আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঁটা



কি হলো এখনও আসছ না! লোকজন সবাইতো চলে আসবে। বুলি ফোনের মধ্যে ঝাঁঝিয়ে উঠে। সে বুঝে সেজান থতমত খেয়ে গেছে। সে স্বামীর গলা শুনতে না পেরে আরো কর্কশ সুরে জানতে চায় কি হলো কথা বলছ না কেন? এতক্ষণে সেজানের শব্দ পাওয়া যায়। তুমি ফোন ধরে এমন চিৎকার শুরু করেছ যে কথা বলাই দায়।

আমি রাখছি। বুলির মেজাজ এবার সত্যি খারাপ হয়ে যায়। সারাদিন অফিসে আরাম করে বসে থাকে, সংসারের কোন কিছু খোঁজ করে না। বাড়িতে বুলি কি করে না করে কিছু জানতে চায় না। আজ বিকেলে একটু তাড়াতাড়ি আসতে বলতে চায়,অথচ কি যে হয় তার সোজা ভাবে কথা বলতে গেলেই ঝগড়া শুরু হয়ে যায়।

সেজান জানতেও চায় না কেন কি দরকার তার আগে আসার। সে মনে করে বাড়িতে মেহমান আসবে, বুলি কাজের লোক দিয়ে সব ম্যানেজ করে ফেলবে, তার কোন দরকার নাই। তাদের বাড়িতে সে বরাবরই দেখে এসেছে মা সব কিছু তদারক করত। বাবা খালি অফিস করত আর ছুটির দিনে বাজার। ব্যস।

দায়িত্ব শেষ। বিয়ের পর একি সে ঝামেলায় পড়ল, বুলি সব সময় তার সাহায্য চায়, এটা ওটা বলে, সে ঠিক মত উত্তর দিতে না পারলে কড়া কড়া কথা শোনায়। বুলির বাবার বাড়িতে সব অন্যরকম। সব কিছুতে বাবা মা দুজনেই মাথা খাটায়। তার অস্বস্হি লাগে।

বাবা থাকবে বাবার মতন, মা থাকবে মার মতন। এসব কি ন্যাকামো সে ঠিক মেনে নিতে পারে না। বুলি আর দশটা মেয়েদের মত সেজানকেও তার জগতে টেনে আনতে চায়, পারে না। সেজানের খালি এক কথা, আমি এসব বুঝি না। তুমি যা ভাল মনে কর, তাই কর।

বাহ, তুমি বল না নতুন আর কি রান্না করা যায়? সব সময় একই খাবার দিলে লোকজন বিরক্ত হয়ে যাবে না! কেন বিরক্ত হবে! দাওয়াতে সবাইতো এসবই খাওয়ায়, নাকি? বুলির মুখে আর কথা সরে না। অভিমানে চোখটা পানিতে ভরে যায়। সেজান আসলে তার থেকে অনেক দুরে সরে গেছে। অবশ্য কবেই কাছে ছিল। সেজান দুরে সরে যাচ্ছে।

হঠাৎ করে পুরোন সন্দেহটা মনের মধ্যে খচ খচ করতে থাকে। কিছুতেই তাড়াতে পারে না। তার বাচ্চা হয় না। এনিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন খুশি নয়। সেটা সে জানে, আর সেজানের মাও তা গোপন করেন নি।

নিশ্চয়ই উনারা আবার সেজানের বিয়ে নিয়ে তালগোল পাকাতে চান। তারা আবার খেলা শুরু করেছেন। বুলি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে থাকে। সেজানের ইদানিং আচরণ খুবই সন্দেহজনক। ঠিক সময়ে বাসায় আসে না।

অফিসেও অনেক সময় ফোন করে পাওয়া যায় না। খালি বলে মিটিংএ ব্যস্ত। কি এমন কাজ, যা বুলিকে বলা যায় না। সে আর মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেনা। বিড় বিড় করে আসুক আজ বাসায়, দেখাচ্ছি মজা।

আমার সাথে চালাকি। বুলি কাজের বুয়াকে বলে রান্না বন্ধ করতে বলে। বুয়া বেচারি বুঝতে পারে না, কি হলো। কাল থেকে তার মাথা শেষ করে ফেলছে এই দাওয়াতের জন্য, আর এখন বলে রান্না করতে হবে না। বড়লোকের যে কি পাগলামি।

দুলাভাইটাও একটা গাধা, বউকে এত হুজুর হুজুর করে। কিছুই বলে না। হুঁ আমার জামাই হলে বুঝতি কত ধানে কত চাল। বুয়া মনে মনে রাগ করতে থাকে। মুখে বলে তাহলে এই সব এখন কি করব! যা রান্না করছ, ঠিক আছে, অন্যগুলো ফ্রিজে উঠিয়ে রাখ।

আমাকে এখন বিরক্ত করো না। বুলি সবার বাসায় ফোন করা শুরু করে দাওয়াত বাতিলের জন্য। মিথ্যা অজুহাত দেখায়। সন্ধ্যার দিকে হেলে দুলে সেজান আসে। বাসা বাড়ি অন্ধকার।

সে ভয় পেয়ে যায়। দরজা টোকা দিতেই বুলি খুব স্বাভাবিক ভাবে খুলে দেয়। কি ব্যপার, একেবারে মরার বাড়ি বানিয়ে রেখেছ? কারণ এখানে মরা লোক থাকে সেজন্য! কি হয়েছে তোমার এভাবে কথা বলছ কেন? কি ভাবে কথা বলব! যা জানতে চাচ্ছ তাই তো বলছি! সেজান বুয়াকে ডেকে চা দিতে বলে। বুয়া নাই, চলে গেছে। এত আগে চলে গেল কেন? রাতে মেহমান আসবে, বুয়াকে লাগবে না! রাতে কেউ আসবে না! আমি দাওয়াত বাতিল করেছি।

সেজান অবাক হয়ে বুলির দিকে তাকিয়ে থাকে। সে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারে না। তুমি এসব কি বলছ? লোকজনের কাছে আমাকে আর কত ছোট করবে! ওহ আমি তোমাকে ছোট করছি! আর তুমি কি করছ? আরেকটা বিয়ে করার তাল করছ? আমি বুঝি না, না? আমার বাচ্চা নাই বলে তোমার গুষ্টিতো আবার তোমাকে বিয়ে দিতে চায়। আচ্ছা কর তোমার বিয়ে। আমি আর সহ্য করতে পারিনা, তোমার যা খুশি কর, আমাকে মুক্তি দাও।

বুলি হাও হাও করে কেঁদে উঠে। আচ্ছা তুমি কি পাগল হয়ে গেলে। দুহাতে বুলিকে জড়িয়ে ধরে সেজান,কি আবোল তাবোল বকছ। বিয়ের কথা কেন আসছে? আমরাতো ভালই আছি, কেন তুমি অশান্তি করছ! বাচ্চা হচ্ছে না। পরে হবে, না হয় না হবে।

এ নিয়ে আমারতো কোন অসুবিধা নাই। আমিতো তোমাকে নিয়েই সংসার করতে চাই, সুখী হতে চাই। তুমিতো সেটা জানই। কেন বারে বারে এরকম অশান্তি কর। বুলির কান্নার শব্দ থেমে যায়।

স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা গিলতে থাকে,সেজানের কথায় সে আস্হা ফিরে পায়,মাথা ঠান্ডা হতে থাকে। কুৎসিত সন্দেহটা দূর করে সে সেজানের বুকে মাথা রাখে। সেজানের মুখে চিলতে হাসি ফুটে উঠে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।