আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময়টা ভাল। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়

চারপাশে আত্মমুগ্ধ আদিমতাবোধ, আর গ্রন্থিবদ্ধ চিন্তা; সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজি... দেশে দানবীরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। লক্ষণ থেকে অনুমিত হচ্ছে নির্বাচনের সময় উপস্থিত। সময়টা বেশ ভাল, নেতারা ধর্মকর্মে মন দেন; দান-খয়রাত করেন। এমন কি, এ সময়ে উন্নয়ণমূলক প্রকল্পও আমাদের মতো সাধারণ জনগণের চোখে পড়ে। বাড়ির সামনে কাঁচা রাস্তাটি পাকা হয়ে যায় হঠাৎ, দু-এক বছরের গ্যারান্টিও পাওয়া যায়।

পাড়ার ক্লাবে টেলিভিশন, ক্যরাম ছাড়াও বিভিন্ন খেলাধুলা ও বিনোদন সামগ্রী এসে জমা হয়। এ সময়ে নেতা ও জনগণের মধ্যে ভালবাসায় ভাসাভাসি অবস্থা। কারো কারো নামের সামনে আলহাজ্জ যুক্ত হয়, কপালে কালো দাগ পড়ে, হাতে তসবি, মাথায় টুপি আর মুখে আল্লাহর নাম। সময়টা ভাল। দেশ প্রেমিকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

এলাকার বড়ভাই, পাড়ার সন্ত্রাসীরা এখন সচেতন দেশ প্রেমিক। এক দিনমুজুরের কন্যাকে ধর্ষনের পর পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল যাকে, শোনাগেল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। চোরাকারবারী করে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন চৌধুরী সাহেব, জানা গেল তার দানকৃত টাকায় মসজিদ এক্সটেনশন করা হচ্ছে। একদিন জুম্মাবারে তিনি বেশ সুন্দর বক্তৃতা দিলেন, 'ঈমাণদারদের জন্য তার গরিবালয়ের দরজা সর্বদাই খোলা'। আমাদের খুব সুখ হয় এসব শুনে।

স্বপ্ন দেখি একজন যোগ্য ব্যক্তিকে, যে আমাদের উন্নয়নের জোয়ারে ভসিয়ে দেবে। স্বপ্ন দেখি নেতার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমার চাকরি হয়েছে, বাবা ঘুষ ছাড়াই পেনশনের টাকা পেয়েছেন, বোনের বিয়ে হয়েছে। নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি শুনে মনের ভেতর স্বপ্নটা আশার সৃষ্টি করে। কিন্তু যে আশা বুকে করে ভোটকেন্দ্রে যাই, সে আশা আশাই থেকে যায় বছরের পর বছর। নির্বাচনের পরে, বন্ধুরা তখন শত্রু হয়ে যায়, সমাজকর্মী সন্ত্রাসী হয়ে যায়।

নেতারা তখন পশ্চিম দিকে পিছলেও পড়ে না; মাথার টুপি, হাতের তসবি আর দেখতে পাওয়া যায় না। কথা বলে অশ্লীল ইংগিতে। চৌধুরী সাহেবের দরজাও বন্ধ হয়ে যায়। নেতার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমার চাকরি হয় না, বাবা ঘুষ ছাড়া পেনশন তুলতে পারেন না, বোনের বিয়ে হয় না, তাকে ঘরে আটকিয়ে রাখি, সন্ত্রাসী এবং পুলিশের ভয়ে। এখন সময়টা অত্যান্ত ভাল।

আন্দোলন আন্দোলন খেলা বেশ জমে উঠেছে, ছোটবেলার চোর-পুলিশ খেলার মতো অনেকটা। পার্থক্যটা এই যে, এখানে পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে হয়, গুলি খেতে হয়, লাশ হতে হয়। বাস্তবতা হলো, ছোটবেলায় যে মহড়া দিয়েছিলাম তার সত্যিকার ব্যবহার করা হলো। এখন আমাদের ভাল লাগছে। নেতারা কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান, আরও একবার সুযোগ চান সেবা করার।

আমরা ভুলে যাই অতীতের কথা। এর কারণ আছে, আমাদের কিছু আসে যায় না, কে এলো আর কে গেল আমরা ভাবি না। যেই রাজা হোক না কেন, আমরা তো প্রজাই থাকবো; রাজারা মাঝে মাঝে নিজেকে প্রজার সেবক বলে জাহির করেন, সে তাদের বদন্যতা। বর্তমান সময়টা ভাল। প্রজা হয়েও এসময়ে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় ।

সমাপ্ত  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।