আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফাঁসী ঃ অন্য চিন্তা

তবু সে তো স্বপ্ন নয়, সব-চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয় আমার বাবা কোন দিন গালে মশা বসলেও মারতেন না, শুধুই উড়িয়ে দিতেন। ছোটবেলায় মুর্গী জবাইয়ের সময় বাড়িতে অন্য পুরুষ না থাকায় একবার আমাকেই বলা হলো কাজের ছেলের সাথে ধরতে। আমি কিছুতেই রাজি না। শেষে বলা হলো তাহলে রাতের খাবার শুধু আলু দিয়ে হবে। তখন বাধ্য হয়ে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে পা দুটো ধরলাম।

কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে খুব শকিং ছিল। বেশ কয়েকদিন অসুস্থ বোধ করেছি। এর পরে আর রাজি হই নি। আমার বোনেরাই তখন কাজটা করেছে, এবং "ছিঃ এ আবার কেমন পুরুষ মানুষ" শুনতে হয়েছে। এখনো কোরবানীর সময়ে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে যাই।

অথচ খেতে কখনো আপত্তি করি না। মৃত জীব নিয়ে ভাবনা কম, কিন্তু আমার হাতে প্রাণভয়ে কাঁপছে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে, তাকে বধ করতে, বা সে দৃশ্য দেখতে বা কল্পনা করতে, যে নিষ্ঠুরতা লাগে আমার তা কোনো কালে ছিল না। এক সময় পুরোনো ঢাকায় থাকতাম। এক সন্ধ্যায় হঠাৎ দেখি বাড়ির সামনে জটলা। অনেক লোক একটা খুব রোগা লোককে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে তাকে মনের সুখে পা দিয়ে মাড়াচ্ছে।

বাবা বললেন পুলিশে ফোন কর। তাই করলাম। জানা গেল লোকটা মসজিদে জুতো চুরির চেষ্টা করেছিল, তাই এ শাস্তি। পুলিশ আসার আগেই লোকাটাকে অচেতন অবস্থায় কারা গুম করে ফেলল। পুলিশ এলে বাবাকে জানাতে গিয়ে দেখলাম তিনি অনেক ভ্যালিয়াম খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।

আমাকেই এজাহার লিখতে হলো। কিছুই হলো না কারো। পর দিন শুনলাম লোকটা মারে মরেই গেছিল। অনেক দিন পরে কয়েক বছর আগে কার্জন হলের কাছে দেখলাম কিছু ছাত্র একটা লোককে মারা শুরু করেছে। কি ব্যাপার? জানা গেল সে একটা গাড়ির কাছে ঘোরাঘুরি করছিল, কাচে হাত দিয়েছিল, নিশ্চয়ই চুরি করার উদ্দেশ্যে।

আমি বললাম, যদি তাই মনে কর পুলিশে দাও। কিন্তু ওরা বল্‌ল- পুলিশ ছেড়ে দেবে, হয় তো কিছু ঘুষ নিয়ে। বললাম - নিজের হাতে আইন নিতে পারবে না। তাছাড়া লোকটা মানসিক ভারসাম্যহীনও হতে পারে। প্রচন্ড অনিচ্ছায় তারা ছেড়ে দিল।

লোকটা আমার দিকে এত কৃতজ্ঞভাবে তাকিয়ে ছিল, বিব্রত হয়ে আমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। বাংলাদেশের টেলিভিশনে যে সব বিজ্ঞাপন দেখি, তাদের একটা বড় অংশ কাউকে মানসিক বা শারীরিক (মাছবিক্রেতাকে চড়) আঘাত দেয়া বা অপমান করা নিয়ে । এদেশের লোক এটাই বেশি উপভোগ করে। এত দেশে গেছি, আর কোথাও এমন দেখি নি। জীববিদ্যা এককালে অনেক যত্নে পড়েছিলাম।

মানুষ প্রকৃতির কি আশ্চর্য সৃষ্টি! হতে পারে নিছক বিবর্তনে, তবুও। কিন্তু এদেশের মানুষ বড় সহজে প্রাণ নেয়। আবার যে এই জঘন্য কাজ করে তারও আমরা খুব জোরে শোরে একই পরিনতি চিন্তা করে আনন্দ পাই। আদর্শের বুলি ঢুকিয়ে সব নেতিবাচক চিন্তাকে বৈধতা দেয়া হয়। আমার কাছে মনে হয় বুড়ো খুনীগুলোকে দিয়ে জীবনের বাকি কয়েকটা বছর অন্য কয়েদিদের ল্যাট্রিন পরিষ্কার করালেই হয়।

একটা অপ্রাসঙ্গিক মন ভালো করা ফাঁসীর গানঃ পুরোনো, কিন্তু মনে ধরে। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.