আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রফেসর মিরাজের অতীত দর্শন

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! (অনেক দিন আগে দেয়া গল্পের রিপোস্ট) (প্রফেসর মিরাজের সাথে আপনারা সবাই কমবেশি পরিচিত। অবশ্য আমি ছাড়া উনার জীবন হাইলাইট করে লেখালেখি করার অন্য কোন লোক পৃথিবীতে আছে বলে আমার জানা নেই, তাই আমার লেখা না পড়লে মিরাজের অদ্ভুত জীবন সম্বন্ধে কিছু না জানাই স্বাভাবিক। যাহোক, কিছুদিন আগে মিরাজ এক কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, টাইম মেশিনের লোভ দেখিয়ে কিছু লোভী আমেরিকানকে আচ্ছামত নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন তিনি। তারপর সেই কাহিনী ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর মোটামুটি ন্যাশনাল হিরোতে পরিণত হয়েছিলেন মিরাজ। আর কিভাবে তিনি কাজটি করেছিলেন তা নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম আমি।

গল্পের নাম দিয়েছিলামপ্রফেসর মিরাজের আশ্চর্য টাইম মেশিন (!) আজ আমি আবার গল্প বলতে এসেছি, এবং তার মানেই হচ্ছে এরই মধ্যে প্রফেসর মিরাজ আবার নতুন কিছু ঘটিয়ে ফেলেছেন। তো পাঠক, বিছানায় আয়েশ করে পা উঠিয়ে বসুন এবং উপভোগ করতে প্রস্তুত হউন প্রফেসর মিরাজের আকর্ষণীয় নতুন কাহিনী। ) প্রযুক্তির উপর একটা আন্তর্জাতিক মিটিঙে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী প্রফেসর মিরাজ। এখানে এসে তিনি দেখলেন, সবাই যে যার মত চাপা মারছে। এক আমেরিকান বলছে তারা নাকি সি আই এ কে এত শক্তিশালী করবে যে এর পর থেকে অপরাধ করা লাগবে না, অপরাধের চিন্তা করলেই অপরাধীকে ধরে ফেলা যাবে(!)।

এক জাপানি বলছে তারা নাকি অদূর ভবিষ্যতে রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে সূর্যের উদয় আর অস্ত নিয়ন্ত্রণ করবে। এক উত্তর কোরিয়ান বলছে তারা নাকি এমন শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা বানাবে যাতে পুরো পৃথিবীই ধাক্কা খেয়ে নিজের কক্ষপথ থেকে সরে মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে গিয়ে পড়বে। এসব গুলতাপ্পি শুনে মাথার ঠিক রাখতে পারলেন না প্রফেসর মিরাজ। এত চাপাবাজি আর কাহাতক সহ্য করা যায়? তিনিও বলে উঠলেন, হুহ, তোমরা আর কি পার, আমি অতীত দেখতে পারি। ব্যস, দশ মিনিটের মধ্যে ইন্টারনেটের কল্যাণে সারা বিশ্ব জেনে গেল, বাংলাদেশের বিজ্ঞানী টাইম মেশিন আবিষ্কার করেছেন! পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করে স্টাডিরুমের দরজা খুলেই মিরাজ আবিষ্কার করলেন, ওটা প্রতিদিনকার মত ফাঁকা নেই।

ওখানে বসে আছে দশজন বিদেশী। কি চাই? কোন রকম ভনিতা না করেই এক বিদেশী বলল, আপনার টাইম মেশিনটা দেখতে চাই। টাইম মেশিন? মানে? যেটা দিয়ে আপনি অতীত দেখতে পারেন। আমি অতীত দেখতে পারি? কে বলেছে? আপনিই বলেছেন। কালকে, প্রযুক্তির উপর একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে।

তাই? কি বলেছি? বলেছেন, নিজের হাতে ধরা একটা কাগজ দেখে লোকটা বলে, “হুহ, তোমরা আর কি পার, আমি অতীত দেখতে পারি”। মিরাজ হেসে উঠলেন। তার মানে তোমরা ধরে নিলে... স্যার, মুখ শক্ত হয়ে গেল বিদেশীদের, আপনি বলেছেন আপনি অতীত দেখতে পারেন। এবং তা যদি সত্যি হয়, তাহলে আমাদের তার প্রমাণ দেখাতে হবে। যদি না দেখাই? তাহলে আপনাকে ইন্টারপোল ধরে নিয়ে যাবে।

উহ! বললেই হল? অভিযোগ? এই অভিযোগে যে আপনি সারা বিশ্বের সামনে মিথ্যাচার করছেন ও মিথ্যা আইডিয়া ছড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয়, আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। আপনার পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আপনার লেখা সমস্ত বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে... মিরাজ অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। এই প্রথম লাইসেন্স ছাড়া যেখানে সেখানে চাপা মারার জন্য নিজেকে নিজে একটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা করল তার।

তো আমি এখন কি করব? ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলেন মিরাজ। শক্ত মুখের এক বিদেশী উত্তর দিল, ভিতরে যান, টাইম মেশিন নিয়ে আসুন, এবং আমাদেরকে অতীতের কোন একটা দৃশ্য দেখিয়ে প্রমাণ করুন আপনার কথা অসত্য নয়। মিরাজ আমতা আমতা করতে লাগলেন। তার পা টলছে। আর, নাটকীয় ভাবে বলে উঠলেন আরেক বিদেশী, দয়া করে আপনার বেডরুমের নতুন দেয়াল ঘড়িটা খুলে আনবেন না।

নাটক করে আগেরবার পার পেয়েছেন, এবার আর পার পাবেন না। মিরাজের ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। ঘটনাটা এমন, কয়েক মাস আগে তিনি একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন। ব্যস, আর যায় কোথায়, সারা বিশ্বে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল তিনি নাকি টাইম মেশিন আবিষ্কার করেছেন। সেই “টাইম মেশিন” কেনার জন্য আবার কিছু আমেরিকান তাকে পঁচিশ লাখ ডলার পর্যন্ত দিতে চাইল! তিনি বললেন, আপনারা কত বছর পরের সময় দেখতে চান? তারা বলল, দশ মিনিট পরের সময়! তিনি ঠিক দশ মিনিট পরে নিজের বেডরুমের নতুন দেয়াল ঘড়িটা খুলে এনে আমেরিকানদের বললেন, দেখে নাও দশ মিনিট পরের সময়!! বোল্ড আউট হয়ে লেজ তুলে পালাল লোভী আমেরিকানরা।

সেবার তো নাহয় কোনভাবে পার পেয়েছিলেন মিরাজ, কিন্তু এখন? এখন তো অতীত দেখা নিয়ে প্রশ্ন...এখন তিনি কি করবেন? মিরাজ ভিতরে চলে গেলেন। কিছু একটা করতেই হবে, নাহলে মানসম্মান পাঙ্কচার। ওদিকে মিরাজের স্টাডিরুমে বসা বিদেশীরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, এইবার পেয়েছি শালাকে। এবার দেখব সে কোথায় পালায়। এক মিনিট গেল।

দুই মিনিট। পাঁচ। দশ। এক ঘণ্টা। দুই ঘণ্টা।

বিদেশীরা অধৈর্য হয়ে গেল। একজন বলল, ইন্টারপোলকে তাহলে রেডি হতে বলি? বল। সে ইন্টারপোলের এজেন্টের নাম্বারে ফোন করল। হ্যাঁ, হ্যাঁ, চলে আসুন, পাখি খাঁচায়। ইন্টারপোলের অফিসার মিরাজের বাসার দিকে রওনা দিলেন।

দশ মিনিট পরে খুলে গেল স্টাডিরুমের দরজা। বিদেশীরা দেখল, মিরাজ আর ইন্টারপোল কর্মকর্তা একসাথে দরজা দিয়ে ঢুকছেন। কর্মকর্তা তাকে বলছেন, দাদু, আমার বউকে কন্ট্রোল করার রিমোট টা তাহলে কবে বানিয়ে দিচ্ছেন? আর মিরাজ তার ঘাড়ে হাত দিয়ে বলছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই পেয়ে যাবে, খোকা! বিস্ময়ে ঝুলে পড়ল বিদেশীদের চোয়াল। মিরাজ এবার বিদেশীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি বলছিলে যেন? একজন আমতা আমতা করে বলল, আপনার টাইম মেশিন... মিরাজ বললেন, টাইম মেশিন? আমি কি কখনও বলেছি যে আমি টাইম মেশিন আবিষ্কার করেছি? বিদেশীরা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। বলল, কিন্তু আপনি বলেছেন আপনি অতীত দেখতে পারেন... হ্যাঁ পারি।

তাহলে সেটার প্রমাণ দেখান। মিরাজ সেই বিদেশীকে ধরে স্টাডিরুমের জানালার কাছে নিয়ে গেলেন। বাইরে দেখা গেল সকালের মিষ্টি রোদে প্রকৃতি আড়মোড়া ভেঙ্গে আস্তে আস্তে জেগে উঠছে। মিরাজ বললেন, সূর্যের দিকে তাকাও। বিদেশী তাকাল।

কি দেখছ? সূর্য। তার মানে হচ্ছে সূর্য থেকে তোমার চোখে আলো এসে পড়ছে, তাই না? বিদেশী মাথা চুলকে বলল, হ্যাঁ। এবার কেউ একজন বল দেখি, বাকিদের দিকে ইঙ্গিত করলেন তিনি, সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে কতক্ষণ লাগে? সবচেয়ে ভ্যাবলা চেহারার বিদেশীটা উত্তর দিল, আট মিনিট আঠার সেকেন্ড। গুড। তার মানে আমরা এখন যে সূর্যকে দেখছি, তা আসলে আট মিনিট আঠার সেকেন্ড আগের সূর্য।

কেউ কিছু বলল না। শুধু ভ্যাবলা মাথা নাড়াল, রাইট। ডেফিনিটলি রাইট। তারমানে আমরা বর্তমানে অবস্থান করে আট মিনিট আঠার সেকেন্ড আগের দৃশ্য দেখলাম। রাইট? বলল ভ্যাবলা, হ্যাঁ, রাইট।

অর্থাৎ, নাটকীয়ভাবে বললেন মিরাজ, আমরা অতীত দেখলাম। উপস্থিত সবার মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, বলে চললেন মিরাজ, পৃথিবীতে আমরা যত বস্তুই দেখি না কেন প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বস্তুটা থেকে আলো আসতে খুব অল্প হলেও সময় নেয়। তার মানে আমরা যখন একটা বস্তু দেখি তখন আসলে সেটার খুব অল্প সময়, হয়তো সেকেন্ডেরও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাগ পূর্বের অবস্থাটা দেখি। অর্থাৎ, আমরা তার অতীত দেখি।

ভ্যাবলা বিড়বিড় করে কি যেন বলতে লাগল। মিরাজ ইন্টারপোল কর্মকর্তার দিকে দেখিয়ে বললেন, এই যে দেখ, আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমি ওকে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব আছে। ওর শরীর থেকে আলোকে আমার চোখে আসতে হলে এই দূরত্বটা অতিক্রম করতে হবে।

এবং তাতে কিছু সময় ব্যয় হবে। হতে পারে সেটা এক সেকেন্ডের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ, বা সামথিং লাইক দ্যাট। তারমানে, ও হাসলে আমি তা দেখব সেকেন্ডের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কিছু অংশ অতিবাহিত হবার পর। অর্থাৎ, আমি ওর সেকেন্ডের ঐ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ পূর্বের অতীতটা দেখব। ক্লিয়ার? কেউ কোন কথা বলল না।

তারমানে, আমি অতীত দেখতে পারি। তোমরাও পার। এবারও কেউ কোন কথা বলল না। মিরাজ ভুঁড়ি নাচিয়ে বললেন, সো জেন্টলম্যান, আমার কাজ আছে, আমি উঠি। উইশ ইউ গুড লাক।

বাকি সবাইকে হতবাক বসিয়ে রেখে স্টাডিরুম থেকে বেরিয়ে এলেন খেয়ালি ও চাপাবাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর মিরাজ! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.