আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোবা বিস্ময়

দৈনিক বাংলার মোড়ে বাস থেকে নেমে ৫০ গজ পূর্বে NCC ব্যাংকের উল্টোদিকে মতিঝিলে জুবায়েরের নতুন অফিস। মাত্র এক মাস হলো চাকরীতে যোগ দিয়েছে । সকালে বাসেই আসে সন্ধ্যায় ফিরবার সময় নিজেদের গাড়ীতে ফিরে। বাবা গাড়ী নিয়ে যাতায়াত করতে বলেন, কিন্ত্ত মতিঝিলে পার্কিং বিরাট সমস্যা । কাল রাতে খাবার টেবিলে বাবাকে পেয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো জুবায়েরের মায়ের নামে যে জমি আছে যা তার নানা মাকে দিয়ে গেছেন জমিটা জুবায়ের বিক্রি করতে চায়।

বাবার বুড়ো চোয়াল কেমন ঝুলে পরল আচমকা এমন কথা শুনে, ঝানু ব্যবসায়ি বাবা পালটা প্রশ্ন করলেন হুট করে এত টাকার দরকার পড়লো কেন ? গোপিবাগের সেই জমির দাম এখন কোটি ছাড়িয়ে গেছে, মনে মনে ভেবেছিলেন জমিটা ব্যাংকে রেখে দয়াগন্জে একটা জুতার কারখানা দিবেন, মোটামুটি কাজ গুছিয়ে ফেলেছেন, জুবায়েরর মায়ের জমি বিক্রির কথা ও কে কিভাবে বলবেন বঝতে পারছিলেন না। তাই ছেলের মুখে আবার সে জমি বিক্রীর কথায় থতমত খেয়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করেই বসলেন জমি বিক্রি করে কি করবে ? জুবায়ের মাথা নিচু করে খেয়ে চলেছে, বাচ্চা মুরগির রান চিবানোর আওয়াজ ছাড়া খাবার টেবিলে সুনসান নিরবতা, জুবির বাবা ডায়বেটিক রোগী তাই খাবারে বাছ বিচার আছে চুপ করে ভাবতে লাগলেন আবার কি হল ! প্রশ্নটা আবার করলেন , এবার জুবি বললো তার বন্ধুর চিকিৎসার জন্য টাকাটা দরকার। পঙ্গু বন্ধুর পা ঠিক করতে জুবি ওকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠাতে চায়। বাবার নিজ রোজগারের টাকা খরচ করা যাবে না আর জুবি সবে চাকুরীতে ঢুকেছে এতগুলো টাকার জন্য মায়ের জমি বিক্রি ছাড়া উপায় নেই ।

জুবির বাবা অতন্ত অসহায় বোধ করলেন, এ সময় তার মায়ের দরকার ছিলো , উনি থাকলে হয়তো ছেলের পেটের ভিতর থেকে কথা বের করে নিতেন, কোন মেয়ে বন্ধুর জন্য তার সহজ সরল ছেলে এত উতলা ভেবে নাওয়া খাওয়া হয়তো ছেড়েই দিতেন আর দশটা বাঙ্গালী মায়ের মত। ভেবেই মুচকি হাসলেন জুবির বাবা কিছু না বলে উঠে পড়লেন খাবার টেবিল থেকে। কি বলা যায় ছেলেকে ? বলবেন আমি রাজী নই , কোথকার কোন পঙ্গু মেয়েকে সুস্হ করে তাকে বিয়ে করতে হবে ? জগতে কি হাত পা ঠিকঠাক মেয়ের অভাব পড়েছে ? কত কষ্ট টাকা রোজগার করা আর ছেলেটা কিনা আবেগের ডিপো হয়েছে। ছটফট করতে করতে শুতে গেলেন, ঘুম আসছেনা , রাজ্যের কথা মনে পড়ছে। ছেলেটি হয়েছে ঠিক তার মা এর মত চুপচাপ,শান্ত, মায়াবী ।

জুবায়েরের মা ছিলেন গোলাপী ফর্সা শশুড় বাবার পক্ষে এত সুন্দরী মেয়ে ঘরে রাখা সম্ভব ছিল না, পুরানো ঢাকার মেয়েদের কম বয়সেই বিয়ে দেয়া হত সে সময়। দেখে শুনে চালাক চতুর ৩ পুরুষের ভাল ব্যবসায়ী ছেলে। বাবা হিসেবে এর চেয়ে ভাল আর কি হত ! কিন্তু জুবির বাবা সবসময় চাইতেন ছেলেটা তার মায়ের মত সুদর্সন হোক আর তার মত না হলেও একটু বৈষয়িক হোক । ঘটানা ঘটেছে উল্টো , তার মত খুবই সাধারন দেখতে হয়েছে আর মায়ের মত আবেগী । ছেলেটার বাবার উপর অনেক রাগ, ক্ষোভ , ক্রোধ, অভিমান।

বাবা হিসেবে উনি কি খারাপ ? ২য় বিয়ে করেন নি, পারতেন করতে কিন্তু মা হারা ছেলের অযত্ন হবে ভেবে সে পথে পা বারাননি । একবারো মনে হয়নি আরো সন্তান থাকুক উনার, নয়তো যদি বুড়ো বয়সে জুবায়ের না দেখে উনাকে দেখার তো কেউ রইলো না। অথচ জুবি একজন বিপত্নীক পুরুষের জৈবিক ক্ষুধা দেখেছে, চতুর ব্যবসায়ীর কুটিল চাল দেখেছে, বৈষয়িক চিন্তা-চেতনার ধারক ৫৮ বছরের প্রৌড়ের ভিতর বুভূক্ষূ পিতৃহৃদয় খানি দেখেনি ! মানুষ হিসেবে তার অবস্হান হয়তো ছেলে জুবায়েরের কাছে বেশ খানিকটা নিচের দিকে কিন্তু পিতা হিসেবে কি উনি পাস মার্কস পেয়েছেন? জুবি তাকে অশ্রদ্ধা করে , ছুতো পেলেই সুক্ষ্ম অপমান করে, বাবা যেটাই বলেন সেটাই তার পছন্দ নয়, অস্হির হৃদয়ের চুপচাপ একটা তরুন, অথচ বাবা চান তার ছেলে থিতু হোক, কিছু একটা করুক জীবন ধারনের জন্য, বিয়ে শাদী করুক তারই পছন্দের কোন একজনকে, নাতি-নাতনির কাছে নিশ্চয়ই উনি ভালবাসা পাবেন । নিজের ছেলে কোনোদিন জিজ্ঞেস করেণি বাবা খেয়েছো কিনা, ঔষুধগুলো কি শেষ হয়ে গেছে ? নাতি-নাতনি কি একবারো আদর, মায়া মমতায় ঘিরে রাখবে না ? আর দশটা বাবার মত চাওয়া গুলো তো খুবি সাধারন । নাকি তার আবস্হাও নচিকেতার সেই গানের মত হবে "ছেলে আমার মস্ত মানুষ মস্ত অফিসার.... View this link রাত গভীর হতে থাকে চিন্তা গুলো জমাট বাঁধতে থাকে, বুকে চিন চিনে ব্যাথা, জুবিকে কি বলবেন উনি, সাহায্য করবেন জমি বিক্রির ব্যাপারে , নাকি দেখবেন আনাড়ী জুবায়ের কী ভাবে জমি বিক্রি করে মেয়েটিকে হাসপাতালে পাঠাতে পারে ? নাকি বন্ধুটি আসলে মেয়ে নয় কোনো ছেলে ? কিংবা সে কেবল বন্ধু এর বেশি কিছু নয়।

+++++++ জুবায়ের কে নিয়ে আমার আরো কিছু লেখা। ১)View this link ২)View this link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।