আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রাম্যমান হালখাতা!

সংবাদ কর্মী পেশায় ফেরিওয়ালা। তাই বলে আয়োজনে এতটুকু ঘাটতি নেই তার হালখাতায়। নির্দিষ্ট দোকান নেই তার তাইতো ভাড়া করা ইঞ্জিন ভ্যান সাজিয়েছেন সাধ্যমত। বাড়তি বিনোদনে মাইক বাঁধা রয়েছে ভ্যানটিতে। পাওনা টাকা পরিশোধ শেষে ক্রেতাকে মিষ্টি মুখের ব্যবস্থাও রয়েছে এই ভ্যানে।

চেনা জানা ক্রেতাকে এই বিশেষ দিনের দাওয়া টা কিন্তু তিনি সাদা মাঠা ভাবে সারেননি। রীতিমত কার্ড দিয়ে দাওয়াতি কাজ যথা সময়ে শেষ করেছেন। তবে আব্দুল¬ার এই বিশেষ হালখাতায় রয়েছে আরও একটি ভিন্নতা। সেটি হচ্ছে তার হালখাতার মেহমান সবাই কিন্তু নারী। আজ শনিবার ভর দুপুরে ‘‘তুমি আমার পরনা পাখি, আমি তোমার বন্ধুয়া” এই গান বাজিয়ে সাজানো ভ্রাম্যমান হালখাতার ইঞ্জিন ভ্যানটি নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন খুলনার পাইকগাছার রেজাকপুর গ্রামের আব্দুল্ল্যা (৪২)।

উদ্দেশ্য উপজেলার প্রায় ১৪/১৫ টি গ্রামের সারা বছর ধরে নিম্ন কিংবা মধ্যবিত্ত আয়ের সংসারের মহিলাদের দেওয়া বাকি টাকা আদায়। বিনিময়ে হালখাতার চিরায়ত প্রথা হিসেবে ক্রেতা আপ্যায়নে মিষ্টি খাওয়ানো। আব্দুল্লার এই ব্যতিক্রমধর্মী হালখাতার গাড়িটি যখন আজ দুপুরে পৌছে তার নিজ গ্রাম রেজাকপুরে তখন কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। তিনি জানান, ‘‘হাড়ি, কড়া, গামলা, বালতি, প্ল¬াষ্টিকে জিনিস, মেয়েদের চুড়ি, ফিতা, মাথার ক্লিপ গ্রামে ফেরি করি। ধরেন ১৩/১৪ টা গ্রামে ১ বছর ধরে বিক্রি করতিছি”।

কেমন বাকি আছে জানতে চাইলে বলেন, ‘‘বাকি ধরেন এই রান্নিংয়ে থাকে। একটা থাকে একটা দেয়। আমার ৫৫ হাজার টাকা মত বাকি দেয়া। কার্ড দিছি ৩৫০ জনের। এই ধরেন হাজার ত্রিশেক আদায় করিছি”।

কথা বলার এ সময় টুকুর মধ্যেই বেশ কয়েকজন এসে হাজির হয়েছেন আব্দুল্ল¬ার এই হালখাতায়। রেজাকপুরের তাসলিমা, জামেলা, রমেচার মত অনেক মহিলা এসেছেন তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে। একেবারে বাড়ির সামনে দাড়িয়ে হালখাতা করতে পারায় বেশ খুশি বললেন তাসলিমা বেগম। তিনি ৩০০ টাকা হালখাতা করলেন। জামেলা বেগম ৫০ টাকা হালখাতা করে মিষ্টির প্যাকেটটা হাতে নিয়ে জানালেন, “এর (আব্দুল্লা) মত মানুষ হয় না।

এহেবারে মাটির মানুষ”। শুধু হালখাতার আসা মানুষ নয় আব্দুল্ল্যাকে এই সময় বেশ হাসি খুশি মনে হচ্ছিল। গ্রামের অতি সাধারণ মানুষ ফেরিওয়ালা আব্দুল্লাহ। বাঙালি সংস্কৃতিতে গঞ্জের দোকানের হালখাতার এই রেওয়াজকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন একেবারে ঘরের আঙিনায়। আর সে আনন্দে সরাসরি নারীদের অংশ গ্রহনে সেটি হয়ে উঠেছে আরও প্রাণবন্ত।

বোধকরি আব্দুল্লাহর এই ভিন্ন আয়োজনে হালখাতার যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। তা সে বুঝে কিংবা না বুঝে অথবা প্রয়োজনের তাগিদে যে আয়োজন সে করেছে, এটি একদিকে যেমন এলাকায় রসালো আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে তেমনি হালখাতার আয়োজনের এই ভিন্নতার রূপকার অতি সাধারণ আব্দুলা আজ একজন ভিন্ন আয়োজনের অনন্য পাঞ্জেরী। মূল প্রতিবেদন...  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.