আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাজার অতি লাভজনক এক ব্যবসার নাম- ৭

বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !

বায়েজীদ বোস্তামীর মাজার ভ্রমণ প্রসঙ্গে br /> ******************************** সবে কৈশোর পেরিয়েছি । বয়স ১৪ হবে । ৬ষ্ঠ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা মনমত হলোনা । বায়েজীদ বোস্তামীর দারস্ত হলাম,(কাছেই থাকতাম) বেইজ্জতি এড়ানোর আশায় । বেইজ্জতি মানে ডিমোশন ।

ছয় ক্লাসে রোল নং- ছিল ২, এবার যদি বেশী পিছিয়ে পড়ি 'আব্বাহুজুর' কর্তৃক ভর্ত্সনা পাবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না । মৃত পীরের অনেক নাম-ডাক । সেইখানে নাকি কি একটা গাছ আছে, ইচ্ছাপূরণ গাছ । চোখ মুদে সুতা বেঁধে দিলে ইচ্ছাপূর্ণ হয় । অর্থাত্ত সুতা বাঁধার সময় মনে-মনে একটা জিনিষ চায়বেন,একাগ্রতার সাথে চায়বেন, সে জিনিষ প্রাপ্ত হওয়া আপনার ঠেকায় কে ! তবে, এ-ব্যাপারে কিঞ্চিত কড়াকড়ি আরোপীত আছে ।

একাধিক জিনিষ চাওয়া যাবেনা । তাহলে বাবা মাইন্ড খাইতে পারেন ! যাই হোক, আশায় বুক বেঁধে গেলাম বাবার দরবারে... ! 'কেউ ফেরেনা খালি হাতে...বাবার দরবার হতে !'-বাবার (খাদেমদের) ব্যবসার স্বার্থে এ-জাতীয় কথা খুব চালু আছে । 'এই অধমেরও খালি হাতে ফেরার বিন্ধু পরিমাণ ইচ্ছাও নাই। ' বায়েজীদ বোস্তামীর মাজারের বিশাল গেট দিয়ে নিজেকে গলিয়ে দিলাম । এখানে এক আচানক ব্যাপার অপেক্ষা করছিল আমার জন্য ।

মাজার গেটের দু'পাশে সারিবদ্ধ ক্ষুদে দোকানীরা তাদের বত্রিশ দন্ত বিকশীত করে অত্যন্ত পরিচিত ভঙ্গিতে আমাকে ডাকতে লাগলো । তাদের ব্যবহারও মাশাল্লাহ; বিনয়ী । 'এই খোকা,শোনো ! এই যে এদিকে আসো !' একসাথে অনেকেই ডাকছে । ভ্যাবচ্যকা খেয়ে গেলাম ! হোয়াটস রং ! সবাই ডাকছে কেন ! বুকে বল নিয়ে গেলাম একজনের কাছে,চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি ! তিনি বয়ান করলেন,-'বাবার কাছে যাবা ! উপহার নিয়ে যাবা না ?' বলতে বলতে পলিথিন ব্যাগে ভরে দিলেন,-কলা,পাউরুটি,মোমবাতি,আগরবাতি ! 'এগুলা কেন ?' জিজ্ঞেস করলাম । 'কলা পাউরুটি মাদারি-গজারিরে খাওয়াবা, আর মোমবাতি আগরবাতি বাবার জন্য উপহার ! অনেক সওয়াব হবে ।

' বিল পরিশোধ করলাম,কিন্ত খুশী হতে পারলাম না পকেট খালি হয়ে গেল বলে (নতুন লোকদের ঠকানোর এই ধান্ধাটা ওখানে জমজমাট ) । খানিক ভেতরে যেতেই কলা-পাউরুটি খাওয়া মাদারি-গজারি (ওরফে কাছিম ওরফে কচ্ছপ)-দের দর্শন পেলাম । বিশাল পুকুরে ওনারা সুইমিং করছেন । ওনাদের সহযাত্রী হিসেবে আছে বড়-বড় তালাপিয়া মাছ (পরে জেনেছি,এই বড়-বড় মাছগুলো রাতের আঁধারে তুলে খাদেমরা স্থানীয় মাছ বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেন ) । কাছিম মহাশয়দের দেখে মনে,মনে বললাম- 'ওনাদের জন্য খাবার কিনে টাকা নষ্ট করার মানে হয় ?' যাই হোক,সবাই কচ্ছপদের খাওয়াচ্ছে ।

আমিও পাউরুটি গুলো গুড়ো করে ছুঁড়ে দিলাম পুকুরে । এক ঝাঁক তালাপিয়া টুপ টুপ ওগুলো গিলতে লাগল । দোকানী এক ধরণের কাঠিও দিয়েছিল, সেই কাঠিতে কলা গেঁথে আমিও কাছিমদের খাওয়ালাম । দেখলাম,একজন মহিলা কাছিমের গায়ে জমা ময়লা সমেত এক আঁজলা পানি নিয়ে তার বাচ্চাকে খাওয়ালো । বাচ্চার নাকি পেটে অসুখ ।

ময়লা এই পানিতে নাকি তার পেটে অসুখ সেরে যাবে ! সুবহানাল্লাহ ! লোকজনকে বলাবলি করতে শুনলাম,'কিভাবে জ্বিনেরা মাদারি-গজারি হইয়া উঠিল!' জ্বিনেদের মাদারি-গজারি হয়ে ওঠবার কাহিনী br /> ************************************ সুলতান বায়েজীদ বোস্তামী যখন এই টিলা পাহাড়ে এসে আস্তানা গাড়লেন,তখন এখানে ছিল গহীন জঙ্গল । সে জঙ্গলের একদল দুষ্ট জ্বিন প্রায়শ তাঁর ধ্যান-মগ্নতায় বিগ্ন ঘটাতো । একরাতে তিনি জ্বিনদের অনুরোধ করলেন,এই উত্পাত বন্ধ করতে । কিন্ত পাজী জ্বিনেরা সুলতানের কথা শুনলা না । সুলতান অত্যন্ত দুঃখীত হয়ে তাদের অভিশাফ দিলেন ।

অভিশপ্ত জ্বিনেরা কাছিমে পরিণত হলো ! সুলতান তাদের এই পুরনো পুকুরে আবদ্ধ করলেন । এ-ই হচ্ছে মাদারি-গজারির সংক্ষিত কাহিনী । কিন্তু কাছিম না হয়ে 'মাদারি-গজারি' নামকরণ কেন হলো সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি । এমনকি এই কাহিনীর সত্যতার নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারেন নি । সবার এক কথা-'হ এরকমই শুনছি !' (আগামী পর্বে সমাপ‌্য..) পুনশ্চ:- এই ব্লগে একজন 'জ্বিনের বাদশা' আছেন ।

বায়েজীদ বোস্তামীর জ্বিনেদের এই কাহিনী সম্পর্কে তাঁহার সানুনয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাইতেছে !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.