আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোঁজ- দ্য সার্চ!

শফিক হাসান চারদিকে খোঁজ খোঁজ রব। কালো বিড়ালটাকে সবার চাই! রেলমন্ত্রী স্বপদে থাকুন বা না থাকুন, কালো বিড়াল সমান দরকারি! কিন্তু কালো বিড়াল ছাড়া কি অন্য কোনো প্রাণী নেই, যেগুলো খুঁজে বের করা জরুরি? আছে, চিনে নিন সেই প্রাণীগুলোকে; তাতে খোঁজ (দ্য সার্চ) করতে সুবিধা হবে_ রাঘববোয়াল এই রাঘববোয়ালরা পানিতে বসবাস করে না। স্থলেই আবাস। মাৎস্যন্যায় বলে একটা শব্দ আছে। মাৎস্যন্যায় মানে বড় মাছ ছোট মাছগুলোকে খেয়ে ফেলে।

রাঘববোয়ালরাও ঠিক তাই। এদের অনৈতিক কাজের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি হাজারও অপরাধ করতে হয়, তা করে। বোয়াল মাছের বিশালত্ব কিংবা রসনালোভন স্বাদের সঙ্গে এদের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। রাঘববোয়াল ধরতে শক্তিশালী জেলে দরকার। সুতরাং রাঘববোয়ালকে খোঁজার পাশাপাশি অনুসন্ধান করতে হবে_ নির্ভয়ে রাঘববোয়াল শিকার করতে পারবে এমন জেলেকে! দুধের মাছি মাছি হচ্ছে সেই 'গণতন্ত্রী' প্রাণী, যে খারাপ জায়গায় যেমনি বসে, তেমনি ভালো জায়গায়ও অবস্থান নেয়।

অজস্র চোখ দিয়ে মাছি খুব সহজেই নিজের গন্তব্য ঠিক করে কামিয়াব হতে পারে। মাছি আবার দুই ধরনের_ সাধারণ মাছি, দুধের মাছি। দুধের মাছিরা ধূর্ত হয়; তক্কে তক্কে থাকে অন্যায় সুবিধা আদায়ের জন্য। কোথায় গেলে দুধ পাওয়া যাবে, সেই দুধের নাগাল কীভাবে পাওয়া যাবে_ সবই এদের পাখা-দর্পণে! স্বার্থলোভী দুধের মাছিদের মানুষ অপছন্দ করে। কিন্তু অপছন্দ সত্ত্বেও দুধের মাছি থেকে খুব একটা দূরত্বে থাকা যায় না।

ভেজা বিড়াল কালো বিড়াল নিয়ে এত বেশি শব্দ ব্যয় হচ্ছে, সেখানে আবার ভেজা বিড়াল প্রসঙ্গ উত্থাপন মানেই চর্বিতচর্বণ! সুতরাং ভেজা বিড়াল সংক্রান্ত কোনো বাক্যব্যয় না করে আমরাও ভেজা বিড়ালের মতো চুপসে যাই! কী হয়েছে, কী হবে_ কিছুই জানি না। যারা ভেজা বিড়াল খুঁজতে চায়, তাদের উদ্দেশে এটুকু বলা যায়_ ভেজা বিড়াল না খুঁজে কালো বিড়াল খুঁজুন; তারপর সেই বিড়ালকে ভিজিয়ে দিন। ব্যস, ভেজা বিড়াল পেয়ে যাবেন! সোনার হরিণ সোনার হরিণ অলীক ধারণা। তবু সবাই সোনার হরিণের খোঁজে থাকে। সুন্দর চোখের উপমা মানে এখনও হরিণীর চোখের মতো চোখ! বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বভার গ্রহণের পর ক্ষমতাধর রাজনীতিকদের বাড়ির মিনি চিড়িয়াখানা থেকে হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে।

অবশ্য হরিণ উদ্ধারের আগেই নেতারা হরিণ-বেগে চম্পট দিয়েছিলেন। সোনার মানুষ হয়তো খুঁজলে পাওয়া যাবে_ সোনার হরিণের দেখা আজতক কেউ পায়নি। চাকরিপ্রার্থীরাও আজকাল চাকরি না খুঁজে সোনার হরিণ চায়! বাঘের বাচ্চা ভালো হোক কিংবা মন্দ_ মানুষ তো মানুষই! কিন্তু মানুষ যখন দুঃসাহসী কোনো কাজ করে, আপাতদৃষ্টিতে যা অসম্ভব_ তখন পরিচিতি পায় বাঘের বাচ্চা হিসেবে! বিপরীতে স্বয়ং বাঘের বাচ্চা বিড়ালের বাচ্চা কিংবা ভীতুর বাচ্চার মতো কাজ করলেও কখনোই তারা বিড়ালের বাচ্চা কিংবা ভীতুর বাচ্চা নামে পরিচিত হয় না! কিন্তু 'বাঘের বাচ্চা' অভিধা পাওয়া মানুষটি যখন একটু নড়ে যায়, তখন সে ইঁদুরের বাচ্চারও অধম! তারপরও মানুষ বাঘের বাচ্চা খুঁজতে ভালোবাসে! বসন্তের কোকিল কোকিল বসন্তে ডাকে_ এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে বসন্তের কোকিল নামে শব্দদ্বয় সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ কিছু মানুষ পরিচিতি পাচ্ছে বসন্তের কোকিল নামে, যারা সুযোগ বুঝে আসে; কাজটুকু উদ্ধার হলে চম্পট দেয়।

বসন্ত এবং কোকিল দুটিই পজিটিভ শব্দ। বসন্ত এলে মানুষের মনে রোমান্টিক হাওয়া বয়। আবার কোকিলের কুহুতানে উতলা হয় সুরপিয়াসীদের মনপ্রাণ। কিন্তু পজিটিভ দুটি শব্দের মিলনে কীভাবে নেতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি হলো! মধুলোভী ভ্রমর ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ানো ভ্রমরের সহজাত বৈশিষ্ট্য। এক শ্রেণীর মানুষের মনে অযথাই প্রেমের বান ডাকে।

বিশেষ করে পুরুষরা এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। বান নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বিশ্বপ্রেমিকরা কখনও এই নারী, কখনও ওই নারী_ এভাবে অসংখ্য জনের সঙ্গে সম্পর্ক পাতায়। প্রেমের নামে ফায়দা লোটার মিশন শেষে কেটে পড়ে। মধুলোভী এই ভ্রমরদের খুঁজে বের করার জন্য সরকারি-বেসরকারি কোনো টিম নাই! চুনোপুঁটি চুনোপুঁটি ক্ষুদ্রত্বের প্রতীক। রাঘববোয়ালের ঠিক বিপরীত শব্দটাই চুনোপুঁটি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, চুনোপুঁটিরা প্রায়ই রাঘববোয়ালসহ অন্যদের আহারের সামগ্রী হয়। প্রতিরোধ করার ক্ষমতা এই শ্রেণীর নেই বললেই চলে। গুটিকয়েক রাঘববোয়ালের বিপরীতে বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগণের বেশিরভাগই চুনোপুঁটি। এই চুনোপুঁটিরা প্রতিনিয়ত রাঘববোয়ালদের খাদ্যের জোগান হয়। চুনোপুঁটিরা বৃহদায়তনদের উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কিন্তু কেউই রাখে না চুনোপুঁটির খবর! ঝাঁকের কই একতাই বল_ শব্দ দুটির বাস্তবায়নে 'ঝাঁকের কই' আসতেই পারে। কিন্তু আম-জনতা কই মাছ এবং ঝাঁক পছন্দ করলেও ঝাঁকের কইকে তির্যক দৃষ্টিতে দেখে! ঝাঁকের কইয়ের আভিধানিক অর্থ সুবিধাবাদী মানুষ। কিন্তু পৃথিবীতে কে সুবিধাবাদী নয়! সুবিধা না বুঝে অসুবিধা বুঝলেই কি সে মহামানবে পরিণত হবে? ঝাঁকের কই বলে অন্যকে তিরস্কার না করে নিজের পরিচয়টাও ওই ঝাঁকের কইয়ের ভেতর আবিষ্কার করতে পারলে সেটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ! জলে কুমির ডাঙায় বাঘ বাংলাদেশিদের দ্বিমুখী সংকট_ ডাঙায় যেমন, তেমনি জলেও। কোথাও পালাবার পথ নাই। সরকারি দল সাধারণ মানুষকে যেমন জাঁতাকলে পিষছে_ বিরোধী দলও।

সরকারি দলের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে মানুষ ভোট দিয়ে বিরোধী দলকে ক্ষমতায় আনে। কিন্তু বিরোধী দল ক্ষমতায় গিয়ে সে কাজটিই করে, যে কাজের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। আবার নির্বাচন আসে, আবারও সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি! পার্থক্য হচ্ছে, কখনও কুমিরের জায়গায় বাঘ বসে, কখনও বাঘের জায়গায় কুমির! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।