আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থনৈতিক মুক্তি ১ম পর্ব

বিগত পাচ পর্বের " মুক্তিযোদ্ধার চোখে সংবিধান সমস্যা-------) তথা ১৯৭২ এর সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন" লেখায় সমাজে সোসিও-পলিটিকাল ক্ষমতা গণতন্ত্রায়নের কথা বলা হয়েছে। বর্তমান লেখায় সোসিও-ইকোনমিক ক্ষমত গণতন্ত্রায়নের বিষয় বর্ণনা করা হবে যা অর্থনৈতিক মুক্তির পথ। " আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি; অর্থনৈতিক মুক্তি পাইনি" কথাগুলো বাংলাদেশে বহুল উচ্চারিত। তবে অর্থনৈতিক মুক্তি কিভাবে পাওয়া যাবে সে বিষয়ে বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন মত দেখা যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশে যে সকল মতবাদ আছে তা হল-- ১।

ধনতান্ত্রিক মুক্তবাজার ব্যবস্থাঃ- অনিয়ন্ত্রিত, মুক্ত ও স্বাধীন ব্যবস্থা যাকে লেজেফেয়ার কেপিটালিজম বলা হয়। এই অর্থ ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট নিম্নরূপ- (ক) সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্পকারখানা, খামার ইত্যাদি উতপাদনের উপায় সমূহের ব্যক্তিমালিকানা থাকবে। (খ) প্রত্যেকে নিজস্ব স্বার্থ দ্বারা অনুপ্রাণিত হবে এবং বিনিয়োগ, উতপাদন সহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং তাদের আয় সর্বোচ্চ করা্র অবাধ চেষ্টা করতে পারবে। (গ) ব্যক্তিগত পছন্দের অগ্রাধিকার ও সিদ্ধান্ত গ্রহনকে বাজার ব্যবস্থা দ্বারা যোগসূত্র ও সমন্বয় করা হবে। (ঘ) পণ্য ও সেবা উতপাদন এবং উতপাদনের উপায় বা রিসোর্স সমূহের সরবরাহ হবে প্রতিযোগিতা মূলোক বাজার ব্যবস্থায়।

বহু স্বাধীন ক্রেতা ও বিক্রেতা মুক্ত বাজার থেকে প্রতিযোগিতা মূলোক মূল্যে উতপাদনের রিসোর্স সমুহ সংগ্রহ করবে এবং পণ্য ও সেবা উতপাদনের সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে গ্রহণ করবে। (ঙ) বিনিয়োগ, উতপাদন,বাজারজাত প্রভৃতি আর্থিক কাজে সরকার বা রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সরকার বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষা এবং মুক্ত বাজার ব্যবস্থা কার্যকরী করা এবং সে সম্পর্কে নীতি ও আইন তৈরী করা। (চ) ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার উদ্দেশ্য হবে জনগণের জীবনযাপনের মান উন্নয়ন এবং ওয়েলফেয়ার ইকোনমি ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করা। বিভিন্ন কারণে সমাজে যারা অসহায় ও দরিদ্র অবস্থায় পতিত হবে তাদের কল্যাণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ হবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

২। কেন্দ্রীয় পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত অর্থব্যবস্থা যাকে কমান্ড ইকোনমি বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলে। এই ব্যবস্থার বৈশিষ্ট হল-- (ক) সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্পকারখানা, খামার ইত্যাদি উতপাদনের উপায় সমূহের ব্যক্তিমালিকানা থাকবে না। (খ) সকল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত সামাজিক চাহিদা অনুসারে কেন্দ্রীয়ভাবে গৃহীত হবে। উতপাদনের উপায় ও রিসোর্স সমূহের সরবরাহ ও বন্টন কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা মোতাবেক হবে।

(গ) উতপাদনের উপায় সমূহের ব্যবহার এবং উতপাদন ব্যবস্থার সংগঠন, বন্টন সবই কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা বোর্ডের মাধ্যমে করা হবে। (ঘ) ব্যবসা বাণিজ্য, খামার, শিল্পকারখানায় উতপাদন রাষ্ট্রীয় নির্দেশে পরিচালিত হবে। (ঙ) উতপাদন টার্গেট নির্ধারণ ও শ্রমিকদের কাজ ও পেশা নির্ধারণ সরকারী পরিকল্পনা মোতাবেক করা হবে। (চ) বাজার ব্যবস্থা ও বাজার মূল্য বা দর সরকারী নিয়ন্ত্রন ও নির্ধারণে পরিচালিত হবে। (ছ) কমুনিজম বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার উদ্দেশ্য হবে জনগণের জীবনযাপনের মান উন্নয়ন এবং শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

৩। মিশ্র অর্থব্যবস্থা ঃ বৃহত পুজি ও শিল্পমালিক, ব্যবসায়ী প্রভৃতিদের মনপলি; আমদানি, রপ্তানি, মজুতদারি, দ্রব্য মূল্য ইত্যাদি সমস্যা মোকাবেলা করতে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের আবশ্যক হয়; কিছু জরুরি পণ্য ও সেবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উতপাদন করার প্রয়োজন হয়; দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ, সামাজিক খাত মুনফা কম অথচ জরুরী এমন সব খাতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহন করতে হয়। আবার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালিকানায় ক্ষুদ্র ব্যবসা, উতপাদন ইত্যাদি পরিচালনার প্রয়োজন হয়; কারণ বৃহত বেসিক শিল্প, অত্যাধুনি প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ব্যতীত ছোটখাট পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সমস্যা সঙ্কুল হয়। অতএব ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারী উদ্যোগ ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেয়ার ব্যবস্থাকে মিশ্র ব্যবস্থা বলা হয়। ৪।

ইসলামি অর্থব্যবস্থাঃ- বাংলাদেশে বেশ কিছুকাল থেকে ব্যাংক, বীমা, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামের পূর্বে "ইসলামি" শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে; বিশেষ করে ইসলামি ব্যাংকিং বিষয়ে বিশেষ প্রচার করা হয়। তবে সুদ, ঋণ, ইত্যাদি শব্দের আরবী নাম এবং ব্যবস্থাপনার ব্যাখ্যা ব্যতীত বাকি সব আর্থিক কর্মকান্ড ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার ন্যায় পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে উক্ত অর্থব্যবস্থা গুলোর নির্য্যাস হিসেবে যে অর্থব্যবস্থা চালু আছে সেটা " শোষণ মূলক" অর্থব্যবস্থা। সমাজে শোষণের প্রকারগুলোর উল্লেখ করলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। শ্রম না দিয়ে বা উপযুক্ত পরিমাণ শ্রম না দিয়ে ভোগ করার নাম শোষণ।

শোষণের প্রকার ঃ- ১। মালিকানাবলে শোষণঃ-(ক) প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা দখল ও তার থেকে খাজনা, লিজ,ভাড়া বাবদ অথবা শ্রমিক খাটিয়ে আয় করা এবং নানা রকম খামারে শ্রমিকদের ন্যায্য মুজুরি না দিয়ে উদবৃত্বমূল্য আত্মসাত করা। (খ) উতপাদনের উপায়ের মালিকানা যেমন ভূমি, শিল্পকারখানা, যন্ত্রপাতি, ক্যাপিটাল গুডস, পরিবহন যান, তাত, মাছধরার জাল ট্রলার ইতাদি মালিকানা ভাড়া; কারখানা, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মুজুরী থেকে উদবৃত্বমূল্য আত্মসাত করা। (গ) অর্থের মালিকানা যেমন ব্যাংক, বীমা,শেয়ার মার্কেট, বন্ড ইত্যাদিতে অর্থ বিনিয়োগ করে সুদ, লাভ আয় করা। ২।

রাষ্ট্রনীতি ও রাষ্ট্র ক্ষমতাবলে শোষণঃ-- (ক) দাস সমাজে প্রভুরা দাসদের শ্রমার্জিত সবকিছু ভোগ করতো; (খ) সামন্তবাদী সমাজে রাজস্ব বা খাজনা বাবদ সামন্ত প্রভুরা সার্ফদের শ্রমার্জিত ফসলের বেশীরভাগ নিত;(গ) বর্তমানে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নানা রকম কর, রাজস্ব, শুল্ক ইত্যাদি আরোপ করে যার উপর জনগণের বিশেষ কোন নিয়ন্ত্রন থাকে না। সংসদে বাজেট পাশের মাধ্যমে সব বৈধ করা যেখানে জনগণের কোন অংশগ্রহন থাকে না। তাছাড়া আছে ভূমি অধিগ্রহন, খাসজমি ও জলাশয় লিজ, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যবসা ও শিল্পকারখানা প্রভৃতির মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতাধারীরা অর্থসম্পদের মালিক হয়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।