আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাঁও গেরামের খোলা চিঠি ০৪

মশিউর রহমান মিঠু

মাননীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জননী। দেশের গাঁও গেরামের লক্ষ কুটি আবাল-বৃদ্ধা বনিতা-ভূখা-নাঙ্গা পাবলিকের হাজার-লক্ষ-কুটি সালাম নিবেন। আশা করি খোদার অশেষ মেহেরবানীতে সহি সালামতেই আছেন। পর সমাচার এই যে, আমরা যে কি রকম থাকতে পারি তা আপনার বক্ততা-বিবৃতিতে বা কথা বার্তা হুনে বুঝে উঠতে পারিতেছি না। জননীগো, একদিকে আপনার একতরফা নির্বাচন, খালেদার অবরোধ, প্রচণ্ড শীত হগল কিছু মিলে মানুষের বাঁচার কোন রাস্তা খোলা নাই।

বাংলাদেশের আপনি এবং খালেদা প্রধানমন্ত্রী আছেন-হবেন! পাঁচবছর পর দেশের জনগণের উপর আরেটি জগদ্দল পাথর বুকের উপর উঠাইয়া দিতে যে নির্বাচন নামক কর্মকাণ্ড করা হয় তা আলাপ আলোচনা করে ঠিক করলে জনগণ আর এই কষ্ঠ পাইতো না। জননীগো, আপনি যে একতরফা নির্বাচন করছেন তা দেশের জনগণ মেনে নেয়নি। আপনিও মন থেকে এটা মেনে নিতে পারেননি। কারণ আপনি এবং আমাগো দেশের পোলা ওবায়েদুল কাদের কইছে এগারতম নির্বাচন নিয়ে কতা হতে পারে। দশম নির্বাচন শেষ না হতেই এগারতম নির্বাচন নিয়ে কথা বলা যেতে পারে বলার অর্থ দাঁড়ায় এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ।

তাহলে কি দরকার ছিলো সংবিধানের দোহাই দিয়ে দেশের মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করে একতরপা নির্বাচন করার। জননীগো, আপনার ডিজিটাল কৌশলের কাছে খালেদা বিবি ধরাশায়ী। কোন কর্মসূচি সফল করে তুলতে পারছে না। আপনি একবার টেলিফোন করে তাকে ক্ষেপাইয়া ক্ষেপাইয়া কত আবল তাবল কথা বলাইছেন, আবার গণতন্ত্রের জন্য রোড মার্চ কর্মসূচি সফল করতে না পেরে তিনি ক্ষেপে গিয়ে পুলিশের সদস্যদের বহু আউলা-ঝাউলা কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। মহিলা পুলিশ অফিসারকে গোপালী বলে রেগে গিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার নাম বদলে দেবার ঘোষণা দিয়েছে।

পুলিশের সদস্যদের বিয়াদপ বলে চুপ থাকতে দমকি দিয়েছে, যা মিডিয়ার কল্যাণে দেশের হগল পাবলিক হুনছে, দেখছে। আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, তিনি বিরোধী দলের নেত্রী, অতীতে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। আপনারা যদি চুল ছুলাছুলি করেন তা হলে দেশে মানুষের কি অবস্থা হবে। জননীগো, বিরোধী দল কর্মসূচির নামে যেভাবে সহিংসতা চালাচ্ছে তা কোন সভ্য দেশের মানুষ চিন্তা করতে পারে না। গত এক বছরে রাজনৈতিক সংঘাতে নিহত হয়েছে প্রায় ৫শ মানুষ।

আহত-পঙ্গু-পুড়ে যাওয়া মানুষ হবে হাজার হাজার। এই সহিংসতা বন্ধ করার দায়িত্ব সরকারের কিন্তু সরকার তাতে পুরোপুরি ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে। আজ আপনাদের দুই দলের কারণে দেশের মানুষের হাতে কোন কাজ নেই। ব্যবসা নেই, বাণিজ্য নেই, কৃষক ফসলে দাম পাচ্ছে না রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যাচ্ছে কৃষি ফসল। গোয়ালা দুধ ঢেলে দিয়ে যাচ্ছে রাস্তায়।

এই রকমতো হবার কথা ছিলো না। ছাত্র-ছাত্রী ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না। পড়া-লেখা আজ শিকেয় উঠার উপক্রম হয়েছে। জননীগো, ক্ষেমতা আজ আলাধিনের চেরাগ হয়ে গেছে। কোন মতে ক্ষেমতায় যেতে পারলে গাড়ি-বাড়ি-ব্যাংকে টাকা-বিদেশ-নারী-সকলকে ভয়ভীতি দেখাতে পারা থেকে শুরু করে সকল কিছু হাতের মুঠোয় চলে আসে।

আপনার পাতানো নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফ নামায় দেখে মানুষ অবাক হয়েছে। এটা কি ভাবা যায় ৬শ থেকে ৭শ গুণ টাকা বাড়ে ক্ষেমতায় গেলে। প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা হলফনামায় মৎসখামার থেকে বিশাল আয়ের হিসাব দিয়েছে। নিজের চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ বেশী। এমন প্রার্থীও আছে যারা ৭ হাজার টাকার আসবাপত্রের হিসাব দিয়েছে।

আপনের আত্মীয় পরিচয়ে সকলের কাছে প্রভাবশালী হয়ে হানিফ সাহেব কইল ৬শ নয় ৬ হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারতেন। তিনি কোন মন্ত্রী-এমপি নয়, তার যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে যারা মন্ত্রী এমপি কি অবস্থা তা না বললে বুঝতে অসুবিধা হয় না। আর হলফনামায় সঠিক হিসাবতো দেয়নি। সঠিক সম্পদের হিসাব আসলে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে এতে ভুল হবে না। অন্যদিকে আপনের বেফাস অর্থমন্ত্রী বলে ক্ষেমতায় গেলে টাকা পয়সা একটু আধটু হয়, হতে পারে, এতে দোষের কিছু না।

হায়রে দেশ, হায়রে দেশের অর্থমন্ত্রী। কি বিবেক, কি দেশ! এদেশের জন্য ’৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা হয়েছিলো। যে দেশে ৯৫টি পারিবার হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। আর সংখ্যাঘরিষ্ট মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র, বেকারত্ম, বৈষম্য, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, রাস্তায়, ফুটপাতে, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছে। জননীগো, আমাদের চরবাটার মজনু মিয়া কইলো, এক দিকে দেশের এই অবস্থা অপর দিকে শীতে কাবু হয়ে গেছে দেশের অধিকাংশ মানুষ।

তাই, মানুষের বাঁচার আর কোন রাস্তা থাকলো না। আজ সারাদেশের শীতার্ত মানুষের পাশে সরকারের দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। এই ছাড়া আপনাদের দুই দলের অপরানীতির কারণে দেশের মানুষ যে দুরস্থাথার মধ্যে পড়েছে তাতে তাদের পাশে দাঁড়ানো আপনার দায়িত্ব বলে মনে করছি। এবং আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের অভিভাবক, আপনাকেই উদ্যোগ নিতে হবে দেশ এবং দেশের মানুষকে সুখ ও শান্তি দিতে। আশা করি আপনি সেই দিকে যাবেন।

সংখ্যালঘু নির্যাতন ’৭১ সালকেও হার মানাইছে, আপনি ডিসি-এসপি প্রত্যাহার করচ্ছেন, তাতে কি ঐ সব মানুষ তাদের অত্যাচার ভুলে যাবে? তাদের হাজার বছরের বিশ্বাস কি আর ফিরে আসবে? জননীগো আপনার শর্ষের মইধ্যে ভুত, এই ভুতের পূব-ইতিহাস স্মরণ করুন, ৭১ সালে যারা বিরোধী শিবিরে ছিলো আজো তারা বিরোধীই। আপনারা দুইনেত্রী মিলে গিয়ে ওদের মুখে স্কচটেপ লাগান। এখনো সময় আছে। জনগণ বড় বিচিত্র। তারা একবার ক্ষেমতা হাতে নিলে আপনারা বড় অসহায় হয়ে যাবেন।

বাঙালি বীরের জাতি, হেতাগো দমায় রাখার ইতিহাস নাই। আমি অধম নাখান্দা, আপনাদের দুই নেত্রীরেই শত-কুটি সালাম দিয়া কইলাম, দ্যাশের মাইনষেরে বাঁচান, দ্যাশ বাঁচান। যাদের পোড়াইচ্ছেন তারাও জনগণ, যাদের গুলি দিচ্ছেন তারাও জনগণ, আর আপনারা জীবন বাজী রাইখচ্ছেন, এদের জইন্যে। কারণ আপনাগো জীবন তো এভাবে যায় না। মা-জননীগ, রামের সুমতির মোত আপনাগোও সুমতি হোক।

ইতি বাংলার গাও গেরামের লক্ষ-কুটি ভূখা-নাঙ্গা মানুষের পক্ষে- মরমি চিঠি নং-০৪
http://www.noakhalirkatha24.com/index.php

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।