আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলচ্চিত্রের রাজধানী

৪২০

Link From বিশ্বজুড়ে সেরা সেরা চলচ্চিত্রের কথা এলেই 'হলিউড' নামটি চলে আসে। বিশ্বের আলোচিত স্থানগুলোর মধ্যে এই হলিউড অন্যতম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লসএঞ্জেলেস জেলার পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম ডাউনটাউনে অবস্থিত এই স্থানটিকে পৃথিবীর বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের রাজধানী বলা হয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গন তথা চলচ্চিত্রশিল্পের ঐতিহাসিক কেন্দ্র হিসেবে এ স্থানটি বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। সারা বিশ্বে হলিউডের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অদ্বিতীয়।

হলিউড হলো একটি তারকা ও স্বপ্ন সৃষ্টির কারখানা। চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন যেমন হলিউডের বিশেষ সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে, তেমনি লসএঞ্জেলেস শহরের জন্য অসাধারণ সাংস্কৃতিক আবহ সৃষ্টি করেছে। হলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতীক হলো নয়টি বড় বড় ইংরেজি অক্ষর HOLLYWOOD. কাহুএনগা পাহাড়ের গায়ে তা শোভিত। এই প্রতীক ১৯২৩ সালে প্রণীত হয়। এর প্রতি অক্ষর প্রায় ৫০ ফিট উঁচু।

আসলে আগে ১৩টি অক্ষর ছিল, তা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির হলিউডল্যান্ডের জন্য একটি বিজ্ঞাপন ছিল। পরে পেছনের ল্যান্ড শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তা জনপ্রিয় হলিউডের প্রতীকে পরিণত হয়। এখানকার বিখ্যাত স্থান রয়েছে হলিউড বোউল, অর্থাৎ একটি গোলাকারের প্রেক্ষাগৃহ, পিলগ্রিম গোল প্রেক্ষাগৃহ, গ্রিস থিয়েটার, চীনা থিয়েটার, ক্যালিফোর্নিয়ার আর্ট ক্লাব ইত্যাদি। এর কাছেই বেভারল হিল আছে, প্রচুর চিত্রতারকা এখানে বসবাস করেন। হলিউডের এরকম জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির পিছনে রয়েছে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সুনিপুণ দক্ষতা ও বাস্তবমুখী চিন্তাধারা।

হলিউডের চিন্তাধারা বিশ্ববাসীকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। আর এ অনুপ্রেরণায় উৎসাহিত হয়ে হলিউড প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চমক উপহার দিয়ে যাচ্ছে। চলচ্চিত্রের রাজধানী হলিউডেরও কিন্তু অন্য আট-দশটি স্থানের মতো একটি সুপ্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। একসময় সান্তা মনিকা পর্বতের পাদদেশে স্থায়ী আমেরিকানরা বাস করতেন। স্প্যানিশরা যখন অনুসন্ধানের উদ্দেশে প্রথম এ এলাকায় আসে তখন থেকেই মূলত এ জায়গার নাম হয় হলিউড।

স্প্যানিশরা হলিউড দখলের পর স্প্যানিশ সরকার একে দুইভাগে বিভক্ত করে। ফলে পশ্চিম অংশে র‌্যানকো লস ব্রা উপনিবেশ এবং পূর্ব অংশে র‌্যানকো লস ফেলিজ উপনিবেশ স্থাপিত হয়। ১৮৮৬ সালে এইচএইচ উইলকঙ্ নামে এক ব্যক্তি র‌্যানকো লা ব্রা নামক জায়গা ক্রয় করেন। কয়েক বছরের মধ্যে উইলকঙ্ এ জায়গাকে একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থানে পরিণত করার জন্য বৃহৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এ স্থানটি একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়।

মহারানী এ্যানি, ভিক্টোরিয়া প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তি এ স্থানে বসতি স্থাপন করে একে পুনরুজ্জীবন দান করে। মিসেস ডেইডা উইলকঙ্ ফান্ডের টাকা তুলে মন্দির, স্কুল ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে খুব স্বল্প সময়ে হলিউড পরিপূর্ণতা লাভ করতে সক্ষম হয়। ১৯০৩ সালে আলোচ্য দুই সম্প্রদায় একত্রিত হয়। এরপর থেকেই হলিউডের যাত্রা নতুন দিকে মোড় নেয়।

হলিউডভুক্ত স্থানসমূহের মধ্যে বিচওড ক্যানিয়ন, কাহুএনগা পাস, হলিউড ডাউনটাউন বা সিভিক এরিয়া, লরেল ক্যানিয়ন, মাউন্ট অলিম্পাস, সানসেট হিলস্, লিটিল আর্মেনিয়া, থাই টাউন, ভারজিল ভিলেজ, মেলরোজ ডিস্ট্রিক, সিয়েরা ভিসতা, স্পাডলডিং স্কয়ার, ইউক্কা করিডর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ১৯০৮ সালে প্যাটেন্ট ও ছবি উৎপাদন অঙ্গীভূত করার জন্য মার্কিন বিভিন্ন চলচ্চিত্র কোম্পানি যৌথভাবে চলচ্চিত্রের প্যাটেন্ট কোম্পানি গঠন করে। তাতে চলচ্চিত্রের ব্যবসা ক্ষেত্রে মুনাফা দেখা দেয়। কিন্তু কিছু স্বনির্ভর ছবি নির্মাতা প্যাটেন্ট কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে চায়। তারা আলাদা আলাদাভাবে নিউইয়র্ক, শিকাগো প্রভৃতি চলচ্চিত্র ঘাঁটি থেকে লসএঞ্জেলেসে স্থানান্তরিত হয়।

এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব ভালো বলে প্যাটেন্ট কোম্পানিও এখানে স্থানান্তরিত হয়েছে। আস্তে আস্তে তা যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। গত শতকের ২০-এর দশকে হলিউড যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র উৎপাদন ও প্রচারের ঘাঁটি হিসেবে স্বীকৃত হয়। ১৯০৮ সালে প্রচারিত 'কাউন্ট অব মাউন্ট ক্রিস্টো' হলো হলিউডের প্রথম কিস্তির ছবিগুলোর অন্যতম। ১৯১২ সাল থেকে পৃথক পৃথকভাবে এখানে বিভিন্ন চলচ্চিত্র তৈরি কোম্পানি গঠিত হয়।

১৯২৮ সালে প্যারামাউন্টসহ আটটি বৃহত্তম চলচ্চিত্র কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- প্যারামাউন্ট চলচ্চিত্র কোম্পানি, ওয়ারনার ব্রোস চলচ্চিত্র কোম্পানি, আরকেও চলচ্চিত্র কোম্পানি, কলাম্বিয়া চলচ্চিত্র কোম্পানি প্রভৃতি। ৩০ আর ৪০-এর দশক হলো হলিউডের সর্বোচ্চ সমৃদ্ধির সময়। এ সময়ে হলিউডে চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ছবি তৈরি হয়। সে সময় হলিউড ফিল্মের প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়।

এর মধ্যে 'The dictator', 'One with the wind', 'Waterloo bridge', 'Rebecca', 'Citi“en Kane' Avi 'Casablanca' ইত্যাদি বিশ্বের চলচ্চিত্র ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে হলিউড যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে উন্নীত হয়। প্রচুর লেখক, শিল্পী, তারকাএখানেই জন্মগ্রহণ করেছেন। ৬০-এর দশকের শুরুতে হলিউড মার্কিন টিভি অনুষ্ঠানের প্রধান উৎপাদন ঘাঁটিতে পরিণত হয়। এখনও বিশ্বের ব্যয়বহুল আর বিখ্যাত ছবিগুলো হলিউডেই নির্মিত হয়।

তবুও হলিউডকে আর বিশ্বের চলচ্চিত্রের কেন্দ্র বলা যায় না। কারণ অধিকংশ চলচ্চিত্র বিশ্বের বিভিন্ন শহর, গ্রাম ও অন্যান্য অঞ্চলে শুটিং হয়। হলিউডের স্টুডিওগুলো আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু অধিকাংশই টিভি স্টেশনকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ ধারাবাহিক টিভি নাটক হলিউডে শুটিং হয়। হলিউড ফিল্মের বিষয় ব্যাপক।

স্টাইল ভিন্ন। সেটি জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তার চেয়েও বড় বিষয় এখানকার ছবি কারিগরি ক্ষেত্রেও অব্যাহতভাবে উন্নত হচ্ছে। মোটকথা হলিউডের আকর্ষণীয় মোহিনী শক্তি মোটেও শেষ হয়ে যায়নি।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.