আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোযা ও আধুনিক বিজ্ঞান

ইসলাম মানবতার কল্যাণে শান্তি ও নিরাপত্তার এক অতুলনীয় ধর্ম। প্রকৃতপক্ষে এটি শুধু ধর্মই নয় বরং এক পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। কুরআন ও হাদীস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় জীবনের এখন কোন দিক বা বিভাগ নেই যা ইসলামে নেই। মানবতার মহান শিক্ষক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা, নামাজ কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রমযানের রোযা রাখা এবং হজ্ব করা।

’’ (মুসলিম) ইসলামের প্রত্যেকটি বিধানের মধ্যেই রয়েছে ইহকালীন কল্যাণ এবং পরকালীন পুরস্কার ও পরিত্রাণ। তদ্রূপভাবে রোযার মধ্যেও যেমনই রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি তেমনি রয়েছে পার্থিব কল্যাণ। পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা বাক্বারার ১৮৪নং আয়াতের শেষাংশের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘‘অ ইন তাছুমু খয়রুল্লাকুম ইনকুনতুম তায়ালামুন- আর যদি রোযা রাখো তবে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণময়, যদি তোমরা বুঝতে পার। ’’ এ আয়াতের মূল বক্তব্য পর্যালোচনা করলেই বুঝা যায় অবশ্যই রোযার মধ্যে শুধু পারলৌকিক নয় বরং অনেক পার্থিব কল্যাণও নিহিত রয়েছে। রোযা শরীরে প্রবাহমান পদার্থসমূহের মধ্যে ভারসাম্য সংরক্ষণ করে।

যেহেতু রোযার দ্বারা মানবদেহের বিভিন্ন প্রবাহমান পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পায় তাই ইহাদের কার্যক্রমে ব্যাপক প্রশান্তির সৃষ্টি হয়। এজন্যই তো প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেছেন, ‘‘তোমরা রোযা রাখ, তাহলে সুস্থ থাকতে পারবে। ’’ সাওম বা রোযা রাখার মাধ্যমে স্নায়ুবিক প্রক্রিয়ায় আসে পূর্ণ শান্তি। ইবাদত বন্দেগী পালনের দ্বারা অর্জিত প্রশান্তি আমাদের মনের যাবতীয় পঙ্কিলতা ও ক্রোধ দূরীভূত করে দেয়। তাছাড়া রোযা ও অজুর সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ার যে শক্তিশালী সমন্বয় সাধিত হয় তার দ্বারা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহের এক অতুলনীয় ভারসাম্যের সৃষ্টি হয়।

নবী (সাঃ) রমযানের রোযা ছাড়াও প্রতিমাসে তিনটি করে রোযা রাখতেন এবং বলতেন তোমরা রোযা রাখ, সুস্থ থাকবে। ভারতের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধীও রোযা রাখার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি বলতেন, ‘‘মানুষ খেয়ে খেয়ে স্বীয় শরীরকে অলস বানিয়ে ফেলে আর অলস শরীর না জগতবাসীর আর না মহারাজের। যদি তোমরা শরীরকে সতেজ ও সচল রাখতে চাও তাহলে শরীরকে দাও তার ন্যূনতম আহার এবং পূর্ণ দিবস রোযা রাখ। ’’ -(দাস্তান গান্ধী, বিশেষ সংখ্যা)।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মূর পাল্ড দিল বলেন, ‘‘ইসলাম যদি স্বীয় অনুসারীদেরকে অন্য আর কিছুই শিক্ষা না দিয়ে শুধুমাত্র এই রোযার ফর্মুলাই শিক্ষা দিত তাহলে এর চেয়ে উত্তম আর কোন নেয়ামত তাদের জন্য হত না। ’’ উল্লেখ্য যে, রোযা রাখার মাধ্যমেই তিনি পেট ফুলা রোগ থেকে অনেকটা নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমল্ড নারায়াড বলেন, ‘‘রোযা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মূল করে দেয়। মানবদেহের আবর্তন-বিবর্তন আছে। কিন্তু রোযাদার ব্যক্তির শরীর বারংবার বাহ্যিক চাপ গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করে।

রোযাদার ব্যক্তি দৈহিক খিচুনী এবং মানসিক অস্থিরতার এর মুখোমুখি হয় না। ’’ আধুনিক যুগের ডাক্তার ও চিকিৎসকগণ রোযার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ঠিক রাখার কথা এবং রোযার নানাবিধ উপকারিতার কথা স্বীকার করেন। এই মর্মে তারা বলছেন যে, ‘‘কখনো কখনো পাকস্থলী খালি রাখা উচিত। যেন ক্ষুধার মাধ্যমে পাকস্থলীর দূর্ষিত পদার্থ জ্বলে পুড়ে পরিষ্কার হতে পারে। কেননা শারীরিক সুস্থতা পাকস্থলীর উপর নির্ভর করে।

’’ তাই তো আমরা দেখতে পাই দুনিয়ার প্রায় সকল ধর্ম ও শরিয়ত তার অনুসারীদের জন্য এই পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে। সুতরাং পরিসমাপ্তি লগ্নে বলা যায়, রোযার মাধ্যমে শুধু আত্মিক নয় বরং শারীরিকও নানা উপকার সাধিত হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে রোযা রাখা এবং এর যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দিন। (আমীন) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.