আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অগোছালো কথন

এখন রাতের বারোটা বাজে। অনেকক্ষণ ধরে মা ডাকাডাকি করছেন, রাইসা খেতে এসো। রাইসার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নাই। তার দিব্য দৃষ্টি ছোট্ট লোলিতার উপরে। লোলিতা সেই সকাল থেকে কোন সাড়াশব্দ করছে না অথছ অন্যদিন এমন সময় লোলিতা রাইসার পড়ার টেবিলে বসে তার ছোট খাট কাজে সাহায্য করে, কাঠ পেন্সিল দাঁতে চেপে এনে তার খাতায় রাখে, টেবিলে রাখা অগোছালো বইগুলোর পিছে লুকিয়ে রাইসার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, হঠাৎ লাফ দিয়ে রাইসার ডান কাঁধে বসে তার গালে আলতো স্পর্শ দেয়।

আজ লোলিতা একদম নেতিয়ে শুয়ে আছে। শুধু থেমে থেমে মিউ শব্দ করে চোখ দুটি খুলে আবার বন্ধ করছে। রাইসা এক বাটি দুধ নিয়ে লোলিতার পাশে বসে আছে সেই সন্ধ্যা থেকে। রাইসার মা মানবধিকার কর্মী শাহনাজ হুসাইন এইবার কিছুটা রেগে গিয়ে বল্লেনঃ রাইসা! অনেক হয়েছে! এইবার বাধ্য মেয়ের মত খেতে এসো। --খাব না মা।

লোলিতা কিছু না খাওয়া পর্যন্ত আমি কিচ্ছু খাব না। শুধু শুধু আমাকে বিরক্ত কর না। --লোলিতা একটা বিড়াল ছানা, রাইসা! তুমি একটু বেশীই রি-এক্ট করছো না? --করলে করছি! ও আমার সন্তানের মতন। --সন্তান! এই ধরনের কথা বলতে তোমার লজ্জা করছে না রাইসা? --না মোটেই লজ্জা করছে না! তুমি আমার চোখের সামনে থেকে এখন বিদায় হওতো মা! শাহনাজ হুসাইন জোরে জোরে পা ফেলে রাইসার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। রাইসার কাছে লোলিতা নেহায়েত একটা বিড়াল ছানা নয়।

ইফতির দেয়া শেষ উপহার এইটা। স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে সকলে যখন ব্যস্ত তখন অডিটোরিয়ামে পাশাপাশি বসে ইফতি রাইসাকে ডেকে বলেছিলঃ রাইসা, আমি তোমার জন্য একটা গিফট নিয়ে এসেছি। নিবে তুমি? রাইসার কাছ থেকে কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে ইফতি তার ব্যাগ থেকে লোলিতাকে বের করে হাতের উপরে রাখে। লোলিতার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটা যাতে সে শব্দ করতে না পারে। ইফতির গাধামি দেখে রাইসার চোখ চড়কগাছে! গাধাটা করেছে কি! যদি নিশ্বাস আটকে মারা যেত? ইফতি এক গাল হাসি দিয়ে বলে, সেই সম্ভাবনা নাই।

দেখছ না, নাক খুলে রেখেছি। রাইসা লোলিতাকে হাতে নিয়েই এক টানে টেপ খুলে দেয়, লোলিতা মিউ মিউ শব্দে সমস্ত অডিটোরিয়াম দৌড়ে বেড়িয়েছে। লজ্জায় রাইসার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। রাইসার বাবা শরীফ হুসেইন বেশ রাশভারী মানুষ। মেয়ের এই পাগলামো দেখে তিনিও বেশ বিরক্ত।

তিনি রাইসার রুমে এসে চশমাটা মুছতে মুছতে বল্লেনঃ কি হয়েছে রাইসা? --কিচ্ছু হইনি তো? আমি কি কিছু বলেছি? --না, মানে খাচ্ছ না কেন? --আমার লোলিতা খাচ্ছে না কেন? --ও খাবে। একটু পরেই ও ভালো হয়ে যাবে। --তাহলে আমিও একটু পরেই খাব। --দাড়াও, তোমার মা কে বলছি ডাক্তার ডাকতে। --মাকে বলতে হবে কেন? তুমি ডাকতে পার না।

--অবশ্যই পারি! তবে তোমার মা যেহেতু মানবধিকার নিয়ে কাজ করেন, সেহেতু বিভিন্ন বড় বড় ডাক্তারের রিপোর্ট ঘেঁটে দেখতে হয়। তিনিই বলতে পারবেন লোলিতার জন্য কোন ডাক্তার ভালো। শাহনাজ হুসাইন মোবাইলের নাম্বার চেক করছেন। অতি দ্রুত একজন ভালো ডাক্তার দরকার। তার একমাত্র মেয়ে এই রাত দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে আছে।

কাকে ফোন দেয়া যায়, ডাক্তার ফিরোজ কে? নাহ! তাঁকে নিয়ে বিশ্বাস নাই। সে একটা ধর্ষণ কেসের আলামত নষ্ট করে ভিকটিমের বিপক্ষে রিপোর্ট দিয়েছিলেন। ডাক্তার সুশীল? নাহ! তাকেও বিশ্বাস করা যায় না। সে একটা খুনের আসামী কে বাঁচিয়ে দেবার জন্য খুন কে অপমৃত্যু হিসেবে প্রমাণ করার জন্য রিপোর্ট দিয়েছিলেন। ডাক্তার জাহিদ? নাহ! তাকে তো আরও বিশ্বাস করা যায় না! সে একটা পাঁচ বছরের মেয়ের ধর্ষক কে বাঁচাতে ফরেনসিক রিপোর্টে পুরাই গুবলেট পাকিয়েছিলেন! শাহনাজ হুসাইন তার কন্টাক্ট লিস্ট চেক করছেন......... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।