ে দেখে, বিছানায় শুয়ে আছে অপূর্ব সুন্দরী এক রমণী।
লুল বন্ড ভুলে যায় অ্যাসাইনমেন্টের কথা। সে হাঁটু গেঁড়ে সুন্দরীর সামনে বসে গদগদ কণ্ঠে বলে, “ওয়ানা বি মাই বন্ড গার্ল?”
সুন্দরী বলে, “কিন্তু তুমি তো একটা লুলা।
একটা বন্ড গার্লকেও তুমি ধরিয়া রাখিতে পারো নাই। সবাই ভাগিয়াছে। তোমার এনার্জি লইয়া আমার সন্দেহ জাগিতেছে। “
বন্ড বলল, “আরে নাহ! তুমি মনে হয় বন্ড সিনেমাগুলো পুরোটা দেখো নাই, বিশেষ জায়গাগুলো কাটিয়া কাটিয়া দেখিয়াছ। সেইজন্য বুঝিতে পারিতেছ না।
“
সুন্দরী বলল, “নাহ। তোমাকে বিশ্বাস নাই। তবে একটাই উপায় আছে। তুমি যদি এই বিশেষ ক্যাপসুলটা খাইয়া লও তবে তোমার শরীরে হাতির শক্তি আসিবে। তখন দশ বিশ মিনিট নয়, পুরো সিনেমাতেই তুমি ঐ কাটাকাটির দৃশ্য রাখিতে পারিবে।
“ বলে সুন্দরী তার সাপের চামড়ার ব্যাগের ভিতর থেকে একটা লাল ক্যাপসুল বের করে দিল।
বন্ড ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাপসুলটা সুন্দরীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গপাৎ করে গিলে ফেলল। তারপর ঢোক ঢোক করে পানি খেয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সুন্দরীর দিকে। কিন্তু একটু পরেই তার মাথা ঘুরতে লাগল, বমি পেতে লাগল প্রবলভাবে। বন্ড বলল, “তুমি আমাকে কি খাইতে দিয়াছ, সুন্দরী?”
সুন্দরীর মুখোশ খুলে খবিশ চৌধুরী বলল, “ঘুমের ওষুধ দিয়াছি, কুত্তার বাচ্চা! অনেক দিন ধরিয়াই তোমাকে ধরার চেষ্টা করিতেছিলাম, কিন্তু সুযোগ পাইতেছিলাম না।
আজ তোমাকে পাইয়াছি। আজ আর ছাড়াছাড়ি নাই। হা হা হা হা। ওরে হো হো হো হো। “
“না-আ-আ-আ-আ”, তারপর আর জেমসের কিছু মনে নেই।
৩
রাহাত খানের ল্যাপিতে সবসময় ফেসবুকে লগ ইন করাই থাকে। কারণ বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন সময় ঘুমায়। তাই বিভিন্ন দেশের মানুষ ফেসবুকও ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে। বলা তো যায় না, কখন কোন সুন্দরী অনলাইনে থাকে।
জেমসের অবস্থা দেখে খারাপ হওয়া মেজাজটা ভালো করার জন্য ফেসবুকে ঢুকলেন রাহাত খান।
ইনবক্সটা ওপেন করেই মনটা ভালো হয়ে গেল তার। ঐতিন্দ্রিলা অহনা নামে যে ভারতীয় মেয়েটা এতদিন ধরে তার সাথে ফেসবুকে চ্যাট করে এসেছে সে যেন কি একটা পাঠিয়েছে। সাথে সাথে মেসেজ ওপেন করলেন তিনি।
হায় হায়, এসব কি লেখা? রাহাত খান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। তার আর মেয়েটির চ্যাট লিস্ট ছিল অনেকটা এরকম...
২০/০১/২০১২
হাই অহনা! কি সুইট নেইম!
তাই?
কি কর তুমি?
পড়াশোনা।
তুমি?
আমি? আমি কি জানো? গেস কর তো!
কি আবার? হবা কিছু একটা।
এই শোনো, কাউকে বোলো না কিন্তু, আমি সি আই এ চিফ রাহাত খান।
সত্যি?
হ্যাঁ। ইম্প্রেসড?
নট ইয়েট। বাই।
২১/০১/২০১২
হাই।
হুম।
আমি যে সি আই এ চিফ বিশ্বাস হয় না?
না।
কেন?
বিশ্বাস হবেই বা কেন?
আচ্ছা, কি বললে তুমি বিশ্বাস করবে?
সি আই এ হলে তো তোমাদের অনেক অ্যাসাইনমেন্ট থাকে। তা দুই একটা মিশন সম্বন্ধে বল, দেখি বিশ্বাস করা যায় নাকি।
না না, আমার চাকরি চলে যাবে।
থাকো তুমি তোমার চাকরি নিয়ে, লায়ার!
আরে শোন শোন...
২৬/০১/২০১২
হাই।
কি?
আমাদের মিশন সম্বন্ধে শুনবা?
বলবা? ধুর, তুমি তো বানায়া বানায়া বলবা।
আরে নাহ। বলি?
বল।
এক বছর আগে চাঙ্খারপুলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোমেজকে আমরাই আটক করেছিলাম। কয়েক মাস আগে আলীম হলের “টয়লেটে ভুত” রহস্য আমরাই সমাধান করেছিলাম মাত্র পনের দিনে।
ধুর, এগুলা তো সবাই জানে।
তাহলে শোন, কাউকে বলবা না কিন্তু।
কেন বলব?
খবিশ চৌধুরীকে চেন?
না।
কে সে?
কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও বিজ্ঞানী। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য আমরা একটা মিশন সেট করছি।
তাই নাকি? তা কে যাচ্ছে মিশনে?
তুমি বিশ্বাস করবা না, এই মিশনে যাচ্ছে জেমস বন্ড!
জেমস বন্ড! ও মাই সুইটহার্ট!! ও তো আমার হিরো!!! আচ্ছা, ও কিভাবে খবিশকে ধরবে?
হু হু, আগে বল আমাকে তুমি বিশ্বাস করতেসো?
করতেসি তো জান! বল না প্লিজ।
বললে কি দিবা?
কি দিব? ছি ছি তুমি কি দুষ্টু!
তাই? কি দিবা আগে বল।
তুমি কি চাও?
তোমার ফোন নম্বর।
আচ্ছা ঠিক আছে। দিব। আগে বল জেমস কিভাবে খবিশকে ধরবে?
তাহলে শোন, ...
০৭/০২/২০১২ (আজকের তারিখ)
হেই রাহাত বুড়ো!
তোমার দেয়া ইনফরমেশন দিয়ে আমি জেমস বন্ডকে হাতেনাতে ধরতে সক্ষম হয়েছি। ওর ধারণা ও আমার অনেকগুলো লোককে গুলি করে তারপর আমার বেডরুমে ঢুকেছিল। কিন্তু আসলে আমার পক্ষের কেউই মারা যায় নি, ওগুলো ছিল হলোগ্রাফিক ইমেজ।
আমি তো জানতামই সে কখন কোন পথ দিয়ে আসবে, কি অস্ত্র আর যন্ত্রপাতি নিয়ে আসবে, কারণ সেগুলো তো তুমিই আমাকে বলেছ! হা হা হা হা!
জেমসকে আমি প্রথমে ঘুমের ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করি। তারপর ওর ব্রেনে আমি সামান্য একটু সার্জারি করি। এতে কি হয় জানো? ও বাইরে পুরুষ থাকলেও ভিতরে ভিতরে মেয়ে হয়ে যায়! আর এখন ও তোমাকে ওর প্রেমিক ভাবছে নিশ্চয়ই!!
মেয়েটাকে নিয়ে সুখে থেকো, বুড়ো।
ইতি,
“ঐতিন্দ্রিলা অহনা” ফেইক আই ডির মালিক,
খবিশ চৌধুরী (খবস)।
রাহাত খান মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়েন।
জেমস বন্ড তার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ঠিক তখনই ইলোরা একটা ফাইল হাতে রাহাতের রুমে ঢোকে।
রাহাত খান বলেন, এইটা কি?
ইলোরা বলে, খবিশ চৌধুরীকে জেমস বন্ড বা মাসুদ রানা নয়, শার্লক হোমস বা ফেলুদাও নয়, ধরতে পারবে একজনই। এই যে তার প্রোফাইল।
রাহাত খান অনেকক্ষণ ধরে শূন্য দৃষ্টিতে ফাইলটার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
ওখানে একজন কালো, মোটা মানুষের ছবি দেয়া আছে। তার কোন আর্মি ট্রেনিং নেই, নেই কোন মেডেল। সি আই এ বা সিক্রেট সার্ভিসের হয়েও কাজ করার কোন অভিজ্ঞতা নেই তার। তার নামের আগে শুধু একটা বিশেষণ আছে, প্রফেসর।
প্রফেসর মিরাজের ফাইলটার দিকে অনেকক্ষণ হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন রাহাত খান।
(প্রথম পর্ব সমাপ্ত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।