আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোলা চিঠি

আসুন মানুষের পাশে দাড়াই জুলাই ১৫, ২০১১ কেমন আছো? হয়তো অবাক হচ্ছো কেন তোমাকে এখন আবার লিখতে বসলাম। গতকাল রাতে আনেক মাস পর আমরা ফোনে প্রায় ২ ঘন্টা কথা বললাম। কি ভাবে যে সময়টুকু পার হয়ে গেছে তা আমি টেরও পাইনি। তারপরও কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে আনেক কথা বলা বাকী রয়ে গেছে। অনেক কিছুই অব্যক্ত।

আমার বন্ধু বলো আর পরিচিত মানুষ বলো এদের সংখ্যা নেহায়েত কম না। তবে সত্যি কথা বলতে কি জানো, এতো লোকের ভিড়ে আমি বড় একা। যখন একলা নির্জনে নিজেকে নিয়ে একটু গভির ভাবে চিন্তা করতে যাই আমার চারিদিকটা বড় বেশি ফাঁকা। হাতে গনা ২/৩ জনের মুখ ছাড়া বাকি সব মুখ গুলো কেমন যেন বিবর্ণ মনে হয়। মনে হয় দাড়িয়ে আছি একলা আমি বিশাল এক মরুভূমির মাঝে।

তুমি হয়তো আবাক হচ্ছো দুই কোটি মানুষ আর লাখো-লাখো দালান-কোঠায় ঘেরা ঢাকার এই অরণ্যকে আমার কাছে মরুভূমির মত মনে হচ্ছে কি করে। কিন্তু আমার কাছে এটাই চরম সত্য, এটাই বাস্তব। আমি যেন দিন দিন অভিনয় করে যাচ্ছি। ভালো থাকার অভিনয়। ন্যের সাথে অভিনয় করাটা অনেক সহজ হলেও নিজের সাথে অভিনয় করাটা বড় কঠিন।

নিজের সাথে অভিনয় করতে করতে আজ আমি বড় ক্লান্ত, বড় বেশি পরিশ্রান্ত। জানো সত্যি এখন কোন কিছু আর ভালো লাগে না। মনে হয় সব কিছু যেন মেকি, সব কিছু ফাঁকা। জীবনে চলতে চলতে এটা অন্তত বুঝে গেছি জগতে টাকার প্রয়োজনটাই সবচেয়ে বেশি। যার যত বেশি টাকা আছে তার কদর ততো বেশি।

এখানে প্রেম-ভালবাসা বা অন্য সম্পর্কের মুল্য খুব একটা নেই। বলতে পারো সম্পর্কের সংঙ্গা কি? কি কি গুনাবলী থাকলে একটা সম্পর্ককে খুব ভাল সম্পর্ক বলা যায়? ভলো সম্পর্ক এটি দেখতে কেমন হয়? এটা একজনের কতটুকু মানুষিক চাহিদা পূরণ করতে পারে? মানুষকে বিশ্বাস করা কি খুব খারাপ? কারো উপকার করার বাসনা কি বড় বেশি অপরাধ? সম্পর্ক গুলো এমন হয় কোন বলে পারো? মানুষ একজন আর একজনের কাছ থেকে কি চায়? কতটুকু আশা করে? কি তার প্রত্যাশা? কতটুকু আশা পূর্ন হলে একটা সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে পারে? কতটুকু স্বার্থের ব্যঘাত ঘটলে সম্পর্কের দেয়ালে চির ধরে? কতোটুকু না পাওয়া থেকে সম্পর্কের পুরো দেয়ালটাই ভেঙ্গে যায়? সম্পর্কের দেয়াল গুলো কি এতোটাই ঠুঙ্ক যে সামান্য আঘাতে এর কোন অস্তিতই থাকে না? চারিদিকে চাওয়া-পাওয়ার এত বেশি দন্দ্ব কেন? সব সম্পর্ক গুলো কি চাওয়া আর পাওয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ? এর বাইরে সম্পর্ক গুলোকে কি আমরা একটু অন্য ভাবে ভাবতে পারি না? এই এক জীবনে খুব কি বেশি কিছুর প্রয়োজন আছে আমাদের? কতটুকু পূর্ণ হলো আমাদের প্রয়োজন গুলো মিটে যাবে? ফুরিয়ে যাবে স্বার্থ-সংঘাতের সকল দ্বন্দ? তুমি সব সময় বলো আমি আর ৫টা মানুষের থেকে একটু আলাদা। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি অন্যদের থেকে আলাদা হতে চাই না। আমিও আর সবার মত বাঁচতে চাই, চলতে চাই, ঘুমতে চাই। আমি জীবনের এত সব জটিলতা বুঝি না।

আমিও চাই একটু স্বার্থপর হতে। জীবনের জটিলতা গুলোকে একটু বুঝতে। কিন্তু কি করবো বলো আমি পারি না। আমার হয় না। হ্যাঁ আমি জানি বেশির ভাগ মানুষই আমাকে ব্যবহার করে।

এটাও জানি তাদের স্বার্থের একটু টান পরলে হয়তো তারা মুখ ফিরিয়ে নিবে। কিন্তু আমার কেন জানি বার বার কি মনে হয় জানো, আমাকে ব্যবহার করে আমরা দ্বারা যদি কারো সামান্যতম উপকার হয় হোক না। আমার তো তেমন একটা ক্ষতি হচ্ছে না। আমি শত শ্রেষ্টা করেও পারছি না এখান থেকে বার হতে। কেমন জানি একটা অদৃশ্য গন্ডির মাঝে আটকা পরে আছি।

আমি কিছুতেই বার হতে পারছি না এই গন্ডি ভেদ করে। অথচ দেখ যে মানুষগুলোর কথা আমি চিন্তা করেছি, যাদের প্রয়োজনে আমি আমার সাধ্য মত শ্রেষ্টা করেছি কিছু একটা করতে তারা কিন্তু অতি সহজ ভাবে গন্ডিটা পায়ে মারিয়ে চলে যাচ্ছে এবং যাবে। তুমি ঠিকই বলো “আমার দ্বারা জীবনে কিছু হবে না। আমি একটা অপদার্থ”। আসলেই আমি সারা জীবন অপদার্থই রয়ে গেলাম।

সবার মত রক্ত-মাংশে গড়া পদার্থ আর হতে পারলাম না। তুমি বিশ্বাস কর আর নাই করে তোমার কাছ থেকে বন্ধুত্বের বাইরে অন্য কোন কিছুর আশা বা প্রত্যাশা যেটাই বলো না কেন কোনটাই আমি কোন দিন করি না। তবে কেন জানি নিজের অজান্তেই অন্যদের থেকে একটু বেশি দাবি করে ফেলি তোমার উপর। যদি জানতে চাও কেন এটা করি? সত্যি বলছি তার কোন উত্তর আমি দিতে পারব না। আর উত্তরটা দেবই বা কি করে আসলে এটাতো আমার নিজেই জানা নাই।

টানটা কেমন যেন একদম অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অনুভূত হয়। প্লিজ তুমি এটাকে অন্য কোন ভাবে সংঙ্গায়িত করো না। হয়তো তুমি ঠিকই বলেছ “আমরা দু’জন দুই মেরুর মানুষ”। মাঝে মাঝ আমিও ভাবি কেমন করে তোমার আমার মাঝে এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটা সৃষ্টি হলো, কোন উত্তর পাই না। প্রথম বার আমি তোমার বন্ধুত্ব অর্জন করেছিলাম।

তখন তোমার উপর আমার একটা জোর ছিলো। কিন্তু এখন তুমি আমার কাছে পুরপুরি মুক্ত পাথির মত। যার কাছে আমার কোন কিছুর আশা নেই, কোন প্রত্যাশা নেই, নেই কোন পাওয়া না পাওয়ার বেদনা। যে পাখি নিজে থেকে এলো তাকে কোন বন্ধনে আবদ্ধ করার সাধ্য কি আমার আছে বলো? তুমি যত দিন খুশি, যে ভাবে খুশি থেকো আমার নীরে। তারপার যখন আর ভাল না লাগবে উড়াল দিও।

আমি বাধা দিব না। দাড়াব না সামনে এসে কোন কিছুর দাবী নিয়ে। আচ্ছা তুমি কি আমাকে কিছু টাকা দিতে পারবে? দান হিসাবে না, ধার হিসাবে। যেকোন অংঙ্কের টাকা। এ টাকাটা আমি কোন দিন তোমায় ফেরত দিব না আর তুমিও এটার দাবি কোন দিন একটা মুহুর্তের জন্য ছাড়ে দিও না আমার উপর থেকে।

প্লিজ তুমি এটাকে অন্য ভাবে নিয়ো না। আমি জানি এখন তোমর আমার মাঝে যতটুকু সম্পর্ক আছে সময়ের সাথে সাথে এটার দূরত্ব আরও বেড়ে যাবে। জীবনের বাস্তবতায় হাসি-কান্নায় মাখা স্মৃতি গুলো আস্তে আস্তে ধুসর হয়ে আসবে। আর তারপর একদিন পুরটাই হারিয়ে যাবে সময়ের গহীনে। ছিন্ন হয়ে যাবে সকল সম্পর্কের সেতুবন্ধন।

আমি চাই সকল সম্পর্ক ছিন্ন হলেও অন্তত একটি সম্পর্কের বন্ধন টিকে থাক আজীবন আমাদের মাঝে। তোমার আর আমার এই ঋণের বন্ধনটা। জীবনের শেষ দিনও যেন তুমি বলতে পার “এক জন মানুষকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিলাম যে টাকা এখনো অপরিশোধিত রয়ে গেছে”। ঠিক আমিও যেন জীবনের অন্তিম ক্ষণে এসে মনে করতে পারি এক জনের ঋণ-বন্ধনের বোঝা মাথায় নিয়ে চলে যাচ্ছি এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে। এতো তোমার বা আমার খুব কি বেশি ক্ষতি হবে? কি পারবে না আমার জন্য এইটুকু করতে? ভালো থেকো।

-অপদার্থ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।