আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাঁও গেরামের কেচ্ছা -০১।

মামার জয় (গ্রামের মোড়লরা সালিসি বিচারে বসলে, মাঝে মধ্যে এই কেচ্ছাটি বলেন। বিচারিক কিছু বিষয় এতে ইঙ্গিত করে যান। যা বিচারে বা রায়ে বেশ কাজ দেয়) প্রতিদিনের মতো শেয়াল জল পানের জন্য বনের ভেতর একটি নদীতে গেলো। হঠাৎ তার পা ঝাপটে ধরলো একটি কুমির আর হুংকার দিয়ে বলল “পাজি শেয়াল আর যাবি কই আজ তোর শেষ দিন, অনেকদিন ধরে তোকে খাবার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যাস। আজ তোকে খেয়ে ফেলবো”।

শেয়াল বুঝলো আজই তার শেষ দিন, এই শক্তিশালী কুমিরের হাত থেকে বাঁচতে পারবেনা। কুমির আবারো বলল “ হাহাহাআহ আজ আর কেউ তোকে বাঁচাতে পারবেনা। এই ত্রিলোকে আমার চেয়ে শক্তিশালী কেউ নেই যে তোকে বাঁচাবে”। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই অতি চালাক শেয়ালের মাথায় নতুন বুদ্ধি এসেগেলো সে কুমিরকে বলল “দেখো কুমির মামা আমি তোমাকে আমার নিজের মামা মনেকরি, তাই তোমার বিপক্ষে তোমাকে নিয়ে কেউ খারাপ কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারিনা”। এবার কুমির বলল “কি!!, কার এতবড় সাহস আমাকে নিয়ে খারাপ কথা বলবে!! কে কি বলেছে আমাকে বল, নাহয় তোকে আজ খেয়ে ফেলবো” “বলছি মামা, বলছি” “তাহলে দেরী করছিস কেন?” “ওইযে মহাদুষ্ট বাঘ, সে বলল, কুমিরকে পেলে আস্ত গিলে ফেলবো আরও কতো কিযে বলল, আমারতো কান্নাই পেয়ে গিয়েছিল মামা, কিন্তু আমিতো বাঘের সাথে শক্তিতে পারবোনা তাই প্রতিবাদ করতে পারিনি, শুধু কান্নাই পেলো ” “এতোবড় কথা!! বাঘের এতোবড় সাহস!! তুই কিছু করতে পারিসনি কিন্তু আমি করতে পারবো, ওই শয়তান বাঘকে একবার আমার কাছে এনে”দে” “ঠিক আছে মামা আজই তোমার হাতে ওকে এনেদেবো কিন্তু আমাকে খেয়ে ফেললে আনবো কিভাবে!!” “ভাগনা আমিকি এতোই খারাপ! দেখ আমি তোকে ভাগনা ডেকেছি, তোকে খাবোনা, কিন্তু বাঘকে আমার কাছে এনেদিতে হবে” “ঠিক আছে মামা ছাড়ো আমি যাচ্ছি” “যা ছেরে দিলাম” ছাড়া পেয়ে শেয়াল মনে মনে ভাবলো “বাপরে বাপ আমাকে আজ খেয়েই ফেলতো, কিন্তু বাঘকে কিভাবে এনে দেই! নাহলে আবার আমাকে ধরতে পারলে আর আস্ত রাখবেনা” এইভাবে চিন্তা করছে আর হাঁটছে শেয়াল।

হঠাৎ হুংকার দিয়ে বাঘ তার সামনে এসে দাঁড়ালো, আর বলল- “কিরে পাজি শেয়াল, মনোযোগ দিয়ে এতো কি ভাবছিস? এতো ভাবনার কিছু নাই, আজ সকাল থেকে কিছুই খাইনি, খুব খিদে পেয়েছে, ভাবছি আজ তোকেই খাবো” “আরে দাঁড়াও মামা আমি তোমার চিন্তায় পাগল আর তুমি বলছো আমাকে খাবে! শক্তি শুধু আমাদের সাথেই দেখাও! আর ওদিকে তোমার মান সম্মান একেবারে ধূলিসাৎ!” “আরে কি হয়েছে বলবিতো?” “ওইযে নদীতে থাকে এক কুমির, আমি প্রত্যেকদিন পানি খেতে গেলে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে বাঘকে একবার পেলে আস্ত গিলে ফেলতাম, সে নাকি ডাঙায় খুব শক্তি দেখায়, একবার আসুক”না আমার কাছে, একটা থাপ্পর দিয়ে সবকয়টি দাঁত ফেলে দিতাম বলে দাঁত কেলিয়ে হাসছিল, আমি তার সাথে শক্তিতে পারবোনা তাই কিছুই বলিনি, শুধু অনেক্ষন কাঁদি মনের দুঃখে” “কি!!! জলের কুমিরের এতোবড় সাহস!! আমার দাঁত ফেলে দিতে বলেছে!! চল আমাকে নিয়ে তার কাছে” “না মামা আমি যেতে পারবোনা আমি মারামারি ভয় পাই, যদি সে আমাকেও খেয়ে ফেলে” আরে তোর কিছুই হবেনা, তুই দূরে থেকে দেখবি ওরে কিভাবে ছিঁড়ে খাই” “তাহলে ঠিক আছে মামা আমি দূরে থাকবো” “আচ্ছা চল” “চলো মামা” শেয়াল পথ দেখিয়ে হাঁটছে। পিছু রাগে ফুঁসে হাঁটছে বাঘ। শেয়াল মনে মনে ভাবছে যদি বুদ্ধিটা কাজে লাগে, তবে কুমির বাঘ দু”টাই শেষ, কিছুদিন আরামে চলাফেরা করতে পারবো। ভাবতে ভাবতে ওরা পৌঁছেগেল নদীর কিনারায়। শেয়াল বাঘকে বলল- “যাও মামা আমি আছি ওই টিলার উপর, বিপদে তোমায় সাহায্য করবো” “হা হা হা আহ!! তুই কি ভাবছিস আমাকে? তোর মতো পুঁচকে শেয়ালের সাহায্য নেবো আমি!! মূর্খ শেয়াল, দেখ দাঁড়িয়ে কুমিরকে কিভাবে ছিঁড়ে খাই” এই বলে বাঘ নদীর জলের কাছে গিয়ে বলল- “কই কুমির, বেড়িয়ে আয় আমি তোকে খেতে এসেছি, দেখবো আজ তোর গায়ে কতো শক্তি, বেড়িয়ে আয়” এদিকে বাঘের হুংকার শুনে কুমির গভীর জলের নিচ থেকে ভাবলো নিশ্চয়ই বাঘ এসেগেছে, যাই তাকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে আসি।

তাই দেরী না করে ভেসে বলল- “কি-রে পুঁচকে বাঘ, তোর এতবড় সাহস!! আমাকে খেতে এসেছিস!! আয় আমি তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম” বলেই একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পরলো, আঘাতে আঘাতে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে বাঘ ও কুমিরের মুখমণ্ডল। ঝরছে রক্ত তবুও চলছে লড়াই, কেউ কাউকেই হারাতে পারছেনা। ওদিকে টিলার উপর বসে বসে বুদ্ধিমান শেয়াল মজা লুটছে। বাঘ এবং কুমির ইতিমধ্যে কাতর হয়েগেছে লড়াই করতে করতে। ওরা দুজনই একে অপরকে ছেরে যাবার চেষ্টা করছে।

কিন্তু শেয়ালের কাছে লজ্জা পাবে বলে ছাড়তে পারছেনা। ধূর্ত শেয়াল কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারলো তা। তাই সে ভাবলো, যদি ওরা আজকের মতো লড়াই থামায় তবে সেই একই অবস্থা হবে। ওদের যে-কারো উদরে হবে আমার বাস। তাই সে নতুন বুদ্ধি তৈরি আঁটলো।

হঠাৎ খেয়াল করলো বাঘ কুমিরকে একটি শক্ত থাবা দিয়েছে। শেয়াল ভাবলো এখনই কুমিরকে সাহস দেয়ার সময়। যাতে লড়াই চালিয়ে যায়। সে টিলার উপর বসে হাততালি দিয়ে বলল “মামার জয়” এই শুনে কুমির ভাবলো, মনেহয় আমি জিতে যাবো। তাই সে আরও তীব্র আক্রমন চালালো।

এবার কুমির বাঘের মুখে বসিয়ে দিল শক্ত থাবা! এবার বাঘ ফিরে তাকালো শিয়ালের দিকে। শেয়াল আবারো বলল “মামার জয়” তা শুনে বাঘ ভাবলো ভাগিনা আমাকে উৎসাহ দিচ্ছে। মনেহয় আমিই জিতবো। এবার বাঘও তীব্র আক্রমণ চালালো। এইভাবে শেয়ালের দিকে যে-ই তাকায় সে বলে “মামার জয়”।

আর ওদিকে আক্রমণ আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। এইভাবে লড়াই করতে করতে বাঘ কুমির দু”জনই মারাগেলো। আর শেয়াল সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো। (সংগৃহীত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।