আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সায়েন্স ফিকশন : আমি (পুনর্মুদ্রিত)

শেষ বিকেলের শেষ আলোটুকু এইমাত্র হারিয়ে গেল দিগন্ত রেখার ওপারে। আকাশের এক কোণে এরই মাঝে দেখে দিয়েছে CS09X নক্ষত্র। আর অন্য সব দিনের মতোই আজকের সন্ধাটা, খুব ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা গ্রহের উপর। সবকিছুই স্বাভাবিক, কিন্তু তাও আজ যেন কোথা থেকে থেমে থেমে বেজে উঠছে অস্বাভাবিকতার সুর। আর কিছুক্ষণের মাঝেই নিয়ম অনুযায়ী আমার দায়িত্বের প্রথম ভাগ আরম্ভ হবে।

দায়িত্বটা হলো সম্পূর্ণ গ্রহের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ এবং আমার ডাটাবেসে তা জমা করে রাখা। দীর্ঘ সময় নিয়ে এবং অত্যন্ত যত্নের সাথে আমি এই কাজটা করি। এর মূল কারণ এই বিশাল গ্রহের নিঃসঙ্গ জীবনে আমার কাজ ওই একটাই। সারাদিনের অপেক্ষা এই সময়টার জন্য, যখন গোটা গ্রহের সব তথ্য আমার কাছে আসে, আমি খুব আগ্রহের সাথে প্রতিটা বিবরণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। আশা থাকে সেই বহু কাঙ্খিত একটি তথ্য যা পাবার জন্য আমার এই নিঃসঙ্গ জীবন।

আজ থেকে বহু শতাব্দী আগে পৃথিবীতে যখন বিজ্ঞানীরা জিন গবেষণার শেষ অধ্যায়ে প্রবেশ করেন ঠিক তখনি গোটা পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন পরে যায় সম্পুর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে। খ্রিষ্ট পূর্ব ৬ষ্ট শতকে মায়া সভ্যতার জ্যোতির্বিদদের ভবিষ্যত বাণী সত্য প্রমাণিত হয়। গোটা সৌরজগতের ভারসাম্যে বিশাল পরিবর্তন আসে। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর আবহাওয়া ধীরে ধীরে মানুষের বসবাসের অনুপযগী হয়ে উঠতে থাকে। তদকালীন বিজ্ঞান একাডেমীর প্রবীণ বিজ্ঞানীরা ঠিক সেই মূহূর্তে মানব সভ্যতা এবং তার ভবিষ্যতকে রক্ষা করার জন্য এক বিশাল প্রজেক্ট হাতে নেন।

Project of Living & New Time নামের সেই প্রকল্প বিজ্ঞানীদের জন্য ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বেঁচে থাকার প্রবল আকুতি আর ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখার দৃঢ় ইচ্ছা তাদের সেই বিশাল পরিকল্পনাকে এক সময় বাস্তবে রূপ দেয়। এরপর একটি শক্তিশালী মহাকাশযানে করে সেই প্রকল্পের ফসল পাঠিয়ে দেয়া হয় মহাবিশ্বের আর এক প্রান্তে। সেই প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য ছিল এক নতুন ধরনের কোষ তৈরি করা যার জিনোম এ থাকবে হিউম্যান জিনোম এর কিছু অংশ, আর স্টেম সেল গবেষণায় প্রাপ্ত নতুন কিছু উপাদান যা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে যে কোন অবস্থায়। আর এর ফেনোটাইপ হবে এমন এক সৃষ্টি যা হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

আজ সেই বিশাল প্রজেক্টের ফলাফল স্বরূপ আমি দাঁড়িয়ে আছি এই বিশাল গ্রহে। সেই সময়ের আধুনিক বিজ্ঞানের সব তথ্য আজও আছে আমার স্বত্তাতে, আমার দেহের প্রতিটি কোষ, প্রতিটি সিস্টেম স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের সকল জ্ঞান, সকল প্রজ্ঞা আজ আমি ধারণ করছি আমার ভেতর। সৃষ্টির সূচনা হতে যতো আবিষ্কার, যতো জ্ঞান-উপলব্ধি সব সব কিছু আছে আমার প্রতিটি কোষে। তারপরও আজও আমি বুভূক্ষের মতো খুঁজে যাচ্ছি খুব ক্ষুদ্র একটি তথ্য।

সম্পূর্ণ একা এই বিশাল গ্রহে আজ আমি উপল্পব্ধি করতে পারছি মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম শিখরে উঠতে যেয়ে নিজেকে খুব বেশি নিঃসঙ্গ করে ফেলেছিল। আর তাইতো আমি আজও খুঁজে ফিরি আর একটি অস্তিত্ত্ব, আর একটি প্রাণের সন্ধানে তাই আমি বৃক্ষ আজও দাঁড়িয়ে আছি মহাবিশ্বের এক প্রান্তে Project of Life And New Time (PLANT) এর বাহক হয়ে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.