আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিকিৎসায় অবহেলা এবং আমাদের আইন !!!

ন্যায়-বিচার নিশ্চিত কর (যদি ও তাতে স্বর্গের পতন ঘটে)। সালমা খাতুনকে (৩৭) মাগুরা মাতৃসদন হাসপাতালের কনসালট্যান্ট নন্দ দুলাল বিশ্বাসকে দেখানো হলে তাঁর পরামর্শমতো ১৩ মার্চ সকালে সালমার অস্ত্রোপচার হয় ও একটি মেয়েসন্তান হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের সময় সালমার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। চিকিৎসক ওই রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে গিয়ে ভুল করে সালমার জরায়ু কেটে বাদ দেন। জরায়ু কাটতে গিয়ে মূত্রথলিরও আংশিক কেটে ফেলেন।

এতে রক্তক্ষরণ আরও বেড়ে যায়। সালমার শরীরে ১২ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। এতেও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ক্লিনিকের মালিক মাগুরা সদর হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক শফিউর রহমানকে নিয়ে আসেন। তিনি কোনো রকমে রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে সালমাকে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সালমার অবস্থা দেখে সেখানে ভর্তি না করিয়ে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

পরে সালমাকে ঢাকায় ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে ১৯ মার্চ স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে প্রায় ১৫ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সালমা সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন। স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ১ এপ্রিল সালমাকে হাসপাতাল ছাড়ার অনুমতি দেয়। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র দিয়ে সালমাকে বাড়িতে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দিতে বলে।

এ সময় স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আগের ভুল চিকিৎসায় সালমার জীবন বিপন্ন হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে লিখিত দেন। এ ধরনের চিকিৎসায় কী করণীয় ছিল, এতে তাঁরা বিস্তারিত উল্লেখ করেন। সালমার স্বামী নুরুল হাকিম গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানান, ভুল অস্ত্রোপচার, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং উচ্চশক্তির ওষুধ সেবনের কারণে তাঁর স্ত্রী এখন চোখে কম দেখছেন। স্মৃতিশক্তিও হারাতে বসেছেন। তিনি বলেন, পরে জানা যায়, ওই চিকিৎসক আদৌ কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নন।

জানতে চাইলে নন্দ দুলাল বিশ্বাস চিকিৎসায় ভুল হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ওই গর্ভবতীর অবস্থা বেশ জটিল ছিল। জরায়ু ভেদ করে ফুল ছিল। এ কারণে সিজারিয়ান করার পর রক্তপাত বন্ধ হচ্ছিল না। একপর্যায়ে জরায়ু কেটে ফেলি। এ সময় মূত্রথলিতে চাকু লেগে কেটে যায়।

’ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলতে কী বোঝেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার গাইনিতে দুটি এবং ডিজিও ও এমসিপিএস করা আছে। ’* উপরোক্ত ঘটনাটি আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার নৈরাজ্যের সাম্প্রতিকতম উদাহরন। এমন হাজারো ঘটনা প্রতিদিনের পত্রিকা ঘাটলে নজরে আসবে প্রতিনিয়ত। সাধারণ মানুষের সুচিকিৎসার বিষয়টি অনেকটা ডাক্তারদের বদান্যতা, মেজাজ-মর্জি কিংবা দয়া দাক্ষিন্যের উপর নির্ভর করে। চিকিৎসা সেবা পাওয়া যে রোগীর অধিকার সেটা স্বীকার করা হচ্ছে না।

পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রে চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আইন এবং তার যথাযথ প্রয়োগ থাকলেও বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোন আইন নেই। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতেও চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত আইন ও তার সুনির্দিষ্ট প্রয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন আইনে বিচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়ে কিছু কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ ও কার্যকারিতা ততটা দেখা যায় না। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত চিকিৎসায় অবহেলা সংক্রান্ত কোন দেওয়ানি প্রতিকার পাওয়া যায়না বললেই চলে। এ সংক্রান্ত দেওয়ানি প্রকৃতির মোট ৪৫ টি আইন থাকলেও দেওয়ানি মামলা করে ক্ষতিপুরণ পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

প্রচলিত ফৌজদারি আইনে ডাক্তারি অবহেলার প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। ফৌজদারি দন্ডবিধির ধারা ২৭৫, ৩০৪ক, ৩১৬, ৩২৩, ৩২৫, ৩৩৬, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪১৬, ৪১৯ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চলুন দেখি এই ধারাগুলো কি বলছেঃ ১। ২৭৫ ধারাঃ কেউ যদি ভেজাল ওষুধ বিক্রয় করেন বা বিক্রয়ের জন্যে প্রস্তাব করেন বা ঔষধালয় হতে বিতরন করেন বা কোন ব্যক্তির দ্বারা ব্যবহার করান, সেই ব্যক্তি অনূর্ধ ছয় মাস কারাদন্ডে বা অনূর্ধ এক হাজার টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। প্রমান করতে হবে যে ওষুধের মধ্যে এমনভাবে ভেজাল দেয়া হয়েছিল যে, এর কার্যকারিতা কমেছিল বা কার্যকারিতা পরিবর্তিত হয়েছিল বা ক্ষতিকর হয়েছিল।

২। ৩০৪ক ধারাঃ বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত কাজের ফলে যদি কারো মৃত্যু ঘটে, তাহলে যে ব্যক্তি অবহেলার কাজটি করেছে সেই ব্যক্তি পাচ বছর কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এই ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে কোন ডাক্তার তার দায়িত্ব পালনকালে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করেছেন কিনা । ৩। ৩১৬ ধারাঃ যে ব্যক্তি এরুপ অবস্থায় এমন কোন কাজ করে যে যদি তদ্বারা সে মৃত্যু ঘটাতো তবে দন্ডার্হ নরহত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হত এবং অনুরুপ কাজের সাহায্যে একটি জীবন্ত অজাত শিশুর মৃত্যু ঘটায়, সে ব্যক্তি যে কোন বর্ননার কারাদন্ডে যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে- দন্ডিত হবে এবং অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে।

এ ধারা শুধু অজাত শিশুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ৪। ৩২৩ ধারাঃ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দান করবে, সে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে। ৫। ৩২৫ ধারাঃ যে ব্যাক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত করে সে ব্যক্তি সর্বোচ্চ সাত বছর মেয়াদের কারাদন্ড তদুপরি অর্থদন্ডে ও দন্ডিত হতে পারে।

......চলবে তথ্যসুত্রঃ ১। দৈনিক প্রথম আলো ২। "চিকিৎসায় অবহেলা"- আইন ও সালিশ কেন্দ্র। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.