আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার অমীমাংসিত রহস্যগুলো -২

বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d ঘটনাটি ১৯৯৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের। সেসময় আমি চট্টগ্রাম থাকতাম। দামপাড়া পুলিশ লাইনে একবার এলআরবি কনসার্ট করবে। আগেই সারা চট্টগ্রাম শহরে পাবলিসিটি হয়ে গেছে।

সন্ধ্যার পর শুরু হলো অনুষ্ঠান। দামপাড়া পুলিশ লাইনের গেট দিয়ে ঢোকার পর ডান পাশে বিশাল মাঠ। আমরা সব বাচ্চু পাগল বন্ধুবান্ধব হুড়পাড় করে ঢুকলাম। ততক্ষণে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। আমরা গিয়ে দাঁড়ালাম ষ্টেজের বাম পাশে মানে মাঠের বাম দিকে।

কনসার্ট চলছে। ধুমধারাক্কা সব গান গাইছে। অদ্ভুত লাইটিং শো। বাচ্চু নীল বেদনা গানটা গাইছে আর পুরো ষ্টেজে নীল আলো খেলা চলছিল। সে এক অদ্ভুত অনুভুতি!! এরই মধ্যে শুরু হলো ধাক্কাধাক্কি।

কনসার্টে যা হয় আরকি! দেখলাম কিছু ছেলে মিলে একটা ছেলেকে মারছে। পেটে ঘুষি মেরেছে। দেখলাম ছেলেটা চলে গেলো মাঠের এক পাশে। আমার ছেলেটাকে দেখে বেশ মায়া হলো। আমার মতই বয়স বা আমার থেকে একটু ছোট হবে।

মধ্যবিরতীর সময় আমি ছেলেটার কাছে গেলাম আর আমার হাতের পানির বোতল থেকে তাকে পানি খেতে দিলাম। পেটে ঘুষি মারার জন্য ছেলেটা পেট ধরে বসে আছে। কনসার্ট শেষ হতে হতে প্রায় রাত সাড়ে নয়টা। আমি ছেলেটাকে সাথে করে গেটের বাহিরে এসে রাস্তা পার করে রিক্সায় তুলে দিলাম। ছেলেটা লালখান বাজারের ওদিকটায় চলে গেলো।

তারপ্রায় কিছুদিন পরে ছেলেটাকে আমি জিইসির মোড়ে মোহাম্মদীয়ার সামনে দেখতে পাই। আমরা দুজনই দুজনকে চিনতে পারি। জিইসির মোড় আড্ডা দেয়ার জন্য বিখ্যাত স্থান চট্টগ্রামের। এভাবে প্রায়ই বিকেলেই তার সাথে দেখা হতো। জানতে পারি ছেলেটা গীটার বাজাতো।

সেই হিসেবে তার সাথে আমার সখ্য হয়ে যায়। সেই সূত্র ধরে দুইএকদিন ছেলেটা আমার বাসাতেও এসেছে, এটা অগাষ্ট মাসের ঘটনা। ওর কাছ থেকে আমি গানের জন্য গীটারের কর্ড লিখে নিতাম। জিইসির মোড়ে ওর সাথে আরো দুই একজন ছেলে আড্ডা দিতো। তাদের সাথেও কথা বলতাম কিন্তু ওদের সাথে আমার সখ্য গড়ে উঠেনি।

কারণ আমি বুঝতাম ওরা এডিক্টেড। অগাষ্ট মাসের ১৭ তারিখে সকাল ৯টার দিকে ছেলেটা আমার বাসায় আসে। তাকে খুব বিচলিত দেখি। সে আমার কাছে ১৫০০ টাকা ধার চায়। আমি তাকে পকেট থেকে পাচশ টাকার দুটি নোট দিয়ে বলি আমার কাছে তো আর নাই।

সে নাছোড়বান্দা। তখন বলি ঠিক আছে তুমি আবার সন্ধ্যার সময় মিমি সুপার মার্কেটের সামনে এসো আমি আরো পাচশ টাকা জোগাড় করে দিবো। কথামত সন্ধ্যাবেলা তাকে মিমি সুপার মার্কেটের সামনে পাই এবং তাকে পাঁচশ টাকা দেই, সে সময় সে একাই ছিল। তাকে খুবই বিদ্ধস্ত দেখি। সে আমার সাথে বাসায় আসে রাতে আমার বাসায় থাকবে বলে।

রাত প্রায় বারোটার দিকে হঠাৎ করেই সে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে এবং যাওয়ার সময় সে বলে তার খুব বিপদ তবে সে চেষ্টা করবে টাকাটা ফেরত দিতে কিন্তু যদি না পরে তবে আমি যেন ঐ ১৫০০ টাকার দাবী ছেড়ে দেই। এই বলেই সে তীব্র গতিতে বের হয়ে যায়। এরপরে তাকে আর কোথাও দেখিনি। এভাবে কেটে যায় প্রায় আরো প্রায় দুই মাস। একদিন বিকেলে আমি জিইসির মোড়ে দাড়িয়ে আছি তখন সেই দুটি ছেলেকে দেখতে পাই (যারা ঐ ছেলেটির সাথে ওখানে আড্ডা দিতো)।

তাদেরকে জিজ্ঞেস করি তাদের বন্ধুর ব্যাপারে। তাদের কাছে জানতে পারি, সেই ছেলেটি একটা রোড এসকিডেন্টে জুলাই মাসের ৩০ তারিখে মারা গেছে। আমি কথাটা বিশ্বাস করি না। একদিন আমি তার এলাকায় যাই এবং তার খোঁজ করি। ওরা যেখানে আড্ডা দিতো সেখানকার একটা চায়ের দোকানদারকে তার কথা জিজ্ঞাসা করি।

দোকানদার আমাকে যা জানালো তা হলো সে জুলাই মাসের শেষ দিকে বাসের নীচে চাপা পড়ে মারা গেছে। আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে যাই। কারণ সে তো আমার কাছে অগাষ্টের ১৭ তারিখ সকাল বেলাতেও এসেছিল। কিন্তু তাহলে ১৭ তারিখ আমার কাছে কে এসেছিল? আর কে-ই বা আমার কাছে ১৫০০ টাকা ধার নিয়েছিল? আমি আজও এর কোন উত্তর পাইনি। এটা একটা রহস্য হয়ে আছে আমার কাছে।

[পাঠক/পাঠিকার উপরে এই পোষ্টের বিষয়বস্তু বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের ব্যাপারে কোন চাপ নেই] ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।