আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিভু নিভু সময় শেষাংশ

বাধঁ জোড়ার আওয়াজ > With Great Power, Comes Great Responsibility নিভু নিভু সময় প্রথমাংশ (পরিমার্জত) শায়লার প্রথম কয়েক সেমিস্টার সমস্যার মধ্যে গেলেও ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠে । এতে সহপাঠীরা বিশেষ করে বাঙ্গালীরা যথেষ্ট সহযোগীতা করে । হয়ত মেয়ে বিধায় এই সহমর্মীতা । তবুও তার কাছে খারাপ লাগে না । মা-র পাঠানো অর্থে সম্পূর্ণ চলে না তাই নিজেকেও পার্ট টাইম কাজে মনোনিবেশ করতে হয় ।

প্রথম প্রথম ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট এ কাজ করলেও পরে একটি সরকারী জাদুঘরে কাজ করার সুযোগ পায় । সময়গুলো মোটোমোটি ভালই কাটছিল । বছর দুই পর জেনিফা আলী শায়লাকে দেশে মানে ইটালীর তুরিনোতে ফিরে আসার তাগিদ দেয় । জেনিফা তার জন্য একটি ভাল ছেলে ঠিক করেছে । ছেলেটি জার্মানীর জুরিখে একটি বেসরকারী ফার্মেসীর ল্যাব এ্যাসিসট্যান্ট ।

তার উপর বাঙ্গালী ও জানাশোনা । তাই জেনিফা এই ছেলে হাতছাড়া করতে রাজী নয় । জেনিফারও বয়স হয়েছে, প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে । তার অবর্তমানে তার মেয়ের জন্য কে দেখভাল করবে, সেই নিয়ে তার গভীর চিন্তা । শায়লা তার সব সময় কাজ ও পড়াশুনায় ব্যস্ত রাখলেও হঠাৎ করে কিভাবে যেন কাঞ্চন এর প্রেমে পরে যায় ।

কাঞ্চন অস্ট্রিলিয়াতেই বেড়ে উঠা বাঙ্গালী । পরিবার পরিজন সবাই এখানেই থাকে । তাদের প্রথম দেখাতে কোন চমক না থাকলেও কিভাবে যেন একে অপরকে অনুভব করতে থাকে । পেশায় কাঞ্চন একজন ব্যবসায়ী । বলা যায় পারিবারিক ব্যবসা ।

সেখানে কাঞ্চনকে তেমন কিছুই করতে হয় না । যা করার তার বড় ভাই ও মেজো ভাই ই করে থাকে । সে মাঝে মাঝে দেশী পন্য আমদানীর ব্যাপারে সমোঝতা করে । তাই সে বেশীর ভাগ সময়ই অবসর কাটায় । তারই বদৌলতে একদিন জাদুঘরে ঘুরতে গিয়ে তার পিডিএ(পকেট ডিজিটাল এসিসট্যান্ট)-টা ভুলে কোথাও পরে যায় ।

সেখানেই কাজ করত শায়লা । কাজ শেষে সেখানেই শায়লা পি ডি এ-টা খুজে পায় এবং তার উপর জরুরী যোগাযোগ অনুযায়ী, সে কাঞ্চন এর সাথে প্রথম যোগাযোগ করে । বলাবাহুল্য কাঞ্চন এর জন্য পি ডি এ-টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, অনেক ব্যবসায়িক তথ্য জমা ছিল । এইভাবেই সম্পর্ক শুরু হয় এবং পরবর্তীতে বিস্তৃত হতে থাকে মন অবধি । ইদানীং হঠাত করে শায়লা অসুস্থ হয়ে পড়েছে ।

পেটে তার অসহ্য ব্যথা । সে চাইলেই ডাক্তার এর কাছে যেতে পারে কিন্তু ভয়ে যাচ্ছে না । কারন সামনে তার পরীক্ষা । এরপরই আপাতত যেই লক্ষ্যে পড়াশুনা করছে তা সমাপ্ত হবে, এরপর নিউজিল্যান্ড এর একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করবে বলে মনস্থির করেছে । তা আর হয়ে উঠল না, কাঞ্চন এর পীরাপীরিতে সে ডাক্তার এর কাছে গেলই ।

ডাক্তার বেশ কয়েকটি টেস্ট করালো । ঔষুধে শায়লার কোন কিছুই হচ্ছে না । বরং দিনকে দিন অবনতিই হচ্ছে । মা-কে জানানোর দরকার বলে মনে করলেও, মা অনেক চিন্তায় পরবে বলে, আর জানায় নি । পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা আর হলো না ।

শায়লা আগের মত কিছু খেতে রুচী বোধ করে না । কোন কিছুই তার ভাল লাগে না । তবে কাঞ্চনকে খুব মনে ধরে । তাই সে তারই সান্নিধ্যে থাকতে চায় । ডাক্তার একের পর এক টেস্ট করিয়ে যাচ্ছে ।

ডাক্তারও কিছু বলছে না । রেডিও ফ্রীকোয়েন্সির সাহায্যে প্রায়ই তাকে থেরাপী নিতে হচ্ছে । শায়লার সবকিছুই কেন যেন অস্বাভাবিক লাগে । সে ডাক্তার এর সাথে একান্ত বাক্যলাপ করতে চায় । ডাক্তারও বুঝতে পারছে , সে কি জানতে চায় ... শায়লা এখন কাঞ্চন কে চিনতে পারছে না ।

কাঞ্চন কিছুই বুঝে উঠতে পারে না । শায়লার এই পরিবর্তনটা ধীরে ধীরে হলে কাঞ্চন মেনে নিতে পারতো । কিন্তু এটা হঠাৎ করেই হয়েছে । শায়লা নিজেকে একা রাখতে চায় । এমনি হঠাৎ করে সে সিদ্ধান্ত নেয় সে দেশে(ইটালির তুরিনোতে) ফিরত যাবে ।

তার মা তার পথ চেয়ে আছে । কাঞ্চন তার ব্যবসা ছেড়ে এক মূর্হতের জন্যও শায়লাকে ছাড়ছে না । শায়লার কাছে কাঞ্চন অচেনা একজন মানুষ । তবুও সে কাঞ্চনকে বলে ভাল কাউকে দেখে জীবনসঙ্গী করার । কারণ সে কাঞ্চনকে চিনে না ।

সে দুইটা চিঠি কাঞ্চনকে দেয় পোষ্ট করার জন্য । একটি ইটালীর জন্য আরেকটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য । কাঞ্চন খানিকটা অবাকই হয়, অস্ট্রেলিয়ার আর কে হতে পারে শায়লার ঘনিষ্ট ! শায়লা এখন মা-য়ের কোলে । দুনিয়ার সবচেয়ে নিরাপত্তায় যেন শুয়ে আছে । আসলে মা-র তুলনা হয়না ।

আপন মা না হলেও জেনিফা আলী তাকে একটু অল্পের জন্যেও চোখের বাহিরে রাখেন নি । শায়লা তার প্রেম সম্পর্কে মা-কে আজ প্রথম জানাল । চিঠিতে কখনো কাঞ্চন এর কথা তুলে নাই, পাছে যদি মা চিন্তি করে তাই । দীর্ঘ সময়ের একাকীত্ব জেনিফা আলীকে একঘেয়ে করেছিল । শায়লার আগমনে তিনি আবার প্রাণ চঞ্চল হয়ে গেলেন ।

শায়লার কি হয়েছে ব্যাপারটা তিনি বুঝতে না পারলেও আচ করতে পারছিলেন । মাস কয়েক পর... শায়লার কবরটি ঠিক জেনিফা আলীর স্বামীর পাশেই সমাহিত । জেনিফা একা হয়ে গেলেন । জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একাই রয়ে গেলেন । নিজে শায়লাকে পেটে না ধরলেও সন্তান হারা মায়ের কি হাহাকার তিনি ঠিকউ উপলব্ধি করতে পারছেন ।

পৃথিবীর অনেক কষ্ট অনেকের সাথে বন্টন করা যায় কিন্তু এই কষ্ট বন্টন করার নয় । বছর কয়েক পর... হুনাইফা চিঠি দিয়ে গেল । সকালেই পোষ্ট এ আসে কাঞ্চন এর নামে । হুনাইফা হল কাঞ্চন এর বিবাহীত স্ত্রী । ১ বছর পূর্তি হল তাদের বিবাহের ।

প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে হুনাইফাকে সে জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর একটি বই উপহার দেয় । হুনাইফা খুবই খুশী হয় । হুনাইফার এটি একটি অন্যতম পছন্দের বিষয় । তার উপর স্বামীর দেওয়া উপহার । চিঠি . . . . . . . কাঞ্চন এর মাথায় কিছুই ঢুকছে না ।

এটা কিভাবে সম্ভব ? এর মানে কি শায়লা এখন সিডনীতে,অস্ট্রেলিয়া ! শায়লার চলে যাওয়ার পর বার কয়েক চিঠি পাঠিয়েছে । কোন জবাব পায় নি আর ফোন নম্বরটিও সঠিক ছিল না । তার এক ঘনিষ্ট আত্নীয় ইটালির রোম এ থাকত । তার মাধ্যমেও যোগযোগ করার চেষ্টা করার পরও তার হদীস পায় নাই । একবার চিন্তা করেছিল নিজেই যাবে কিন্তু বাবার মৃত্যুতে আর ভাইরা যার যার আখেড় গোছানোর ঝামেলাতে , নিজেকে ব্যবসাতে মনোনিবেশ করতে হল ।

ধীরে ধীরে শায়লার কথা ভুলতেই বসেছিল । তার উপর মা-র পীরাপিরীতে হুনাইফাকে ঘরে তোলা । আমি তোমাকে অনেক ভাল ... বাসি । কিন্তু বিদায়ের দিন, আমি মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারি নাই । যা বলা ছিল তা এখন এর মধ্যে ।

আমি চিঠিটা আমার এক বিশ্বস্ত বান্ধবীর কাছে পাঠিয়ে দেই যাতে সে বছর দুই তিন পর তোমার কাছে ফরোয়ার্ড করে দেয় । জানো কি ? আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি । আমি বোঝাতে পারব না । আমি প্রেম পত্র লিখতে পারি না । এটা সঠিক অর্থে প্রেমপত্র নয় বরং বিদায় পত্রই বলতে পার ।

খুব কষ্ট হচ্ছে লিখতে, সারা শরীরে অসম্ভব ব্যথা । আমি তোমাকে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেছিলাম কাঞ্চন । আমি চেয়েছিলাম অসুস্থ অবস্থাতেই তুমি যেন আমাকে বিয়ে কর । আমাদের ১ টি ফুটফুটে বাচ্চা হবে, নাম রাখবো তার রায়হান । চিন্তাগুলি অল্পই এবং অগোছালো ।

তাছাড়া তোমার জীবন আমার অসুস্থতার সাথে মিশিয়ে নষ্ট করতে চায় নি । অসুস্থ অবস্থায় বিয়ের চিন্তা করা পাগলের প্রলাপই বলতে পার । একবার চেয়েছিলাম তোমাকে সব কিছু জানিয়ে দেই । পরে ভেবে দেখলাম, একটি ছেলে যখন একটি মেয়েকে এমতাবস্থায় ছাড়তে নারাজ । সে তাকে চোখের সামনে হারিয়ে যেতে দেখলে, সহ্য করতে পারবে না ।

তাই তোমাকে আমি তেমন ঝামেলার মধ্যে জড়াতে চাই নি । তোমাকে না চেনার অভিনয়টা ইচ্ছা করেই করেছি । হয়তো ধরে নাও যে, আমি হারিয়ে গেলেও বেচে আছি এবং তোমাকে ভুলেই বেচে আছি পৃথিবীর কোথাও । ইতি তোমার প্রথম, আমার প্রথম ও শেষ ভাল.......... বাসা । আর হ্যা, তুমি জানতে চেয়েছিলেনা আমার কি হয়েছিল ? আমি যকৃত ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়েছি ।

দোয়া করি তুমি যেন সুখী থাক । শেষ লাইনটা পরে কাঞ্চন আর ধরে রাখতে পারল না । হাতের কাছের ভারী কাচের বস্তুটা দূরে ছুড়ে ফেলল । তার এখন চিৎকার করে কাদঁতে ইচ্ছা করছে । এমন হবার কথা থাকলে তো সে এক মুহূর্তের জন্যও শায়লাকে ছাড়ত না ।

শায়লাকে বিয়ে করার কথা শায়লা নিজে কখনো বলে নাই, সে এই সামাজিক বন্ধনের ব্যাপারটা নিয়ে কখনো মাথা ঘামায়নি । কাঞ্চন এর অবারিত ধারা তার বক্ষকে বির্দীণ করেই চলছে । সে যেন বাকহীন জড় পদার্থ এ পরিণত হয়েছে । শায়লার জমানো কষ্ট তো তাকে জানালো । এখন কাঞ্চন কি পারবে , তার জমানো কষ্ট কাউকে জানাতে ? হয়ত হুনাইফা এটা শুনলে স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে ।

কারণ হুনাইফা জানে যে কাঞ্চন এর আগে কারউ সাথে সম্পর্ক ছিল না । কাঞ্চন ভাবে, পৃথিবীতে এত মানুষ থাকতে কেন শায়লারই এরকম হল ? কেন সে শায়লাকে ধরে রাখতে পারল না ? কেন সে শায়লার মনের অভিপ্রায় বুঝলনা ?এই প্রশ্নগুলো অবান্তর । কিন্তু এগুলো মনের বড় হলরুমে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে বারবার । বছর চারেক পরে ... হুনাইফা-কাঞ্চন এর ঘর আলো করে ফুটফুটে শিশু জন্ম নেয় । কাঞ্চন খুব সখ করে নাম রাখে তার রায়হান ... পাদটিকা: গল্পটি কোন বাস্তব গল্পের উপর ভিত্তি করে লেখা হয় নি ।

সম্পূর্ণ কাল্পনিক । কেন পারলাম না, আগামীতেই বলব না হয় --------- এই কথাটি আগামী পোষ্টে বলেছিলাম । কারণ প্রচন্ড চিন্তার মধ্যে গল্প লেখা যায় না । আমার সাথে একজনের হঠাত করেই পরিচয় হয় । ঐ মেয়েটি অসম্ভব মাতাল ছিল ।

সাথে তার বয়ফ্রেন্ড বা বন্ধু । কথাচ্ছলে জানতে পারলাম মেয়েটি যকৃত ক্যান্সার এ আক্রান্ত । জীবনের নিভু নিভু সময়টাতে সে তার বন্ধুর সান্নিধ্যে আনন্দ করেই কাটাতে চায় । মেয়ে না বলে মহিলা বলাটাই শ্রেয় বয়স আনু মানিক ৩৫-৪০ কোঠায় হবে । আমি চিন্তা করছিলাম হাসিমুখে মানুষ কিভাবে মৃত্যুকে মেনে নেয় ! প্রেমিকা হারানোর পর প্রেমিক পুরুষটার মন কি রকম হতে পারে ? যদিও ধারানা পাশ্চাত্য ভঙ্গিতে বরং উপমহাদেশীয় বা দেশীয় আঙ্গিকে চিন্তা করলাম তার উপর ব্লগার নাফিস এর পোষ্ট ।

দুইটার সংমিশ্রন বিক্রিয়ার এই গল্পের উথ্থান । কারউ সাথে মিলে গেলে , কাকতালীয় । গল্পটি সম্পর্কে আমার অভিমত এটি দ্রুত শেষ করার জন্যই খুব দ্রুতই ইতি টেনেছি, অযাচিত টেনে গল্পের ভাব বা যা প্রকাশ করতে চাচ্ছি তা মনে দাগ কাটবে না । ছবি: গুগল + Click This Link উৎসর্গ : ব্লগার নাফিজ মুনতাসির সাহেব, এই পোষ্টকে কেন্দ্র করে Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।