রাষ্ট্রপক্ষ উপযুক্ত সাক্ষী হাজির করতে ‘ব্যর্থ হওয়ায়’ বসুন্ধরা টেলিকমের পরিচালক হুমায়ুন কবীর সাব্বির হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।
ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে এই রায় দেন।
বসুন্ধরার মালিকের ছেলে সাফিয়াত সোবহান সানবীর ছিলেন এ মামলার প্রধান আসামি। তিনি ছাড়াও নূরে আলম ও হুমায়ূন কবীর নামে আরো দুই জন পলাতক ছিলেন। বাকি দুই আসামি খায়রুল হাসান উজ্জ্বল ও শামসুদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
২০০৬ সালের ৪ জুলাই রাতে গুলশানের একটি বাড়িতে খুন হন বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশসন্স নেটওয়ার্ক লিমিটেডের পরিচালক সাব্বির। এর তিন দিন পর নিহতের ভগ্নিপতি এএফএম আসিফ এই হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মো. আরমান আলী ২০০৮ সালের ১২ মে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। এতে বলা হয়, গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কে বসুন্ধরা গ্র“পের মালিকানাধীন ৩/জি নম্বর বাসার ছাদ থেকে সাব্বিরকে ফেলে দেওয়া হয়।
বিচারক মোতাহার হোসেন রায়ে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বস্তুনিষ্ঠ, প্রকৃত ও বাস্তব সাক্ষী উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় পাঁচ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো।
রায় ঘোষণার সময় বাদীপক্ষের কাউকে এজলাসে পাওয়া যায়নি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ ও নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রায় নিয়ে বাদীপক্ষের তেমন আগ্রহ ছিল না বলেই নিহতের আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন না।
অবশ্য বাদী এ এস এম আসিফ বিডিনিউজ বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
গত জানুয়ারিতে বসুন্ধরা গ্র“পের মালিক আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের ছেলে সানবীরসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
সাব্বির খুন হওয়ার কিছুদিন পর সানবীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর তাকে দেশত্যাগে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাবর জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে তিনি সানবীরকে খুনের মামলা থেকে বাঁচাতে বসুন্ধরা গ্র“পের মালিকের কাছ থেকে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলা বিচারাধীন।
‘রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ’
রায়ে বলা হয় এ মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী যৌনকর্মী সাদিয়া আক্তার রাত্রি ও পাপিয়া গাইনকে আদালতে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। অথচ তারাই ছিল এ মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন তারা।
তাছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার কোনো স্থিরচিত্র, দৃশ্যমান চিত্রও সাক্ষ্য হিসাবে আদালতে হাজির করেনি। অথচ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনে এসব প্রমাণিক দলিলের মূল্য রয়েছে।
বিচারক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে শুধু নিহতের বোনের স্বামী এস এম আসিফ, মা হোসনে আরা, বাবা আবুল হাসেম চৌধুরী আদালতে সাক্ষ্য দেন। তারা আদালতকে জানান, আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধের জেরে সাব্বিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আসামিরা।
সাব্বির নিহত হওয়ার দিন গুলশানের ওই বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন পাপিয়া ও রাত্রি। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছিলেন, সানবীর তাদের সামনেই সাব্বিরকে মেরে মেঝেতে ফেলে দেন। পরে তারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির সামনে সাব্বিরকে পড়ে থাকতে দেখেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ১৫ ও ২৪ সেপ্টেম্বর দুই দফায় আদালত থেকে রাত্রির নামে বাগেরহাটের ঠিকানায় সমন পাঠানো হয়। কিন্তু ওই ঠিকানায় কাউকে পাওয়া যায়নি জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।
পাপিয়ার ব্যাপারেও একই ধরনের প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
রায়ে বলা হয়, “পাপিয়া ও রাত্রি ভাসমান যৌনকর্মী হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ তাদের আদালতে হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে। ”
রায় ঘোষণার সময় এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল জানান, মামলার বিচারকালে প্রত্যক্ষদর্শী দুই সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ হাজির করতে পারলে সুষ্ঠ বিচার সম্পন্ন হতো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।