আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রফেসর মিরাজ ও একটি ধাঁধাঁ

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! আপনারা কি জানেন আমাদের সবার প্রিয় প্রফেসর মিরাজকে ভিনগ্রহবাসীরা একবার কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়েছিল? সেখান থেকে উনি কিভাবে বেঁচে ফিরেছিলেন সেটা কি কেউ জানেন? আমার তো মনে হয় জানেন না। আচ্ছা ঠিক আছে, না জানলেও সমস্যা নেই। আগে জানতেন না, আজকে জানবেন। আজকে আমি আপনাদের সেই গল্পটাই শোনাতে এসেছি। মিরাজ একবার পুরো সপ্তাহের বাজার করে রাস্তা দিয়ে ফিরছিলেন, এমন সময় তার চারপাশে হঠাৎ শোঁ শোঁ শব্দে বাতাস বইতে লাগল।

কারেন্ট শকের মত ঝি ঝি শব্দ হতে লাগল আশেপাশে। মিরাজ তার স্বভাববশত প্রথমে ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিলেন না। তিনি ভাবলেন হয়তো কোন প্রাকৃতিক কারণে এসব ঘটছে, হয়তো একটু পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কে জানত যে ঠিক ঐ সময়ে মুহূর্তে পৃথিবীতে ভিনগ্রহবাসীদের একটা স্পেসশিপ অবতরণ করছিল? আর সেজন্যেই ঐ অদ্ভুত জিনিসগুলো ঘটছিল? মিরাজ আরেকটু সামনে গিয়ে ব্যাপারটা আঁচ করতে পারলেন। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।

তার চারপাশে রচিত হয়েছে ভিনগ্রহবাসীদের শক্তিবলয়। এখন আর পালাবার উপায় নেই। মিরাজের সামনে একটু পরেই হঠাৎ যেন শূন্য থেকে উদয় হল একটা বিশাল মহাকাশযান। সেটার পরিধি এত বড় যে তার জন্য আর আকাশ দেখা গেল না। আস্তে আস্তে মাটিতে অবতরণ করল ওটা।

একটু পরে সেখান থেকে নেমে এল তিনজন ভিনগ্রহবাসী। তাদের প্রত্যেকের হাতে আবার বন্দুকের মত কি যেন একটা জিনিস। তিনজনই সোজা মিরাজের দিকে এগিয়ে এল। মিরাজ দৌড় দিয়ে ছুটে পালানোর একটা পৈশাচিক ইচ্ছা কোনভাবে দমন করলেন। এখন দৌড় দেয়া মানেই মৃত্যু।

মিরাজের কাছে এসে তারা মিরাজকে শুঁকে দেখল। ভুঁড়ি টিপল। পেটের পরিধি মাপল। দুই কানের মধ্যে আলো ফেলে দেখল। দুই পায়ের দৈর্ঘ্য মেপে সমান হয়েছে দেখে আশ্চর্য হয়ে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইল।

মিরাজ মনে মনে বলতে লাগলেন, হ, হইসে, এইবার যা। ভাগ। কাতুকুতু লাগে। সাথে সাথে তারা মিরাজের পেটে কাতুকুতু দিতে লাগল। মিরাজ হা হা হে হে হো হো করে হেসে উঠলেন।

ভিনগ্রহবাসীরা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর হাতের বন্দুকের মত জিনিসটা মিরাজের মুখে ঠেকিয়ে ফায়ার করল একজন ভিনগ্রহবাসী। মিরাজ ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। কিন্তু না। তেমন কিছুই ঘটল না।

বরং মিরাজের মনে হল, তার মুখে কেউ যেন লেবু টিপে দিয়েছে। জিনিসটা খেয়ে জিহবা দিয়ে ঠোঁট চাটতে লাগলেন মিরাজ। জিনিসটার টেস্ট ভালোই। তিনি ভাবলেন, হয়তো চাইলে আরেকটু পাওয়া যাবে। কিন্তু একটু পরেই তিনি টের পেলেন, তার ঘুম পাচ্ছে।

গভীর ঘুম। তিনি অচেতন হয়ে পড়ে গেলেন। ভিনগ্রহবাসীরা তাকে তুলে নিয়ে গেল তাদের স্পেসশিপে। তারপর যেভাবে পৃথিবীতে হঠাৎ করে এসেছিল সেভাবে হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে গেল মহাকাশযানটা। *** ঘুম ভেঙ্গে গেল প্রফেসর মিরাজের।

তিনি দেখলেন, তার উপর ঝুঁকে রয়েছে বিশালদেহী এক ভিনগ্রহবাসী। তার বেশ কয়েকটা হাত, বেশ কয়েকটা পা(এদের মধ্যে এক বা একাধিক জননাঙ্গ কাম মুত্রাঙ্গও থাকতে পারে), সাথে বেশ কয়েকটা শুঁড়। তার মাথাটা অনেক বড়, কিন্তু সে তুলনায় পেটটা একদমই ছোট। মিরাজ মাতৃভাষা বাংলায় গালি দিয়ে উঠলেন, আমারে এইখানে ধইরা আনসশ ক্যান হারামজাদা? ভিনগ্রহবাসী খ্যাঁক খ্যাঁক করে একটা শব্দ করল। তারপর স্পষ্ট বাংলায় বলল, তোরে ধইরা আনসি কারণ তোরে আমরা খুইলা খুইলা দেখমু।

তারপর তোর চামড়া দিয়া মুজা বানামু। মিরাজ ভয়ানকভাবে চমকে উঠলেন, অ্যাঁ!! তুমি বাংলা জানো? ভিনগ্রহবাসী আবার খ্যাঁক খ্যাঁক করে শব্দ করল। এটা তার হাসির শব্দ হবার ভয়ানক সম্ভাবনা রয়েছে। জানি না আবার? সব ভাষা জানি। কারণ আমাদের আছে “ফু-গোল ট্রান্সলেটর”! দুই তিনটা হাত তুলে আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠল সে।

মিরাজ ভ্রূ কুঁচকে বললেন, ফু-গোল ট্রান্সলেটর! সেইটা আবার কি? ভিনগ্রহবাসী বলল, কেন, তোমাদের যদি গু-গোল ট্রান্সলেটর থাকতে পারে, আমাদের ফু-গোল ট্রান্সলেটর থাকতে পারবে না কেন বল দিকিনি বাপু? মিরাজ কাহিনীটা ধরতে পারলেন। পৃথিবীতে কয়েক বছর আগে গু-গোল নামের এক কোম্পানি ইন্টারনেটে নতুন একটা ট্রান্সলেটর খুলেছে, আর তার নাম দিয়েছে গু-গোল ট্রান্সলেটর। এর মাধ্যমে এক ভাষার বাক্য বা শব্দ অন্য ভাষায় সহজেই অনুবাদ করা যায় বলে তারা দাবি করেছে, কিন্তু মিরাজের মনে হয়েছে পুরোটাই আসলে তাদের ভাঁওতাবাজি। একবার কলিগদের গুঁতোগুঁতিতে তিনিও গু-গোল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করতে গিয়েছিলেন, সেখানে বাংলায় তিনি ইনপুট দিয়েছিলেন, “মিরাজ একজন ভালো মানুষ”। কিন্তু সেটাই ইংরেজিতে কি এসেছিল জানেন? “Miraj is a good review”!!! সাথে সাথে মেজাজ খারাপ করে চলে এসেছিলেন মিরাজ।

তিনি good review! ফাইজলামি নাকি? গুল্লি মারি গু-লম্বা...সরি...গু-গোল ট্রান্সলেটরের!! মিরাজ বললেন, আমাদের গু-গোল ট্রান্সলেটর তো পুরাই ফাউল। পুরাই আজাইরা, বয়া কাম নাই। কিন্তু তোমাদের ফু-গোল ট্রান্সলেটর তো ভালোই মনে হইতেছে। ভালোই তো বাংলা বলতেছ তুমি। ভিনগ্রহবাসীর বুক গর্বে তিন ইঞ্চি উঁচু হয়ে উঠল।

এদের গ্রহে হয়তো এই নিয়ম। কেউ গর্ববোধ করলে তার বুক হয়তো আসলেই কিছুটা ফুলে ওঠে। ভিনগ্রহবাসী বলল, তোমারে আমার ভালো ঠাহর হইতেছে। থাক, তোমারে আজকে কাটমু না। আজকে তুমি রেস্ট নাও।

কালকে কাটমুনে। মিরাজ দার্শনিকের মত ভাবলেন, নাহ, জীবনটা তাহলে একদিন প্রলম্বিত করা গেল। ভালোই তো। তিনি বললেন, আমারে তো কাইটাই ফেলবা, তো তার আগে আসো কিছু সুখদুঃখের গল্প কইরা নিই। ভিনগ্রহবাসী বলল, আইচ্ছা।

তুমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক। বল কি বলবা। মিরাজ প্রশ্নে প্রশ্নে বের করে ফেললেন যে, এই ভিনগ্রহবাসীরা ভেগা নক্ষত্রপুঞ্জের একটা গ্রহ “ক্যাটওয়াক ওয়ান” থেকে এসেছে। এদের পৃথিবীতে আসার উদ্দেশ্য ছিল একটা বুদ্ধিমান জীবের নমুনা সংগ্রহ করা, তারপর তাকে কেটেকুটে তার শারীরিক গঠনটা দেখা। এরা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক উন্নত, তবু এদের জ্ঞানের গণ্ডিকে নিজেদের সৌরজগতের বাইরে প্রসারিত করার জন্যই এদের পৃথিবীতে আগমন।

মিরাজের সাথে যে ভিনগ্রহবাসী কথা বলছে সে এই স্পেসশিপের সর্বাধিনায়ক ইবা বিরকু। তার বয়স মাত্র তিন হাজার পাঁচ সৌর বছর। সে বাসা থেকে পালিয়ে এসে এই মহাকাশযানের দায়িত্ব নিয়েছে, কারণ বাসায় বাবা মা নাকি তাকে হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে ভিডিও গেম খেলতে দিত না। আর সেজন্যেই অভিমানে ঘর ছেড়েছে ইবা বিরকু, বেছে নিয়েছে মহাকাশচারীর জীবন। ইবা বিরকুর মন খারাপ, কারণ সে তার চেয়ে এক হাজার বছর বড় যে মেয়েটাকে (মানে বিপরীত লিঙ্গধারিকে) মনে মনে পছন্দ করে, তার বাবা তাকে বলেছে যে কোন বুদ্ধিহীনের সাথে সে তার মেয়েকে বিয়ে দেবে না।

ইবা বিরকু যখন প্রেমিকার বাবাকে খুব ডাঁট মেরে বলেছে যে আপনি কি দেখে বুঝলেন যে আমার বুদ্ধি নেই? তখন সেই প্রেমিকার বাবা তাকে একটা ধাঁধাঁ ধরে বলেছে যে পঞ্চাশ ক্যাটওয়াকিয় ঘণ্টার মধ্যে এই ধাঁধাঁর সমাধান না দিতে পারলে সে তার মেয়েকে আর ইবা বিরকুর সাথে বিয়ে দেবে না। আর সেই ধাঁধাঁটার সমাধান হাজার চেষ্টা করেও বুঝতে পারছে না ইবা বিরকু। ওদিকে চল্লিশ ক্যাটওয়াকিয় ঘণ্টা ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে। তাই টেনশনে টেনশনে এখন ইবা বিরকুর মন খারাপ। মিরাজ ভাবলেন, পাইসি রে সুযোগ! যদি ধাঁধাঁটার সমাধান আমিই করে দিতে পারি তাহলে তো কেল্লাফতে! তাহলে ও আমাকে মুক্ত করে দেবে! আমি বেঁচে যাব! মিরাজ বুদ্ধিজীবী টাইপ একটা ভাব নিয়ে বললেন, ধাঁধাঁটা বল দেখি শুনি।

ইবা বিরকু বলল, শুনবা? তাহলে শোন। ধাঁধাঁটা হচ্ছে, শুঁড় দিয়ে একটু মাথা চুলকে নেয় ইবা বিরকু, কি যেন মনে করার চেষ্টা করে সে...“ধর, একটা লোক হয় সত্যবাদী নাহলে মিথ্যাবাদী। মানে সে হয় শুধু সত্য কথা বলে নাহলে শুধু মিথ্যা কথা বলে। তাকে শুধু একটা প্রশ্ন করে বের করতে হবে যে সে সত্যবাদী নাকি মিথ্যাবাদী। প্রশ্নটি কি?” মিরাজের মাথায় জট পাকিয়ে যায়।

সত্যবাদী...মিথ্যাবাদী...মিথ্যাবাদী...সত্যবাদী...হঠাৎ করেই হ্যাং হয়ে যায় মিরাজের মস্তিষ্ক। আর কাজ করে না সেটা। ইবা বিরকু ভয় পেয়ে যায়। কি হল তোমার? একটু পরে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন মিরাজ। অ্যাঁ! কি? কি? ইবা বিরকু বলে, পারবে তুমি? পারবে? মিরাজ আকাশ থেকে পড়েন।

কি পারব? ইবা বিরকু বলে, আমার ধাঁধাঁর সমাধান। পারবে? প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে সে। মিরাজের আবার সব মনে পড়ে যায়। ...“ধর, একটা লোক হয় সত্যবাদী...মিথ্যাবাদী...সত্যবাদী...মিথ্যাবাদী...?!?” মিরাজ জানতেন তিনি পারবেন না। তবুও চেষ্টা করতে দোষ কি? তাছাড়া, এটাই তো তার বাঁচার একমাত্র উপায়।

তিনি ইবা বিরকুকে বললেন, পারব না মানে? অবশ্যই পারব। কেন পারব না? একদম সহজ, পানির মত সহজ, এটা তো আমার পাঁচ মাসের নাতিও পারবে... যা হোক, আমি ক্লান্ত। ক্ষুধাও লেগেছে প্রচণ্ড। আমাকে চট করে দুই গামলা ভাত আর রুই মাছ দিয়ে যাও তো দেখি! ইবা বিরকু কাঁচুমাচু হয়ে বলল, আমরা তো ভাত খাইনা, টাত খাই। টাত খাবে? মিরাজের তখন পেটে ছুঁচোর দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেছে।

তার কাছে তখন ভাত-টাত-কুত্তা-হিমালয় পর্বত সব এক। তিনি বললেন, আরে মিয়া দাও না ভাত টাত যা আছে সব দাও! একটু পরেই ভোজনরসিক মিরাজকে সামনে দুটো বড় বড় গামলা নিয়ে গপগপ করে “টাত” খেতে দেখা গেল। *** খাওয়া শেষ হবার পর মিরাজ বললেন, কই হে, একটা বিছানা বালিশ কিছু দাও। আর কিছু সুন্দরীকে খবর দাও, গা টা বড় ম্যাজম্যাজ করছে। একটু পরে তার জন্য একটা দড়ি এল।

মিরাজ ভ্রূ কুঁচকে বললেন, এটা কি? ইবা বিরকু বলল, এটা আমাদের ঘুমের সময় লাগে। এটা পায়ে বেঁধে আমরা উলটো ঝুলে ঘুমাই। মিরাজ বললেন, একটা বিছানা বালিশ... ইবা বিরকু বলল, সেইটা আবার কি? খায় না মাথায় দেয়? মিরাজ মজা করে ঘুমানোর আশা ত্যাগ করলেন। নাহ, আপাতত শক্ত মেঝের উপরই ঘুমাতে হবে তাকে। ইবা বিরকু বলল, আমার ধাঁধাঁ কখন সমাধান করে দিচ্ছ? মিরাজ বললেন, এই তো, বেশী সময় লাগবে না।

ইবা বিরকু বলল, কত সময়? মিরাজ এক তুড়িতে পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার ভঙ্গি করে বললেন, এই তো, মাত্র এক সপ্তাহ। ইবা বিরকু বলল, এক সপ্তাহ! তাহলে তোমাকে কাটব কখন? মিরাজ বললেন, কাটবে মানে? কাটবে কেন? আমি তোমার ধাঁধাঁর সমাধান করে দিলে আমাকে সসম্মানে পৃথিবীতে রেখে আসতে হবে। আর সাথে আমি আরও যা চাইব সব দিতে হবে। ইবা বিরকু আঁতকে উঠল, অ্যাঁ! তাহলে আমাদের আন্তঃগ্রহীয় গবেষণার কি হবে? অন্য গ্রহবাসীদের শরীরে কি আছে সেটা আমরা দেখব কিভাবে? মিরাজ বললেন, তোমার কাছে কে বড়? আন্তঃগ্রহীয় গবেষণা? নাকি তোমার গার্লফ্রেন্ড? ইবা বিরকু লজ্জিত মুখে বলল, অবশ্যই গার্লফ্রেন্ড! মিরাজ বলল, তাহলে আমার কথা মেনে নাও, হাঁদারাম! আমাকে কেটে ফেললে তুমি গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করবে কিভাবে? তোমাকে ধাঁধাঁর সমাধান কে বলে দেবে তোমাকে? ইবা বিরকু শুঁড় দিয়ে গাল চুলকাল। আসলেই তো! কথা তো ঠিকই! সে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে।

তোমাকে তাহলে কাটব না...কিন্তু আমার হাতে তো বেশী সময় নেই। আর মাত্র দশ ক্যাটওয়াকিয় ঘণ্টা আছে। মিরাজ বললেন, আমাদের হিসাবে সেটা কত সময়? ইবা বিরকু বলল, অ্যাঁ...অ্যাঁ...অ্যাঁ...একটা ক্যালকুলেটর লাগবে...দাঁড়াও নিয়ে আসি... মিরাজ হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এই ভিনগ্রহবাসীটি একদমই বুদ্ধিহীন। সে যে নিজের ধাঁধাঁর সমাধান নিজে বার করতে পারবে না তা বলাই বাহুল্য।

কিন্তু তিনিও কি পারবেন? চ্যালেঞ্জ তো না বুঝেই নিয়ে নিলেন তিনি। একটু পরেই ইবা বিরকু এসে বলল, হ্যাঁ, পেয়েছি। তোমাদের হিসাবে দুই ঘণ্টা। ভয়ে মিরাজের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। দুই ঘণ্টা! মাত্র দুই ঘণ্টা! অথচ তিনি ভেবেছিলেন ধীরে সুস্থে আয়েশ করে সমাধান করবেন...অবশ্য যদি পারেন আর কি... মিরাজ শূন্য দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

তার বাঁচামরা নির্ভর করছে আগামী দুই ঘণ্টার উপর। গার্লফ্রেন্ডকে না পেলে তাকে বাঁচিয়ে রাখার মধ্যে ইবা বিরকুর কোন স্বার্থ নেই। জীবনে অনেকদিন পর ভয় পেলেন মিরাজ। মৃত্যুর ভয়। প্রচণ্ড ভয়।

*** ভয়ে পাতলা পায়খানা হতে লাগল মিরাজের। এই মহাকাশযানে পাতলা পায়খানা হওয়া আবার আরেক সমস্যা। ক্যাটওয়াক গ্রহের অধিবাসীরা আবার পায়খানা করে না, তাদের পায়ুপথ দিয়ে ধোঁয়া জাতীয় বায়বীয় এক ধরণের বস্তু নির্গত হয়। ব্যস, তাতেই ওদের পেট পরিষ্কার হয়ে যায়। সুতরাং, টয়লেট নামের কোন বস্তুর কথা এরা জীবনেও শোনে নি।

এদিকে মিরাজ পড়লেন মহা সমস্যায়। কার্যসাধন করার মত কোন জায়গাই নেই আশেপাশে। তো এখন কি করা যায়? অনেক কষ্টে ব্যাগ জাতীয় একটা বস্তু জোগাড় করতে সক্ষম হলেন মিরাজ। তারপর ফাঁকে দিয়ে সম্পাদন করলেন কার্য। কাজ শেষ করে ব্যাগটা নিয়ে ফেলে দিতে যাবেন, এমন সময় মিরাজ দেখলেন, এক ভিনগ্রহবাসী গভীর আগ্রহ নিয়ে তার ব্যাগের দিকে তাকিয়ে আছে।

কেমন লোলুপ তার দৃষ্টি। যেন কত যুগের সঞ্চিত কামনা ঝরে পড়ছে ও দুচোখ হতে। মিরাজ তাড়াতাড়ি ওখান থেকে পালিয়ে এলেন। বলা যায় না, যদি দেখতে চায়? তাতেও যদি সন্তুষ্ট না হয়? যদি একটু ধরে দেখতে চায়? বা চেখে দেখতে চায়? এদিকে প্রাকৃতিক বেগের কারণে ঠিকমত ধাঁধাঁর সমাধানের কথা চিন্তাও করতে পারলেন না তিনি। এক ঘণ্টায় তিনি তিনবার টয়লেটে গেলেন।

কিন্তু সমস্যাটা নিয়ে চিন্তা করতে পারলেন না একটুও। ইবা বিরকু এসে খবর নিয়ে গেল একবার। মিরাজ বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এই তো, বের হয়ে গেছে। ইবা বিরকু কাঁচুমাচু হয়ে বলল, না, আমি ধাঁধাঁটার কথা বলছিলাম। মিরাজ অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, ওটাও হয়ে গেছে।

আরেকটু সবুর কর। ইবা বিরকু চলে গেল। সত্যবাদী...মিথ্যাবাদী...সত্যবাদী...আবার প্যাঁচ খেয়ে গেল মিরাজের মাথায়। এ কি ধাঁধাঁরে বাবা! একজন যদি সত্য বা মিথ্যা যেকোনো কিছুই বলতে পারে, তাহলে এমন কি কোন প্রশ্ন আছে যেটা তাকে করলে বোঝা যাবে সে সত্য বলছে নাকি মিথ্যা বলছে? যদি তাকে যেকোনো কিছু জিজ্ঞেস করা হয়, যেমন তোমার রাতে ঘুম হয় কিনা, তোমার নাম আক্কাস কিনা, তুমি অন্তর্বাস পড়েছ কিনা, তাহলে তো সে হ্যাঁ-ও বলতে পারে, না-ও বলতে পারে। তাহলে সেই উত্তর থেকে কিভাবে বোঝা সম্ভব যে সে সত্য বলছে নাকি মিথ্যা বলছে? মিরাজের আবার টয়লেট লাগল।

ধেত! “টাত” খেয়ে তো পেটের পুরো বারোটা বেজে গেছে। খোদাই জানেন কি মিশিয়ে রেখেছে শালা ভিনগ্রহবাসীরা! মিরাজের কাজ সারতে লাগল দশ মিনিট। এসে হাত না ধুয়েই আবার ভাবতে বসলেন মিরাজ। বিশ মিনিট কেটে গেল। আধ ঘণ্টা কেটে গেল।

ইবা বিরকু আবার এসে ঘুরে গেল। তার চোখ ফোলা ফোলা। কাঁদো কাঁদো স্বরে সে বলল, আমার গার্লফ্রেন্ড ফোন করেছিল। সে বলল, তার বাবা নাকি কোন প্রাইম মিনিস্টারের নাতির বড় ভাইয়ের কাজিনের মামাশ্বশুরের মেয়ের জামাইয়ের পুত্রবধূর ননদের এক্স বয়ফ্রেন্ডের ভাগ্নের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে। আর মাত্র একঘণ্টা পরেই নাকি তারা ওকে দেখতে আসবে।

ইবা বিরকু আরও বলল, সে নাকি বলেছে ইবা বিরকু ধাঁধাঁর সমাধান দিতে না পারলে সে রাগে ইবা বিরকুর সাথে আর কথা বলবে না। একটা সাধারণ ধাঁধাঁর উত্তর যে পারে না তার সাথে ঘর করার কোন খায়েশ নাকি তার নেই। ইবা বিরকু আরও বলল, সে নাকি বলেছে, ইবা বিরকুকে সে অনেক অনেক ভালবাসে। অনেক আদর করে। তার প্রতি অনেক অনেক চুম্মা...এটুকু বলতে গিয়েই ইবা বিরকু তিনবার হেঁচকি খেল।

তার নাকের দু ফুটো দিয়ে সমানে গড়াতে লাগল জল। মিরাজ ভাবলেন, আহা! একেই বলে প্রেম! মিরাজ আবার ধাঁধাঁর উত্তর নিয়ে চিন্তা করতে লাগলেন। সত্যবাদী...মিথ্যাবাদী...ধুর ছাই ছাতামাথা এইগুলা কোন ধাঁধাঁ হইল? মিরাজ কেমন যেন উদাস হয়ে গেলেন। তাকে বোধহয় মরতে হচ্ছেই। আচ্ছা মরার পর ব্যাপারটা কেমন হবে? প্রথমে হয়তো এরা তার চামড়া ছিলবে, তারপর হাড্ডিগুড্ডি সরাবে, তারপর ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখবে...এই প্রথম একটা মহৎ কাজের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার মত একটা উচ্চমার্গীয় ভাবনায় আপ্লুত হলেন মিরাজ।

নাহ, এ ক্ষুদ্র জীবনটা তো আর বৃথা যাবে না, অন্তত কারও শিক্ষার জন্য তা ব্যয় হবে। এ-ই বা কম কি? আবেগে তারও চোখে পানি চলে এল। আহা, ভিনগ্রহবাসীরা যদি তাকে না পেত, তাহলে হয়তো অন্য কাউকে ধরে নিয়ে যেত। তিনি আসলে সেই অন্য কারও জীবন বাঁচিয়েছেন। আহা, কত মহৎ একটা কাজই না তিনি করেছেন! আবেগে চোখে টলটলা জল নিয়ে তিনি আবার কার্যসম্পাদন করতে ফাঁকায় গেলেন।

তার হাতে আর সময় আছে আর মাত্র দশ মিনিট। ফিরে আসার সময় হঠাৎ একটা আয়না চোখে পড়ল তার। তিনি আয়নার দিকে তাকালেন। আয়নার ভিতর থেকেও একজন মিরাজ তার দিকে তাকাল। তিনি বললেন, সত্যবাদী।

আয়নার ভিতরের মিরাজও বলল, সত্যবাদী। তিনি বললেন, মিথ্যাবাদী। আয়নার ভিতরের মিরাজও বলল, মিথ্যাবাদী। দুই মিরাজ ভ্রূ কুঁচকে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইল। কেটে গেল দুই মিনিট।

তিন মিনিট। চার মিনিট। পাঁচ মিনিট। হঠাৎ মিরাজ লাফ দিয়ে উঠলেন। বিশাল লাফ।

তার বিশাল ভুঁড়ি নিয়েও কিভাবে তিনি এত সুন্দর লাফ দিলেন বলা মুশকিল। বলা বাহুল্য, আয়নার ওপাশের মিরাজও সেইরকম একটা লাফ দিলেন। *** দুই ঘণ্টা শেষ হবার ঠিক দুই মিনিট আগে ইবা বিরকু মিরাজের কামরায় হাজির হল। কি ব্যাপার? হইসে? মিরাজ বললেন, আবার জিগায়। ইবা বিরকু বলল, বল তাড়াতাড়ি।

মিরাজ বলল, আগে কথা দাও আমারে ছাইড়া দিবা। দিব। আগের জায়গায় পৌঁছায়া দিয়ে আসবা? আসব। তাইলে শোন...এই বলে মিরাজ ইবা বিরকুর কানে কানে কিছু একটা বললেন। ইবা বিরকু প্রথমে ভ্রূ কুঁচকে শুনল, তারপরই তার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল আনন্দে।

শিশুর মত লাফিয়ে উঠল সে। হইসে! হইসে!! আসো মিরাজ, তুমারে চুম্মা দিই!!! মিরাজ কোন মতে তার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচলেন। ও দিবে চুম্মা? তাইলেই হইসে। নাহ, এই যাত্রা বাঁচা গেছে। নো মোর টেনশন।

জাস্ট হ্যাপিনেস। হঠাৎ করেই মিরাজ আবিষ্কার করলেন, তার আর পাতলা পায়খানার বেগ আসছে না। সুতরাং, এখন বাম হাতটা ধুয়ে ফেলা যেতে পারে। *** পরের ঘটনা অতি সংক্ষিপ্ত। ইবা বিরকুর গার্লফ্রেন্ডের বাবাকে ধাঁধাঁর সঠিক জবাব দেবার পর সে উচ্ছ্বাসে বলে ওঠে, এই তো আমার কুটু কুটু সোনামণি! আমার মেয়ে তোমারই, যাও নিয়ে যাও! ইবা বিরকুর গার্লফ্রেন্ড ইবা বিরকুর কাছে চলে আসে।

দুজনে মিলে মিরাজকে সি অফ করতে আসে পৃথিবীতে। ইবা বিরকু আরেকটু হলে বলেই ফেলত, জানু জানো, ঐ মোটা করে কালোমত লোকটাই না তোমার দুষ্টু আব্বুর ধাঁধাঁর সমাধানটা বলে দিয়েছে... কিন্তু মিরাজ মাঝপথে তাকে থামিয়ে দিলেন। বলা যায়না, দেখা গেল আসল কাহিনী জানলে মেয়েটা মিরাজের কোলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তিনি বললেন, মা, তোমার বয়ফ্রেন্ড অতি প্রতিভাবান। সে ধাঁধাঁর সমাধান আগেই বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু একটু সাসপেন্স করার জন্য বলেছে একদম শেষে।

এই কথা শুনে আহ্লাদে গলে গিয়ে ইবা বিরকুর গার্লফ্রেন্ড শুঁড় নাড়িয়ে বলেছে, যাহ্‌, দুষ্টু! তারপরই সে ইবা বিরকুর প্রশস্ত বুকে শুঁড় লুকিয়েছে। রোম্যান্টিক দৃশ্যটা দেখে বুকের মধ্যে খচ করে উঠল মিরাজের। তার জীবনেও রোমান্স ছিল...কিন্তু...তার বউ...এক সতের বছরের যুবকের হাত ধরে...নাহ, আর ভাবতে চান না তিনি। এখন যেমন আছেন, সে-ই ভালো। মিরাজকে সেই রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে উধাও হয়ে গেল মহাকাশযানটা।

মিরাজ আকাশের দিকে কিছুক্ষণ শূন্য চোখে তাকিয়ে রইলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন তিনি। শালা ঐ ইবা বিরকুর মত মাথামোটাও ভালোবাসা পেয়েছে, আর তিনি সারা জীবন খালি গুপ্তকেশই ছিঁড়েছেন। ধুর শালা! পরিশিষ্টঃ প্রফেসর মিরাজ যখন আমাকে এই গল্পটি বলা শেষ করলেন, তখন আমি বললাম, স্যার, সবই তো বুঝলাম, কিন্তু আপনি ধাঁধাঁর যে সমাধানটা দিয়েছিলেন সেটা কি? মিরাজ আমার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি হাসলেন। বললেন, কেন, ডিএমসির কোন বান্ধবী বলেছে নাকি যে “সাল্লু, এই ধাঁধাঁটা সমাধান করে দিলে আমি তোমার, শুধু তোমার”? আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম।

প্রফেসর এই বুড়ো বয়সেও এত রসিক! আমি বললাম, না স্যার, কিন্তু পাঠকরা তো মানবে না। তারা তো উত্তর চাইবে। প্রফেসর বললেন, কেন, তারা তো নিজেরাই ভেবে বের করতে পারে, পারে না? আমি বললাম, অবশ্যই পারে। প্রফেসর বললেন, তবে এটা তাদেরই করতে দাও! এই বলে তিনি চলে গেলেন। আমি অবশ্য পরে প্রফেসরের মুখ দিয়েই উত্তরটা বের করেছিলাম।

উত্তরটা হল, "কেউ যদি তোমাকে যদি প্রশ্ন করত যে 'তুমি সত্যবাদী নাকি মিথ্যাবাদী?' তাহলে তুমি কি উত্তর দিতে?" এটার ব্যাখ্যাও প্রফেসর দিয়ে দিয়েছিলেন। সেটা হচ্ছে, লোকটা যদি সত্যবাদী হয়, তাহলে অন্য কারও প্রশ্নের উত্তরে সে উত্তর দিত "সত্যবাদী। " এবং তোমার কাছেও সে সত্য বলছে বিধায় সে তোমাকে বলত "সত্যবাদী। " আর লোকটা যদি মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে অন্য কারও প্রশ্নের উত্তরে সে উত্তর দিত "সত্যবাদী। " কিন্তু তোমার কাছে মিথ্যা বলছে বিধায় সে তোমাকে বলত "মিথ্যাবাদী।

" তাহলে দেখ, দু ক্ষেত্রেই, তোমাকে লোকটা যে উত্তর দিচ্ছে, সেটাই তার আসল পরিচয়। এই দেখ, তোমাদের বোঝাতে গিয়ে নিজেই কেমন কনফিউশনে পড়ে গেলাম!! সামবডি হেল্প, প্লিজ!! পরিশিষ্ট ২ এই প্রশ্নটি যখন আমি বহৎ মাঞ্জা মেরে আমার রুমমেট কবির ভাইকে করলাম, উনি সাথে সাথে উত্তর দিলেন, প্রশ্নটা হচ্ছে, এক আঙ্গুল তুলে তার সামনে ধরে বলতে হবে “এখানে কয়টা আঙ্গুল তোলা হয়েছে?” লোকটা যদি সত্যবাদী হয় তো বলবে এক আঙ্গুল। আর মিথ্যাবাদী হলে বলবে অন্য কিছু। সহজ সমাধান। টাসকি খেয়ে গেলাম।

আসলেই, এত সহজভাবে তো আর চিন্তা করি নি! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.