আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আব্বা বৈদেশ যামু

সবার মনেই স্বপ্ন থাকে বড় হয়ে এইটা হব ঐটা হব ,যারা স্বপ্নের ধারের কাছে যেতে পারে না তাদের তখন বিকল্প চিন্তার মধ্যে থাকে দেশ ত্যাগ মানে বিদেশ যাওয়া, কেউবা এইচ.এস.সি পাশ করেই দেশ ত্যাগ করে আবার কেউ দেশে ভাল কিছু না করতে পেরে ত্যাগ করে, স্বপ্ন একটাই দেশে যেই স্বপ্ন পূর্ন হয় নাই বৈদেশে সেইটা পূর্ন্য করা স্বপন্ন আর বাস্তবাতার পার্থক্য কতটুকু সাধারণ মাথায় অসাধারণ সেই হিসাব ধরে না, তাইতো পরিবারের বিশ্ব ব্যাংক বাপের কাছে কইতে হয় ” আব্বা বৈদেশ যামু” । শিরোনামে আমি ইচ্ছা করে বিদেশ কে বৈদেশ লেখেছি এইটা মনের ভুলে নয় মনের সব দুখ কষ্টের একটা সাময়িক বহিপ্রকাশ । বৈদেশ পুরাটাই পেইন আর পেইনের মাঝে সীমাবদ্ধ নাই কোন গেইন শুধু পেইন আর পেইন,যারা এই পেইনের মাঝে গেইন অর্জন করতে পারে তাদের রাজ কপাল থেকেও বেশি কিছু । বৈদেশ নাম নেবার পর থেকেই পেইন শুরু হয়ে যায়, কোন দেশে যাবে এইটা ঠিক করাও যেমন পেইন , দেশ অনুযায়ী বাড়তি রিকোয়ারমেন্ট গুলাও বড় পেইন বুঝা যায় । দেশ থেকে একজন শিক্ষার্থীকে অস্ট্রেলিয়া ব্রিটেনসহ ইউরোপ বা আমেরিকার যে কোনো দেশে পড়াশোনার জন্য আসতে হলে ছয় থেকে আট লাখ টাকার প্রয়োজন ।

ব্যাংকে ৬-৮ মাস ধরে ২৫-৩০ লাখ টাকার এফ.ডি.আর সাথে প্রোয়োজন দুনিয়ার কাগজপত্রের । “কি ধরনের কাগজ লাগে” এইটা না বলে বলেন “কোনটা লাগে না” ? জন্মসনধ থেকে শুরু করে বাড়ির দলিল , ইনকাম টেক্সের পেপার ,আয়কর , ট্রেড লাইসেন্স বাদ যায় না কিছুই থাকে অনুবাদ (নোটারী) নামক পেইন । এর পরও যদি একজন ভাল এজেন্ট কপালে না জুটে তাহলে কপালে আরো খারাপি আছে । এত সব কষ্ট করেও অনেকের ভাগ্যে জুটে না আইলটিস এর কাংক্ষিত ৬/৫.৫,কোচিং নিয়ে দোড়াদৈড়ির কথা না হয় বাদ ই দিলাম । এইবার সব কাগজ একসাথে জমা দিয়ে কাংক্ষিত বৈদেশ গমনের দিনক্ষন গুনতে থাকা, অবশেষে আসে সেই দিন ইম্রিগ্রেশন অফিস থেকে সিল নিয়ে বের হলে বুকটা মনে হয় বিশাল হয়ে গেছে এইটা যে পেইনের সুচনা বুঝবার অবকাশ থাকে না ।

এইসব প্রতিকূলতা জয় করে সৌভাগ্যক্রমে কেউ যদি গন্তব্যে পা ফেলতেও সক্ষম হয়, তার অর্থ এই নয় যে বিশ্বটা জয় করা হয়ে গেছে । স্বজন ও বান্ধববিহীন কর্মঠ প্রবাস জীবন কতটুকু বেদনার , যাদেও কপালে জুটেছে পরবাস, তারাই কেবল বোঝেন এর যাতনা । নতুন দেশে এসে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো অনেক কঠিন , রাস্তা ঘাট চেনা , নিজের আবাস্থল খুঁজে নিতেই কেটে যায় মাস । যাদের আত্নীয় নেই তাদের কপালে ঘটে আরো দুর্ঘতি । বৈদেশে নাকি টাকা আকাশে বাতাশে উড়ে বেড়ায় যারা এইসব কথা ভুলে যেতে দেরী হয় না ।

দেশ থেকে আনা টাকা যখন চোখের পললেই শেষ হয়ে যায় তখন মরিয়া হয়ে খুঁজতে থাকে কাজ । যেই ছেলে জীবনে বাজারের বস্তাও আলগে দেখে নাই সে কাজ পায় রেষ্টুরেন্টের বস্তা আলগানোর এক এক বস্তা ২৫ কেজি করে , মদের বোতল পর বোতল পরে থাকে সব গুলো জাগয়া মতন রেখে আশাই প্রাথমিক কাজ প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও মানিয়ে নিতে হয় কারন আটকে আছে বাড়িভাড়া , পেয়াজের পর পেয়াজ কাটতে কাটতে চোখ থেকে অনবড়ত পানি ঝড়তে থাকে করার কিছুই থাকে না কারন কাজ পাওয়া যে কত কঠিন যে টের পেয়েছে সেই একমাত্র বুঝে, এর নামই বৈদেশ যেখানে টাকা নাকি আকাশে উড়ে । আশেপাশে কারোর থেকে সামান্যকটা টাকা ধার পাওয়াও যেখানে দুস্বপ্নের মতন সেখানে প্রতিটা দিন কাটে ভয়ে । আগে শুনে এসেছে এইখানে ইচ্ছেমতন কাজ করে পয়সা কামানো যায় কিন্তু ২০ ঘন্টা কাজ পেতেই অবস্থা শেষ হয়ে যায় । যে টাকা পাওয়া যায় তার ৫০ ভাগই চলে যায় বাসা ভাড়ায় , গ্যাস ,কারেন্ট, আর ফোন বিলে,খরচের খাত কোন অংশে কম নেই শুধু ইনকাম কম পেইনটা এখানেই ।

বলতে ভুলে গেছিলাম যে কারনে আসা সেই পড়ালেখার কোন খোজ থাকে না বাংলাদেশ থেকে যেসব ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষার্থে বৈদেশ আসেন তাদের সিংহভাগই কোনো বিশ্ববিদ্যলয়ে যান না। বরং ওরা কোনো কম খরচের কলেজে ভর্তি হন বা হওয়ার চেষ্টা করেন। যেসব কলেজে ভর্তি হয়ে তারা পড়াশোনা করেন, এগুলোর অধকাংশই বেসরকারি মালিকানাধীন। মূলত এসব কলেজের অধিকাংশেরই কোনো স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকে না। দু-তিনটি রুম ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

একটা প্রতিষ্ঠানে যে কজন শিক্ষক থাকেন তাদের মধ্যে একজনকে পাওয়া যাবে ফুলটাইমার হিসেবে। এসব কলেজ খোলার জন্য আহামরি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না। স্থানীয় প্রশাসন থেকে যৎসামান্য একটা ফি দিয়ে সনদ আদায় করতে পারলেই কেল্লা ফতে। এই কলেজগুলো তিন-চার বছর পর একটি ডিগ্রিও দিতে পারে না। একটা সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা পাওয়া যায়, যা কিনা আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় একেবারেই নগণ্য ।

তাইতো প্রথম প্রথম ক্লাসে রেগুলার হলেও আস্তে আস্তে হাজিরা কমতে থাকে কিছু একটা তো দরকার পড়ালেখার পাট চুকিয়ে টাকা কামনোর পেইনে মাথাও ঘুরতে থাকে । অতিরিক্ত কাজ করতে করতে ব্যাকপেইন নামক আরেক মহাপেইনের খপ্পরে পড়েন অনেকেই যা থেকে মুক্তি মেলে না । কিছুদিনের পুরানো হলে টাকা কামানোর কিছু সিস্টেম বের হয়ে যায়, সাথে হাতাশা নামক আরেক পেইন বাসা বাধে কি করতে এসেছিল আর কি করছে এইসব প্রশ্নের উত্তর খোজায় কেটে যায় দিন, কিছু কিছু সময় টাকা আসলেই আকাশে উড়ে , তবে উড়ে এসে পকটে এসে পড়ে না । রাতদিন না ঘুমিয়ে কামানো টাকাই উড়তে থাকে , উড়তে থাকে সিগারেটের পেছেনে , রংগীন হবার আশায় টাকা উড়ে বিভিন্ন ক্লাবে , টাকা উড়ে নানান বোতলের পেছনে । এমনি করে বছরের পর বছর কেটে যায় বয়সও বাড়তে থাকে ।

যাদের কপাল ভালো তারা ভাল কাজ করে টাকা কামিয়ে ভাল ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিয়ে ফেরে তাদের সংখা খুবই সীমিত । মনের সব দুখে সেই কথাটা বার বার মনে পড়ে “আব্বা বৈদেশ যামু” [[অনেক দু:খ কষ্ট থেকে এই নোটটা লেখা । যাদের দেশ থেকে টাকা এনে পড়ালেখা করেন তাদের কথা এখানে লেখা হয় নাই । লেখা হয়েছে যাদের কেউ নাই বৈদেশ যাদের কাছে শুধু পেইন আর পেইন তাদের জন্য ]] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।