আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাঁও গেরামের খোলা চিঠি ০৩

মশিউর রহমান মিঠু

মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা জননী। বাংলাদেশের গাঁও-গেরামের আবাল-বৃদ্ধা-বনিতা ভূখা-নাঙ্গা লক্ষ-কুটি জনতার হাজার -লক্ষ-কুটি সালাম নিবেন। আপনি আবারো ক্ষমতায় বসলেন, আপনি আগের বার ক্ষমতায় আসার আগে আমাগোরে কইছিলেন ১০টাকা দামে চাইল খাইয়াবেন। কই সেই ১০ টাকা দামের চাইল। বাজারে মোটাচাইলের দাম ৩৫-৪০টাকা।

বাজার আপনার বাণিজ্যমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে নাই যে সেটা আমাগো বুঝতে বাকি নাই। প্রত্যকটি জিনিষের দাম আকাশচুম্বী। জিনিষপত্র ধরতে গেলে যেন হাত পুড়িয়া যাইবার অবস্থা। জননীগো আমাদের দেশের ক্ষমতার গদির মধ্যে কি এমন যাদু আছে, যিনিই ক্ষমতায় যায় তিনি টাকা পয়সার মালিক হইয়া যায়। মন্ত্রী ভোটের আগে সম্পত্তির যে হিসাব দেয় ক্ষমতায় যাওয়ার পর তা অনেকগুণ বাড়িয়া যায়।

সেই কারণে মনে হয় একবার ক্ষমতায় গেলে সেই আর ঐ গদি ছাড়তে চায় না। জননীগো, আমনে যত কথা কন না কেন, আমনের ছাত্রলীগ-যুবলীগের সোনার ছেলেদের যদি থামাতে পা হারেন তবে কিছু হইতো ন। আমনের এই সোনার ছেলেরা সিলেটে সিপিবি-বাসদ এর মিটিং এর হামলা করে সেলিমকে আহত করেছে। প্রায় ১০জন ঐ হামলায় আহত হয়েছে। পুরুষ্কার হিসাবে আমনি সোনার ছেলেগোর নেতাগোরে নিয়ে আমিরিকা গেছেন।

আমগো মালেগো দরজার বাকশালি কইলো, আমনি ১৪০জন সফর সঙ্গী লইয়া আমিরিকা গেছেন। মা গো মা, একজনের নাকি প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টিয়া খরচ। আমনের নাকি বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, শিক্ষ-স্বাস্থ্য, সেবাখাতে বরাদ্দ করতে টিয়া নাই। এই কোটি কোটি টিয়া খরচ করি এতলোক আমিরিকা দিয়ে যাওয়ার দরকার কি? হেরা কি করবো, বেড়ানের লাই-ও! তোই মাঝে মধ্যে আমনেরে জিয়ার কথা কইতে হুনি। জিয়া ছাত্রনেতাগোরে ভ্রমণে নিয়া চরিত্র নষ্ট করে দিছে।

হেইটা তো আমরা বুঝি, আজ ছাত্ররাজনীতির এই খারাপ অবস্থার জন্য মূলত আমগো দেশের জাতীয় রাজনীতিই দায়ী। ’৭৩ এর প্রথম ডাকসুর ব্যালট বাক্স চিন্তাই হয়েছে। কে করেছে? আজ প্রায় ২৫ বছর ডাকসুসহ দেশের সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। দায়ী কে? জাতীয় রাজনীতি। জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

ছাত্র ও ছাত্রনেতাদের তাদের লাঠিয়াল হিসাবে ব্যবহার করার লাই এই ব্যবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। জননীগো হুনেন, দেশটা ’৭১ এ স্বাধীন হইছে ক্ষুধা, দারিদ্র, বেকাত্ম, বেষম্যমুক্ত জাতি হিসাবে মাথা উচু করি খড়াইবার জন্য। হেইটা হইছে? হয় নাই। এখনও লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। আইজ শ্রমিক বেতনেলাই মিছিল করে, বিদেশীরা আমগো জিএসপি সুবিধা বাতিল করে দেয়, বিল্ডিং ধ্বসে মানুষ মরে, ক্ষেতে না পেয়ে কিডনি বিক্রি করে কি একটা অরাজজকতা মধ্যে আমরা দিন কাটাতেছি।

যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কারণে বিদেশীরা আমাগো জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দিলো সেই শ্রমিকদের জীবন যাত্রার মান কি দুস্থার সেটা নিজ চোখে না দেখলে বুঝার উপায় নেই। তাদের জন্য গার্মেন্টস মালিকরা ৬০০টাকা মুজরী বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। আমাগো দেশের গামেন্টস শ্রমিক যে মুজরীতে কাজ করে পৃথিবীর কোন দেশের শ্রমিক আছে এই রকম মজুরীতে কাজ করে। ৬শত টাকা বেতন বৃদ্ধি এটা শ্রমিকদের সাথে তামাসা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমিনি নাকি শ্রমিকদের জন্য কত কিছু করতেছেন।

শ্রমিকদের সমাবেশ করে বক্তব্য রেখেছেন, আপনের সরকার শ্রমিক-বান্ধব সরকার, সেই সরকার শ্রমিকরা যদি ৩ সাড়ে তিন হাজার বেতন পায় তাহলে মানবতা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। আমনের মন্ত্রীগোর মধ্যে বেশির ভাগ মন্ত্রী হচ্ছে আকামা। বেপাশ কথা কয়-কাজের বেলায় ঠনঠন। আমগো অঞ্চেলের যোগাযোগমন্ত্রী রাস্তায় রাস্তা ঘোরে কিন্তু রাস্তা ঠিক হয়না। যাত্রাবাড়ির ফ্লাইওভারের কারণে ঐ অঞ্চেলে মানুষের কি করুণ অবস্থা আমার মনে কয় যোগাযোগমন্ত্রীরে একবার পাবলিক বানাই দেখাতে, যাত্রাবাড়ির পাবলিক কি রকম কষ্ট করতেছে।

কিছু কাজ আছে করতে টেকা লাগে না, শুধু দায়িত্ববোধের ব্যাপার মাত্র। সায়দাবাদের গাড়ি রাস্তার উপরে দাড়িয়ে ট্রাফিককে ১০০টাকা দিয়ে যাত্রী তুলছে। অন্যদিকে শত শত গাড়ি পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের রাস্তার অবস্থা ভালো না, যোগাযো মন্ত্রী রাস্তায় রাস্তায় না দড়ে রাস্তাগুলো সংস্কার করে দিলেই বরং পাবলিক উপকৃত হতো। নৌ পরিবহনমন্ত্রীতো বাপের বেটা, মাওয়া-কাউড়াকান্দি ফেরী চলাচল করতে পারছেনা সেই কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তার নিজের কাজেই ব্যস্ত।

শ্রমিকনেতা হিসেবে শ্রমিকের স্বার্থ দেখার কথা বলে যে গাড়ির ড্রাইভার মানুষ মারি হালায় সেটা নাকি কোন অপরাধ নয়, তারে শাস্তি দেয়া যাইবো না। হেরা নাকি নির্দোশ। ড্রাইভারগো যত মামলা আছে তা তুলে নিবে কইছে। এইটা কোন কথা হইলো। ড্রাইভাররা বেপোরোয়া গাড়ি চালাইতে আরো উৎসাহ পাইলো না মন্ত্রীর এই কথায়।

আমগো দেশে বেশীর ভাগ দুর্ঘটনা হয় ওভারকেটিং, বেপোরোয়া গাড়ি চালানো ইত্যাদি। আপনার মন্ত্রীগেরে একটু সাবধান করেন। জননীগো, নির্বাচনে পদ্মাসেতু ছিলো আমনের অন্যতম ওয়াদা। কিন্তু হেই পদ্মাসেতুতে যে দূনীতি হইছে হেইটাতো এখন পরিষ্কার। মন্ত্রীগো দুনীতির কারণে পদ্মাসেতু হইলো না, সারা বিশ্বে আমগো ভাবমুত্তি কোথায় গেল! শেষে একটা কথা জরুরিভাবে কইতে চাই, নতুন মন্ত্রিসভা করছেন ভালো কথা।

৫বছর আগের চিন্তা ৫ বছর পরে করছেন। এখন মানুষ ফলাফল দেখতে চায়। আবার যদি দূনীতির আগড়া বানাইয়া ফেলেন তাহলে এর পরিনতি হবে ভয়াবহ। আপনার সুমতি কামনা ও হাজার সালাম বাদ বিদায় নিলাম। ইতি বাংলার গাও গেরামের লক্ষ-কুাটি ভূখা-নাঙ্গা মানুষের পক্ষে- মরমি চিঠি নং-০৩


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।