আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূতের অস্তিত্ব। ( ষোলো খণ্ড )

প্রদীপ হালদার,জাতিস্মর। মাতৃগর্ভে সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান এবং মায়ের শরীর নাড়ীর বন্ধনে বাঁধা থাকে। তারপর সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে নাড়ীর বন্ধন কেটে দেওয়া হয়। আমি এবং আমার শরীর শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধনে বাঁধা থাকে।

শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধন ছিন্ন হলে আমি এবং আমার শরীর আলাদা হয়। আমার শরীরটাকে সবাই দেখতে পায়। কিন্তু "আমি"-একে কেউ দেখতে পায় না। "আমি"-এর অস্বিত্ব রয়েছে। কারোর দেখা বা না দেখার ওপর "আমি"-র অস্তিত্ব নির্ভর করে না।

শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধন ছিন্ন হওয়ার অর্থ হলো মৃত্যু। মৃত্যুর সাথে সাথে শরীর এবং "আমি"-র আলাদা হয়ে যাওয়া। এই "আমি"-ই হলো ভূত। "আমি" অন্য মানুষের শরীরে ঢুকতে পারে,কিন্তু যুক্ত হতে পারে না। কেননা মানুষের শরীরে আগে থেকেই "আমি"আছে।

সেই "আমি"-কে সরিয়ে মৃত্যুর পরের "আমি" সেখানে থাকতে পারে না। ফলে কিছু সময়ের জন্য মৃত্যুর পরের "আমি" সেখানে থাকলেও পরে তাকে শরীর ত্যাগ করে চলে যেতে হয়। এটাই ভূতে ধরা। কিন্তু মাতৃগর্ভে সন্তানের জন্ম হলে,সেখানে তখনও "আমি"আসে নি। আর তখনই মৃত্যুর পরের "আমি" মাতৃগর্ভের সন্তানের মধ্যে ঢুকে যুক্ত হয়ে যেতে পারে।

এরপর ঐ সন্তানের শরীরে "আমি" এলে সন্তানটি ভূমিষ্ঠ হবে। কিন্তু এই নবজাত সন্তানের ক্ষেত্রে দুটি "আমি" আছে। একটি তার নিজস্ব "আমি" আর অন্য "আমি" হলো মৃত্যুর পরে যে "আমি" ঘুরছিল। একেই জাতিস্মর বলে। স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে আছে "ভালোবাসা" বন্ধন।

এই বন্ধন ছিন্ন হলে স্বামী এবং স্ত্রী আলাদা হয়ে যায়। একজন জিনিস বিক্রয় করে, অন্যজনে জিনিস ক্রয় করে। ক্রয় বিক্রয়-এর মধ্যে "টাকা" বন্ধন থাকে। এই বন্ধন ছিন্ন হলে ক্রয় বিক্রয় বন্ধ হয়। তেমনিভাবে "ভালোবাসা" বন্ধন ছিন্ন হলে স্বামী এবং স্ত্রী আলাদা হয়, কিন্তু অস্তিত্ব থাকে।

শিক্ষক এবং ছাত্রের মধ্যে "আওয়াজ" বন্ধন যুক্ত থাকে। শিক্ষক বই-এর আওয়াজ দেয়,আর ছাত্ররা সেই আওয়াজ কান দিয়ে শুনে মাথায় ধরে রাখে অর্থাৎ "আমি"-র মধ্যে ধরে রাখে। "আওয়াজ" বন্ধন ছিন্ন হলে ছাত্র এবং শিক্ষকের অস্তিত্ব থাকে,কিন্তু তখন ছাত্রকে আমরা আর ছাত্র বলি না। আমরা তখন ছাত্রকে বলি যে সে আর স্কুলে যায় না। তাই শ্বাস প্রশ্বাসের বন্ধন ছিন্ন হলেও "আমি"-র অস্তিত্ব থাকে।

এটাই ভূত। এই ভূত আবার বন্ধন চায়। কেউ পায় আবার কেউ পায় না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।