আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপিকে আইএসআই’র অর্থ দা

আইএসআই বিএনপিকে টাকা দিয়েছে বলে দুবাইভিত্তিক খালিজ টাইমসের যে প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশে হইচই চলছে সে ব্যাপারে প্রকৃত সূত্র ও তথ্যের সত্যতা মিলছে না। খালিজ টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস'া আইএসআই ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপিকে পাঁচ কোটি রুপি দিয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এ তথ্য পাকিস্তানের কোনো পত্রপত্রিকা কিংবা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। এমনকি নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত ভারতের প্রধান কোনো পত্রিকাতেও এ খবর প্রকাশিত হয়নি।

ডেইলি মেইলের ভারতীয় অনলাইন সংস্করণ, সাপ্তাহিক ইন্ডিয়া টুডে এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস'া বাংলাদেশ সংবাদ সংস'ার রিপোর্টে যে তথ্যসূত্রের উল্লেখ করা হয়েছে, তা কল্পনানির্ভর। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে পরিচালিত আলোচিত মামলার কার্যবিবরণী পাকিস্তানের পত্রপত্রিকা ও প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ডন ও দ্য নিউজ-এ ছাপা হয়েছে। আইএসআই’র সাবেক প্রধান আসাদ দুররানির যে বক্তব্য স'ানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার কোথাও বাংলাদেশে বিএনপিকে টাকা দেয়ার কথা উল্লেখ নেই। অথচ দুবাই থেকে প্রকাশিত খালিজ টাইমস এবং পরে ব্রিটেনের পত্রিকা ডেইলি মেইল অনলাইনের ভারতীয় সংস্করণে এ তথ্য চালিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রিপোর্টটি গত ৩ মার্চ সর্বপ্রথম খালিজ টাইমসে ছাপা হয়।

এর পরদিন ৪ মার্চ একই রিপোর্ট ঢাকার দৈনিক প্রথম আলো ছাপে। ডেইলি মেইলের রিপোর্টটি লিখেছেন দীপাঞ্জন রায়। এই দীপাঞ্জন রায় প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি। ইনডিয়া টুডেতেও তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে লিখে থাকেন। বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বাসস ইন্ডিয়া টু ডের ওই রিপোর্টটি হুবহু প্রচার করেছে।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, একই ব্যক্তির রিপোর্ট হওয়া সত্ত্বেও টাকার অঙ্ক উল্লেখ কালে কোথাও পাঁচ কোটি, আবার কোথাও ৫০ কোটি উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তানের দ্য নিউজ ও প্রধান বিজনেস ডেইলি বিজনেস রেকর্ডার এবং ডনের অনলাইন সংস্করণে আদালতে মামলার বিবরণী হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে। এর কোথাও আইএসআই কর্তৃক বিএনপিকে টাকা দেয়ার কথা উল্লেখ নেই। আদালতে স্বীকারোক্তি বলে যে কথা চালিয়ে দেয়া হয়েছে তা কোথা থেকে সরবরাহ করা হয়েছে সে তথ্যের কোনো সূত্র নেই। নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত ভারতের প্রধান সংবাদপত্র দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস'ান টাইমসে বিএনপিকে আইএসআই টাকা দিয়েছে- এ সংক্রান্ত কোনো খবর নেই।

আইএসআই’র সাবেক প্রধান আসাদ দুররানির আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার খবর প্রকাশ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস। যার শিরোনাম আইএসআই ইনভল্বড ইন অ্যাক্টিভিটিস আউটসাইড ম্যানডেট : পাক সুপ্রিম কোর্ট। এ খবরেও বিএনপিকে আইএসআই টাকা দিয়েছে- এমন কোনো তথ্য নেই। গতকাল রাতে পাকিস্তানে আমেরিকান বার্তা সংস'া এপির সংবাদদাতা বাবর ডোগারের কাছে বিএনপিকে আইএসআই’র টাকা দেয়া-সংক্রান্ত আসাদ দুররানির সাক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য আদালতে দুররানি উল্লেখ করেননি। নয়াদিল্লিতে প্রথম আলোর প্রতিনিধি দীপাঞ্জন রায়ের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

খালিজ টাইমস প্রথম এ খবরটি প্রকাশ করে। দুবাই থেকে প্রকাশিত দৈনিকটি পরিচালিত হয় ভারতীয় সাংবাদিকদের দিয়ে। দীপাঞ্জন রায় ডেইলি মেইল ও ইন্ডিয়া টুডেতে তার নাম কিছুটা কাটছাঁট করে লিখেছেন। ডেইলি মেইলে নামের শেষে চৌধুরী উল্লেখ করেননি কিন' আর্কাইভে তার অন্য রিপোর্টে চৌধুরী পরিচিতি রয়েছে। ইন্টারনেটে দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর পরিচিতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন।

তিনি ভারতীয় পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে লেখালেখি করেন। সাউথ এশিয়ান ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ইয়ার বুকে তার বাংলাদেশসংক্রান্ত লেখা আছে। হিরণ্ময় কারলেকারসহ বাংলাদেশবিরোধী অনেক লেখকের সাথে দীপাঞ্জন রায়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তার লেখা বইয়ের উদ্বোধন করেন ভারতের বর্তমান অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি । উল্লেখ্য, দীপাঞ্জন রায়ের এ খবরটি এমন সময় প্রচার করা হয় যখন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের প্রস'তি নিচ্ছে।

এ ছাড়া কিছু দিন আগে লন্ডনের প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর রিপোর্টে বলা হয়, বিগত নির্বাচনে ভারত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পরামর্শ ও বস্তাভর্তি টাকা দিয়েছিল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.