আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সীমান্ত ঈগল

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় এ ছিলো এক বিপ্লবী ইনক্বিলাব-সীজার ও খসরুর স্বৈরাচারের মহল তখন মিসমার হয়ে গেছে। ইসলামের বীর যোদ্ধাদের বিজয় নিশান একদিকে আল-বুর্জের তুষারমন্ডিত গিরিশিখরে, অপরদিকে আফ্রিকার খৈ-ফোটা তপ্ত বালু-প্রান্তরের হাওয়ার দুলছিল। একই সময়ে তাদের বিজয়ী অশ্ব পুর্বে হিন্দুস্তান ও পশ্চিমে স্পেনের দরিয়ার পানি পান করছিল। কিন্তু মুসলমানরা তাদের পুর্বপুরুষের তলোয়ারের হক রাখতে পারেনি। ইউরোপীয়রা ঈসায়ীরা যেই সেলজুক তুর্কিদের তলোয়ারের মুখোমুখি দাড়ানোকে শিকারের আশায় ঈগলের বাসায় হাত দেবার মত ভয়াবহ মনে করত, মালিক শাহ আর তুগরিল বেগের ওফাতের পর সেই অপরাজেয় সাম্রাজ্য আপনাআপনি ভেঙে পড়ল।

সে সময় পুর্বদিকে তেমুজিনের উত্থান ছিলো মুসলমানদের জন্য শেষ সতর্কবার্তা। ইতিহাসে এই দুরন্ত মানুষটির খ্যাতি রয়েছে চেঙ্গিস খান নামে। দিগ্বিজয়ী এই বীরের সৌভাগ্যের কিশ্‌তি বয়ে চলেছিল খুনের দরিয়ার উপর দিয়ে। অন্ধকারের ঝড় নিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন দেশ-দেশান্তরে। তার নেতৃত্বে মঙ্গোলিয়ার বর্বর তাতার বাহিনী জেগে উঠেছিলো দুরন্ত ঝড়ের মত।

সভ্য দুনিয়ার কাছে চেঙ্গিস খানের যুদ্ধ পদ্ধতি ছিলো সম্পুর্ণ নতুন। দুনিয়াটা তার কাছে ছিলো বিস্তীর্ণ শিকারভূমি। তাতার মুল্‌কের আশেপাশে যেসব রাজ্য, তার উপর তারা ঝাপিয়ে পড়ত ক্ষুধিত ঈগলের মত। কিন্তু তখনো ইসলামের দুশমনদের চোখে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের অন্তঃসারশূন্য মহল ছিলো অপরাজেয় কেল্লার শামিল, ইসলামের গোড়ার যুগের মুজাহিদীনদের শৌর্যবীর্যের কাহিনী তখনো সেই আগুনের উপর বারি বর্ষনের কাজ করছিলো। এ ছিলো সেই কওম, যাদের হাতে আলমে ইসলামের ধ্বংস ভাগ্যলিপির শামিল হয়ে গিয়েছিল।

যে মুল্‌কের প্রতি পাঁচজনের ভিতর একজন গাদ্দার, যে জাতির মুনাফিকের সংখ্যা মানুষের চুলের চাইতেও বেশী সেই কওমের ধ্বংস রুখবার কেও নেই। মিল্লাতের আমীর ওমরাহের মধ্যে হুকুমাতের বেতনভোগীর তুলনায় তাতারীদের কাছ থেকে আত্মা ও ইজ্জতের মুল্য উসুল করা লোকের সংখ্যাই ছিলো বেশী। খলিফার হাতে শরাবের জাম এবং মস্‌নদের সামনে নর্তকির নূপুর-নিক্কন অবিরাম চলছে। কাসিদ(বার্তাবাহক) এসে খবর দিলো হালাকু খান এসে পৌছে গেছে সীমান্তের নিকটে, শরাবের জাম হাত থেকে পড়ে খলিফার সফেদ লেবাস চিন্হিত হয়ে গেল। জাহান্নামের তান্ডব নিয়ে নাযিল হলেন হালাকু খান এবং শহরের উপর দিয়ে বয়ে চলল উদ্দাম ধ্বংসলীলা।

বিশ লাখের ভিতর মাত্র চার লাখ মানুষ প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিলো। হালাকু খান ফিরে যাবার পর শহরে চিল শকুন ছাড়া আর কোন প্রাণী ছিলোনা। আলমে ইসলামের এই ধ্বংস এগিয়ে এসেছিলো অনৈক্য ও কেন্দ্রচ্যুতির চরম পরিণতি হিসাবে। অথচ ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের জামানায় আরবরা যে সেনাবাহিনী নিয়ে সিন্ধু, তুর্কিস্তান ও স্পেন জয় করেছিলো, পতনযুগেও আব্বাসীয় খলিফার সেনাবাহিনীর সংখ্যা তার তিনগুন ছিলো। কিন্তু মুসলমানরা তাদের পুর্বপুরুষের ঈমানের উত্তরাধিকার হারিয়ে ফেলেছিলো।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজদরবারের বহু অমাত্যের সঙ্গে যেমন ইংরেজদের যোগাযোগ ছিলো, তেমনি আব্বাসীয় রাজদরবারের বহু উজির ওমরাহের সাথে চেঙ্গিস খানের উত্তরাধিকারী খাকান এবং হালাকু খানের গভীর সম্পর্ক ছিলো। পার্থক্য এই যে, ইংরেজরা তাদের বন্ধুদের প্রাণে মারেনি কিন্তু বর্বর হালাকু খান হত্যাকান্ডের সময় কোন বাছ-বিচার করেনি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।