আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু অগোছালো কথা



এগুলো নিয়ে আগেও কয়েকবার লিখতে চেয়েছি কিন্তু ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারছি না, অগোছালোভাবেই দিয়ে দিলাম। বিরক্তি লাগলে আমি কিছু জানি না। হাসপাতালে এক বয়স্ক মহিলাকে নিয়ে তার স্বামী এসেছেন। মহিলাকে দেখে ওষুধ লিখে দিলাম। ওষুধ নেয়ার জন্য পাশের রুমে যেতে হবে, সেখানে অনেক ভিড়।

তাই মহিলাকে বসিয়ে তার স্বামী চলে গেলেন ওষুধ আনতে। মহিলা কিছুক্ষণ পর আমাকে বললেন, ব্যাডায় করে কী? বুঝতে পেরেও জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাডায় আবার ক্যাডা। মহিলা বললেন, -তুমার সোয়ামী। =হেও ডাক্তার। -হ্যায় কই।

=হ্যায় থাকে ঢাকা। -গ্যাদা গেদি কয়ডা। =নাই। -অ আইচ্ছা, এইখানে থাকো কই। =সরকারী বাসায়।

-একলাই? =হ, একলাই। -কয় তলায়? =হেইডা জিগায়া লাভ নাই গো চাচী, আমি বাসায় রোগী দেখি না। -অ। এই পর্যায়ে তার স্বামী ওষুধ নিয়ে এসে তাকে ডাক দিলেন। এক বয়স্ক ভদ্রলোক কয়েকবার আমার কাছে দেখিয়েছেন, আমি কখনও ছুটিতে থাকলে উনি এসে আমাকে না পেয়ে চলে গেছেন, তবু অন্য কাউকে দেখান নি।

একদিন আমার নাম জানতে চাইলেন। নামটা বলার সাথে সাথে তার চোখে পানি এসে গেল, কাঁপা গলায় বললেন, আমার ছোট মেয়েরও এই নাম, তারে বিয়া দিছি, ভালো আছে। একদিন অনেক রোগী এসেছে, এর মধ্যে এক মহিলা পরে এসে সবার আগে দেখাতে চাচ্ছিলেন, আমি বললাম, দেখুন, আপনি যদি সবার মত সিরিয়াল দেবার জন্য টিকিট জমা দেন তো আপনাকে সেভাবেই সিরিয়ালি দেখব, আর যদি তা না করে সবার আগে দেখাতে চান তাহলে সবার শেষে দেখব, এখন আপনি বলেন টিকিট জমা দেবেন কি দেবেন না। মহিলা বললেন, আমি টিকিট জমা দিমু না। আমি বললাম, ঠিক আছে, না দিলে নাই, আমার কিছু যায় আসে না।

উনি খুবই বিরক্ত হয়ে বললেন, বাব্বাহ, ডাক্তার হইছে বইলা কি এমন কইরা কথা কয় নিকি, বলতে বলতে উনি বের হয়ে গেলেন। আমি সব রোগী দেখে শেষ করে যখন বসে আছি, তখন তিনি আবার এসে হাজির। আমি তাকে ধীরে সুস্থে দেখে ওষুধ লিখে দিচ্ছি, এসময় তিনি একেবারে নরম সুরে বললেন, আপা আপনি এত কম বয়সে এত চাপ সহ্য করেন কেমনে? বললাম, প্রথম কথা হল ডাক্তার হলে রোগীর চাপ সহ্য করতেই হবে, আর দ্বিতীয় কথা হল, আমার বয়স এত কমও না, এর চেয়ে আরও অনেক চাপের মধ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, চেষ্টা করি মেজাজ ঠান্ডা রাখতে, কিন্তু প্রতিদিন সকালে দেড়শ-দুশ রোগী দেখতে গেলে সব সময় ঠান্ডা থাকা যায় না, সবাই আগে দেখাতে চাইলে তো আর সেটা সম্ভব হবে না, তাই না? মহিলা, হ সেইটা তো ঠিকই, বলে চলে গেলেন ওষুধ নিতে। পিচ্চিগুলোকে দেখতে গেলে খুব ঝামেলা হয়, স্টেথোটা বুকে বসাতে গেলেই দেয় চিৎকার। আসল জিনিস শুনব কী, কানটাই ফেটে যায়।

এটার জন্য মাকেই বকা দেই, কেন যে ডাক্তারদের নিয়ে ভীতি তৈরী করে দেয় বাচ্চাদের মনে। বেশী পিচ্চিদের দেখতে সুবিধা আছে, যারা ডাক্তার কী জিনিস বোঝে না, দুই-তিন মাসের পিচ্চিগুলোর দিকে তাকালেই একটা মিষ্টি হাসি দেয়, স্টেথো বসালে আরও খুশী। কিছু পিচ্চি আছে মনের আনন্দে গান গাইতে থাকে, কিছু পিচ্চি আমার কলম নিয়ে টানাটানি শুরু করে। একবার এক পিচ্চি (চার-পাঁচ বছর হবে) আমাকে দেখে দূর থেকেই হাসতে হাসতে শেষ, তার বড় বোনকে ডেকে বলছে, দেখ দেখ ডাক্তার লেবিস্টিক দিছে, হি হি হি। এটা শুনে আমিও হেসে দিলাম, আমার এক বান্ধবীর কথা মনে পড়ল, ঈদের সময় ড্রাইভাররা যখন ছুটিতে যায়, তখন তার উপর দায়িত্ব পড়ে সবার গাড়ি চালিয়ে দেবার।

এক ঈদে তার এক খালার গাড়ি চালানোর সময় পিচ্চি খালাত ভাই হাসতে হাসতে শেষ, ড্রাইভার আবার কানের দুল পরে। কি যে লিখলাম না লিখলাম, নিজেও জানিনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।