আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষ্ময়কর নাম হযরত মারইয়্যাম (আঃ)

চৌধুরী হাফিজ আহমদ স্যাইয়েদনা হযরত মারইয়্যাম (আঃ) এক অতিপরিচিত নাম মুসলমানদের কাছে তো বটেই- খৃষ্টান ধর্মালম্বীদের কাছেও তিনি সমানভাবে সমাদৃত। তিনি মানব জন্মের ইতিহাসে এক বিষ্ময়কর ঘটনার জন্মদাত্রী। আদর্শ রমনী হিসেবে তাহার তুলনা তিনি নিজেই। চিরচারিত রীতির বিরুদ্ধে ঘটনার দরুন তাহাকে নিয়ে বিতর্কেরও যেমন শেষ নেই তেমনি কৌতুহলেরও সীমা নেই। তাহাকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা এমন পর্যায়ে পৌছিঁয়াছিল এমন ভাবে তাহাকে উপস্থাপন করেছিল তখনকার বিশ্ব যার ফলে সয়ং আল্লাহ তায়ালা সরাসরি তাহার কাছে সংবাদ পাঠিয়েছিলেন মালাইকা হযরত জিব্রাইল (আঃ)কে দিয়ে।

তামাম বিশ্বে তিনি ব্যতিত অন্য কাহারো কাছে এই রকম বাণী পৌঁছেছে বলে জানা নেই। তাহার জীবনী বর্তমান বিশ্বের নারীদের জন্য এক মহা আদর্শ এবং শিক্ষণীয়। হযরত মারইয়্যাম (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআন যা বর্ণনা করে তা বৃটেন থেকে প্রকাশিত নারী ম্যাগাজিনের সম্মানিত পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরলাম। কুরআনের আয়াতগুলো পড়ার আগে আউজুবিল্লা মিনাশশাইতানির রাজিম পড়ে নেওয়া শ্রেয়। নাম হযরত মারইয়্যাম (আঃ) পিতার নাম ছিল ইমরান এবং মাতার নাম হান্না।

তাহারা উভয়ে-ই আল্লাহর কাছে একটি সন্তান কামনা করেছিলেন, যা হবে পুত্র সন্তান। আল্লাহ তাদের সন্তান কামনার বাসনা পূরণ করেছিলেন ,কিন্তু তা কন্যা সন্তান দান করে। তাহারা মানত করেছিলের এই মর্মে যে, সন্তানটিকে মসজিদে আল আক্বছার খাদেম হিসেবে দিয়ে দিবেন। পবিত্র কালামুল্লাহে আল্লাহ বর্ণনা দিচ্ছেন সেই ব্যাপারে-’ইয ক্বালাতিম রায়াতু ইমরা-না, রাব্বী ইন্নি-নাযারতু লাকা মা-ফী বাতনী মুহারারান ফা-তা ক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাছ ছামিউল আলীম। ’ (অর্থ্যাৎ যখন ইমরান পত্নি নিবেদন করিলেন, হে আমার রব, আমি মানত করিয়াছি আপনার উদ্দেশ্যে আমার উদরস্থ সন্তানকে পার্থিব কাজ কর্ম হইতে মুক্ত রাখিয়া দিব) মহান আল্লাহ তায়ালা সেই দোয়া কবুল করিয়াছিলেন।

পিতা-মাতা উভয়ে কন্যা সন্তান পেয়ে মর্মাহত হলেন, এই ভেবে যে ওয়াদা খেলাফী হবে মানতের বেলায়। তাদের এই বিচলিত ভাব দর্শন করত আল্লাহ তাদের সান্তনা দিলেন এবং বললেন- তোমাদিগকে কন্যা রত্ন দান করা হয়েছে তাহা সহস্র পুত্র সন্তান অপেক্ষা উত্তম। তোমরা স্বাচ্ছন্দে তোমাদের মানত পূর্ণ করিতে পার। আল্লাহর সান্তনা বাণী ছিল আল-কোরআনের ভাষায়-’ ফালাম্মা ওয়াদায়াতুহা ক্বালাত রাব্বি ইন্নি ওয়াদা তু হা উনছা- আল্লাহু আ’লামু বিমা ওয়াদায়াত্ লাইছাজ যাকারু কালউনছা। অ ইন্নি ছাম্মাইতুহা মারইয়ামা ওয়া ইন্নি উঈদুহাবিকা ওয়া যুররি‌্যয়্যাতাহা মিনাশ শাইত্বানির রাজিম।

(অনন্তর যখন (মা হান্না) কন্যা সন্তান প্রসব করিল, তখন সে বলিল, হে আমার রব, নিশ্চয়ই আমি কন্যা সন্তান প্রসব করিয়াছি, এবং ভ’মিষ্ট হইয়াছে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাহা উত্ত্বম রুপে অবগত আছেন এবং এই কন্যা পুত্রের সমতুল্য নয়। আমি উহাকে আশ্রয়ে সমর্পন করিতেছি)। অতঃপর মাতা-পিতা উভয়েই হযরত মারইয়্যামকে মসজিদে আল আক্বসার খাদেম ও ইমাম হযরত যাকারিয়্যা (আঃ) নিকট গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোপর্দ করে আসলেন। তিনি বিস্তর মতভেদ ও প্রতিবাদের মিমাংসা করে উৎসর্গীকৃতা কন্যার তত্ত্বাবধানের ভার গ্রহণ করিলেন। তিনি নির্বিগ্নে শিশু কন্যা মারইয়্যামের লালন পালন করিতে লাগিলেন।

হযরত জাকারিয়্যা (আঃ) আবার সম্পর্কে তাহার খালূ ছিলেন। এখানে ও আল-কোরআন বলে সয়ং আল্লাহ তায়ালা তাহার অভিবাবক ও নিদিষ্ট করে দিয়েছেন। যেমন- ফাতাক্বাব্বালাহা রাব্বু হা বি-কাব্বুলিন হাছানিন্ ওয়া আমবাতাহা নাবাতান হাছানান্ ওয়া কাফ্ফালাহা যাকারিয়্যা। (তাহার প্রতিপালক তাহাকে উত্ত্বম রুপে গ্রহণ করিলেন এবং হযরত যাকারিয়্যা (আঃ)কে তিনি তাহার অভিবাভক নিযুক্ত করিলেন)। দিন এক এক করে কালের গর্ভে বিলীন হতে লাগল।

শিশু মারইয়্যাম বাল্যকালে পদার্পন করিলেন। এ ভাবে ক্রমে তিনি বড় হতে লাগলেন। তাহার অবস্থাও অবস্থানের পরিবর্তন হল। তিনি পবিত্র মাসজিদ আল আক্বছার খাদেমের জন্য নির্ধারিত কক্ষের একটিতে স্থান পেলেন। মাসজিদে ঝাড়– দেন, সন্ধ্যায় বাতি জ্বালিয়ে দেন, সুঘ্রানের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য খেদমত করেন।

অবশিষ্ট সময় নবী হযরত যাকারিয়্যা (আঃ) এর কাছে পড়ালেখা শিক্ষা নেন। কালচক্র সদা ঘুর্নায়মান সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে হযরত মারইয়্যাম ও যৌবনের দিকে পদার্পন করিলেন। মাসজিদের খেদমতে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করলেন এবং সাথে সাথে আল্লাহর প্রেমে নিজেকে নিয়োগ করিলেন। রজনী যত দীর্ঘ হোক না কেন তিনি ইবাদতে এতই মাশগুল থাকতেন যে সূর্যের কিরণ বিচ্চুরিত না হওয়া পর্যন্ত বলতেই পারতেন না যে রাত্রি পেরিয়ে দিন হইয়াছে। যখন ইবাদতের চরম শিখরে মারইয়্যাম তখন তিনি পূর্ণ যৌবনা এক নারী।

তাহার রুপের বর্ণনায় পাওয়া যায় যা তাহা রূপকথাকে হার মানায়। তাহার রূপ বিশ্বের তাবৎ নারীদের ঈর্ষা ও গর্বের বিষয়। তদুপরী বাহ্য জগতের প্রতি তাহার কোন খেয়াল ও ছিল না। মসজিদের খেদমত এবং অবিরত আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। খাবারের প্রতি বা পৃথিবীর চালচিত্রের প্রতি যেন তাহার কোন লোভ ছিল না।

অযথা কোন তর্ক বা আলোচনা কিংবা কোন ইচ্ছার আশে পাশেও নেই। এমন এক গভীর আল্লাহ প্রেমে ডুব দিয়েছিলেন তিনি যেখানে আরাম আয়েশ, স্বাধ-আহলাদ কোন কিছুই স্পর্শ করতে পারেনি। মারইয়্যামের প্রভু ভক্তি ও প্রেমে এমন অবস্থা হয়েছিল যে সবাই অবাক হয়ে যেত এই ভেবে যে, সে আহার নিদ্রা কখন করত। কিন্তু মারইয়্যাম এ সব ক্ষেত্রে ও নির্বিকার। বসন, অলংকার কোন কিছুর দিকেই তাহার নির্লিপ্ততা ছিল অবিশ্বাস্য।

এমনি হঠ্যাৎ মারইয়্যাম পেলেন প্রভ’ ভক্তির উপহার, প্রেমের নিদর্শন। বন্ধ কক্ষে খাবারসহ তৃপ্তির উপহার। যা কোন মানুষ বা জাগতিক কিছু নয়, স্বয়ং আল্লাহর প্রদত্ত্ব সম্পদ। তাহাকে জিঞ্জাস করা হলে যে জবাব দিয়েছিলেন তাহাও আল্লাহ তায়ালা আমাদের জানিয়েছেন, ’কুল্লামা দাখালা আলাইয়্যা যাকারিয়াল মিহরাব, ওয়াজাদা ইনদাহা রিযক্কান ক্বালা ইয়া মারইয়্যামু আন্না লাকিহা-যা। কালা হুয়া মিন ইনদিল্লাহ, ইন্নাল্লাহা ইয়ার যুক্কু মাইয়্যাশাই বিগাইরি হিছাব।

(যখন হযরত যাকারিয়্যা (আঃ) মিরহাবের মধ্যে তাহার নিকট গমন করিলেন, তাহার নিকট খাদ্যদ্রব্য উপহার সমূহ দেখিতে পাইয়া জিঞ্জাসা করিলেন, মারইয়্যাম! এই গুলি কোথায় থেকে তোমার নিকট আসিল? নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাহাকে ইচ্ছা করেন তাহাকে অপরিমিত রিজক্ দান করে যাবেন। জবাব শুনে এবং সচক্ষে দেখে হযরত যাকারিয়্যা (আঃ) বিষ্ময়াবিষ্ট। তাহার বুঝিতে বাকী রইল না যে হযরত মারইয়্যাম সাধারণ কেহ আর নন। তখন তিনি বেশ চিন্তিত ভাবে সময় কাটাতে লাগলেন।

বিবি মারইয়্যাম কিন্তু বসে নেই, তিনি আল্লাহ প্রদত্ত্ব নেয়ামতের শোকর আদায় করতে লাগলেন আরো অধিকভাবে প্রভ’র পানে। ধ্যানে মনে তিনি তাহাকে আল্লাহর ইবাদতের রত রাখতে লাগলেন। এবারে তিনি বদ্ধ কক্ষে কারো আগমনী শব্দ শুনে তো বাকরুদ্ধ। একে তো তিনি রূপসী পূর্ণ যুবতী নারী। ভয়ে কাতর এমনি, অন্তরে আল্লাহর নাম জপনী।

ভয় কিসের!! জিঞ্জাসা করলেন কে আপনি? জবাব এলো বিনয়ের সাথে, মাননীয়া আমি জিবরাইল আল্লাহর দূত। বিবি মারইয়্যাম শুনে বিষ্ময়ে বিমূঢ় মুখে হাসির ঝলক আবারো প্রশ্ন আপনি মালাইকা জিব্রাইল? যদি তাই হয় তা হলে আমি কোন রকমের বিপদাপন্ন নই। বিনিত জবাব, আমি আল্লাহর হুকুমে এসেছি মাননীয়া। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে তাদের কথোপকথনকে হুবুহু দেওয়া হয়েছে এইভাবে- ’ইয ক্বালাতিল মালাইকাতু ইয়া মারইয়্যামু ইন্নাল্লাহা ইউবাশ শিরুকিবি কালিমাতিম মিন হুছমহুল মাছীহু ইছাবনু মারিয়্যামা মজীহান ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি ওয়া মিনাল মুক্বাররাবীন। আইউকাল্লিমুন্নাছা ফিল মাহদী ওয়া কাহলাও ওয়া মিনাছ ছালিহিন।

কালাত রাব্বী আন্না ইয়াকুলুনী অলাদুও অলাম ইয়ামছাছনী বাশার। ক্কালা কাযাল্লিকাল্লাহু ইয়া খলুকু ইযা কাদা আমরান ফা ইন্না মা ইয়াকুলু লাহু কুন ফাইয়াকুন। অ-ইউয়াল্লিমুহুমুল কিতাবা ওয়াল হিক্বমাতা ওয়াত তাওরাতা ওয়াল ইনজীল। (যেখানে মালাইকা বলিয়াছিল হে মারইয়্যাম নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাকে তাহার তরফ হইতে একটি পুত্র সন্তানের সু-সংবাদ দিচ্ছেন। তাহার নাম মারইয়্যাম পুত্র ঈসা মাসিহ।

সে ইহলোকে এবং পরলোকে সম্মানিত এবং রবের সান্নিধ্যে প্রাপ্তগনের অন্তগর্ত হইবে। এবং সে দোলনায় ও পরিণত বয়সে লোকের সহিত কথা বলিবে এবং পূণ্যবানদের অন্তগর্ত হইবে)। মারইয়্যাম বলিল, হে আমার মালিক, কি ভাবে আমার পুত্র সন্তান হইবে? কোন পুরুষ তো আমাকে স্পর্শ করে নাই। তিনি বলিলেন, এই বর্তমান অবস্থাতেই আল্লাহ সৃষ্টি করেন, যাহা তিনি ইচ্ছা করেন। তখন তাহার উদ্দেশ্যে শুধু বলেন হইয়া যাও! তৎক্ষনাত হয়ে যায়।

আর তিনি তাহাকে শিক্ষা দিবেন কিতাব আর ঞ্জানের কথা এবং তাওরাত ও ইঞ্জিল। ইতিহাস খ্যাত হযরত মারইয়্যামের কথা আরো বর্ণিত হয়েছে- ওযুকুরফিল কিতাবী মারইয়্যামা ইযিন তাবাযাত মিন আহলিহা মাকানান শারকিয়্যা। ফাত্তাখাযাত মিন দুনিহিম হিজাবান ফারছালনা ইলাইহা রু-হান ফাতামাছ ছালালাহা বাশারান ছাওয়িয়্যা। ক্বা-লাত ইন্নি আউযুবির রাহমানি মিনকা ইন কুনতা তাকিয়্যা। ক্বালাত আন্না ইয়াকুনু লি গোলামুও ওলাম ইয়ামছাছনি বাশারুও ওয়ালাম আকু বাগিয়্যা ক্বালা কাযালিকি ক্বালা রাব্বুফি ওয়া আলাইয়্যা হাইয়্যিনুন ওয়ালী নাজ আলাহু আইয়াতালিন্নাছি ওয়া রাহমাতাম মিন্না অকানা আমরাম মাক্বদিয়্যা ফাহামালাতাহু ফান তা বাযাত বিহী সাকানান ক্বাছিয়্যা।

(যখন মারইয়্যাম নিজের লোকদিগের দিক হইেিত পর্দা করিয়া লইল। তখন আমি উহার দিকে পাঠাইলাম নিজের রুহ (অর্থাৎ জিব্রাইলকে মানবাকারে দেখিয়া) বলিল, আমি তোমার অনিষ্ট হইতে আল্লাহর আশ্রয় চাইতেছি, যদি তুমি পরহেজকার হও অর্থাৎ তোমার ভেতর যদি আল্লাহ ভয় লেশ মাত্র থাকে) তখন জিব্রাইল বলিলেন, আমি তোমার প্রতিপালকের প্রেরীত মালাইকা ব্যতীত অন্য কেহ নই। আমি তোমার কাছে এ জন্য আসিয়াছি যে, তোমাকে একটি পবিত্র স্বভাবের পুত্র সন্তান দিয়া যাইব, মারইয়্যাম বলিলেন, কি প্রকার আমার পুত্র হইতে পারে? কারণ না তো আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করিয়াছে আর না তো আমি কখনও ব্যাভিচারী ছিলাম। জিব্রাইল বলিল এমনিই হইবে। তোমার প্রভ’ বলিতেছেন বিনা পিতায় সন্তান সৃষ্টি করা আমার জন্য সহজ।

উদ্দেশ্যে এই যে আমি তাহাকে সৃষ্টি করিব লোকদিগকের জন্য আমার কুদরতের নিদর্শন সরূপ। আমার রহমতের উপলক্ষ করিব দুনিয়াতে। আর এই বিষয় আমার নিকট থেকে ফায়সালা হইয়া গিয়াছে। যৌবনের কঠোর তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে খোদ আল্লাহ তায়ালা তাহাকে কোন পুরুষ স্পর্শ ব্যতিত মাতৃত্বের সাধ এবং মর্যাদা দিলেন। প্রভ’ অসিক্তির এই প্রতিদান পেয়ে হযরত মারইয়্যাম আনন্দে আত্মহারা।

প্রত্যেক নারীই সম্মান এবং মর্যাদা পেতে চায় জীবনে। মহান প্রভ’র মর্যাদা দানে তিনি খুশী হলেন বটে। কিন্তু নিন্দুকেরা তাহা বুঝিতে পারিল না। যার ফলে তাহার জীবনে চলে আসে এক মহা দুর্যোগ। শয়তানের কাজই হলো অকারণে নিন্দা ছড়ানো।

কৃৎসা রটানোর মাধ্যেমে মানুষের মনে জাগিয়ে তুলল বিবি মারইয়্যামের সম্পর্কে দারুণ এক সন্দেহ। তখন মানুষ তাহাকে চরিত্রহীন বলে অপবাদ দিয়ে পবিত্র মসজিদ আল আক্বছা থেকে বের করে দিলো। আত্বীয়-স্বজন থেকেও বিচ্ছিন হয়ে গেলেন। এমন কি তাহাকে নিষ্ঠুর ভাবে প্রহার করে জন মানবহীন একটি জায়গায় ফেলে আসল্ োকিন্তু প্রভু ভক্তি ও ভালোবাসা তিনি এতোই অটল ছিলেন যে এই মাহা দুর্যোগেও তিনি তার রবকে ভ’লে যাননি। গর্ভবতী নারী এর উপরে দূর্যোগ এর চেয়ে বিপদ আর কি হতে পারে? আল্লাহ তাহাকে তাহার প্রতিদান দিতেও ভ’লেননি।

তিনি তাহার এই দাসীর প্রতি এতেই মেহেরবান ছিলেন যে তিনি করুনা দ্বারা সেই সময় তাহাকে আগলে রেখেছিলেন। আমরা সেই সব ঘটনার কথাটিও আল-কোরআনের মাধ্যেমে জানি, তা হলো- ফাহামালাতাহু ফানতাবাযাত বিহী মাকানান ক্বাছিয়্যা। ফা ওয়াজ আাহাল মাখাদু ইলা জ্যিযয়্যানন্নাখলাতি ক্বালাত ইয়া লাইতানী মিত্তু ক্বাবলা হা যা অ কুনতু নাছাবাম মানছিয়্যা। ফা-না দা-হা মিন তাহতিহা আল্লা তাহযানী ক্বাদ জ্বা আলা রাব্বুকী তাহতাকি ছারিয়্যা ও হুজজী ইলাইকা বিজিযয়িন্নাখলাতী তুছাক্কিত আলা-ইকি রুথবান জানিইয়্যা ফাকুলি ওশরাবি ওয়াকাররি আইনান ফাইম্মা তারা ইন্না মিনাল বাশারী আহদান ফাকুল্লী ইন্নী নাযারতু লির রাহমানী ছাত্তমান ফালান উকাল্লিমান ইয়াত্তমা ইনছিয়্যা( অর্থাৎ আপনা, আপনি মারইয়্যাম গর্ভবর্ত হইল তখন সেই গর্ভাবস্থায় দূরবর্তী স্থানে গমন করিলেন। তারপর প্রসব বেদনা তাহাকে একটি খেজুর বৃক্ষের নীচে নীত করিল।

কষ্টে মারইয়্যাম আক্ষেপ করে বলিলেন, ইস আমি যদি এর আগেই নিশ্চিহৃ হয়ে যেতাম। অতঃপর জিব্রাইল সেই ঝর্ণার বিষয় জানালেন। যে ঝর্ণা আল্লাহর কুদরতে আবির্ভূত হয়েছিল। মারইয়্যামকে উচ্চ শব্দে বলিল, আপনার মনে কষ্ট নিবেন না। এই দেখুন প্রভু আপনার নিকট একটি ঝর্ণা বহাইয়া দিয়াছেন।

এবং খেজুর বৃক্ষের কান্ড ধরে নিজের দিকে আকর্ষণ করুন। আপনার উপর সু-পক্ক খেজুর ঝরিয়া পরিবে। তখন তা আপনি খাবেন এবং ঝরণার পানি পান করিবেন। আর আপনার পুত্রকে দেখে চক্ষু শীতল করিবেন। সেখান থেকে সন্তান কোলে নিয়ে যাবে।

রাস্তায় যদি কোন লোক কোন কিছু জিঞ্জাসা করে তা হলে কোন কিছু না বলে ইশারায় বলিবে যে আমি মানতের রোযা রাখিয়াছি, কথা বলিতে পারিব না। আল্লাহ তায়ালা হযরত মারইয়্যামকে বাঁচিয়ে দিলেন মানুষের অযথা গালি-গালাজ ও কু-ইংগিতপূর্ণ কথাবার্তার জবাব দান থেকে। একটি মিথ্যা ও বাজে কথার জবাব দিতে হলে আরো নানা ধরণের কথা আসতো এবং বহু কথা বলতে হতো। জগতে সব পুরুষও ভালো নয় এবং সব পুরুষও খারাপ নয়। অনেক পুরুষদের কাছেই লাম্পট্যামী আছে।

আইয়্যামে জাহেলিয়া নয় শুধু, বর্তমান বিঞ্জান যুগেও পুরুষের লাম্পাট্যমী থেকে র্হোই পায়নি নিজের ঔরষজাত মেয়েরা পর্যন্ত। আষ্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের কার্ডিফে, বাংলাদেশের মেয়েদের নিরাপত্তা তখনো ছিল না। তাই মহান প্রভু মহিলাদের নিজের স্বার্থে পর্দা করার কথা বলেছেন। মেয়েরা নিজেদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন কাদের সাথে চলাফেরা বা মেলামেশা করবে। এবং আরো বলে দিয়েছেন কাহার সাথে কোন ধরণের ব্যবহার করবে এবং বাইরে কি ভাবে চলাফেরা করিবে।

অবশ্য অনেক্ষেত্রে দেখা যায় মহিলারা অযথা হাসি, আলাপ, গল্প, তামাসা পরনিন্দা, পরচর্চা, অলংকার, অহংকার ও গর্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকিতে। শুধু ইসলাম বা আল-কোরআন নয় সকল ধর্ম গ্রন্থেও মহিলাদের এই সব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মহিলাদের মাতৃত্ব দিয়ে এমন একটি দায়িত্ব দিয়েছেন, বিশেষ করে জাতি গঠনে তাদের ভ’মিকা রাখার সুযোগ দিয়েছেন। যা তাহাদের জন্য চরম সম্মানীত ও মর্যাদাকর। তাহাদের সন্তানদের নবী, রাসুল ও আল্লাহর মাকবুল বান্দা বানিয়েছেন।

বিবি মারইয়্যামের আমলে প্রসঙ্গত তখনকার সময়ে রোযা অবস্থায় কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। সন্তান নিয়ে মাসজিদে আল-আক্বছায় আসায় লোকজন আবারো তাহাকে তিরষ্কার করলো। পাপীনি, নষ্টা এমন কি নানাভাবে ঘায়েল করতে চাইল। এর জবাবেও আল্লাহ তায়ালা সাহস-যোগালেন তাও বর্নীত- ফা আতাত বিহী ক্বাত্তমাহা তাহছিলুহু ক্বানু ইয়া মারইয়্যামু লাক্বাদ জিইতী শাইয়ান ফারিয়্যা। ইয়া উখতা হারুনা মা-কানা আবু কিমরায়া ছাওইয়্যেও ওমা কানাত উম্মুকি বাগিয়্যা।

অর্থাৎ সন্তান কোলে নিয়ে আত্বীয় স্বজনদের কাছে উপস্থিত হলে তাহারা বলিল, মারইয়্যাম! তুমি তো ভীষণ মারাত্মক কাজ করিলে। তুমি তো পবিত্র মানুষ হারুণের ভগ্নি, তোমার পিতা মাতা কেউই খারাপ ছিল না। মারইয়্যাম কোন জবাব দিলেন না, শুধু ঈশারায় জানালেন তিনি রোযা। যা কিছু জিঞ্জাসা করার তা কোলের শিশুকে জিঞ্জাসা করুন। তাহারা তাহার এই কর্মকান্ডতে ঠাট্টা বিদ্রেুাপ মনে করে আবারো তাহাকে প্রহার করিতে উদ্যেত হলে শিশু নবী তাহার মায়ের পক্ষে জবাব দিলেন।

তোমরা আমার মা’কে কিছু বলিবে না, তাহাও আমরা পবিত্র আল-কোরআনে দেখতে পাই, বলা হয়েছে- ফা আশরাত ইলাইহি ফাক্বালু কাইফা নুকাল্লিমুমান কানা ফিল মাহদী ছাবিয়্যা। ক্বালা ইন্নী আব্দুল্লাহী আতানীয়াল কিতাবা ওয়া জায়ালানী নাবিয়্যা। ওয়া জাআলনি মোবারাকান আইনামা কুনতু ওয়া আওছানী বিছছ্লাতী ওয়াজযাকাতািমা দুমতু হাইয়্যা। ওয়া বাররাম বি ওয়ালিদাতি ওয়ালাম ইয়াজআলনী জাব্বারান শাকিয়্যা। আছছালামু আলাইয়্যা ইয়াওমা উলিদতু ওয়াইয়াওমা আমুতু ওয়া ইয়াউমা উবাুয়াছু হাইয়্যা।

যালিকা ইছাবনু মারইয়্যামা ক্বাওলাল হাক্কুল্লাযি ফী-হা ইয়াম তারুন। (মারইয়্যাম পুত্রের দিকে ইশারা করিলে পুত্র বলিল আমি আল্লাহর বান্দা, তিনি আমাকে কিতাব দান করেছেন (ইঞ্জিল) আর তিনি আমাকে নবী করিয়াছেন এবং কল্যাণযুক্ত করিয়াছেন। আমি যে খানেই অবস্থান করিনা কেন তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়াছেন যতদিন বাঁচিব নামায পড়িতে এবং যাক্বাত আদায় করার জন্য। তিনি আরও বলিয়াছেন আমার জননীর খেদমত করার জন্য। তিনি আমাকে করেন নাই উচ্ছংখল উদ্ধত বা দুভার্গ্যবান।

আমার প্রতি আল্লাহর শান্তি ও করুণা অব্যহত থাকবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এবং তা থাকবে আমি পুনরুত্থিত হওয়ার সময় অব্দি। আর ইহাই মারইয়্যামপুত্র ঈসার সত্যতত্ব গুপ্তভেদ, যা নিয়ে অবিশ্বাসীরা সন্দেহ পোষণ করিতেছে। কিন্তু এতেও সমালোচনা থামলো না। নানা কায়দায় কল্প কাহীনি বানানো শুরু হলো মারইয়্যাম ও তাহার পুত্রকে নিয়ে।

জবাবা দিলেন আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা- মা কানা লিল্লাহি আইয়্যাাতাকিযা ওলাদান, ছুবহানাহু ইযা ক্বাদা আমরান ফাইন্নামা ইয়াকুলু লাহু কুন ফাইয়াকুন। ওয়া ইন্নালাহা রাব্বী ওয়া রাব্বাকুম ফাবুদু হাযা ছিরাতুম মুছতাকিম। (আল্লাহর জন্য শোভনীয় নয় যে তিনি নিজের কোন পুত্র রাখেন। তিনি মহা পবিত্র যখন তিনি কোন কিছু করিতে ইচ্ছা করেন। তিনি শুধু বলেন হইয়া যাও-এমনি-ই হয়ে যায়।

নিশ্চয় আল্লাহ আমার প্রভু এবং তোমাদের প্রভু। অতত্রব তাহার উপাসনা কর। ইহাই সহজ সরল পথ। হযরত মারইয়্যামের জীবনী লেখতে হলে শেষ করা যাবে না। তখনকার যুগের লোকদের ভুল ধারণায় অপবাদী হতে হয়েছিল আল্লাহর নবী হযরত যাকারিয়্যা (আঃ)কে।

এমন কি উনাকে করাত দিয়ে কেটে ফেলেছিল স্বার্থপর অ-বিশ্বাসীরা। অথচ তিনি ছিলেন নবী ও আশ্রয় দাতা। তিনি শুধু সে কালেই নয় সর্বকালেই নারীদের জন্য এক বিশেষ আদর্শ। তাহার জীবনী থেকে একজন নারী শিখতে পারবে জীবন চলার পাথেয়। মহান রাব্বুল আলামীন তাহার মাধ্যেমে কস্টও সুখের দিকগুলো উন্মোচন করে দিয়েছেন নারীকুলের জন্য।

অপবাদ রটানো হলে কি ভাবে তা মোকাবেলা করতে হয়। এবং সন্তানদের গড়ে তুলতে হয় তাও শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতো এতো নির্যাতন করার পরও হযরত মারইয়্যাম যে প্রভু ভক্তির সাক্ষর রেখেছেন তা আল্লাহর দৃষ্টিতে অতুলনীয় এবং ক্বেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সমস্ত নারীদের জন্য ও এক চরম দৃষ্টান্ত। তাহার প্রভু প্রেমের নির্দশন সরুপ এই ঘটনাকে আল্লাহ পবিত্র কালামুল্লাহে লিপিবদ্ধ করেছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি পেয়েছেন যে মারইয়্যাম এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

বর্তমান সময়ে এই মহা দুর্যোগে মহিলারা যদি হযরত মারইয়্যাম (আঃ) এর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে চলেন তা হলে অবশ্যই সমাধান পাবেন। মারইয়্যাম (আঃ)এর দৃঢ়তা ও মনোবলকে পুঁজি করে চললে যে কেউ পাবে তৃপ্তি ও সফলতা। তাহার প্রতি আল্লাহু সুবাহানাহু তায়ালা এতোই মেহেরবান ছিলেন যে তাহার মৃত্যুও পর জান্নাতী কাফন পরিয়ে মালাইকা দিয়ে স্বাগতম জানিয়ে চিরদিনের জন্য জান্নাতবাসী করেছেন। হযরত মারইয়্যাম আল্লাহর গভীর তপস্যায় তিনি অ-সাধারণ হয়ে জীবিত আছেন আজো সমগ্র জাতীর হৃদয়ে। নারী ম্যাগাজিনের পাঠকদের জন্য তাহার সম্পর্কে দু’কলম লিখে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

সংক্ষিপ্ত এই লেখাটিতে ভুল ত্রুটি মার্জনীয় ও দোয়া প্রার্থী। পূন্যবান নারীর প্রশংসায় যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এগিয়ে সেখানে আমি এক নগন্য কি-ই-বা লিখতে পারি। তবুও কবির ভাষার মতো করে বললাম- নারীদের কি বাঁধা হতে মারইয়্যাম যদিও না পেল ঈসা মাসিহ তবুও তো পাবে আল্লাহর রাহমত চৌধুরী হাফিজ আহমদ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.