আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার অমীমাংসিত রহস্যগুলো -১

বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d ঘটনাটা যতদুর সম্ভব ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের দিককার। তখন রাতে পড়াশুনা করে বিছানায় যেতে যেতে একটু দেরী হতো। কারণ সামনে ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। মোটামুটি বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমি সবকিছু শেষ করে ঘুমাতে যাই।

তাও তো শুতে শুতে প্রায় প্রতিদিনই রাত একটা দেড়টার মত বাজতো। আমরা যে বাড়ীটায় থাকতাম সেটা ছিল তিনতলা। আমরা থাকতাম দোতলায়। আমার ঘরটা ছিল বাসাটার প্রায় শেষ দিকে। ঘরের একপাশে বারান্দা আর আমাদের অন্যঘরগুলো।

আর জানালা ছিল দুটি তার একটি দক্ষিনমুখী। আর আমার রুমের পাশটাতেই ছিল আরেকটি বাড়ী পিছন সাইড। সেখানে কলাগাছ ও কিছু জঙ্গল টাইপ গাছ ছিল। সেখানটায় সাধারনতঃ কেউ আসতো না। আমার পড়ার টেবিলটা ছিল বিছানার পাশেই।

মানে বিছানায় বসেই আমি টেবিলে পড়তাম। টয়েলেট থেকে ফিরে এসেই আমি লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছিল না। আমি তখন ঘরের ভিতর একটা গন্ধ পাই। কেমন যেন ঠিক গন্ধটা।

ঠিক ফুলেরও না আবার কোন খারাপ গন্ধও না। ভাবলাম জানালার পাশে যেহেতু বিভিন্ন প্রকার গাছ আছে তো সেখান থেকেই হয়ত গন্ধটা আসছে। তার কিছুক্ষণ পরে জানালার কাচে কিছু একটা আঁচড় কাটার শব্দ শুনতে পাই। বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না। তারপর বিছানায় এসে আবার লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

তারপর আজব কিছু ব্যাপার একের পর এক ঘটতে থাকলো। আমার মনে হলো কেউ আমার পায়ের কাছে লেপটা ধরে নাড়াচাড়া করছে। কিন্তু পায়ের কাছে কিছুই দেখতে পেলাম না। এসব সব মনের খেয়াল ভেবে বেশ কিছুক্ষণ পরে কখন ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি। পরের রাতে ঠিক একই ভাবে পড়া শেষ করে বিছানায় যাওয়ার পরে ঐ আগের রাতের গন্ধটা পেলাম।

কিন্তু আমি আগের চেয়ে আরো বেশী গন্ধটা অনুভব করতে থাকলাম। পায়ের নিচে নরম কি যেন একটা তুলতুলে কিছু অনুভব করলাম। মনে হচ্ছিল একগোছা চুল টাইপের কোন একটা কিছু। ঘটনার আকস্মিকতায় লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম কোন কিছুই নেই। সেই রাতে আর ঘুম হলো না।

সারারাত জেগেই থাকলাম প্রায়। তারপরে আর অনেকদিন সেই রকম কোন কিছুর অনুভব করিনি। যথারীতি ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে যায় নভেম্বরের মাঝামাঝি। মোট চারটা পরীক্ষার পরে কয়েকদিনের জন্য ব্রেক ছিল কি যেন একটা কারণে। তো ম্যাথ পরীক্ষার দুইদিন আগের রাতে হঠাৎ করেই ঘরের ভিতর আবার সেইরকম গন্ধ পেতে থাকি।

আমি লেপের ভিতর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ি। হঠাৎই আমার মনে হয় রুমের লাইটা জ্বলে উঠল। মনে করেছিলাম হয়ত আম্মা আমার ঘরে ঘুকেছিল। কিন্তু মাথা বের করে দেখি ঘর অন্ধকার। তখন খুব ভয় পেয়ে যাই।

জোড়ে যে চিৎকার দিবো সেই শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলি। আমি লেপের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে আবার শুয়ে পড়ি। ভয়ে নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। আবারো পায়ের কাছে নরম কিছু একটা অনুভব করি। আস্তে আস্তে লেপ থেকে মাথাটা বের করে যা দেখলাম তা দেখে আমার সারা গা শিউরে উঠলো।

ঘাড় থেকে পিঠের নীচ দিকে একটা ঠান্ডা কিছু তরঙ্গ বয়ে গেলো। আমি শোয়া থেকে লাফিয়ে বিছানায় বসে পড়লাম। গায়ে আমার লেপ দিয়ে জড়ানো। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। হাত পা কাঁপছে।

দেখলাম, একটা মেয়ে বসে আছে আমার খাটের একটা দিকে। যেদিকে আমি পা দিয়ে শুই আমি। মেয়েটার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না। কারণ তার চুল এমন ভাবে মাথার তিনপাশ দিয়ে পড়ে আছে যে মুখটা ঢেকে আছে। মেয়েটা যে ড্রেস পরে আছে সেটা থেকে হালকা আলো বের হচ্ছিল সেটাতে মেয়েটাকে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম।

এবার সে তার মাথাটি বাম পাশে ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকায়। মেয়েটির চেহারা মোটেই ভয়ংকর ছিল না। খুবই শান্ত টাইপের। চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল আমার চেয়ে বয়সে অল্প কিছু বড় হবে হয়ত। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে আর বলে "আমাকে ভয় পাচ্ছো কেন তুমি? আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই।

আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না। " কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছিল না। যত দোয়া জানা ছিল সেগুলো পড়ছিলাম কিন্তু সব উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছিল। আবারো সে বলল, "আমি তোমাকে সাহায্য করবো, সবসময় সবসময়, সবসময়। কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

" সে তিন বার "সবসময়" শব্দটা উচ্চারণ করল। আর বললো, "সামনের পরীক্ষায় তুমি বিপদে পড়বে, তোমার খুব কাছের লোক তোমাকে বিপদে ফেলবে। এখন চোখবন্ধ করে শুয়ে পড়ো। " আমি তাড়াতাড়ি লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটু পরে সাহস করে লেপ থেকে মাথা বের করে দেখলাম যে ঘরে কেউ নেই।

আর ঘরে সেই গন্ধটাও আর নেই। আমি উঠে লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম। সারারাত খুব ভয় লাগছিল। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছিলাম না। পরদিন সকালে যথারীতি পরীক্ষা দিতে গেলাম।

পরীক্ষার সময় আমার আর অতটা খেয়াল ছিল না গতকালের কথা। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ পাশের একটি ছেলে আমার পায়ের কাছে একদলা কাগজ ফেলে। মানে, সে নকল করে আমার পায়ের কাছে ফেলে দিয়েছে। আর ঠিক ঐ মূহুর্তে একজন স্যার সেটা দেখে ফেলে। আমি মনে করি স্যার আমাকে সন্দেহ করেছেন।

ব্যাপারটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী লজ্জার। কারণ ছাত্রজীবনে আমি কখনও এমন কাজ করিনি। স্যারদের কাছে আমার একটা সুনাম ছিল ভালো ছাত্র বলে। কিন্তু স্যার সরাসরি ঐ পাশের ছেলেটিকে চার্জ করে। তাকে পরীক্ষাহল থেকে বহিষ্কার করতে চায়।

তখন সে উত্তর দেয় যে, সে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এই কাজটি করেছিল। স্যার তাকে হলের মধ্যেই খুবই মারে আর শাস্তিসরূপ আধাঘন্টার জন্য খাতা কেড়ে নেয়। আমার মনে পড়ে তার আগের দিনের কথা। কিভাবে এই ঘটনাটা ঐ মেয়েটার বলা কথার সাথে মিলে গেলো তা আমি বুঝতে পারি নাই। এটা আমার কাছে একটা রহস্য হয়ে আছে এখনও।

[পাঠক/পাঠিকার উপরে এই পোষ্টের বিষয়বস্তু বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের ব্যাপারে কোন চাপ নেই] ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।