আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাকওয়া অর্জনের মাস রমজানুল মোবাকর.................



রহমত, মাগফিরাত এবং মুক্তির পয়গাম নিয়ে আমাদের মুসলিম উম্মাহর সামনে হাজির হয় পবিত্র মাস মাহে রমজান। রমজানুল মোবারক মানুষের পশুত্বকে খতম করে জাগ্রত করে মনুষ্যত্বকে। মনুষ্যত্বের উপর যখন পাশবিকতা বা পশুত্ব প্রাধান্য পায় তখন মানুষ আর মানুষ থাকে না, তখন সে হয় পশু বা পশুর চেয়েও অধম। পবিত্র আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-"তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলদ্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তা দিয়ে দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু সে কানে তারা শোনতে পায় না। এরা পশুর মতো বরং তার চেয়েও বেশি ভ্রান্ত।

" (সূরা-আরাফ, আয়াত-১৭৯) সুতরাং যেহেতু সে ভ্রান্ত বা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট, তাই সে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মানব হত্যা, ঘুষ গ্রহণ, গীবত বা পরচর্চা, চোগরখোরি, মিথ্যাচার, মুনাফেকী, অহংকারি, লোভী, ক্রোধান্বিত, অত্যাচারিসহ এমন কোনো অন্যায় নেই যা সে করে না। পক্ষান্তরে, যার মানবিকতা পাশবিকতার উপর বেশি প্রাধান্য পাবে বা দিবে সে হবে আশরাফুল মাখলুকাত। তার মর্যাদা হবে ফেরেশতার চেয়েও বেশি। আর মহান আল্লাহ পাক মানুষকে প্রকৃত মানুষ ও তার পশুত্বকে খতম করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে মহা নিয়ামত হিসেবে দান করেছেন রমজানুল মোবারক। আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন-"হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল।

যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। " (সূরা-বাকারা, আয়াত-১৮৩) রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিক হওয়া চাই। রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ ১. মানুষের মধ্যে আর্দশ ও মানবিক গুণাবলী পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত করা। ২. মানুষের ইহ-পরলৌকিক সর্বোপরি সফলতা অর্জন। ৩. রমজান হলো গোনাহ থেকে মুক্তি, অফুরন্ত রহমত ও বরকতের মাস।

কেউ রমজান মাস পেলো আর মুক্তির ফয়সালা করাতে পারলো না, পারলো না সে আল্লাহ পাকের সীমাহীন রহমত ও বরকতের দ্বার খুলতে, তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই। ৪. মানুষে মানুষে প্রেম-ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, প্রীতির সুমধুর নিবিড় সর্ম্পক গড়ে তোলা। ৫. আল্লাহ পাকের বিধান সঠিক নিয়মে মেনে চলার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ সম্পূর্ণ করা। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"বহু রোজাদার এমন আছে, রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ছাড়া সে আর কিছুই লাভ করতে পারে না। আবার অনেক রাত জাগরণকারী আছে, যারা নিশি জাগরনের কষ্ট ছাড়া কিছুই পায় না।

" (ইবনে মাজাহ শরিফ) তাই আমাদের রোজা অবস্থায় রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে রোজার সময়টুকু অতিবাহিত করা উচিত। যা বর্জনীয় তা বর্জন করা আর যা পালনীয় তা পালন করা জরুরী। ১) প্রতিবেশীর হকঃ রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম করে বলছি, কেউ পরিপূর্ণ মুসলমান হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ তার অন্তর, কথাবার্তা ও হাত থেকে নিরাপদ না হবে। আর কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ না হয়। " (মুসনাদে আহমদ) তাই রোজা অবস্থায় প্রতিবেশির অনিষ্ট করা থেকে বিরত না থাকলে মুমিনই হওয়া যাবে না।

২) মদ্যপানঃ রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"যদি কেউ ১ বার মদ্ পান করে, তবে ৪০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হবে না। দ্বিতীয় বার পান করলে ৮০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হবে না। তৃতীয় বার পান করলে ১২০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হবে না। আর চতুর্থ বার পান করলে তাকে হত্যা কর। কারণ, সে কাফির।

তাকে 'তীনাতুল খাবাল' পান করানো আল্লাহর অপরিহার্য হয়ে যায়। সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, তানীতুল খাবাল কী? রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তা জাহান্নামীদের পূঁজ। (মুসনাদে আহমদ) তাই মদ পান পরিত্যাগ করা চাই। নতুবা কোন ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। ৩) মুনাফিকির আচরণঃ মুনাফিকের ৩ টি বৈশিষ্ট্যের একটি হচ্ছে, যখনই সে কথা বলবে মিথ্যা বলবে।

তাই মিথ্যাচার না পরিত্যাগ করতে পারলে মুনাফিকির জন্য জাহান্নামের নিম্নস্তরে আবাসস্থল হবে। ৪) গীবতঃ আল্লাহ পাক বলেছেন-"হে মুমনিগণ, তোমরা অনেক অনুমান থেকে বেচেঁ থাক। নিশ্চয় কতক অনুমান গুনাহ। আর গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে।

তোমাদের কেউ কী তার মৃত ভাইযের গোশত খেতে পসন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণাই করবে। " (সূরা-হুজুরাত, আয়াত-১২) তাই রোজা অবস্থায় অন্যের গীবত বা পরচর্চা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। ৫) চোগলখোরিঃ রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"যে ব্যক্তি দুই জনের কাছে দুই ধরনের কথা বলে ঝগড়া-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে, সেই সবচেয়ে অধম। " রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন-"চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না" (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ) তাই সর্ব অবস্থায়ই চোগলখোরি পরিত্যাজ্য। ৬) হিংসা-বিদ্বেষঃ রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"নিশ্চয়ই হিংসা-বিদ্বেষ নেকীসমূহকে নিঃশেষ করে দেয়, যেমনিভাবে আগুন শুকনো কাঠকে পুড়ে শেষ করে দেয়।

" (আবূ দাউদ) হিংসা-বিদ্বেষই রোজা নেকীসমূহ নিঃশেষ করার জন্যই যথেষ্ট। ৭) অহংকারী আচরণঃ আল্লাহ পাক বলেছেন-"তোমরা জাহান্নামের দরজাসমূহ দিযে প্রবেশ কর। তোমরা সেথায় অনন্তকাল থাকবে। অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা-মু'মিন, আয়াত-৭৬) ৮) হারাম ভক্ষণঃ ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল রিজিক।

হালাল রিজিক দিয়ে যাবতীয় আহার গ্রহণ ও বস্ত্র পরিধান করা অত্যাবশ্যক। হাদিস শরিফে রয়েছে,-"যারা হারাম খায় ও হারাম বস্ত্র পরিধান করে তাদের ইবাদত কবুল হয় না। " (মুসলিম ও তিরমিযী) তাই ঘুষ ও সুদ খাওয়া বর্জন করা চাই। ৯) অপচয়ঃ আল্লাহ পাক বলেছেন-"হে আদমের বংশধর! প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান করবে, পানাহার করবে, কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না।

" (সূরা-আল-আরাফ, আয়াত-৩১) অনেকে পার্থিব প্রাচুর্যে ইফতার ও সেহরির সময় অনাবশ্যক অয়োজনে অপচয় করেন, যা গর্হিত কাজ। বরং পরিমিত আহার গ্রহণ করে অবশিষ্ট খাবার গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করা সওয়াবের কাজ। ১০) যবানের হিফাযতঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-"সে যাই উচ্চারণ করে, তাই লিপিবদ্ধ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। " (সূরা-ক্বাফ, আয়াত-১৮) তাই মুখে রোজা অবস্থায় অশ্লীল কথাবার্তা, গালাগালি পরিহার করা চাই। ১১) ক্রোধঃ রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"নিশ্চয়ই ক্রোধ জাহান্নামের জ্বলন্ত কয়লা।

" ক্রোধান্বিত অবস্থায় মানুষের পশুত্ব জাগ্রত হয় যা রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বিপরীত। সর্বশেষে বলা যায় যে, রোজা অবস্থায় উপরোক্ত বিষয়গুলো না মেনে চললে আমাদের রোজা উপবাসই হবে তা প্রকৃত রোজার মর্যাদা পাবে না। রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-"যে ব্যক্তি মিথ্যা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করতে পারলো না, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। " (বুখারি শরিফ)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.