আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রফেসর পেঙ্গুইন

ইগলু বিগলু
বরফের চেয়ারে হেলান দিয়ে বই পড়ছে প্রফেসর পেঙ্গুইন। তার সামনে বরফের টেবিল। চামড়ায় ঢাকা।
দেয়ালে ঝুলছে মানচিত্র। তাক ভরা বই।

মেঝেতে মাদুর পাতা। সেখানে ছাত্র-ছাত্রী বসে।
প্রফেসর পেঙ্গুইনের চোখে চশমা। মাথায় হ্যাট। গলায় টাই।

পায়ে কেডস।
সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। দূরে উঁচু উঁচু পাহাড়। সাদা বরফে ঢাকা। চারদিকে মেঘ আর কুয়াশা।


বাইরে তুষার পড়ছে। অদূরে সমুদ্র। পানি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। সেই ঠাণ্ডা পানিতে তিমিরা সাঁতার কাটে।
পানির নিচে আরও আছে ছোট-বড় নানান রঙের মাছ।

রাক্ষুসে হাঙরও আছে।
সমুদ্রের অনেক জায়গায় পানি জমে বরফ। সেই বরফের ওপর স্কি করা যায়।
 
রিস্কি স্কি
প্রফেসর পেঙ্গুইন ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। তারপর জোরে ডাক দেয়- “স্কি!”
সঙ্গে সঙ্গে কয়েক শ পেঙ্গুইন তার দুই পাশে এবং পেছনে এসে দাঁড়ায়।

সবাই স্কি করতে প্রস্তুত।
প্রফেসর পেঙ্গুইন চেঁচিয়ে বলে-“স্টার্ট!”
শুরু হয়ে যায় বরফের ওপর দিয়ে সবার পিছলে চলা। শাঁই শাঁই শাঁই। হো হো হো। একবার সোজা, একবার ডানে, একবার বামে।


 
স্কি করতে করতে সবাই গান ধরে:
বরফ শীতল হিম হিম
তুষার পড়ছে রিমঝিম
আমরা এগিয়ে চলি
দুই পায়ে হিম দলি
আকাশে আলোক টিমটিম।
হৈ হৈ হৈ...
 
এগিয়ে চলছি বাধাহীন
হেসে খেলে কেটে যায় দিন
ছুটছুটছুট আরও জোরে
ভনভনভন মাথা ঘোরে
নাচো গাও তা ধিন তা ধিন।
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে যায় পেঙ্গুইনের দল। সামনে উঁচুনিচু জায়গা। হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায় দুটি ছোট পেঙ্গুইন।

কঁকায়। লেগেছে খুব।
প্রফেসর পেঙ্গুইন বলে, “স্টপ!” সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্কি করা থামিয়ে দেয়।
প্রফেসর পেঙ্গুইন আহত দুজনের দিকে এদিয়ে যায়। তাদেরকে কাঁধে তুলে নেয়।

তারপর সবাই মিলে হাঁটা দেয় বাড়ির দিকে।
 
শ্বেতভালুকের তালুক
শ্বেতভালুকের তালুক। সেখানে থাকে বাবা ভালুক, মা ভালুক আর বাচ্চা ভালুক। সবার শরীর ধবধবে সাদা লোমে ঢাকা।
বাচ্চা ভালুকটির নাম ভুলু।

বাবা-মা তাকে মাছ এনে দিয়েছে। সে তা দিয়ে নাস্তা করেছে।
ভুলু লাল-নীল স্কুল ইউনিফর্ম পড়ে কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে, ইগলু বিগলুর উদ্দেশ্যে।
ইগলু বিগলুতে পৌঁছে দেখে, প্রফেসর পেঙ্গুইন চেয়ারে হেলান দিয়ে বই পড়ছে। সে মাদুরের উপরে বসে পড়ে।


প্রফেসর পেঙ্গুইন বলে, “আজ নাচ আর গান হবে। ”
ভুলু বলে, “আচ্ছা। ”
 
প্রথমে গান। ভুলু শুরু করে:
“হিপ হিপ হুর রে
সারাদিন ঘুর রে
আয় খেলোয়াড় বেশে
বরফের দেশে দেশে
সাগরের ক‚ল ঘেঁষে
যাই বহু দূর রে।
 
হিপ হিপ হুর রে
আনন্দপুর রে
কত মজা এইখানে
ছুটি অজানার পানে
দিন কাটে নাচেগানে
প্রাণে কত সুর রে।


গান শেষ হলে প্রফেসর পেঙ্গুইন বলে, “এবার আমি গাইছি, তুমি নাচো। ” প্রফেসর পেঙ্গুইনের গানের সঙ্গে চলে ভুলুর নাচ।
ভুলু নাচে হেলে-দুলে। ঘুরে ঘুরে। গড়িয়ে গড়িয়ে।

ডিগবাজি খেয়ে।
নাচ গান দেখতে ভিড় করে বাচ্চাকাচ্চা পেঙ্গুইন। সবাই হাততালি দেয়।
 
সিলের ঝিল
সিলের ঝিলে বাস করে ছোট শীলুর পরিবার। সে তার বাবা-মা, ভাই-বোন, নানা-নানির সঙ্গে থাকে।


সে ইগলু বিগলুতে পড়ে। আজ স্কুলে যাবে। তাড়াতাড়ি ফ্রক পড়ে নেয়। তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
প্রফেসর পেঙ্গুইন চোখে দূরবীন লাগিয়ে কী যেন দেখছে।

শীলুকে দেখে বলে, “বসো, আজ ছবি আঁকবে। ”
শীলু বলে, “কী আঁকবো?”
“এই দূরবীন দিয়ে সাগরে যা দেখবে, তাই আঁকবে। ”
শীলু চোখে দূরবীন লাগিয়ে সাগরের দিকে তাকায়। দেখে একটি জাহাজ।
শীলু খাতায় রং-পেন্সিল দিয়ে জাহাজের ছবি আঁকে।

সাগরে বড় বড় ঢেউ। জাহাজের লোকজন কী যেন টেনে তুলছে।
শীলু বলে, “ওরা ওখানে কী করে?”
“ওরা তিমি শিকার করে”, প্রফেসর পেঙ্গুইন বলে। “তিমিদের বাঁচাতে হবে। ”
শীলু মাথা নাড়ে, “হ্যাঁ।


 
কুস্তিতে দুস্তি
গ্রীষ্মের শুরু। শুরু হয়েছে সবার দৌড়ঝাঁপ। পেঙ্গুইন ছানারা খেলাধুলায় মেতেছে।
স্কুলের মাঠে দৌড় প্রতিযোগিতা। এক লাইনে দাঁড়িয়েছে এক দল পেঙ্গুইন ছেলেমেয়ে।

প্রফেসর পেঙ্গুইন বাঁশিতে ফু দেওয়ামাত্র দৌড় শুরু হয়।
দৌড়াতে গিয়ে সবাই একে অপরের পায়ে লেগে হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। শুরু হয় চিৎকার, চেঁচামেচি, ঝগড়া। একজন বলে, “তুমি আমাকে ল্যাং মেরেছো। ” আরেকজন বলে, “তুমি আমাকে ল্যাং মেরেছো।


প্রফেসর পেঙ্গুইন কাছে গিয়ে সবাইকে থামায়। বলে, “আমরা এখন অন্য খেলা খেলব। ”
“কী খেলা?”
“কুস্তি। ”
প্রফেসর পেঙ্গুইন কুস্তির নিয়মকানুন বলে দেয়। একে অপরকে ধাক্কা দিবে।

যে পড়ে যাবে, সে পরাজিত। যে দাঁড়িয়ে থাকবে, সে বিজয়ী। যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে কেউ না পড়ে, তবে সবাই বিজয়ী।
শুরু হয় কুস্তি। এক-দুই-তিন-চার-পাঁচ মিনিট।

কেউ পড়ে না।
প্রফেসর পেঙ্গুইন বলে, “তোমরা সবাই বিজয়ী। সবাই সবার দোস্ত। একে অপরকে আলিঙ্গন কর। এখন সবাই বিশ্রাম নাও।

আগামীকাল মস্ত কাজ আছে। ”
সবাই বলে, “কী কাজ?”
“অপেক্ষা কর। কাল সকালে সাগরের কাছে থাকবে। আমি নির্দেশ দেব। তখন বুঝবে।


এই বলে প্রফেসর পেঙ্গুইন সাগরতটের দিকে হাঁটা দেয়।
 
তিড়িংবিড়িং চিংড়ি
পানির নিচে চিংড়ির দল। কেউ চুপচাপ বসে আছে। কেউ সাঁতার কাটছে। ছোটরা তিড়িংবিড়িং লাফাচ্ছে।


প্রফেসর পেঙ্গুইন ডাক দেয়, “চিংড়ি সর্দার, বাড়ি আছ?”
চিংড়ি সর্দার বসে বসে ঝিমাচ্ছিল। ডাক শুনে সে প্রথমে চমকে ওঠে। তারপর আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়। “কে ওখানে? প্রফেসর পেঙ্গুইন?”
“হ্যাঁ, শোনো, কথা আছে। ”
“কী কথা?”
“উপরে আস, তারপর বলছি।


চিংড়ি সর্দার তিড়িং করে লাফিয়ে উপরে আসে।
প্রফেসর পেঙ্গুইন বলে, “তোমাদের সাহায্য লাগবে। ”
“কী সাহায্য?”
“শিকারিদের কাছ থেকে তিমি বন্ধুদের বাঁচাতে হবে। ”
“হ্যাঁ, তা বটে। কিন্তু কীভাবে?”
প্রফেসর পেঙ্গুইন তার পরিকল্পনা বুঝিয়ে বলে।


চিংড়ি সর্দার মাথা নাড়ে। বলে, “আচ্ছা। ” তারপর পানির নিচে গিয়ে আবার ঝিমাতে থাকে।
 
স্কুইড স্কোয়াড
প্রফেসর পেঙ্গুইন স্কুইডদের আস্তানায় যায়। তারা তখন প্যারেড করছে।

লেফট-রাইট-সমারসল্ট, লেফট-রাইট-সমারসল্ট।
লেফট-রাইট-সমারসল্ট করতে গিয়ে তাদের একজনের হাত-পা চুল-দাঁড়ি অন্যজনের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে প্যারেড বিঘিœত হচ্ছে। এ জন্য কমান্ডার বারবার ধমক দিচ্ছে।
রাত হয়ে আসছে।

তাড়াতাড়ি প্যারেড শেষ করতে হবে।
এমন সময় প্রফেসর পেঙ্গুইনের ডাক। “স্কুইড কমান্ডার, শোনো, কথা আছে। ”
কমান্ডার প্যারেড থামায়। তারপর প্রফেসর পেঙ্গুইনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে, “কী কথা?”
“শিকারিদের হাত থেকে তিমি বন্ধুদের বাঁচাতে হবে।


“বুঝলাম। কিন্তু কিভাবে?”
প্রফেসর পেঙ্গুইন তার পরিকল্পনা খুলে বলে।
কমান্ডার বলে, “হুম। খুব ভালো। ”
কমান্ডার স্কুইড সেনাদের ছুটি দিয়ে দেয়।

নির্দেশ দেয়, চুলদাঁড়ি ছেটে রাখবে। আর কাল সকালে তিমি শিকারিদের জাহাজের কাছে কাছে থাকবে।
ভুলু-শীলুর মাথায় ঘিলু
ভুলু ও শীলু ইগলু বিগলুতে বসে লেখাপড়া করছে।
এ-বি-সি-ডি...
ওয়ান-টু-থ্রি-ফোর...
ভুলু: “টু প্লাস টু ফোর। ”
শীলু: “আই ওয়ান্ট টু লার্ন মোর।


ভুলু: “টু মাইনাস টু জিরো। ”
শীলু: “আই অ্যাম দ্য রিয়েল হিরো। ”
প্রফেসর পেঙ্গুইনের প্রবেশ। ভুলু-শীলু, তোমাদের মাথা ভরা ঘিলু। সেই ঘিলুগুলো কাজে লাগাতে হবে।


“শোনো ভুলু-শীলু, তিমিরা আজ বিপণœ প্রজাতি। তাদের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে। শিকারিরা যদি এভাবে তিমি-শিকার চালিয়ে যায়, তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তারা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
তিমিরা আমাদের বন্ধু। তাদেরকে বাঁচাতে হবে।


ভুলু ও শীলু মনোযোগ দিয়ে প্রফেসর পেঙ্গুইনের কথা শোনে।
কাল সকালে কী করতে হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়। ভুলু ও শীলু চিন্তিতভাবে যার যার পথে চলে যায়।
 
কোল্ড ডে-তে বোল্ড
পরদিন সকাল। খুব ঠাণ্ডা।

জাহাজের উপর দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন লোক। তারা একটি তিমিকে জালে আটকে ফেলেছে। এখন তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে।
কিন্তু কিছুতেই টেনে তুলতে পারছে না। কারণ স্কুইড সেনারা জাল টেনে ধরেছে।


সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে আছে প্রফেসর পেঙ্গুইন। হঠাৎ সে হাঁক দেয়, “জাম্প!”
একদল পেঙ্গুইন ঠাণ্ডা পানিতে লাফিয়ে পড়ে। সাঁতরে এগিয়ে যায় জাহাজের দিকে। সবার আগে আগে ভুলু ও শীলু।
ভুলু ও শীলু জাহাজে উঠে ক্যাপ্টেনের রুমে যায়।

পেঙ্গুইনরা সজোরে চিৎকার করতে করতে নাবিকদের ঘিরে ধরে। ঠোকরাতে থাকে। নাবিকেরা ভয় পেয়ে জাল ছেড়ে দিয়ে জাহাজের ভেতরে চলে যায়। ক্যাপ্টেনের কাছে যায়। গিয়ে দেখে, ক্যাপ্টেনকে চেপে ধরে আছে একটি ভালুক ও একটি সিল।


ক্যাপ্টেন বলে, “তাড়াতাড়ি জাহাজ ছাড়। এখান থেকে চলে যেতে হবে। ”
নাবিকেরা জাহাজ চালিয়ে দূরে চলে যায়। ভুলু, শীলু এবং পেঙ্গুইনরা সবাই লাফিয়ে জাহাজ থেকে নেমে আসে।
ধিন ধিন ধিন তা নাই কোনো চিন্তা
শিকারিদের ফেলে যাওয়া জালে জড়িয়ে আছে তিমি।


প্রফেসর পেঙ্গুইন আদেশ দেয়, “চিংড়ি, তোমরা তোমাদের দাঁড়া দিয়ে জাল কেটে ফেল। ”
চিংড়ির দল তাদের ধারালো দাঁড়া দিয়ে জাল কেটে ফেলে। তিমি জাল থেকে বেরিয়ে আসে।
তিমি বলে, “বন্ধুরা, তোমাদের সকলকে ধন্যবাদ। তোমরা আমার জান বাঁচিয়েছ।


ধন্যবাদ স্কুইড বন্ধুরা।
ধন্যবাদ চিংড়ি বন্ধুরা।
ধন্যবাদ বন্ধু ভালুক ও বন্ধু সিল।
ধন্যবাদ ভুলু ও শীলু।
ধন্যবাদ প্রফেসর পেঙ্গুইন।


 
সবার মুখে হাসি। সবার চোখে জল। সবাই মিলে গান ধরে:
“আমরা বন্ধু সবাই
আমরা আপন সবাই।
আমাদের মধ্যে নাই কোনো ভেদ,
সকলের ভালো চাই নাই মনে খেদ।
বরফে বরফে ঢাকা আমাদের দেশ,
সাদা রঙে আঁকা ছবি সুন্দর বেশ।


হিমহিম ভ‚মি জলে আমরা সুখি,
বহুদূর দিগন্তে আলো দেয় উঁকি।
বাঁচি-মরি একসাথে থাকি মিলেমিশে,
আমাদের তবে আর ভয় থাকে কী সে?
আমরা বন্ধু সবাই
আমরা আপন সবাই। ”

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.