সাকিব সাহেব মোটামুটি একপ্রকার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন এ বাড়িতে আর থাকবেন না। একে পরিবর্তন করতেই হবে। তাই কি করা - অগত্যা একে বিক্রি করে অন্য বাড়িতে যাবার সিদ্ধান্তই পাকাপোক্ত করলেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরনাপন্ন হলেন জামান সাহেবের। বড় রাশভারি মানুষ তিনি।
অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি রাখেন। মাকেটিং এ জীবনের শিংহভাগ কাটিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট বাড়ির ব্যপারেও তিনি সম্যক অবগত। সাকিব সাহেব বাড়ি বিক্রির পরামর্শ চাইলে আপাতত তিনি বিজ্ঞাপনের জন্য একটা বিজ্ঞপ্তি লিখলেন। বাড়ির সমূহ বিবরণ তাতে স্থান পেল।
তিনি যা লিখলেন তার সারাংশ অনেকটা এরূপ -
- অত্যন্ত আকর্ষণীয় লোকেশন
- প্রশস্ত যায়গা
- অনন্য স্থাপত্য শৈলী
- চমতকার ইন্টেরিয়র ডিজাইন
- ইনহাউজ পার্ক
- রিক্রিয়শন হল
- সুইমিং পুল ..... ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব লিখে সাকিব সাহেবকে পড়ে শুনাতে লাগলেন। একবার পড়ার পরে সাকিব সাহেব জামান সাহেবকে আবারো পড়তে বললেন। এরপর আবার তারপর আবার, এভাবে কয়েকবার। তিনি যখনই বিজ্ঞাপন পড়ার পুনরাবৃত্তি করেন তখনই সাকিব সাহেব ভাবাবেগে আপ্লুত হন।
এরপর জামান সাহেবকে নিজেই থামিয়ে দিয়ে অনেকটা চিতকার করে বলে উঠলেন - থামুন! থামুন!! এমন একটা সুন্দর বাড়ি যার থাকে সে কিনা আবার একে ছেড়ে অন্য স্বপ্ন দেখে। আমি মূলতঃ আমার পুরো জীবন জুড়ে এমন একটি বাড়ির স্বপ্নই দেখতাম। অথচ আপনি এ বাড়ির বর্ণনা শুনানোর আগ পর্যন্ত আমি জানতামই না যে, অদ্যবধি আমি এমন একটি বাড়িতেই বসবাস করে আসছি। এরপড় হেসে বললেন -দয়া করে বিজ্ঞাপনটি প্রচার করবেন না। আমি আমার বাড়ি বিক্রি করবো না।
মূলতঃ কেউ যদি তার প্রতি আল্লাহর দেয়া নেয়ামতরাজি একটি একটি করে গুনতে চায়, তহলে সে দেখবে যে কতটা সৌভগ্যবান করেই না তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে! আমরা আসলে আল্লাহর শুকরিয়ার বিষয়টি ভুলে যাই; আমরা আমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামতরাজি নিয়ে চিন্তা করি না।
আমরা কোন বিষয়ের নেগেটিভ দিক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অথচ তার যে কিছু পজিটিভ দিকও থাকে তা সামনে রাখি না। সমূহ অভিযোগ আমাদের। অভিযোগ - গোলাপের নিচে কাঁটা কেন? অথচ আমরা যদি এভাবে না করে অন্যভাবে ভাবি।
অভিযোগ না করে যদি কৃতজ্ঞ হই এই বলে যে - আল্লাহ এই কাঁটার উপর সুন্দর সুবাসিত মনকাড়া রঙের একটি গোলাপ দিয়েছেন।
আমার মন ভারি হয় যখন নিজেকে নগ্নপদ দেখি। অথচ একটু ভাবলে এটাও দেখা যাবে যে অনেকের শুধু যে জুতা নেই তা-ই নয়; দুটো পা'ই নেই। আমার যে পুরানো গাড়িটি আমাকে মনোকষ্টে ফেলে; অথচ তার পাশ দিয়েই হাশু, পলাশ, শামেলা সহ আরো হাজারো মানুষ দু'টো পা-কেই তাদের বাহন করে চলছে আজীবন। আমার শ্রীহীন ঘর অনেক সময় আমাকে পিড়ীত করে; অথচ দৃষ্টি ফেরালে দেখা যাবে মফিজুর, আঞ্জুমান সহ হাজারো বনি আদম খোলা আকাশের নীচে কিবা গাছের ছায়াকেই তার আপন আবাস করে নিয়েছে।
অনেক সময় আমার অঙ্গহানি হওয়া বা ত্রুটিযুক্ত হওয়াকে অন্যের কাছে হাত পাতার ওসিলা করি। অথচ হাত পা ছাড়া অনেকে শুধু জীবন পেয়েই খুশি! চীনের নাইক ভুজিসিস তাদেরই একজন। নাইক যে শুধু তার স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ তা-ই নয়; তিনি বিশ্ব জুড়ে লক্ষ মানুষকে জীবনের গান শোনাচ্ছেন। শুধু তিনি একাই নন; এ সারিতে আছেন আরো অনেকে। নিজের একই অবস্থাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হবার বাহন না করে এরা সূখী জীবন যাপন করছেন।
জীবনের অনেক ক্ষেত্রে তারা অনেকে অর্জন করেছনে শ্রেষ্ঠত্ব। অনেকে নিয়েছেন। ব্লাকবেল্ট এমনকি ফ্লাইং লাইসেন্স; যেমন জেসিকা কক্স । এভাবে আরো অনেকে। অনেক কিছুতে।
আর আমি? এর পরও কি অভিযোগের ঝুলি হাতে দ্বারে দ্বারে ফিরবো? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।