আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোস্তফা ভিডও গেম.........ছেলেবেলা থেকে আজ

একজন নগর পরিকল্পনাবিদ যে কিনা পৃথিবীরর বাইরে থেকে পৃথিবীকে দেখতে, জানতে ভালোবাসে। ব্লগে ঢুঁ মারতে গিয়ে অশান্ত কাব্যের পোষ্টে পেয়ে যাই ছোটবেলাকার সেই মোস্তফা ভিডিও গেমের পিসি ভার্সন। তবে তা ছিল ২০ বিহীন। ২০ওয়ালা নামাতে নষ্ট ছেলের লিংকের সাহায্য নেই। ট্যাব চার্জে রেখে হলেও ডাউনলোড করে ফেলি, ইনষ্টল দেই পিসিতে।

শেষ করি পুকররোটা এক বসায়। অসংখ্য কয়েন নিয়েছি, আজ কে ঠেকাবে আমায়। খেলা শেষে কিছু স্মৃতি ভেসে উঠলো সামনে। আর তাই ট্যাব নিয়ে বসে গেলাম লিখতে গেমটা নিয়ে আমার স্মৃতিকথা। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পরের দিন।

ক্যান্টনমেন্ট স্কুল বলে হঠাৎ ছুটি না পাওয়া গেলেও জয় উপলক্ষে অর্ধ দিবস স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়। স্কুল আগেভাগে ছুটি তাই ধীর গতিতে বাসায় যাচ্ছিলাম। সাথে বন্ধু একজন। কে মনে নেই, তবে সাফি ই হবে হয়তো। হঠাং দেখলাম রাস্তার পাশের দোকান থেকে হইহই আওয়াজ।

এগিয়ে গেলাম আর পরিচিত হলাম মোস্তফা গেম এর সাথে (আসল নাম জেনেছি আজ, তাই এতদিনের জানা নাম ই সই)। ব্যাস, জীবনে নতুন মোড়। বাসায় গিয়ে কি একটা বলে আবার ফিরে এলাম। বন্ধুর কয়েনে একটু খেললাম আর অবাক হয়ে ভাবলাম হায় কত কিছুইনা অজানা আমার। বাসায় এসে বাবাকে বললাম।

বন্ধুসুলভ বাবা বিকেলে নিয়ে গেলেন, সাথে ছোট ভাই। বাবার সাথে মাঝে মাঝে যাওয়া এরপর থেকে কিন্তু তাতে মন ভরেনা। বাবা বলে দিয়েছেন সপ্তাহে একবার। কিন্তু মন মানেনা। তাই বাবার কথার অমান্য হলো।

অতপর অসুদপায় অবলম্বন। পড়তে যাব বলে না গিয়ে ভ্যান ভাড়ার টাকা, ব্যাংকে জমাবো বলে নেওয়া টাকা, ইত্যাদি দিয়ে চললো মোস্তফা গেম খেলা। একদিনতো কিভাবে পুরো ১০ টাকা যোগাড় করে গেম ফাইনাল খেললাম। বসকে বাইকের ধাক্কায় মেরে উল্লাসে ফ্যানের পাখায় বাড়ি খেয়ে হাত কাটলাম। তবুও সে কী খুশী!আহা, এ যেনো যুদ্ধ জয়।

সুখ সইলোনা বেশিদিন। বাবা জানলের দূত মারফত। জীবন দর্শন পাঠ হলো বাসায়। ছেলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রব উঠলো। আর তাই মোস্তফা গেমকে বিদায় জানিয়ে ভালো ছেলে হবার চেষ্টায় লেগে গেলাম।

স্কুল, কলেজ, ইউনিভারসিটি পেরোলাম। বহুবার মোস্তফা গেম সামনে এলো। কিন্তু আমি যে ভালো ছেলে! ও আমায় মানায় না যে। হারিয়ে গেলো মোস্তফা গেম। আজ অনেকদিন পরে আমি নষ্ট ছেলে হলাম।

ইচ্ছেমত যত খুশী তত কয়েনে মোস্তফা গেম খেললাম। আমার ওয়ালটের একটা টাকাও লাগলোনা। বাবা বললেন, এত রাতে গেম খেলছিস? আমি বললাম হ্যা, একটা নষ্ট ছেলের গেম। বাবা গেমসটা দেখলেন, বোধকরি তিনিও স্মৃতি হাতরালেন, হাসলেন এবং চলে গেলেন। তার চোখে ছেলের নষ্ট হয়ে যাবার ভয়টা আজ আর নেই।

গেম খেলা শেষ কিন্তু আমি তা রেখে দিয়েছি সায়মন জুনিয়রের জন্য যে কিনা তার বাবার সামনে বসে মোস্তফা গেম খেলবে, ২০ দিয়ে বস মারবে, হুরিয়া দিবে, আরো কত কি! পাশেই তার বাবা থাকবে। কিন্তু সায়মন জুনিয়র নষ্ট ছেলে হবার ভয়ে খেলা থামাবেনা। নোট ১: বাসায় জানার পর জিদ করে গেমস থেকে দূরে এসে বোধকরি ভালোই করেছিলাম। তাই হয়তো আজ এত কথার ফুলঝুরি ঝরছে। নোট ২: কিছুদিন পর হয়তো এম.টেক করতে প্রবাসী হবো।

গেমটা নিয়ে যাবো। ল্যাবে রিমোট সেসেনসিং এর সাথে মোস্তফার যুগলবন্দী চলবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।