আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোযা অবস্থায় যে কোনো ধরনের ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনসুলিন ও ইনহেলার নেয়া হোক না কেন তাতে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘রোযা অবস্থায় শরীরের ভিতরে কিছু প্রবেশ করলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। ’ মহাসম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হলো- ‘রোযা অবস্থায় যে কোনো ধরনের ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনসুলিন ও ইনহেলার নেয়া হোক না কেন তাতে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। ’ ‘ইমদাদুল ফতওয়ায়’ প্রদত্ত এবং ধর্মব্যবসায়ী মৌলভী ও অজ্ঞ ডাক্তারদের দেয়া ‘রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার ও ইনসুলিন নেয়া’ সম্পর্কিত ফতওয়া সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ ও বিভ্রান্তিমূলক। কারণ তাদের প্রদত্ত ফতওয়া সম্পূর্ণরূপেই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার খিলাফ। অতএব, তাদের প্রদত্ত উক্ত ফতওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় বরং পরিপূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য।

_____________________________________________ পবিত্র রমদ্বান শরীফ মাস উনার ৩০ দিন বা ২৯ দিন (চাঁদের হিসাব মুতাবিক) পবিত্র রোযা রাখা ফরয। রোযা অস্বীকারকারী কাফির এবং তরক করলে কবীরা গুনাহ হবে। ইসলামী শরীয়ত সম্পর্কিত সকল বিষয়ের প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করা যেমন ফরয তদ্রুপ রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে কিনা এ সম্পর্কিত ইলম অর্জন করাও ফরয। সুতরাং যারা না জেনে রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেবে, ইনসুলিন গ্রহণ করবে তারা এ সম্পর্কিত ইলম অর্জন না করার কারণে ফরয তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে। রোগ নিরাময়ের জন্যে রোগীরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওষুধ সেবন করে থাকে; এর মধ্যে ইনজেকশন ও ইনসুলিন গ্রহণও একটি পদ্ধতি।

ওষুধ মূলত রক্তস্রোতের মাধ্যমেই শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ রক্ত হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে খাদ্য, অক্সিজেন, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান টিস্যুসমূহে পৌঁছে এবং বর্জ্য দ্রব্যসমূহ বহন করে নিয়ে আসে। এটা এক ধরনের সংযোগ কলা। সুতরাং ওষুধ শরীরের সর্বাংশে ছড়ায় অর্থাৎ মগজে পৌঁছে। ইনজেকশন যেভাবে রক্তস্রোতের দ্বারা মগজে পৌঁছে একই কায়দায় সব ধরনের স্যালাইনই মগজে পৌঁছে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র ফিক্বাহ শরীফ উনার বিখ্যাত কিতাব ‘মাবসূত’ কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, “ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, রোযা ভঙ্গের কারণ হলো- রোযা ভঙ্গকারী কোনো কিছু (যে কোনো স্থান দিয়ে) ভিতরে (মগজ বা পাকস্থলীতে) প্রবেশ করা, সুতরাং পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য। ” আর ফতহুল ক্বাদীর ২য় জিলদ ২৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে “ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট (মগজ বা পাকস্থলীতে) পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য তা যে কোনো ভাবেই পৌছাক না কেন)। ” ঔষধ মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করুক অথবা মূল রাস্তা ব্যতীত অন্য যে কোনো স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন, যদি মগজ অথবা পেটে পৌঁছে, তবে রোযা অবশ্যই ভঙ্গ হয়ে যাবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে ইনজেকশনের দ্বারা প্রবেশকৃত ওষুধ পাকস্থলী ও মগজে পৌঁছে থাকে। আর ইসলামী শরীয়ত উনার বিধান হলো, পাকস্থলী বা মগজে কিছু প্রবেশ করলেই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে; তা যেভাবে এবং যে স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন।

এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে। যেমন, “হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাব উনার ১ম খণ্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়.... তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। ” “বাহরুর রায়েক” কিতাব উনার ২য় খণ্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়... তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।

” “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাব উনার ১ম খণ্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়..... তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। ” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবেও উল্লেখ আছে। কম ইলম ও কম সমঝের কারণে কোনো কোনো মৌলভী বা ডাক্তার তারা বলে থাকে যে, উল্লিখিত ফিক্বাহর কিতাবসমূহে যে ‘হুকনা’ বা ‘ইহতাক্বানা’ শব্দ উল্লেখ আছে তার অর্থ ইনজেকশন নয়, বরং তার অর্থ হলো ‘ডুশ বা সাপোজিটর’; যা পায়ুপথে দেয়া হয়। মূলত তাদের উক্ত বক্তব্য চরম অজ্ঞতা, মূর্খতা, প্রতারণা ও গুমরাহীমূলক; যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সমস্ত আরবী কিতাব ও অভিধানগ্রন্থে ‘হুকনা’ বা ‘ইহতাক্বানা’ শব্দের অর্থ সরাসরি ইনজেকশন বা সিরিঞ্জ বলে উল্লেখ আছে।

যেমন, আরবী-উর্দু অভিধান ‘কামুস আল জাদীদ’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ‘হুকনাতুন- অর্থ ইনজেকশন, সিরিঞ্জ। ’ ‘আধুনিক আরবী-বাংলা’ অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ‘ইহতাক্বানুন’ অর্থ ইনজেকশন এবং সরাসরি ইহতাক্বানা ‘ইনজেকশন নেয়া’ শব্দটিও উল্লেখ রয়েছে। এমনিভাবে সমস্ত লোগাত বা অভিধানগ্রন্থে ‘ইহতাক্বানা’ শব্দের অর্থ ইনজেকশন বলে উল্লেখ রয়েছে। বস্তুত যারা রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়ার পক্ষে বলে, তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ থেকে একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না। তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যে সকল দেওবন্দী কিতাবের নাম উল্লেখ করছে, যেমন ইমদাদুল ফতওয়া, আপকে মাসায়িল, আহসানুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে রহিমিয়া, ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া- এসকল কিতাবগুলো দেওবন্দীদের নিজস্ব লেখা; যা সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।

তাছাড়া তাদের উক্ত কিতাবের অনেক বক্তব্যই বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য কিতাবের বিপরীত। অর্থাৎ যে সমস্ত কিতাব সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয় এবং বিশ্বখ্যাত সে সমস্ত ফিক্বাহ শরীফ উনার কিতাব, যেমন হিদায়া, বাহরুর রায়িক্ব, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে শামী, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি সর্বজনমান্য কিতাবের বক্তব্যের বিপরীত হওয়ায় তা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য। রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন নেয়া হারাম ও রোযা ভঙ্গের কারণ এবং এর সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২১ ও ২২তম সংখ্যায় আশরাফ আলী থানভীর ‘ইমদাদুল ফতওয়ায়’ ইনজেকশন সম্পর্কিত প্রদত্ত ফতওয়াটির ভুল খণ্ডন করতঃ বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ উল্লেখ করা হয়েছে; যা হক্ব তালাশীদের জন্য যথেষ্ট। সুত্রঃ দৈনিক আল ইহসান শরীফ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.