আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিভ্রান্ত..................



................., সত্যিই মাঝে মাঝে নিজেকে বিভ্রান্ত মনে হয়। জানিনা আমি যেরকম ধারণা পোষণ করি মানুষ গুলো আসলেই সেরকম কিনা? তথাপি তাদের কার্যকলাপ দেখে আমার ধারণা শুধু বদ্ধমূলই হয়। অযোগ্যের আস্ফালনে দেশের বাতাস দূষিত হয়ে গেছে। প্রতিদিন পথচলাতে আমার মনে হয় অধিকাংশ না হলেও যারা সামান্যতম সুযোগের অপব্যবহার করে বা যারা অপসুযোগের জন্য মুখিয়ে থাকে বা যারা অন্যের অধিকার নষ্ট করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে তাদের সংখ্যা আমাদের সমাজে নিতান্ত কম নয়। জানিনা আমার ধারণা ঠিক কিনা? তবে একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত।

আমরা সবাই পরিবর্তন চাই, কিন্তু কেউই নিজের জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে রাজি নই। আমরা সবাই পরিবর্তন চাই,কিন্তু কেউই নিজের অভ্যাসগুলো বদলাতে রাজি নই। তুমি-আমি সারাজীবন পরিবর্তন-পরিবর্তন করে চিৎকার করে মরে গেলেও কিছু হবেনা। আমাদের জাতিগত কিছু বিষয়ে আমার অশ্রদ্ধা এসে গেছে। জাতি হিসেবে আমরা নিজেদের অনেক পরিশ্রমী মনে করি,কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে একপ্রকারের অনীহা।

প্রায় কেউই নিজের দায়িত্বপালনে পঞ্চাশভাগও প্রচেষ্ট নই। আমার মনে হয় স্কুল-কলেজে যদি পরীক্ষা না দিয়েই পাশ করে যেত , অথবা যদি সারা মাস কাজ না করেওবেতন পাওয়া যেত তবে আমাদের চেয়ে সুখী আর কেউ হতনা। কাজের মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করতে আমরা প্রায় কেউই শিখিনি। জ্ঞান চর্চায় আমাদের তুমুল আপত্তি। আমরা আসলে চূড়ান্ত রকমের অলস,যদিও স্বীকার করিনা।

পরিশ্রমকেই আমাদের যত ভয়। পরচর্চা করার অভ্যাসটা মারাত্বক রকমের প্রবল। অন্যের ভাল আমরা একদমই দেখতে পারিনা। নিজের ক্ষতি মেনে নিতে রাজি আছি,কিন্তু অন্যকেউ যাতে লাভবান হতে না পারে সেদিকে আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজ আর পথ দেখাতে পারছে না ।

আমারা তরুণ সমাজের একটা অংশ অন্তঃসারশুণ্য হয়ে গড়ে উঠছি। আমরা আমদের নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করি, নিজ সংস্কৃতির চর্চাকে smartness এর অভাব মনে করি,নিজ ভাষায় সুন্দর করে কথা বললে backdated মানে করি। কেউ পাশ্চত্য ,কেউ মধ্যপ্রাচ্য বা পাকিস্তানি আবার কেউ ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চাকে ধ্যান জ্ঞান করে নিয়েছি। আমার দেশের জারি-সারি-ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়া-মুর্শিদি- লালন-হাছন-নজরুল-রবীন্দ্রনাথ-অতুলপ্রসাদ আমাদের কাছে অপাংক্তেও। পরসংস্কৃতির চর্চা করে ভাবছি আমরা তাদের মত উন্নত হয়ে উঠব।

কিন্তু কেউই ভেবে দেখি না যে নিজ সংস্কৃতিকে বাদ দেওয়া আর নিজ জন্ম পরিচয়কে অস্বীকার করা সমতুল্য। আর আত্মপরিচয়হীন পরগাছা হয়ে সার্বিক উন্নতি যে সম্ভব নয় তা আজও আমাদের বোধগম্য হয়ে উঠেনি । উপরন্তু চিরকালীন সত্যের মত অন্যের ব্যাধিই আমাদের মাঝে সংক্রমিত হয়,তাদের স্বাস্থ্য নয়। নিজেদের ভাল অংশটুকু বাদ দিয়ে আমরা অন্যের ভালোটুকুও গ্রহন করতে পারি না। ফলাফল যা হবার তাই হচ্ছে।

অন্যের অন্ধ অনুকরণের ফলে আমাদের সৃজণশীলতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে বেশ অনেকদিন আগেই । এখন আমরা নিজেরা কিছু সৃষ্টি করতে না পেরে আমাদের পুর্বসূরীদের সৃষ্টিগুলো বিকৃত করছি। সাময়িক খ্যাতির মোহে আমরা জীবনের চিরকালীন আবেদন কে ভুলে গিয়েছি। আমরা এখন মেকি আবেগ দ্বারা তাড়িত। আমাদের হৃদয়ের সুকুমারবৃত্তিগুলো হয় নষ্ট হয়ে গেছে অথবা কারও কারও বিকশিতই হতে পারেনি।

সমাজের সকল ক্ষেত্রে ভাঙ্গন আমাদের সেই অবস্থারই প্রতিফলন। যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে সমাজে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য আমাদের সমাজের ভাঙ্গন কে তড়ান্বিত করছে। আধুনিকতার দোহাই দিয়ে আমরা অনেক কিছুরই চর্চা করছি। এগুলো কতটা ভাল বা কতটা মন্দ সে ব্যপারে কেউই নিশ্চিত নই। মুক্তবাজার অর্থনীতির কবলে পড়ে দেশের মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠছে।

ব্যাক্তি পর্যায়ে একটি দেশের অধিকাংশ মানুষ যাদের দুর্ণীতি করার সুযোগ আছে তারা যদি করে তবে সমাজের অবস্থা কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। মূল সমস্যা মনে হয় আমাদের ভোগবাদী হয়ে উঠাতে । আমরা কিছু উৎপাদন করতে না পারলেও ভোগবাদী হতে কেউই দ্বিধান্বিত হই না । একটা চাকা বানানোর ক্ষমতা না থাকলেও আমাদের BMW, PAJERO বা নিদেনপক্ষে Toyota না হলে চলে না। জ্যাম এ সারা শহর অচল হয়ে যাক, আমাকে আমার status রাখতেই হবে।

সবাই সরকার অথবা প্রশাসনকে গালাগালি করতে পারি,অথচ ভাবিনা যে আমার নিজের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছি। আমাদের দেশের একটা বিরাট অংশলোক অনুৎপাদনশীল, এই অর্থে যে আমরা ভাবি আমার বাবার যোগ্যতা দিয়ে আমিও চলে যেতে পারব। আমি নিজে কিছু করব -এই বোধসম্পন্ন লোকের বড় অভাব আমাদের দেশে। সত্যি আমি আমাদের কোন ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছি না। আমার কথাগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু কি করব বলো?আমি সত্যিই বিভ্রান্ত। তুমি কি পারবে আমার বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।