আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাজার সমাচার----২ লালন সাইজির মানব ধর্ম



জীবন থেকে_________ গল্প মনে করলে ভুল করবেন ২০০৩সালে তানভির মোকাম্মেল যখন 'লালন' ছবিটি নির্মান করছিলেন তখন আমাদের এলাকার রোমানা (ছদ্দনাম) খানম নামে কজন শিল্পির গান ছিল ২টা। রোমানা খানমের সাথে পরিচয় ঢাকাতে এসেই এক বন্ধুর বড় বাইয়ের মাধ্যমে। চাকুরী করেন এলজিইডিতে, আমার উপজেলাতেও নাকি তার পোষ্টিং ছিল বছর দুয়েক। দুই সন্তানের জননীও বটে। প্রথমে ভাবী বলতাম, তার পর বলল তুই তো আমাদের এলাকার, আপা বলিস।

বললাম আপা, তো আপা আর দুলাভাইয়ের সাথে অনেক জায়গাতে ঘুরাঘুরি করেছি, পরিচিত হয়ে উঠেছি মিডিয়ার সাথে। মিডিয়াজ্ঞান মূলত এখানথেকেই শুরু। তো আপার বর্ননা না দিলে আপা যদি দেখে এই লেখা তা হলে মাইন্ড খাইতে পারে। সু-স্বাস্থ্যের অধিকারিনী ও ফিট শরীরের অধিকারীনি। লম্বা কেশ যাতে বৈরগী সাজ মানাতো ভালই।

আপার সাথে বেলী রোডের ধ্বনি স্টুডিওতে গিয়েছি অনেক বার। অনেক শিল্পীর ভিরে মূলত রাইসুল ইসলাম আসাদকে দেখার জন্য যাতায়াত ছিল। ছোট বেলা থেকেই উনার অভিনয় খুব ভাল লাগত, তার উপর সুন্দর দাঁড়ি রেখেছিলেন, চিত্র লেখাগুহর সাধারণ পরিপাটি পোষাকও নজর কারত। এভাবেই আপার সাথে ঘনিষ্ট হয়ে উঠি। আপরা ছিলেন লালনের 'মানব ধর্মালম্বী' (লালন ভক্তরা নিজেদের মানব ধর্মালম্বী বলে পরিচয় দেয়)।

তো আপার মা তো আরেক সন্নাসী। ঘনিষ্টতার বিকট রূপ ধারন করল আপার মা ও আপার বোনেরা যখন আপার মানিকগঞ্জের বাসায় আসলেন। আপ্যায়িত ছিলাম আমিও। উনার আসার পর থেকেই খাতির যত্ন বেড়ে গেল আমার। আপার বয়স আমার থেকে ৪বছর বেশী জানতাম কিন্তু কমাতে কমাতে দেখী আমার সমবয়ী বা বন্ধু হতে চায়।

(আমি খুব স্বল্পভাষী ও নরম সরম স্বভাবের হলেও মানুষের সাথে আলাপ করলে তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারি অতি সহজেই তার বডি ল্যাংগুজে ও নেচার দেখে কারণ আমি যার সাথেই কথা বলি তার বডি ল্যাংগুয়েজটা অনেক বেশী খেয়াল করে থাকি। আর মানুষের মনের উদ্দেশ্য শরীরের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে যায়। ) আমি সুযোগ বুঝে আমার বয়স ১বছর বাড়িয়ে দিতেই বলল আরে আমিও তো একই বয়সের। তোর কাছে মিথ্যে বলেছিলাম, আমরা তো বন্ধু। হ বন্ধু।

তো বন্ধু আপার সাথে ঘুরতে গিয়েছি অনেক জায়গাতেই। দুলাভাই সাংবাদিক নামের ভেগাবন, সব-সময় আপার সাথে সাথেই থাকতেন। আপা সুযোগ বুঝে একদিন বললেন-- আমি বিয়ে করছি না কেন, ইত্যাদি ইত্যাদি____________________ শেষ বলল আমর বোনের মেয়ে দারুন সুন্দরী ইত্যাদি ইত্যাদি, এখনো সুয়ের খোচা পরেনাই এইটা আমি তোর গ্যারান্টি দিতে পারি তুই দেখতে পারিস তবে শর্ত হচ্ছে তোকে অবশ্যই আমাদের ধর্মালম্বী হতে হবে। আমি রসিকতা করে বললাম দেখার আগে হব না পরে। বলল না-- আমরা আমাদের মেয়েদের অন্যধর্মালম্বীদের কাছে দেখায় না বিয়ে তো প্রশ্নই ওঠে না।

আমি আগে বিষয়টি জানতে চাইলাম। আর এক বন্ধুকে মোবাইল করে ওর ঠিকানা দিয়ে বললাম ওদের জন্ম পরিচয় ইত্যাদি জানতে। যা হোক পরিচয় যা পেলাম তা দিয়ে মানুষকে ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়। মাজারে যেমন গুরুজি থাকে এখানে তেমন 'সাইজি'। এখানেও দাওয়াত পেলাম।

আগেই বলা হল সাইজি আসবেন, আসবেন উনার মাতাসহ বড় বোন। শুনতে পেলাম উনার মাতাজির অনেক গুনের কথা। সাত টাকা মিনিট মোবাইলেরযুগে ফোন করে জানাতেন। আগ্রহের প্রহর শেষে একদিন সেই মহাক্ষন। পূর্বের অভিজ্ঞতায় আলোড়ন সৃষ্টি হল কি ঘটে দেখার জন্য।

বাসায় উপস্থিত হয়েই দেখি সাইজি হাজির- মুখে দাড়ি (ছাগল দাড়ি/দুখিত আমি এর ভাল শব্দ জানি না)। পরিপাটি, স্লিম সাদা ধুতি, পাঞ্জাবি, হাতে একতাড়া। সাইজির আসন সেই গুরুজির আসনের মতই। গঞ্জিকার গন্ধ তখও যাই নাই শরীর থেকে। এসেই স্নান করেছেন সাইজি।

আমি সহ আমন্ত্রিত অতিথিও আছেন কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে শুরু হল লালন সংগীত। সবাই গাইলেন যার যার মত। গানের ফাকে বাশিতে (গঞ্জিকাকে ওদের ভাসায় বাশি বলে) টান দিলেন সবাই। বাশিতে টান না দিলে নাকি আদ্ধাতিক জগতে যাওয়া যায় না।

আমি তো একটান দিয়েই মরার উপক্রম। যা হোক বিড়ি খাওয়া অভিজ্ঞতা ছিল তাই স্বাবাভিক হলাম কিছু সময়ের মাঝেই। গান বাজনা শেষ শুরু হল বয়ান (বয়ান লিখতে গেলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে)। সবশেষে পায়েস জাতীয় তবারক সরবরাহ করা হল। তবারক সরবরাহের সময় সবাই মনে হল খুশিতে মাতোয়ারা সাইজিকে জাপটে ধরে তবারক খাওয়ালেন আপা, সাইজি জাপটে ধরে খাওয়ালেন আপার বড় বোনকে, সন্নাসী মাতা কি যেন পড়ে ফুদিয়ে তবারক দিলেন ভাইজান কে।

অশ্লীলতার ছড়াছড়িতে উতপ্ত যৌবন নাড়া দেবার উপক্রম হবে যেকারো। এখানেও আগের মতই সমস্যা হল। কোথায় ঘুমাব। সর্বমোট তিনটা রুম। ২টা খাট।

কত্তা মসাই মদ্দপায়ী উনি ঘুমাবেন খাটহীন মেঝেতে উনার রুমে। আমি পেলাম ১টা খাট। সাইজি কে আমার সাথে শোবার জন্য বলাই উনি মেঝেতে থাকবেন উনার আসনে বললেন। আজ আমার ইচ্ছা ছিল কি ঘটে দেখার কিন্তু শেষে বিশেষ পিড়াপিরি জন্য আবারো স্পেশাল তবারক খেলাম যা কিনা সাইজি খেয়েছেন। তাতেই মাথায় ঝিম ধরতে লাগল।

বলা বাহুলা তবারক সরবরাহ করা হল এককাপড় পরে সেলাই ছাড়া, আলো নিভিয়ে কি যেন আরেকটি সংগীত পরিবেশন করলেন। তার শোবার আয়েজন থেকে শুরু করে সবই হল আলো নিভিয়ে। দুই বন ঘুমালেন সাইজির দুই পাশে আমি খাটে। আর উনার মা সন্নাসী তাই উনি বস্ত্রহীন ঘুমান রাতে শুধু গায়ের উপর তার ধুতি ছড়ানো থাকে উনার জন্য একটি রুম বরাদ্দ হল। সকালে আজও দেরি করে ফেলাম।

সবাই গোসল সেড়ে বাসি সেবনের পর গান বাজনা করছেন। সন্নাসী মাতা ও দুই বোনের পড়নেই সাদা ধুতী টাইপের শাড়ী মাত্র। আমার আপার পড়নে সাদা শাড়ী কিন্তু ঝরজেট টইপের যাতে উনার শরীরের লোমকুপও দৃশ্যমান। সকালে আরো কিছু সময় বয়ান দিলেন, দাওয়াত দিলেন লালন মেলার ও উনার পিয়ারা তলার আসরে। দাওয়াত গ্রহণ করে সবশেষে আমি শুক্রবার বিকেলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম আরো কিছু কিত্তিকলাপ দেখে।

______________ পিয়ারা তলার ইতিহাস আগামি কাল বা পরশু শোনাব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.