আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্যময় কিছু ঘটনা-১

লিখতে পারিনা তাই চেষ্টা করি। মধ্যরাত। টিপ টিপ বৃষ্টি। ঘোর অন্ধকার। অমাবষ্যা রাত।

একটু একটু শীত। দরজা জানালা বন্ধ করেই ঘুমিয়েছিলাম। হটাৎ প্রচন্ড বজ্রপাতের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে দেখি জানালা খোলা। জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানির কনা ঢুকে ঢুকে পায়ের কাছের বিছানাটা ভিজে গেছে।

ঘুম ভাংতেই যেই প্রশ্নটা মাথার ভিতর আসল সেটা হলো ঘুমানোর আগে আমিতো জানালা বন্ধ করে রেখেছিলাম তাহলে জানালা খুল্ল কিভাবে? হয়ত বাতাশে খুলে গেছে। যাই হোক যে ভাবে হোক খুলছে। এখন কাজ হলো ওটাকে বন্ধ করা। বন্ধ করব বলে গায়ের থেকে চাদর টা সরিয়ে উঠতে যাবো এমন সময় বিদ্যুৎ চমকানির আলোতে আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম জানালার কাছে কোন একটা মেয়ে-মানুষ দাড়ানো। এতো অল্প সময়ে ই বোঝা গেলো কেউ একজন আছে।

আমি সামান্য ভয় পেলাম। কিন্তু অপেক্ষা করতে লাগলাম পরবর্তী বিদ্যুৎ চমকানির পরবর্তী বার শিওর হতে চাই। পরক্ষণেই আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম এবং মজার ব্যাপার আমি মেয়েটাকে চিনতে পারলাম। মেয়েটির নাম রুনা। রুনাদের বাসা ঢাকা নাখালপাড়াতে।

আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি জেগে আছি। নাহঃ আমিতো জেগেই আছি। তাহলে আমি যা দেখছি তা কি সত্যি? আমি কি চিৎকার দেবো না কি করবো বুঝতে পারছি না। কারন যে মেয়েটিকে আমি জানালার পাশে দাড়ানো দেখছি সে থাকে ঢাকায়। আর এই ঘটনা ঘটতেছে আমার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের একটি অজোপাড়াগায়ে।

এই মেয়টি গত ৩ মাস আগে মারা গেছে। আমি ভয়ে ভয়ে আর কোন কিছুই করতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি চাদর মুড়ি দিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। জানালা খোলাই রইলো। সারারাত ঘুমাতে পারলাম না।

বুঝতে পারলাম না মাথার ভিতর হেল্যুসেশান হচ্ছে নাকি বাস্তবেই কিছু দেখছি। মনে মনে ভাবলাম হয়ত আমার দুর্বল মনের ভ্রান্ত চিন্তা এটা। সকাল বেলার দিকে একটু ঘুম হলো। যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন ৮টা বাজে। বাইরে বের হলাম জানালার সামনে গিয়ে সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম ওখানে কেউ একজন দাড়িয়ে ছিলো সেই পায়ের ছাপ এখনও আছে।

এই "রুনা" মেয়েটিকে আমি খুব ভালো করে চিনি। আমি যে মেছ বাসাটায় ভাড়া থাকতাম সেই বাড়িওয়ালির ১ম মেয়ে। চেহারাটা খুব সুন্দরী না হলেও পুরা মাটির মানুষের মত একটা নরম ভাব আছে। তার ছোট বোন "জোছনা" পরির মত সুন্দরী (আমি কখনও পরী দেখিনি) আর তার রূপ থেকে সবসময় মনে হয় জোছনা ঝরে। স্বভাবতই আমি সুন্দরীর পুজারী।

জোছনাকে বেশ ভালো লাগতো। কিন্তু বাড়িওয়ালার মেয়ে বলে সাহস করে কোনদিন কিছু বলিনি। মনের কথা মনেই রাখছি। একদিন বিকাল বেলা কলেজ থেকে এসে একটু বসে আছি আমার রুমে। দরজা খোলাই ছিলো হটাৎ করে রুনা মেয়েটি আমার রুমে ঢুকলো।

আজ ওকে অনেক সুন্দর লাগছে। একদম ষাট দশকের নায়িকাদের মত। শর্ট করে গ্রামীন স্টাইলে একটা শাড়ি পরছে, গলায় বড় বড় গহনা, পিছনে বড় করে খোপা করা, নাকে নাকফুল আছে। দুই পায়ে ই নুপুর পরেছে। মনে হচ্ছে মেয়েটি কোন মঞ্চে এখন নাচ করার জন্য এসেছে।

আমি দেখে তো হ্যাবলা হয়ে চেয়ে আছি। আর সেই সুযোগে কোন কথা বলার আগেই মেয়েটি আমার পায়ে হাত দিয়ে তিন বার ছালাম করে পায়ের ধুলা মাথায় নিয়ে হটাৎ করেই বেরিয়ে গেলো। আমি কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না....। পরদিন জোছনাকে জিজ্ঞাসা করলাম গতকালা রুনার জন্মদিন ছিলো নাকি ও যে হটাৎ করে আমাকে ছালাম করলো। উত্তরে জোছনা শুধু্ একটু হাসি দিলো।

কয়েকদিন পর আমার কলেজ রমজানের বন্ধ হলো আমি ছুটিতে বাড়ি চলে আসলাম। প্রায় দুই মাস বাড়িতে থাকলাম। দুই মাস পর যখন ঢাকায় আসলাম তখন শুনলাম ঈদের সময় নাকি রুনার এক প্রবাসী চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে। এই খুশির খবরটা আমার কাছে বেশিক্ষন খুশির হলো না কারন। জোছনা এসে আমাকে বল্ল যে তার আপু নাকি তার কাছে বলছে যে সে নাকি আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

সে তার বাবা মা'র কথা মত বিয়া করলে ও মেয়েদের বিয়া নাকি একবার ই হয়। আর স্বামী হিসাবে যাকে মেয়েরা একবার বরণ করে তাকে সে কখনও মন থেকে মুছতে পারে না। সে নাকি মনে মনে আমাকেই স্বামী হিসাবে গ্রহণ করেছে। আমিতো পুরাই অবাক বলে কি এই মেয়ে। আমি বাসা ছেড়ে দিলাম চলে আসলাম।

তার কিছুদিন পর শুনলাম মেয়েটি নাকি কি দেখে ভয় পেয়ে মারা গেছে। খবরটা শুনে অনেক দুঃখ পেলাম। এবং মেয়েটির মরার খবর পাওয়ার পরই তাকে আমার ভিষন আপন মনে হতে লাগল। আর দিন দিন ওর মৃত্যুর শোক আমার ভিতর প্রবল হতে লাগলো... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.