আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাজার অতি লাভজনক এক ব্যবসার নাম- ৮

বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !

তালাপিয়া আর মাদারি-গজারির ডুব সাতার দেখা শেষে এইবার বাবার মূল দরবারে (মাজারে) আগোয়ান হলাম । টিলা পাহাড়ের উপর বেশ ঝেঁকে বসত গেড়েছেন সুলতান বায়েজীদ বোস্তামী । ঝেঁকে বসত গড়বেনইনাবা কেন ! ঝেঁকে বসত না গাড়লে কি আর আজ খাদেম (ওরফে সেবায়াতদের) গাড়ি, বাড়ী, নারী (একাধিক বিবি)-র এরকম রমরমা চাকচিক্য হতো (যদিও খাদেমরা ময়লা কাপড়ে ভক ধরে থাকতে পছন্দ করে )! সুলতান বায়েজীদ বোস্তামী যদিওবা ইরাকের বোস্তাম নগরে দেহত্যাগ করে শান্তিতে যুগাতিপাত করছেন,তবুও কেবলমাত্র খাদেমদের ইচ্ছায় আর ব্যবসার খাতিরে বেচারার ভূয়া সত্বা গড়ে উঠেছে এখানে ! যাই হোক,উপরে উঠতে সিঁড়ি বাইতে গেলাম,অমনি পেছন থেকে ডাক-'চোখত্‌ ন'দেখরনা (চোখে দেখ না ) ! জোতা লই উডন মানা (জুতা নিয়ে উঠা নিষেধ ) ! ফিরে দেখলাম, একজন সেবায়েত আমার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছেন । 'কি করিতে হইবে ?' শুধালাম । এবার ভাষা খানিকটা কেতাদুরস্ত করে বললেন তিনি-'একানে দুইটাকা দিয়ে জোতা জমা রেকে যাও !' তথাস্তু ! দু'টাকাতে একখানা টোকেন নিয়ে জুতা জমা রাখলাম ।

পরবর্তীতে দেখেছি,কেউ যদি জুতা জমা রাখতে অপরগতা জানিয়ে নিজ দায়িত্বে লুকিয়ে রেখে যায়,খাদেমদের সিন্ডিকেট চোরেরা সেগুলো 'নেই' করে দেয় । উপরে বায়েজীদ বোস্তামীর তথাকথিত মাজারের ভেতর আগরবাতির ঘ্রাণে দম বন্ধ হবার যোগার । অন্ধকার দালানের ভেতর অনেকগুলো মোমবাতির মৃদু আলো জ্বলছে । রহস্যপূর্ণ পরিবেশে সারি সারি নারী-পুরুষ বায়েজীদ বোস্তামীর কথিত কবর ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে । কবর সামনে রেখে সেজদায় পড়ে আছে কেউ কেউ ! যদিও দালানের মোটা পিলারগুলাতে সুন্দর করে লেখা আছে-"মাজারে সেজদা করা হারাম !' কিন্তু অবস্থা এমন যে,আপাতত সেই হারামের দিকে নজর দেবার সময় কারো নেই ! মাজার ঘরের পাশেই সেই ইচ্ছাবৃক্ষ ।

হুলস্থুল কারবার দেখলাম ! বৃক্ষের গায়ে তিল ঠাঁই আর নাহিরে অবস্থা ! এক সুতার লেজে শত সুতা বাঁধা ! লাল লম্বামত একখানা সুতা যোগার করে এই অধমও চোখ মুদে অন্য একখানা সুতার লেজে দিলাম সুতা বেঁধে । মনে-মনে বললাম,-'চলতি বছরের দুই রোল নাম্বারটা যেন অটুট থাকে,এইটুকুন ক্ষুদ্র চাওয়া...!' সুতা বেঁধে আরো খানিকটা সামনে এগিয়ে গেলাম । এখানে কুন্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উড়ছে । ধুপ আর শুকনো পাতা পুঁড়িয়ে ওড়ানো ধোঁয়া । অন্যান্য দর্শনার্থীদের আলাপ থেকে জানা গেল, এটা সে জায়গা যেখানে শীতের রাতে এইভাবে আগুন জ্বালিয়ে ওম নিতেন সুলতান বায়েজীদ ।

সে স্মৃতি জাগরুক রাখতেই নিয়মিত এই ধোঁয়াদের ওড়াওড়ি ! সুধী পাঠককূলের অনেকের হয়তো জানতে ইচ্ছে করছে,আমার সুতা বাঁধার ফলাফল কি হলো ? 'সেই বছর তিন মাত্রা ডিমোশন হইয়া,দুই থেকে পাঁচ-এ গিয়া ঠেকিয়াছিলাম !' আপনারা মনে 'খুন্তা' নিবেন না ! হতে পারে,আমার বিশ্বাসে ঘাটতি ছিল বলেই....!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.