আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রথম রোযা রাখাঃধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা



ক্লাস থ্রীতে পড়ি । বয়স কত হবে ? ৮ কিংবা ৯ । প্রথম রোযা রাখলাম । বড়দের সাথে পাল্লা দিয়ে বড়দের মত কাজ করার অদম্য ইচ্ছা আমাকে রোযা রাখতে সাহায্য করল । সেই বয়সে আমার ধারনা ছিল রোযা একটা প্রাণীর নাম ।

লম্বায় একফুট হলেও মানুষের আকৃতির এই প্রাণীটির সারা শরীর বনমানুষের মত লোমে ঢাকা থাকে । ভোর রাতে একে বাড়ির পাশের বাগান বা ঝোপঝাড় থেকে ধরে গোপন কোথাও বেঁধে রাখাই হল রোযা রাখা । অবশ্য পরে এই রোযাকে কিভাবে ছাড়া হয় সেটা নিয়ে আমার কৌতুহল ছিলনা । আমার কৌতুহল শুধু রোযা রাখা নিয়ে । সেবার প্রচন্ড রোদের বছর ।

৮৪/৮৫ বা আগে পরে হবে । বৈশাখ বা গরমের কোন মাসে রোযা পড়েছে । আম্মা-আব্বা তাই আমাদের রোযা করতে নিষেধ করতেন । ভোররাতে জাগাতেন না । আমি এক ভোররাতে উঠে দেখি সবাই খাচ্ছে ।

কি ব্যাপার সবাই লুকিয়ে লুকিয়ে খাচ্ছে কেন ? আমার বড় দু’ভাই এবং আব্বা-আম্মা তখন রোযা করতেন । আমরা ছোট তিন ভাই-বোন রোযা করতাম না । বুঝতাম ও না । আমার প্রশ্নে আব্বা বুঝিয়ে বললেন এভাবেই রোযা রাখতে হয় । আমি বুঝলাম রোযা কোন প্রাণী নয় ।

সবার সাথে আমিও সেহরী খেলাম । সেই আমার প্রথম রোযা । সকালটা কিভাবে কাটিয়েছি মনে নেই । তবে দুপুর ২ টায় আব্বা অফীস থেকে ফিরে যখন শুনলেন আমি তখনো কিছু খাইনি । আব্বা আমাকে কোলে তুলে নিলেন ।

আমার রোযা রাখার কষ্ট আব্বার এতটুকু আদরে যেন অনেকটাই দুর হয়ে গেল । আমার রোযা রাখা উপলক্ষে আব্বা বাজার থেকে গরুর গোস্ত কিনে আনলেন । আমরা সব বাচ্চারাই সে সময় বোতল/জগ/ছোট ড্রামে করে পানি নিয়ে যেতাম পাশের হাশপাতালের বরফঘরে । বরফের ঘরে দুপুরের দিকে সেগুলো দিয়ে আসতাম আর ইফতারের আগে নিয়ে আসতাম । ওই দিনও ঐ কাজ করেছিলাম কিনা মনে নেই ।

তবে বিকালের দিকে এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম তাকে খেলতে ডাকার জন্য । আমার হাতে একটা লোহার তৈরী রিং । একটা লোহার হাতল দিয়ে পিচ ঢালা পথে সেটাকে চালানোই যেন পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দের ছিল তখন । সেই রিং নিয়ে কত যে গল্প আর কল্পনার পাহাড় তৈরী করতাম সেই বয়সে কে রাখে তার খবর ! বন্ধুর মা আমার চেহারা দেখেই বুঝে ফেললেন যে আমি রোযা রেখেছি । আন্টি শুধু অবাকই হলেন না ।

পাশের বাসার আন্টিকে ডেকে আমার আম্মার আহম্মকির জন্য নানা কথা বললেন । আমি তাদের কথার প্রত্তুত্তর করিনি । ফিরে আসি বাসায় । সেই আমার প্রথম রোযা । আমার বড় হয়ে ওঠা ।

রোযার ভেদ জানা । তারপর কত রোযা এসেছে গেছে । কত রোযা রেখেছি, কত রোযা রাখিনি । কত রোযাকে স্বাগতম জানিয়ে মিছিল করেছি । বাজি ফুটিয়েছি ।

কিন্তু সেই যে আমার ৮ বছরের প্রথম রোযা রাখা তার মত খুশি তার মত আনন্দিত আর কোন রোযা রেখে হয়েছি কিনা মনে পড়েনা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.