আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোযা অবস্থায় যে কোন ধরনের ইনজেকশন, ইনসুলিন ও ইনহেলার নেয়া হোক না কেন তাতে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে যারা অসুস্থ অথবা মুসাফির তারা অন্য সময় রোযা রাখলেও চলবে। ” আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “রোযা অবস্থায় শরীরের ভিতরে কিছু প্রবেশ করলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। ” আল্লাহ পাক ইসলামকে বান্দাদের জন্য কঠিন নয় সহজ করেছেন। কিন্তু কতিপয় নীম হেকিম ও নীম মোল্লারা রোযা অবস্থায় ইনকেজকশন, ইনসুলিন ও ইনহেলার গ্রহণের কথা বলে দ্বীনকে কঠিন করতে চায় ও ফরয রোযা নষ্ট করতে চায়। বাংলাদেশ এন্ড্রোক্রাইন সমিতির পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ইহুদী সংগঠন ‘নোভো নরডিস্ক’-এর আর্থিক সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি প্রচারিত- মিসর ও বাংলাদেশ’-এর কতিপয় ধর্মব্যবসায়ী মৌলভীদের দেয়া ‘রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনসুলিন নেয়া সম্পর্কিত ফতওয়া সম্পূণরূপে অশুদ্ধ ও কুরআন-সুন্নাহ্‌র খিলাফ হওয়ায় গ্রহণযোগ্য নয়।

ওষুধ মূলতঃ রক্তস্রোতের মাধ্যমেই শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ রক্ত হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে খাদ্য, অক্সিজেন, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান টিস্যুসমূহে পৌঁছে এবং বর্জ্য দ্রব্যসমূহ বহন করে নিয়ে আসে। এটা এক ধরনের সংযোগ কলা। সুতরাং ওষুধ শরীরের সর্বাংশে ছড়ায়, অর্থাৎ মগজে পৌঁছে। যে কোন জখম বা আঘাতেই ওষুধ প্রয়োগ করা হোক না কেন, তা যদি শিরায় পৌঁছে, তবে তা সহজে মগজে পৌঁছবে।

এ ব্যাপারে ফিক্বাহ্‌র কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, জায়েফা (পাকস্থলী) ও আম্মাতে (ব্রেইন) যে ওষুধ দেয়া হয়, উক্ত ওষুধ যদি শুকনা হয়, তবে রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা, উক্ত ওষুধ পেট অথবা মগজে পৌঁছে না। আর যদি জানা যায় যে, উক্ত ওষুধ মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর ওষুধ যদি ভিজা হয়, তবে ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইনজেকশন যেভাবে রক্তস্রোতের দ্বারা মগজে পৌঁছে একই কায়দায় সব ধরনের স্যালাইনই মগজে পৌঁছে।

তাই রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোযা তো থাকবেই না; আর স্যালাইন গ্রহণ করলে তো রোযা থাকার প্রশ্নই উঠে না। , এ প্রসঙ্গে ‘মাবসূত’ কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, “হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রোযা ভঙ্গের কারণ হলো- রোযা ভঙ্গকারী কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ করা, সুতরাং পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য । ” আর ফতহুল ক্বাদীর ২য় জিল্‌দ ২৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে “হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য। ” অতএব মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করুক অথবা মূল রাস্তা ব্যতীত অন্য যে কোন স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন, যদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে রোযা অবশ্যই ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

কেননা, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে ইনজেকশনের দ্বারা প্রবেশকৃত ঔষধ পাকস্থলী ও মগজে পৌছে থাকে। আর শরীয়তের বিধান হলো, পাকস্থলী বা মগজে কিছু প্রবেশ করলেই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তা যে ভাবে এবং যে স্থান দিয়েই প্রবেশ করুন না কেন। , এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে। যেমন, “হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়.... তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।

কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। ” “বাহারুর রায়েক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়... তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা। ” “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়..... তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। ” অনুরুপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।

কোন কোন জাহিল মৌলভী বলে, ‘ইনজেকশন ইত্যাদি মূলরাস্তা যেমন, নাক-কান, মুখ, বায়ুপথ দিয়ে প্রবেশ করা শর্ত। ’ মূলতঃ তাদের এ বক্তব্যও চরম জিহালতের শামিল। কারণ, ফিক্বাহ্‌র বিখ্যাত কিতাব ‘মাবসূত’-এ উল্লেখ আছে, “ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রোযা ভঙ্গের কারণ হলো- রোযা ভঙ্গকারী কোনকিছু ভিতরে প্রবেশ করা। সুতরাং পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য। মূল রাস্তা নয়।

” অর্থাৎ মূল রাস্তা শর্ত নয়। যে কোনভাবে মগজে অথবা পাকস্থলীতে পৌঁছলেই হলো। অনুরূপ ফিক্বাহ্‌র বিখ্যাত কিতাব “ফতহুল ক্বাদীর”-এ উল্লেখ আছে, “হযরত আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য (মূল রাস্তা নয়)। ” , এখানে একটি বিষয় খুবই লক্ষণীয়, তাহলো- কারো যদি রোযা অবস্থায় দিনের বেলায় ইনজেকশন নেয়ার খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে যায়, তবে তার জন্যে রোযা না রাখার হুকুম তো শরীয়তেই রয়েছে । , যেমন আল্লাহ পাক বলেন, “আর যদি কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হয়, তবে অন্য সময় রোযাগুলো আদায় করবে।

” , যারা ওজর বশতঃ বা অসুস্থতার কারণে রমযান মাসের রোযা রাখতে পারবেনা, তারা অন্য সময় উক্ত রোযাগুলো আদায় করলে অবশ্যই রমযান মাসের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা অর্থাৎ ফাযায়িল-ফযীলত লাভ করতে পারবে। বরং অনেক ক্ষেত্রে উল্লিখিত অবস্থায় রোযা রাখার মধ্যেই বরং কোন ফায়দা বা ছওয়াব নেই। , কিন্তু অসুস্থতার পরও যদি কেউ ইনজেকশন বা ইনসুলিন নিয়ে রোযা রাখতে চায় তাহলে সেটা কুরআন শরীফ-এর আয়াতের বিরোধিতা তথা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করা হবে। আল্লাহ পাক বলেছেন, নিশ্চয়ই ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই। কিন্তু ইহুদী-নাছারাদের দালাল কতিপয় অর্ধশিক্ষিত ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা তথা নিম মোল্লা ও অনভিজ্ঞ ডাক্তার তথা নীম হেকিমরা মুসলমানদের জন্য মাসয়ালা কঠিন করতে চাইছে।

এবং মুসলমানদের ফরয রোযাকে নষ্ট করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ পাক অসুস্থ রোগীদের জন্য পরে ক্বাযা আদায় অথবা ফিদিয়া দেয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন সেখানে তারপরেও অসুস্থ রোগীদের জন্য জোর করে ইনজেকশন বা ইনসুলিন নিয়ে রোযা রাখার কথা বলা দ্বীনের মধ্যে কমবেশি করা। দ্বীনকে কষ্টকর করা। যা প্রকাশ্য গুমরাহীর শামিল। , সউদী আরব, মিসর, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেসকল তথাকথিত মুফতীরা রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনসুলিন নেয়ার পক্ষে বলছে তারা মূলত ইহুদীদের প্রতারণায় পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে দুনিয়ার লোভে তাদের টাকা খেয়ে এরূপ করছে।

উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের ফরয রোযাকে নষ্ট করে দেয়া। যা তাদের একটি সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.