আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সায়েন্স ফিকশানঃ অতঃপর ??

Quazi Hassan’ World of Writings

চোখ দুটো পিং পং বলের মত বড় হয়ে গেছে। ক্লান্ত চোখগুলো এর আগেও কয়েকবার বড় হয়েছিল। এবার চোখের মনিগুলো জ্বল জ্বল করছে। একটানা আঠার ঘণ্টা একইভাবে দুই জোড়া চোখ কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে। না আছে খাওয়া, না আছে কোন বিশ্রাম।

তাদেরকে কাজটা পারতেই হবে। না হলে কোটি কোটি টাকা বে হাত হয়ে যাবে। ইদ্রিস আলি এসেছে সিঙ্গাপুরের কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ডঃ চিং লাইয়ের কাছে। একটা টেনিস বলের সাইজের মেমোরি ড্রাইভ নিয়ে ছুটে এসেছে বাংলাদেশ থেকে। এর ভিতরের ডেটা (data-তথ্য) পড়ার অনেক চেষ্টা সে করেছে।

কিন্তু পারে নি। দেশের সব চেয়ে নাম করা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ব্যার্থ হয়েছেন। তারা শুধু অসংখ্য লাইন আর ডট পর্যন্ত পড়তে পারেন। কিন্তু তাকে যে বুঝার মত ভাষায় পরিণত করতে পারেন নি। তারা একেবারে ১০০ ভাগ নিশ্চিত এটা একেবারে অসম্ভব কোন কাজ না।

শেষে, বুয়েটের এক অধ্যাপক তাদেরকে ডঃ চিং লাইয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন। তার পরিষ্কার মতামত, এই কাজ পৃথিবীর কেও যদি পারে, সে হবে ডঃ চিং লাই। ২ কুদরত আলির জীবনটা বেশ অনেকটা গল্পের মত। জন্ম দরিদ্র পরিবারে। অল্প বয়সেই বাসের হেল্পারি করা দিয়ে কর্মজীবনের সূত্রপাত।

বাসের ড্রাইভার পদে আসতে বেশী দিন লাগেনি। চাকরি নিয়ে সৌদি যখন সে গেল, তখন তার বয়স পঁচিশ। সাত বছর পরে ফিরে আরম্ভ করল রাস্তা বানানোর কট্রাকটারী। এর পরে যা করেছে তাতেই সফলতা। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে হৃদ্যতা হতে বেশী সময় লাগে নি।

টাকার জন্যে হাত পাতলে কুদরত আলির মুখ থেকে না বের হয় না। সবাইকে খুশী রেখে চলাটা তার নীতি। ফলাফল বেশ তাড়াতাড়ি আসতে লাগল। গার্মেন্টস, ব্যাঙ্ক, ইনস্যুরেন্স থেকে আরম্ভ করে বাইশ ধরনের ব্যবসা কুদরত আলি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিকানায়। বাজারে কুদরত ব্র্যান্ডের কি না পাওয়া যায়! মুড়ি, চানাচুর থেকে আরম্ভ করে সিমেন্ট, রড।

৩ কুদরতের এক বন্ধু রমজান। ছোট বেলায় এক সাথে ডাংগুলি খেলেছে, নদীতে সাঁতার কেটেছে। তার পড়ালেখায় ছিল প্রচণ্ড মনোযোগ। কুদরত ক্লাস সিক্সে পড়া লেখা ছেড়ে দিলেও, রমজান স্কুলের সাথে লেগে ছিল। মফস্বল শহরে মানুষের বাসায় যেয়ে জায়গীর নিয়েছিল।

সারা দেশের মানুষ অবাক হয়ে গেল, যখন রমজান ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পুরো বোর্ডের মধ্যে প্রথম হল। পত্র পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হল, ইন্টার্ভিউ ছাপা হল। এর পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। শিক্ষা মন্ত্রী ঢাকায় তার পড়া লেখার ব্যবস্থা করে দিলেন। রমজানের জয়জয়কার দিনে দিনে আরও বাড়তে লাগল।

এমেরিকার এমআইটি থেকে পিএইচডি করার পরে সেখানেই চাকরি হয়ে গেল। তার গবেষণার বিষয় বস্তু ছিল, হিউম্যান মেমোরি, মানুষের স্মৃতি শক্তি। রমজান খাতায় কলমে প্রমাণ করে দেখাল, মানুষের মাথার মধ্যে যে ইনফরমেশন বা তথ্য আছে, তা কৃত্রিমভাবে কপি করা সম্ভব। অপরাধীর ব্রেন কপি করে দেখা যেতে পারে, তার মাথার মধ্যে কি ছিল। কিংবা জানা যেতে পারে কোন মৃত মানুষের না বলে যাওয়া কোন কথা।

৪ ডঃ চিং লাই’ র কম্পিউটারে প্রথমে অন্যদের মত ডট আর লাইন আসল। প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক চেষ্টা করে, দেখা গেল ডট, লাইনের সাথে যোগ হল সার্কেল আর স্কয়ার। ডঃ চিং আর ইদ্রিসের উৎসাহ ফেটে পড়ার উপক্রম। এই বুঝি বুঝা যাবে, এই গুলির কি অর্থ। কিন্তু না খুব বেশী আগান গেল না।

রাত শেষে দিন হল, আবার রাত হল। চিং অনবরত কাজ করে গেলেন। শেষে বললেন, আমি জানি এই কাজ আমি করতে পারব। কিন্তু আমার সময় দরকার। ইদ্রিসকে বললেন, তুমি এক কাজ কর, দেশে চলে যাও।

এই কাজ শেষ করতে সময় লাগবে। ইদ্রিস অস্থির হয়ে জানতে চাইল, জী মানে কয় দিন? আমার এইগুলো জানা খুব দরকার। না হলে আমার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ডঃ চিং ধীর স্বরে বললেন, গত কয়েকদিনের কাজের থেকে আমি খুব ক্লান্ত। আমাকে এখন বিশ্রাম নিতে হবে।

এই কাজটা শেষ করতে, তিন দিনও লাগতে পারে, আবার তিন বছরও লেগে যেতে পারে। আবার কাজটা আমি শেষ করে যেতেও না পারি। হয়ত তার আগেই আমার মৃত্যু হতে পারে। তবে, আমি একেবারে পরিষ্কার দেখতে পারছি; বিষয়টা সম্ভব। মানুষের ব্রেন রিড করা শুধু সময়ের ব্যাপার।

৫ রমজান দেশে ফিরে বুঝতে পারে নি, কুদরত আলী এত বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বানিয়ে ফেলেছে। প্রথমে ভাবল, থাক এত দিন যখন যোগাযোগ নাই, তখন আবার নতুন করে যোগাযোগ করে আর কি লাভ। কিন্তু কেন যেন জানি তাতে মন সাই দিল না। সেই ছোট বেলার বন্ধু এত বড় হয়েছে, তার সাথে একটু কথা বলতে খুব ইচ্ছে হল। কুদরতের ফোন নাম্বার পেতে বেশী দেরি হল না।

অবশ্য তার সেক্রেটারি তিন দিনের মাথায় সাত বার ফোন করার পর লাইন লাগিয়ে দিল। কুদরতের চিনতে এক মিনিটও লাগল না। আরে তুই, কোথা থেকে। কবে এলি। শুনলাম বিদেশী বিয়ে করে ঠিক করেছিস, দেশে আর ফিরবি না।

আরে শোন, আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি তুই চলে আয়। অনেক কথা বার্তা জমে আছে। ওই সন্ধ্যাতেই দু জনে এক সাথে বসল। কত না কথা হল। সেই ছোট বেলায় চুরি করে আম-কাঁঠাল খাওয়া, নদীতে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা আর কত কি।

সাথে সাথে চলে আসল তাদের দুঃখ, বেদনার কথাও। রমজান বলল, বিদেশী বিয়ে করলেও সুখ জিনিষটার সাথে তার কখন মিলে নি। বিদেশী বউয়ের সাথে মনের মিল হয় নি। বিদেশী বউ বিয়ের কিছু দিন পরেই জানিয়েছিল, রমজানের সাথে বাচ্চা সে বানাবে না। কুদরত বলল, আমার অবস্থা তোর থেকে বেশী ভাল হয় নি।

কোটি কোটি টাকা বানিয়েছি ঠিকই, কিন্তু মন ভরে আর হাসা হয় নি। বিয়ের তিন বছরের মাথায় বউটা মারা গেল। অবশ্য এক ছেলে রেখে গিয়েছিল, ইদ্রিস। এমেরিকায় এমবিএ করছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দেশে ফিরবে।

আমার ব্যবসার হাল ধরবে। আমি যাব রিটায়ারমেনটে। জীবনে তো কম খাটাখাটি করলাম না। ৬ ইদ্রিস আলী বুঝতে পারছে না, এখন সে কি করবে। সিঙ্গাপুরে আরও তিন দিন কাঁটিয়ে যাবে, না-কি দেশে ফিরে যাবে।

কিছুক্ষণ পর পরই দেশের থেকে ফোন আসছে, মতামত চাচ্ছে, সিদ্ধান্ত জানতে যাচ্ছে। কিন্তু তার তো জানাই নাই, কোন ব্যবসাটা কি ভাবে চলছে। অনেকটা আন্দাজের উপর ভর করে উত্তর দিচ্ছে। তার তো ইচ্ছা ছিল, দেশে এসে ব্যবসাগুলো বুঝে যাবার। বিশেষ করে কোথায় কি আছে, কার কি কাজ, কে পাওনাদার কিংবা কার থেকে বকেয়া আছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তার বাবার যে একটা বড় দুর্বলতা আছে, তা সে ভাল করেই জানত। কিন্তু তার পরেও বাবার কথা মনে আসলে গর্বে মনটা ভরে আসে। একটা লোক কত কিছু-ই না করতে পারে। সেই ছোট বেলায় পড়ালেখা ছেড়ে বাসের হেল্পারি দিয়ে কাজ আরম্ভ করেছিল। তার পরে কত কিছু করলেন।

কত মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করলেন। কত মানুষকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করলেন। ইদ্রিসের নিজের অজান্তেই চোখের কোণায় পানি জমে যায়। ৭ কুদরত আলী ছোট বেলার বন্ধু রমজানের সাথে সারা রাত ধরে গল্প করল। একেবারে সেই আগের মত।

প্রথমে শৈশব দিয়ে আরম্ভ হল। তার পরে কর্ম জীবনের উত্থান পতন। শেষে আসল বর্তমান। কুদরত ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, দোস্ত আমার তো বড় একটা সমস্যা আছে। কুদরত বলতে লাগল, সেই ছোট বেলায় স্কুল ছেড়ে কাজ ধরলাম।

তার পরে আর কোন বই পুস্তক খুলে দেখা হয় নি। কষ্টে শিষ্টে রাস্তার নাম পর্যন্ত পড়তে পারি। আর পারি নাম দস্তখত করতে। বাস ওই অতটুকুই। ব্যবসা বাণিজ্যের সব কিছু আমার মাথার মধ্যে।

এখন আমার ভয় হয়, ছেলেকে বুঝিয়ে দেয়ার আগে যদি আমার কিছু হয়! তা হলে ও অনেক কিছুর কোন খবরই পাবে না। এর মধ্যে হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিকস, হার্টের রোগ বাঁধিয়েছি। কোন সময়ে যে উপর আলা ডাক দেন। আবার বয়সটাও তো কম হল না... পঁয়ষট্টি। রমজান জানাল, ভাবিস না।

আমার কাছে একটা ব্যবস্থা আছে। আমি সারা জীবন এই নিয়ে কাজ করলাম। তার পরে রমজান বন্ধুকে তার গবেষণার বিষয়বস্তু জানাল। শেষে বলল, আমি মানুষের ব্রেনের তথ্য গুলো কপি করার জন্য একটা মেমোরি ড্রাইভ বানিয়েছি। তবে তুই হবি প্রথম মানুষ যার ব্রেনের সব তথ্যগুলো মাথার বাইরে যন্ত্রের মধ্যে থাকবে।

তোর ছেলের যখন দরকার হবে, যন্ত্রটা কম্পিউটারে লাগিয়ে দেখে নিবে। তোর ছেলে যদি এর মধ্যে চলে আসে, তা হলে দেখিয়ে দিয়ে যাব, কি করে তোর মাথার জিনিশগুলো পড়তে পারবে। ৮ দশ দিনের মধ্যে রমজান বন্ধু কুদরত আলীর ব্রেনের কপি করে ফেলল। বেশ কিছু যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে জরুরী ভিত্তিতে আনাল। অনেকটা কুদরতের পীড়াপীড়িতে।

কুদরত শুধু বলেই চলল, দোস্ত মনে হচ্ছে যে কোন সময় ডাক আসবে। খরচপত্র অনেক হল। যদিও কোটিপতি কুদরত আলীর জন্যে এইটা আহা মরি কোন ব্যাপার ছিল না। বেশ সহজ পদ্ধতিতে কাজটা শেষ হল। কাজটা করতে পাক্কা দুই দিন লাগল।

কুদরতকে প্রথমে সিডেটিভ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হল। মাথার চারিদিকে অনেক ধরণের তার দিয়ে কম্পিউটারের সাথে লাগান হল। কুদরতের ব্রেন কম্পিউটারের মনিটরে ভেসে আসল। তার পরে বিশেষ ধরণের এক ইলেকট্রিক ম্যাগনেটিক ওয়েভ দিয়ে ব্রেন কপি করা আরম্ভ হল। এই পদ্ধতিটা রমজানেরই আবিষ্কার।

কিছু দিন পরে সবার সামনে এটা প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে। কুদরতের যখন ঘুম ভাঙল, রমজান তার হাতে ছোট বলের মত একটা ড্রাইভ দিয়ে বলল, তোর মাথার মধ্যে যা যা আছে, এর মধ্যেও তা তা আছে। কখন দরকার হলে, তোর ছেলে এর থেকে জানতে পারবে তোর সব কথা। খুব সাবধানে রাখিস। কুদরত রমজানের দিকে তাকিয়ে হাফ ছেড়ে বলল, দোস্ত তুই বাঁচালি।

না হলে আমি মরার পরে, শান্তিতে থাকতে পারতাম না। আমার সব ব্যবসা বাণিজ্য লাটে যেয়ে উঠত আর সম্পত্তি বার ভূতে খেত। ৯ দু দিন পরে শুক্রবার। কুদরত রমজানকে নিয়ে বের হল। কোথায় যাবে ঠিক বুঝতে পারছিল না।

শেষে ঠিক করল, অনেক দিন পানির কাছা কাছি যাওয়া হয় নি। বুড়িগঙ্গায় একটা নৌকা ভাড়া করে ঘুরলে, কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। সারা দিনের প্রস্তুতি নিয়ে তারা নৌকায় যেয়ে উঠল। নৌকায় মৃদু দোলানি আর হাল্কা ঠাণ্ডা বাতাসে দু জনের খুব একটা আমেজ তৈরি হল। কুদরত বলতে লাগল, আমার এখন খুব ভাল লাগছে।

মনে হচ্ছে, এখন মরলেও কোন দুঃখ থাকবে না। তুই আমাকে বাঁচালি। কুদরত নৌকার উপরে বসেই ফোন করল ইদ্রিসকে। সংক্ষেপে রমজান আর ওই ড্রাইভের কথা বলল। সবগুলো ভালবাসা নিংড়ে দিয়ে বললে, বাবা আমার কিছু হলে, আমার মাথার মধ্যে যা যা আছে, সে গুলো সব জেনে নিস।

আমাকে ছাড়াই, তুমি ব্যবসার হাল ধরতে পারবে। ড্রাইভটা আমি সোনালি ব্যাঙ্কের লকারে রেখেছি। তোমাকে নোমিনি করা আছে। তোমার পরিচয় দিলে, ওরা লকারের চাবি দিয়ে দিবে। ১০ ইদ্রিস তিন ঘণ্টার মাথায় আরেকটা কল পেল।

বাবার সেক্রেটারি রহিম শেখ। বলতে লাগল। স্যার, স্যার মানে আপনার বাবা আর নাই। উনি আর উনার বন্ধু রমজান সাহেব বুড়িগঙ্গায় একটা স্পিড-বোটের সাথে এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। মাথায় আর হাতে আঘাত ছিল।

মনে হয় সাঁতার কাটার সুযোগ পায় নি। ইদ্রিস বুঝতে পারল না, তার এখন কি করা উচিৎ,। এই না একটু আগে বাবার সাথে কথা হল। আর এখন কি না আর সে নাই। তার সাথে কত না কথা বলার ছিল, কত কিছু জানার ছিল।

মা সেই কবে মারা গেছে। এখন বাবাও নাই। নিজেকে ভীষণ একা মনে হতে লাগল। রহিম শেখকে ফোন করে বলল, আমি আসছি। নিজের হাতে বাবার আর চাচার সৎকার করব।

আপনারা সব ব্যবস্থা করেন। ১১ ডঃ চিং ইদ্রিসকে ফোন করলেন, চলে আস এখনই। তোমাকে জরুরী কিছু একটা দেখাতে চাই। এর মধ্যে তিন দিন পার হয়ে গেছে। ইদ্রিস সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে চলে যাওয়ার টিকেট করে ফেলেছে।

পরের দিনই ফিরবে। দেশে যেয়ে দেখতে হবে, ব্যবসা বাণিজ্যের কি কি জানা যায়। মেমোরি ড্রাইভ থেকে কবে তথ্য পড়া যাবে, সেই আশায় বসে থাকলে চলবে না। ইদ্রিসকে ডঃ চিং তার ল্যাবে নিয়ে আসলেন। মেমোরি ড্রাইভ কম্পিউটারের সাথেই লাগান ছিল।

ডং চিং বলতে লাগলেন, আমি এত তাড়াতাড়ি এটাকে ভিডিওতে রূপান্তরিত করতে পারব, সেটা ভাবি না। ইদ্রিস তার উত্তেজনা আর ধরে রাখতে পারল না, চাপা গলায় বলল, “ইয়েস”। ডঃ চিং বলতে লাগলেন, কিন্তু সমস্যা আরেকটা। মানুষের মেমোরির তিনটা পর্যায় আছে। সেনসোরি (SENSORI), শর্ট টার্ম আর লং টার্ম।

প্রথম পর্যায়টা হল সেনসোরি। মানুষ সেখানে পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে পরিমাপ করে। এর স্থায়িত্ব দু তিন সেকেন্ডের বেশী না। যেমন ধর তুমি হোটেল থেকে আসার সময় অনেক কিছু দেখতে দেখতে এসেছঃরাস্তা ভর্তি মানুষ, গাড়ি, আরও কত কি। মানুষ এগুলো ক্ষণিকের জন্যে দেখে, সাথে সাথে ভুলেও যায়।

তার পরে যে গুলোতে বেশী মনোযোগ দেয়, সেটা শর্ট আর লং টার্ম মেমোরিতে পরিণত হয়। সেনসোরি মেমোরিকে ব্রেন অপ্রয়োজনীয় সেলে জমিয়ে (store) রাখে। এগুলোর কোন ধারাবাহিকতা থাকে না। বিচ্ছিন্ন তথ্য থাকলেও, এর থেকে পুরো ঘটনা থাকে না। পূর্ণাঙ্গ তথ্য, ঘটনা থাকে শর্ট আর লং টার্ম মেমোরি সেলে।

ডঃ চিং কম্পিউটারে দেখাতে লাগলেন, দু সেকেন্ড স্থায়ী সব ছবি। বিড়াল, কুকুর, মানুষ, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি ইত্যাদি। এর থেকে কোন অর্থই বের হয়ে আসে না। ডঃ চিং বলতে লাগলেন, তোমার চাচা সম্ভবত একটু তাড়াহুড়া করেছিলেন। উনি তোমার বাবার শর্ট আর লং টার্ম মেমোরি কপি করতে যেয়ে ভুল করে, সেনসোরি মেমোরি কপি করেছেন।

ইদ্রিস একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, সেনসোরি মেমোরি দিয়ে আমি কি করব? অতঃপর ?? আগস্ট ০৩, ২০১৩ http://www.lekhalekhi.net

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.