আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংক্ষেপে কফি-কাহিনী

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
কফি বাংলাদেশে এখনও ঠিক সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, ... জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কেবল। এদেশের গাঁয়ে-গঞ্জে আজও চায়ের জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া; ভাবলে অবাক হই, সভ্যতায় কফি জিনিসটা আরবদের অবদান- যে আরবদের সঙ্গে বাঙালির দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ...তাহলে কেন কফি আজও বাঙালি সমাজে সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠল না ? এর উত্তর হয়তো বাংলার মাটি চা উৎপাদনে সহায়ক হলেও কফি গাছের জন্য উপযুক্ত নয় (তবে শুনেছি পার্বত্য চট্টগ্রামে আজকাল কফির চাষ হচ্ছে) ...আর বাংলায় চায়ের জনপ্রিয়তার পিছনে যেমন রয়েছে বাংলার মাটির গুণাগুণ তেমনি বৃটিশ বেনিয়াদের ব্যবসায়িক তৎপরতা ... কফি ফল। আমরা যে কফি পান করি, এটিই তার আসল উপাদান।

কফি বীজ বা বিন; এই বিন গুঁড়ো করেই তৈরি হয় কফি। প্রথমেই ৩টি চমকপ্রদ তথ্য দিই কফি সম্বন্ধে। ১. 1. Coffee is the second most-traded physical commodity in the world, ranking second only to petroleum!!! ২. প্রতি বছর মার্কিনীরা ১১০ বিলিয়ন কাপ কফি খায়!!! ৩. দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় বিশ্বের চাহিদার দুই/তৃতীয়াংশ কফি উৎপন্ন হয়। অথচ, কফির উদ্ভব হয়েছিল পূর্ব আফ্রিকায় ... এবার নামকরণ: ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দে ডাচ koffie শব্দের মাধ্যমে coffee শব্দটি ইংরেজি ভাষায় গৃহিত হয় । এই ডাচ শব্দটি আবার তুর্কি শব্দ kahve থেকে উদ্ভূত; তুর্কি শব্দটি আরবি qahwa শব্দেরই উচ্চারণ ভেদ।

এই শব্দান্তরের ভিতরেই যেন লুকিয়ে রয়েছে কফির বিস্ময়কর ইতিহাস। প্রথমেই কফি গাছটি চিনে নেওয়া যাক। কফি গাছ সাধারনত উচ্চতায় ২০ থেকে ৩০ ফুট হয় । উজ্জ্বল সবুজ রঙের পাতার আকার হয় ডিম্বাকৃতি, ফুলের রং সাদা আর বেশ সুগন্ধী । থোকা - থোকা ফল ধরে, প্রথমে রং হয় হালকা সবুজ, পরে লাল এবং শেষে ঘন ক্রিমসন রং (নীচে কফি বিনের ছবি দেখুন)।

ফলের ভিতরে মিষ্টি শাঁসে মুড়নো দুটি বিন (বীজ ) থাকে । অনেক ধরনের কফি গাছ হতে পারে এর মধ্যে পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়ার কফিয়া আরাবিকাই স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। আজ যে কফি ছাড়া সভ্য মানুষের চলেই না তা কিন্তু নবম শতকের আগে জানা যায়নি। কফির ব্যবহার ধরা হয় ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের পর। মজার কথা হল, নবম শতকের আগেও কফি গাছ থাকলেও সে গাছের পাকা ফলটি গুঁড়ো করে গরম পানিতে গুলিয়ে খাওয়ার কথা কেউ ভাবেনি! কফি বিন (বীজ); পাকা বীজ ১৫ দিনের মত রোদে ফেলে রাখা হয়।

তারপর পুড়িয়ে গুঁড়ো করে কফি তৈরি হয়। অবশ্য কফি তৈরির আরেকটি পদ্ধতি আছে। সেটি হল বীজটি পানিতে ধুয়ে গাজিয়ে নেওয়া। পরে অবশ্য পুড়িয়ে গুঁড়ো করা হয়। তা কীভাবে মানুষ প্রথম আবিস্কার করল কফি ফল? নবম শতকের দিকের ঘটনা।

ইথিওপিয়ায় কালদি নামে এক রাখাল বাস করত। একদিন। মাঠে ছাগল নিয়ে চড়াতে গেছে। সবুজ ঝোপের লাল লাল ফল (পরে যার নাম হয়েছিল কফিয়া আরাবিকা) খেয়ে ছাগলের পাল তো খুশিতে তিড়িং -বিড়িং করে লাফাতে শুরু করল । কৌতূহলী কালদি গাছ থেকে ফল পেড়ে কফিয়া আরাবিকা চিবাল।

চিবিয়ে অবাক হল। কাছেই ছিল এক ইসলামী সুফির আস্তানা। কালদি সেই আস্তানার কিছু ফল নিয়ে গেল। সব শুনে সুফি তো মহা বিরক্ত ...তিনি ফলগুলি আগুনে ছুড়ে ফেলে দিলেন। সুগন্ধী ধোঁয়া ছড়ালো।

তার পর ফলের পোড়া বীজগুলি গুঁড়ো করে গরম পানিতে মিশিয়ে তৈরি হল পৃথিবীর প্রথম ‘এক কাপ কফি । ’ ইথিওপিয়ার মানচিত্র। বিজ্ঞানীরা কফিকে সভ্য মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসার জন্য সিভেট নামে এক ধরনের বিড়ালকে কৃত্বিত্ব দিচ্ছেন। কেননা, এই সিভেট-বিড়ালই মধ্য আফ্রিকা থেকে কফির বীজ বহন করে এনেছিল ইথিওপিয়ার পাহাড়ে ...যেখানে কালদি বাস করত। অবশ্য কফি আবিস্কারের অন্য একটি ভাষ্যেও রয়েছে ...একজন সুফি ইথিওপিয়ায় গিয়ে ঝলমলে উজ্জ্বল পাখি দেখে কৌতূহলী হয়ে উঠে সেই পাখি যে ফল খাচ্ছিল কৌতূলবশত সুফিটিও সেই ফল খেয়ে ফলটির কার্যকারিতা বুঝতে পারেন।

এভাবেই নাকি কফি ফলের গুরুত্ব প্রথম টের পাওয়া গেল। আরব মেয়েরা কফি গুঁড়া করছে। ইথিওপিয়া থেকেই আরব বণিকেরা ৮৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ কফি বীজ নিয়ে যায় আরবে। আরবরা নাকি বীজ বিদেশে রপ্তানী করতে চায়নি। যা হোক।

সেখান থেকেই কফি বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। ১৪৭৫ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের রাজধানী কন্সটানটিনেপলে স্থাপিত হয় পৃথিবীর প্রথম কফিশপ । আরবের একটি কফিশপে ক'জন কফি-প্রেমিক আরব বসে রয়েছে। ভাগ্যিস এদেরই পূর্ব পুরুষ ইথিওপিয়া থেকে কফি এনেছিল আরবে! ১৬১৬ সালে ডাচরা কফি নিয়ে যায় হল্যান্ডে । ইন্দোনেশিয়ায় ডাচ-কলোনি ছিল; সেখানে কফির আবাদ শুরু হয়।

। ইউরোপের কফি হাউজ। ১৬১৫ সালে ইউরোপে ভেনিসের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কফি বানিজ্য আরম্ভ হয়। ভেনিসেই ইউরোপের প্রথম কফিহাউস স্থাপিত হয় ১৬২৩ সালে। আমেরিকায় ১৬৬৮ সালের দিকে প্রথম কফি ব্যবহারের কথা জানা যায়।

অবশ্য ১৭২০ সালে লাতিন আমেরিকায় কফির চাষবাস শুরু হয় । ফরাসি, ব্রিটিশ এবং ডাচরা লাতিন আমেরিকায় কফির প্রচলন করে। বর্তমানে উত্তর আমেরিকাই কফির সব চে বড় ভোক্তা। এই ফলের ইতিহাস কম বিচিত্র নয়! কফি কেবল উষ্ণ মিষ্ট তরল পানীয় নয়- কি পশ্চিমে কি প্রাচ্যে - এর পরিবেশনা শিল্প সম্মতও বটে ... কফি-প্রেমিক মাত্রই জানেন এই সাধারণ কফি ভরতি কাপের কী গভীর আকর্ষন ...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.