আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থ বুঝে নাম রাখুন ও সঠিক নামে ডাকুন



এ পৃথিবীতে অবস্থিত সকল প্রকার বস্তুর একটা নাম আছে। নামবিহীন কোন কিছু কল্পনা করা যায় না – কঠিন, তরল বা বায়বীয় যাই হোক না কেন। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। মানব শিশুর জন্মের পরই তার একটা নাম রাখা হয়। দেখা গিয়েছে যে একজন মানুষের একাধিক নাম থাকে।

একজন মুসলমান অবশ্যই আল্লাহপাকের মনোনিত জীবন পদ্ধতিতে চলবে। মুসলমানের জীবন যাপন পদ্ধতিই জীব জগতে তার আলাদা স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্টের প্রমানবাহী। মুসলিম সমাজে জন্মানো প্রত্যেক শিশুর নামকরনের বেলায় অর্থপূর্ণ এবং শ্রুতিমধুর নাম রাখা প্রতিটি অভিভাবকের একান্ত কর্তব্য। সুন্দর নাম রাখা মা-বাবার নিকট শিশুর প্রাপ্য অধিকার। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “পিতার উপর নবজাতকের হক হলো তার জন্য সুন্দর নাম রাখা” (মুসলিম)।

এখন এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে গিয়ে আমরা নিজের অজান্তেই কিছু ভুল করে ফেলছি। লক্ষ্য করা গিয়েছে যে অনেকেই সন্তানের নাম রাখার সময় আল্লাহতায়ালার পবিত্র নাম সমূহের সাথে মিলিয়ে রাখেন। যেমন-আব্দুল খালেক, রিয়াজ বিন খালেক ইত্যাদি। এখানে ‘খালেক’ নামটি আল্লাহতায়ালার পবিত্র নামসমূহের একটি। ‘খালেক’ নামের অর্থ হচ্ছে ‘স্রষ্টা’ এবং আল্লাহতায়ালাই এই নামের অধি্কারী হতে পারেন, অন্য কেউ হতে পারে না।

সেক্ষেত্রে একজন মুসলমানের নাম আব্দুল খালেক অর্থাৎ ‘স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তার চাকর বা বান্দা’ হওয়াটাই শ্রেয়। রিয়াজ বিন খালেক অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার পুত্র রিয়াজ হতে পারে না (নাউজুবিল্লাহ)। আবার আমরা নাম রাখলাম ঠিকই আব্দুল খালেক অথচ ডাকার সময় ডাকলাম ‘খালেক সাহেব’ বা ‘খালেক ভাই’। প্রতি উত্তরে যিনি আব্দুল খালেক তিনিও খালেক সাহেব বা ভাই বলে তাকে ডাক দেওয়ায় কথপোকথন চালিয়ে যান। কিন্তু কোনো ব্যক্তি কি ‘খালেক’ হওয়ার উপযোগী? কখনোই নয়।

আল-কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর দায়িত্ব গ্রহণ করেন”(সূরা জুমারঃ আয়াত ৬২)। “তারা কি আপনা-আপনিই সৃজিত হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা?” (সূরা আত-তুরঃ আয়াত-৩৫)। “তিনিই আল্লাহতায়ালা যিনি ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নাই। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন। তিনি পরম দয়ালু ও অসীম দাতা।

তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নাই। তিনিই একমাত্র মালিক,পবিত্র,শান্তি,নিরাপত্তাদাতা,আশ্রয়দাতা,পরাশক্তি, প্রতাপান্বিত ও মাহাত্মশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহতায়ালা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহতায়ালা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তারই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে।

তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়”(সূরা হাশরঃ আয়াত ২২-২৪)। তেমনিভাবে আমরা বলি রহমান(দয়াময়)সাহেব, মালেক (রাজা-বাদশা)সাহেব, কুদ্দস(অতিপাক পবিত্র)সাহেব, আজীজ (প্রভাবশালী) ভাই, রাজ্জাক (রিজিকদাতা) ভাই, হাফিজ (মহারক্ষক) সাহেব, হামীদ(প্রশংসার যোগ্য) সাহেব, কাইয়ুম (স্বয়ং প্রতিষ্ঠিত) ভাই, আহাদ(একক, অদ্বীতিয়)ভাই, সামাদ ( মুখাপেক্ষিহীন) ভাই, হাই (অমর) সাহেব, মিসেস রহমান, মিসেস মালেক ইত্যাদি (নাউজুবিল্লাহ)। অথচ আল্লাহতায়ালাই হলেন সবচেয়ে দয়াবান, পাক পবিত্র, রিজিকদাতা, অদ্বীতিয়, মুখাপেক্ষিহীন ও সকল প্রশংসার যোগ্য। কোনো ব্যক্তি এসব উপাধি গ্রহণ করতে পারে না। স্রষ্টা ও সৃষ্টি কখনো এক পর্যায়ে থাকে না।

আল্লাহতায়ালার সাথে শিরক করতে সব সময় নিষেধ করা হয়েছে। শিরক তাওহীদের বিপরীত দিক। মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালার একক সত্তায় এবং তাঁর গুনাবলীতে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করাকে শিরক বলে। এমনিভাবে আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বে ও মর্যাদা সম্পন্ন অন্য কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করাও শিরক। আল্লাহ ব্যতীত কারো দাসত্ব, আনুগত্য ও উপাসনা করা কিংবা তাঁর ইবাদতে অন্য কোনো শক্তি বা প্রাকৃতিক পদার্থকে শামিল করাও শিরক।

এটা অমার্জনীয় মহাপাপ। যাবতীয় শিরক থেকে আমাদের বেচে থাকতে হবে। তবেই আমরা মুক্তি পাবো পরকালে। আল-কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন- “নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা শেরেকি গুনাহ ক্ষমা করবেন না। এটা ব্যতীত অন্য সব গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন।

আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করলো, সে অতি কঠিন গুনাহে লিপ্ত হলো” (সূরা নিসাঃ আয়াত ৪৮)। “তারা কি এমন বস্তুকে শরিক করে যারা কিছুই সৃষ্টি করে না? বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট” (সূরা আরাফঃ আয়াত ১৯১)। “প্রশংসা জগত সমুহের প্রতিপালক, আল্লাহরই প্রাপ্য” (সূরা ফাতিহাঃ আয়াত ১)। বাবা-মায়েরও উচিত এমন নাম রাখা যাতে অন্য কেউ তার সন্তানের নাম বিকৃত করতে না পারে। অন্যকে গুনাহ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা আমাদের উচিত।

প্রতিদিন আল্লাহতায়ালার কাছে এই বলে দোয়া করা উচিত-“হে আল্লাহ! আমি জেনে বুঝে যে শিরক করি তা থেকে আমি তোমারই কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করি, আর না জেনে যে শিরক করি তা থেকেও মাফ চাই”। তাই কেউ যদি আল্লাহতায়ালার পবিত্র নামসমূহের সাথে মিলিয়ে নাম রাখেন তবে তাকে পূর্ণ নামেই ডাকা উচিত। অর্থাত খালেক ভাই না বলে আব্দুল খালেক বলে ডাকা উচিত এবং যাদের নাম ভুল আছে তা সংশোধন করে রাখা উচিত। এছাড়া যিনি আব্দুল খালেক নামের অধিকারী হবেন, তাকে যখন খালেক ভাই বলে ডাকা হবে, তখন তিনি সেই ডাকে সাড়া দিবেন না এবং ব্যক্তি কে বুঝিয়ে বলবেন তাকে পূর্ণ নামে ডাকতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-“ সতকর্ম ও খোদাভীতিতে তোমরা একে অন্যের সাহায্য করো,পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না” (সূরা মায়িদাহঃ আয়াত ২)।

“ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভালো কাজের শিক্ষা দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে” (সূরা তওবাঃ আয়াত ৭১)। মানুষের জ়ীবনে নামের বিরাট প্রভাব পড়ে। হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যার (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তার দাদা হাজন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে গেলে তিনি জিজ্ঞেস করেন তোমার নাম কি? তিনি বললেন আমার নাম হাজন (শক্ত)। নবীজি (সাঃ) বললেন তোমার নাম হওয়া উচিত “সাহল”(সহজ সরল)।

তিনি উত্তরে বললেন আমার পিতা যে নাম রেখেছেন তা আমি পরিবর্তন করবো না। সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যার (রাঃ) বলেন, এরপর আমাদের পরিবারে পরবর্তীতে কঠীন অবস্থা ও পেরেশানী থেকে যায় (মেশকাত)। রাসূল (সাঃ) কোনো সাহাবির ইসলাম-পূর্ববর্তী যুগে রাখা অর্থহীন কোনো নাম শুনতে পেলে সাথে সাথে তা পরিবর্তন করে সুন্দর অর্থবোধক নাম রেখে দিতেন। হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত জুওয়ারিয়া (রাঃ) এর পূর্ব নাম ছিল ‘বাররাহ’। রাসূল (সাঃ) তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন জুওয়ারিয়া (মুসলিম)।

অর্থ না জেনে কারো নাম রাখা ঠিক নয়। নাম রাখার ক্ষেত্রে অর্থ,প্রয়োগবিধি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরন রাখা একান্ত প্রয়োজন। বিদেশী ভাষার অর্থ জেনে সচেতন শিক্ষিত ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে নাম রাখা উচিত এবং পূর্ণ নামেই তাকে ডাকা উচিত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।