আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুঠোফোনে প্রেম-বিয়ে, অতঃপর...



মুঠোফোনে ভুল নম্বরে কল গিয়ে গত জানুয়ারি মাসে কুমিল্লার দাউদকান্দির তাসলিমার সঙ্গে পরিচয় হয় চট্টগ্রামের রিকশাচালক মনিরুলের। কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। প্রেমের টানে তাসলিমা বেগম (১৭) মার্চ মাসে ঘর ছাড়েন। আশ্রয় নেন চট্টগ্রামের হালিশহরে মনিরুলের এক ভাইয়ের বাসায়। সেখানে থেকে কাজ করেন পোশাক তৈরির কারখানায়।

৩০ এপ্রিল মনিরুল ও তাসলিমার বিয়ে হয়। ১৯ মে তাসলিমাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মনিরুল। গত রোববার ঢাকার খিলগাঁও থেকে গ্রেপ্তারের পর মনিরুল পুলিশের কাছে তাসলিমাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন। তাসলিমা দাউদকান্দি উপজেলার পিপিয়াকান্দি গ্রামের অটোরিকশা চালক মো. শহীদ উল্লাহর মেয়ে। মনিরুলের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের বড়কাজল গ্রামে।

তাসলিমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গলাচিপা থানার পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার বড়কাজল গ্রাম থেকে মনিরুলের প্রথম স্ত্রী কোহিনুর বেগমের বোন জামাই নূরুল ইসলাম (৫৫) ও তাঁর ছেলে আলতাফ হোসেন (২৮) এবং জামাল হোসেনকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মনিরুলকে পটুয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করে গতকাল তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাসলিমা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গলাচিপা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহিম খান জানান, ২০ মে গলাচিপার বড়কাজল গ্রামের একটি খাল থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়। এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ৩০ মে ঢাকার খিলগাঁও এলাকা থেকে মনিরুলকে গ্রেপ্তার করে গলাচিপা থানার পুলিশ।

উপপরিদর্শক (এসআই) রহিম জানান, মনিরুল জানিয়েছেন, তাসলিমা ছাড়াও তাঁর আরও দুই স্ত্রী আছেন। প্রথম স্ত্রী কোহিনুর বেগম তিন সন্তান নিয়ে হালিশহরে থাকেন। তিনি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী লাইলি বেগম এক মেয়ে নিয়ে খিলগাঁও থাকেন। তিনিও পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিক।

তাসলিমাকে বিয়ের পর মনিরুল তাঁকে প্রথম স্ত্রী কোহিনুরের বাসায় রাখেন। থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় মনিরুল গতকাল সাংবাদিকদের জানান, তাসলিমার সঙ্গে বিয়ের কয়েক দিন পর তিনি ঢাকায় দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে যান। সেখানে তাঁর মা ও বোন মুঠোফোনে কল করে জানান, হালিশহরের এক যুবকের সঙ্গে তাসলিমার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এ খবর পেয়ে তিনি তাসলিমাকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। মনিরুল স্বীকার করেন, ১৯ মে বিকেলে তিনি ও তাসলিমা চরকাজল গ্রামে আসেন।

ওই দিন রাত ১০টার দিকে গ্রামের একটি খালের পাড়ে তাসলিমার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে লাশ খালে ফেলে দেওয়া হয়। আমাদের দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, তাসলিমার বাবা শহীদ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুঠোফোনে ঘনিষ্ঠতার একপর্যায়ে মনিরুল আমাদের বাড়িতে এসে তাসলিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমরা মনিরকে অপেক্ষা করতে বলি এবং তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে থাকি। এরই ফাঁকে তাসলিমা আমাদের না জানিয়ে চট্টগ্রামে চলে যায় এবং মনিরকে বিয়ে করে।

কিন্তু বিয়ের পরই তাসলিমা এবং আমরা জানতে পারি, মনিরুলের আরও দুজন স্ত্রী ও সন্তান আছে। এ নিয়ে মনিরুলের সঙ্গে তাসলিমার বেশ কয়েক দফা ঝগড়াঝাঁটি হয়। এ কারণে মনিরুল ক্ষুব্ধ হয়ে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। ’ তাসলিমার মা নাছিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়ের হত্যাকারীর দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।