আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমীমাংসিত পূরুষ



নির্মলেন্দু গুণের অমীমাংসিত রমণীর মত, তুমিও আমার এক অমীমাংসীত পূরুষ। সেই কবিতার খোকাভাই আর তোমার নামের মিল দেখে- চমকে উঠেছিলাম আমি। আমিও সূনীলের কবিতার নায়িকা নই, তবুও কি অদ্ভুত এক উপায়ে; আমার ডাকনামটাও মিলে গেলো তার কবিতার মেয়েটার নামের সাথে। সাতটা বছর! কম সময় নয় , তবুও, তবুও কেনো আজও আমার কবিতা মানেই তুমি? আমার কবিতা মানেই, আমাদের সেই ছাদ, বকুলতলা, ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথা- কেউ শুনলে বলবে বড্ড সেকেলে কিন্তু সেটাই যে আমাদের সত্যি। তুমি খুব চুপচাপ আর শান্ত গভীর ছেলেটা কি করে যে চলে এলে, একবাড়ী মানুষের মাঝে, ঠিক আমার হৃদয়েরই কাছটিতে খুব কাছে।

সে এক চির অজানা রহস্য! খোকাভাই, কখনও কি মনে পড়ে তোমার? একদিন এক পড়ন্ত বিকেলে, ইটের টুকরো কুড়িয়ে, ছাদের দেওয়ালে এক কোনে, লাল লাল হরফে লিখেছিলে খোকা+ নিরু? কি ছেলেমানুষী কান্ড! ভাবলে বড্ড হাসি পায় এখন। পরদিন দুপুরে তুমি কলেজ থেকে ফিরতেই; চাচীমা কান ধরে হিঢ়হিঢ় করে টেনে নিয়ে গেলো ছাতে, তার আগেই আমার তলব পড়েছিলো সেখানে। তারপর অজস্র বকুনী আর ঘড়া ঘড়া জল ঢেলে; মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন উনি, আমাদের সেই ভয়ংকর ছেলেখেলার স্মৃতি। বিধাতা কি আড়ালে মুচকি হেসেছিলেন সেদিন? জানো, বিয়ের পর, তুমি তখন বিবাগী, নিরুদিষ্ট, একদিন সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে, আমার ভালোমানুষ স্বামী বললেন, "বড্ড গরম পড়েছে- চলো, ছাদে বেড়িয়ে আসি। " সেদিনও ছিলো গোধুলীলগ্ন।

আমরা ছাদের ঠিক সেই কোনটাতেই গিয়ে দাড়ালাম। আমার চোখ অলখে চলে গেলো সেই দেওয়ালটাতেই। খুব অস্পষ্ট কিন্তু তবু জ্বলজ্বলে, দেখা যাচ্ছিলো অক্ষরগুলো। যেখানে,একদিন তুমি লিখেছিলে, একটি চিহ্নের বাঁধনে, দুটি নাম। খোকা+ নিরু।

আমি ভয়ে ভয়ে আড়চোখে তাকালাম সেদিকে। ঘড়াঘড়া জল, প্রখর রৌদ্র-তাপ আর প্রবল ঝড়ঝাপ্টাও- নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারেনি সেই নাম। খুব ঝাপসা কিন্তু দেওয়ালের রুক্ষপ্রস্তর, দৃঢ় কঠিন ভাবে, তার পাষান হৃদয়ে ধরে রেখেছে দুটি নাম।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।