আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরাধবোধ!!

-আপনি এটা কি করলেন? এদেরকে টাকা দিয়ে দিলেন? জানেন না- এদের বয়স কম হলে কি হবে-এরা একেকটা বাটপারের আধার?? ঐ দেখেন দূরে গিয়ে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে। সিরাজুল ইসলামের কথা শুনে আজিজ সাহেব তাকিয়ে দেখেন,কথাটা সত্যি। রাগে তার গা জ্বলতে লাগল। মনে হচ্ছে: বাচ্চাটাকে ধরে কয়েকটা চড় লাগাতে পারলে মনটা একটু শান্ত হত। সিরাজুল ইসলাম আবারো বলতে শুরু করেন: -এইসব ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আর পারা গেল না।

যেখানেই যাবেন সেখানেই এরা মুখ করুণ করে হাজির হয়ে বলবে: স্যার, কয়েকটা টাকা দেন না,না খাইয়া আছি,বোনের অসুখ,বাবা মারা যাচ্ছে,হেন-তেন, আরো কত কি!! প্রতিদিন নিত্য-নতুন বাহানা তো যোগ হচ্ছেই। সব বাটপারের দল! এত ছোট বয়স থেকেই এদের মা-বাবা এদের রাস্তায় একা একা বাটপারি করে টাকা রোজগার করতে শিখিয়ে দিচ্ছে, মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় ভাবলে! যাই হোক, আপনার এখন আর কিছু করার নেই। পরের বার সাবধান থাকবেন। এরপর থেকে আজিজ সাহেব বেশ সাবধান হয়ে গেছেন। সেদিন বাজার করে রিক্সায় উঠবেন, হঠাৎ কোথেকে যেন একটা ৭-৮ বছরের বাচ্চা দৌড়ে এসে তার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল: -স্যার ,ও স্যার।

কয়েকটা টাকা দেন না, স্যার। আমার মায়ের খুব জ্বর স্যার, একটা জ্বরের ওষুধ ( নাম বলতে পারল না- নাপা বা প্যারাসিটামল জাতীয় কিছু একটা হবে) কিনমু। আজিজ সাহেব কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে রিক্সায় উঠে গেলেন। রিক্সা চলতে শুরু করল। এসব বাচ্চা খুব নাছোড়বান্দা টাইপ হয় - তিনি আগে দেখেছেন।

এই বাচ্চাটিও হাল ছেড়ে দিল না। চলন্ত রিক্সার পিছে পিছে দৌড়াতে শুরু করল। -স্যার, ওষুধ না পাইলে আমার মা মইরা যাইব স্যার। দেন না কয়েকটা টাকা। কেউ দেয় না স্যার।

কতজনরে কইসি। একটা কল এসেছে। আজিজ সাহেব ফোন বের করে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে থাকেন। এদেরকে পাত্তা না দিয়ে অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। তাহলেই এরা একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে।

কিন্তু বাচ্চাটি মনে হয় বেশ নাছোড়বান্দা। অনেকখানি রাস্তা তার রিক্সার পিছে পিছে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আসতে থাকে। কান্নার কি নিখুত অভিনয়!! বাপরে বাপ। আজিজ সাহেব খুব বিরক্ত হন। একসময় রিক্সার গতির সাথে আর পেরে না উঠে বাচ্চাটি থেমে যায়।

আজিজ সাহেব পিছনে একবার তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। যাক, আজ অন্তত তাকে ঠকাতে পারেনি। রিক্সা প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ কি মনে হতেই আজিজ সাহেব চমকে উঠেন। তিনি মনে করতে চেষ্টা করলেন: শেষবার যখন তিনি পেছন ফিরে তাকিয়েছিলেন, তখন কি দেখেছেন? বাচ্চাটি কি রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছিল? হুম,তাই তো মনে হচ্ছে।

তার মানে বাচ্চাটি যা বলেছিল সব সত্যি!! আজিজ সাহেব দ্রুত রিক্সা ঘুরিয়ে সেই জায়গাটিতে ফিরে গেলেন। কিন্তু কোথাও বাচ্চাটিকে দেখতে পেলেন না। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। সবার মাঝেই বাসায় ফিরে যাবার জন্য এক ধরনের তাড়া। সেই অবস্থায় রাস্তায় প্রচন্ড ভীড়ের মাঝে তিনি বাচ্চাটিকে পাগলের মত এদিক-ওদিক খুঁজে বেড়াতে লাগলেন।

কিন্তু পেলেন না কোথাও। সেই ঘটনার পর অনেকদিন পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু থেমে থাকেনি বাচ্চাটিকে খুঁজে বের করার আজিজ সাহেবের অবিরাম প্রচেষ্টা। আজও আজিজ সাহেব সুযোগ পেলেই সেই জায়গাটায় গিয়ে বাচ্চাটিকে খুঁজে বেড়াতে থাকেন। ---------------------------------------------------------------------- গল্পটি লিখেছেন : স্বপ্নীল প্রথম প্রকাশের তারিখ : ২৮ জুন , ২০১১ স্বপ্নীল এর ফেসবুক : http://www.facebook.com/sopnill.ahmed ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।