আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শব্দেরা মার্বেলের পায়ে দৌড়ায়

প্রথম কবি: মাইকেল মধুসূদন দত্ত অনুলিখন: সরসিজ আলীম টেবিলের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা লোডশেডিংয়ের আঁধারের কাঁধে পা তুলে সিগারেটটা আলো ছড়িয়ে ধোঁয়া ছড়াচ্ছে, আলোর ভেতর পা ফেলে ফেলে ধোঁয়ার মধ্যে ঢুকে পড়ছে নারীমাংস। নারীমাংসে ধোঁয়া বয়ে যেতে যেতে বলছে, তোমাকে সবটুকু পেতে চায় বলেই তো নারীমাংসই পেতে চায়, মাংসের অধিক কিছু তো নয়! মাংসের অধিক কিছুর মধ্যে বসে থাকে কেউ একজন ফাঁকিবাজী, সারা পাড়ার মানুষ ফাঁকিবাজীর বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে ঘুম যায়, হাজার বছর ঘুমিয়ে থেকে মানুষ কি যে সুখ পায়! ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলো ধর্মীয়ভাবে সামাজিক ও দেশপ্রেমিক যত না-হয়ে উঠছে, তারচেয়ে আত্মকেন্দ্রিক আর্ন্তজাতিক হয়ে উঠছে। নারীমাংস যখন ডান-বাম থেকে ফাঁকিবাজীর বদনখানি চোখ ভরে তুলে আনতে চাইছে, তখন সারাপাড়া থৈ থৈ করছে জল, জলের ভেতর ডুব দিয়ে ফাঁকিবাজীর মধ্যে প্রেম কাঁটা দিয়ে উল বুনে চলেছে। নারীমাংসের অধিক কিছু যদি হয় মুখের হাসি, চোখের খুশি, তবে হাসি-খুশির মধ্যে বসে পড়ে শীতল ছায়া, আর ছায়ার ভেতর সম্মতি। আর নারীমাংস ‘উহ্ কি গরম!’ বলে কাপড়গুলো খসিয়ে ফেলছে শরীর থেকে, আর যে কবি পুরুষটি বন্ধুকে পাটিসাপটা পিঠার বিলটি পরিশোধের বায়না করে যাচ্ছিলো নিরন্তর গোঙানি ছড়িয়ে, তখনই বন্ধুর কাঁধ থেকে মুখ সরিয়ে তোমার শরীরের ঘাম চাটতে শুরু করলো নারীমাংস! নারীমাংস, তুমি তখন ভাবছো, পুরুষটি জিভ দিয়ে শরীর থেকে ঘাম তুলে নিলেও লালা তো ছড়াচ্ছে বেশ! আর লালার ভেতর দিয়ে প্রেমের ঝাপটানী হরদম চলছেই, তোমার তখন চীৎকার দিতে ইচ্ছে করবে, তখন তোমার মনের ভেতর গুনগুনের গুঙানি, আহা! হয়তো প্রত্যেকেরই নারী ঘর ছেড়ে গেছে যে সব বন্ধুদের, তারা ঘরে ঘরে মুখে বিষ নিয়ে সাপ হয়ে গুটিয়ে থাকে, আর এক বুক পিপাসা নিয়ে মানুষের মতো কোমর সোজা করে বের হয়ে আসতে দেখে খুব মামুলি মানুষের চোখ, আবার চোখের আড়ালেই রয়ে যায় সারাক্ষণ, আর তারা শুড়িখানায় ঢুকে বন্ধুকে আমন্ত্রন পাঠায়, তারপর ঘাম পান করে মহাউল্লাসে, উল্লাসের ভেতর নীলবিষ বসে বসে কাঁদে সারারাত।

সারারাতটি কখনো কখনো দুধের বালতির ভেতর বসে থাকতে থাকতে ভাবে, পুরানো নারীতে মন বসে না আর, নতুন নারীতে চোখের দু’কূল ভরে সুখ ঝুলে থাকে, সংসার বাঁধনে খোয়াব ধরে না অনন্তরের ভেতর। কিছু কিছু নারী থাকে তুফান গাঙের নাও, বৈঠা বাইতে গেলেই নদীর তুঙ্গ জলে বিলীন, বিজ্ঞমাঝি ডুব দিতে দিতে সৌখিন ডুবুরী, গভীর জলে ওসামা বিন লাদেনের লাশ হাতে নিয়ে ওঠে ডাঙায়, নারী সে তুফান ভারী, গভীর জল ভেদ করে কোথায় হারায় তবে! উধাও নারী আপন পুরুষের বিছানায় বিষদাঁতের উদ্যত ছোবল পাশে রেখে পাশ ফিরে শোয়, আর দূরের প্রেমিক পুরুষের বুকে মাথা রেখে সুখের নীল বিষ মাখে দেহে তার। একটি অজগর গুড়িখানায় ঢুকে পড়ে রাত পোহাবার আগে, অজগরের অবাক হাঁ করা মুখের ভেতর নীলের উপর বিষ ভাসে, শুড়িখানার ভীতু মানুষগুলো দৌড়ে পালায়, তখন কবি পুরুষগণের আচ্ছন্নতা ভাঙে, তারা তখন আজগরের মুখের ভেতর থেকে বিষের উপর নীল ভাসিয়ে দেয়, অজগরের মুখ বন্ধ হয়ে আসে। কবিগণ অজগরের মাথায় চড়ে বসে, অজগর পথে নেমে আসে, আজগরের পিঠে রোদ চিকচিক করে, কবিগণ একসাথে ঘাম উগরে দেয়, সারা পথ বমিতে ভেসে যেতে থাকে। দূর্গন্ধ ভরা বমির ভেতর নেমে আসে মানুষ, গুম হওয়া তার প্রিয় মানুষকে খুঁজে ফেরে, বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার মানুষের পচা মাংসের ভরা বাতাস সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে।

রবীন্দ্রভক্ত মন্ত্রিগণ রবীন্দ্রসংগীতের সুরে ভেসে যেতে যেতে হত্যা-গুমের আদেশে স্বাক্ষর দিতে থাকে, বিরোধী নেতার মদের বোতলের খুব কাছে বাজতে থাকে উর্দূ গজল। মুমুর্ষ কবিগণ অজগরের পেটের ভেতর ক্লান্ত শরীরকে ঢুকিয়ে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ে, নারীমাংস, তুমি একবার জিজ্ঞাসো তারে, হ্যালো জান, কেমন আছো? ১১.০৫.২০১২ দ্বিতীয় কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনুলিখন: সরসিজ আলীম নুন-ভাতের ভেতর জীবাণু ঢুকিয়ে দিলে মাছ-মাংসের স্বাদ চড়ে বসে, জীবাণুর গায়ে একটি মাছি এসে বসে যখন, মাছিটাকে ধরতে গেলেই ইতি-উতি করে উড়ে উড়ে ফিরে ফিরে আসে। ধরাধরির কথা যখন আসছে, সেই তো অফিসের বড় বস, ছোটবস, মন্ত্রি, নেতা, পাতিনেতা আর গো-অক্ষর কেরাণীর দোহাই লাগবে। যাকগে বাবা, মহাশয়রা তো মাছ-মাংস-গাড়ি-বাড়ি-বিস্তর নারী এমনকি আস্ত মানুষও পাকিস্থলিতে চালান করে দিয়ে হজম করে ফেলতে পারে, তুমি বরং নুন-ভাতের মাঝ দিয়ে পয়সা বাঁচিয়ে ললিপপ চুষতে পারো, আর না পারলে হাতের বুড়ো আঙুল আছেই তো নাকি? নুন-ভাত, তুমি কি পরনারীর বাঁকগুলো দু’চোখ ভরে তুলে নিতে পারো? বাঁকগুলো চিনতে চিনতে খুবই উত্তেজিত হয়ে ওঠো? তোমার আপন নারীর পাকস্থলির ভেতর কি পর্ণোনারীর গোঙানি শুনতে পেয়েছো কখনো? মাছিটা আমাদের কথা বলাবলি শুনতে চলে আসে চায়ের কাপের খুব কাছাকাছি, আমরা প্রসঙ্গ পাল্টাতে বাধ্য হতে থাকবো তখন, আমাদের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ, আমরা কল্পনায় রাজা-উজির মারি, আমরা নিজের ছায়াকে প্রতিপক্ষ দাঁড় করিয়ে তীব্র ভাষায় আক্রমন করে নিজের অক্ষমতাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। এই চেষ্টা করি কথার মধ্যে এক ঝাঁক ঘাম ঢুকে পড়ে হল্লা তোলে, বোর আবাদে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে, আর ধানের বাজার মূল্যে ধ্বস নেমেছে, আমাদের ঘামের মূল্যটা যাবে কোথায়? আর বাজার ফেরতি মানুষ হল্লা করছে, চালের দাম এতো চড়া কেন হবে? আমরা ধানের মূল্য আর চালের মূল্যের মাঝ বরাবর সরকারকে বসিয়ে দিই।

আমরা বলি, আমাদের রাষ্ট্রের চরিত্র অবশ্যই নিপীড়নমূলক। আমাদের সমাজ বৈশিষ্ট্য আধা সামন্তবাদী আধা পুঁজিবাদী কি-না এ ব্যাপারে সমাজবাদীরা একমত হতে পারছেন না দীর্ঘদিন। আমাদের সরকারগুলো ধনীক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার জন্য সদা জাগ্রত, সেখানে তারা ধর্মনিরপেক্ষতা ও সর্বশক্তিমানের উপর আস্থাশীল কিনা- এ বিতর্কের কোন মানে নেই। ধনী ও গরীবের সমঅধিকারের নিশ্চয়তা কে দেবে ভাই, কে দেবে? মাছিটি আমাদের কানের পাশ দিয়ে নাকের ডগা ছুঁয়ে উর্ধ্বাকাশে দেয় পাড়ি, আমরা মাছিটির ডানার কাঁপন চোখে ধরার চেষ্টা করে তাবৎ বিপ্লবীদের কথা স্মরণ করে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করতে থাকি। আমাদের মৌনব্রতের ভেতর ঢুকে পড়ে একজন গানওলা, সে আবার হিন্দুত্বে ফিরছে কিনা, সে এখন মাক্সবাদী, তৃণমূলী, না মাওবাদী- এসব খাজুরে আলাপে ঝড় তুলতে চাই কেউ কেউ।

দোকানী চা-সিগারেটের বিল দেবার প্রশ্ন তুলে আমাদের দিকে চায়, আমাদের বন্ধুদের কণ্ঠ নেমে আসা শুরু করে তখন, নেমে আসা কণ্ঠস্বরের ভেতর চারুবাবু আর সিরাজ সিকদার একবার উঁকি দিয়ে হারিয়ে যায় আঁধারের ভেতর, তখন অনেক রাত হয়ে এলো বুঝি! গভীর রাতের অন্ধকারের ভেতর অনেক লাশ দেখি, অনেক রক্ত দেখি, আর লাশের চোখ থেকে স্বপ্ন গড়িয়ে সবুজ রোদ্দুর শক্তিকে এনজিও’র মহান টাকা-পয়সা বানাবার বিপ্লবের তলে মাথা নত করে থাকতে দেখি। আমরা ফিরছি কোথাও, যাচ্ছি কোথাও, আঁধার ঝোঁপ থেকে বের হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি আমাদের হাঁ-হওয়া মুখের ভেতর দিয়ে ঢুকে পাকস্থলির দখল নিয়ে নিলো, আমরা তখন সমস্বরে বলে উঠলাম, লাল সালাম কমরেড শেখ মুজিব! বীর সিপাহী জিয়াউর রহমান অমর হোক! ১২.০৫.২০১২, ঢাকা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।